বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে প্রতারণা

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৫৪ , চলতি সংখ্যা
প্রেম স্বর্গীয়, প্রেম স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। প্রেমের সম্পর্কটা যখন ভাঙে, তখন কষ্ট হয়, হৃদয় চুরমার হয়ে যায়। কিন্তু এখন কষ্ট ছাপিয়ে জন্ম নেয় এক ভয়ংকর প্রতিশোধের আগুন। আর সেই আগুনে ঘি ঢালতে আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এক পারমাণবিক অস্ত্র-ধর্ষণ মামলা। যে প্রেমিককে আপনি গতকালও স্বেচ্ছায় আপনার শরীর সঁপে দিয়েছেন, আজ সে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মুহূর্তেই হয়ে গেল ‘ধর্ষক’!

আসুন, আজ কোনো ভণ্ডামি নয়, কোনো ভদ্রতার মুখোশ নয়, আজ একেবারে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলি।
মেয়েদের বলছি, আপনারা যখন একটা ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান, যখন তার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একান্তে সময় কাটান, তখন কি আপনাদের মাথায় থাকে না যে এই সম্পর্কের একটা শারীরিক পরিণতি আসতে পারে? যখন ছেলেটা আপনাকে ভালোবাসার কথা বলে, আপনার শরীরের কাছাকাছি আসতে চায়, তখন আপনাদের ‘না’ বলার ক্ষমতাটা কোথায় হারিয়ে যায়?
আসল সত্যিটা হলো, আপনারা হারিয়ে যেতে দেন। কারণ আপনারাও সেই উত্তেজনাটা চান। আপনারাও চান সেই শারীরিক সান্নিধ্য। এটা কোনো অপরাধ নয়, এটা মানুষের জৈবিক চাহিদা। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন, যখন আপনারা এই চাহিদাকে ‘প্রেমের লাইসেন্স’ হিসেবে ব্যবহার করেন। মজা নেবেন দুজনে মিলে, শরীরের জ্বালা মেটাবেন দুজনে মিলে, আর সম্পর্কটা টিকল না বলে সব দোষ চাপিয়ে দেবেন ছেলেটার ঘাড়ে? এটা কেমন সততা?

সমাজের কিছু মেয়ে তো এটাকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা জানে, একটা ছেলেকে শায়েস্তা করার বা ব্ল্যাকমেল করার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো একটা ধর্ষণ মামলা। সম্পর্কটা যখন নিজের ইচ্ছেমতো চলছে, তখন সবই ‘প্রেম’। আর যখনই ছেলেটা বেঁকে বসছে, তখনই সেটা হয়ে যাচ্ছে ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ’!

এসব কোন প্রলোভন? ছেলেটা কি আপনার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছিল? সে কি আপনাকে জোর করে বিছানায় নিয়ে গিয়েছিল? না। আপনারা দুজনেই জেনে-বুঝে, স্বেচ্ছায়, একে অপরের শরীরের উত্তাপ উপভোগ করেছেন। এখন দায় শুধু ছেলেটার কেন?
ঘৃণ্য খেলাটা খেলেন কিছু বিবাহিত নারী। আপনারা স্বামীর সংসারে সুখী নন, কিংবা নিছকই অ্যাডভেঞ্চারের লোভে অন্য পুরুষের সঙ্গে বিছানায় যান। আপনারা ভাবেন, স্বামী যা দিতে পারে না, সেই সুখ বা উত্তেজনা ওই প্রেমিক পুরুষ দেবে। আপনারা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করেন, শরীর দেন, আর ভাবেন-দুই নৌকায় পা দিয়েই জীবনটা পার করে দেবেন। কিন্তু যখন আপনার স্বামী আপনার চরিত্রহীনতার কথা জেনে যায়, যখন সে আপনাকে ঘর থেকে বের করে দেয়, তখন আপনার পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। ওদিকে যে প্রেমিক এত দিন আপনার শরীর ভোগ করেছে, সেও একটা চরিত্রহীন, বিবাহিত নারীকে বিয়ে করে নিজের জীবনে ঝামেলা জড়াতে চায় না।

দিন শেষে যখন আপনি দুই কূলই হারান, তখন আপনার হাতে থাকে শেষ অস্ত্র-ধর্ষণ মামলা। যে লোকটার সঙ্গে আপনি নিজের স্বামীকে ঠকিয়ে দিনের পর দিন স্বেচ্ছায় শুয়েছেন, তাকেই আপনি বানিয়ে দেন ‘ধর্ষক’। ছি! নিজের পাপ ঢাকতে, নিজের ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতে আপনারা আইনকে এতটা নিচে নামাতে পারেন?
জি তবে হ্যাঁ, আমি বলছি না যে প্রেমের সম্পর্কে ধর্ষণ হয় না। ধর্ষণ অবশ্যই হয়। কিন্তু সেটার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসুন, পার্থক্যটা বুঝে নিই :

আবেগে আপনার প্রেমিক যদি আপনাকে জোর করে কোনো নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় এবং আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শরীর স্পর্শ করে, সেটা ধর্ষণ। আপনি যদি বাধা দেওয়া সত্ত্বেও সে আপনাকে শারীরিকভাবে কাবু করে ফেলে এবং অত্যাচার করে, সেটা প্রতারণা। আপনাকে যদি কোনো ঘরে আটকে রেখে, মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে আপনার শরীর ভোগ করা হয়, সেটা নিঃসন্দেহে ধর্ষণ। এবং এমন ঘটনা ঘটলে এক মুহূর্ত দেরি না করে আপনার উচিত পুলিশ বা পরিবারের সাহায্য নেওয়া। কারণ সেখানে আপনার সম্মতি ছিল না, ছিল ভয় আর অসহায়ত্ব।

কিন্তু আপনারা কী করেন? আপনারা প্রেমিকের সঙ্গে কক্সবাজার বা সাজেকে তিন-চার দিনের জন্য ঘুরতে যান। একই হোটেলে, একই রুমে, একই বিছানায় রাত কাটান। আপনারা কি এতটাই অবুঝ যে বোঝেন না, একটা অবিবাহিত ছেলে একটা অবিবাহিত মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজারের ঢেউ গুনতে যায় না? সে আপনার শরীরী ঢেউয়ের গভীরে ডুব দিতে যায়, আপনার শরীরের নোনা জল পান করতে যায়। সে আপনাকে নিয়ে গেছে আপনার পূর্ণ সম্মতিতে। আপনারা সেখানে একে অপরকে ভোগ করেছেন। এরপর ঢাকায় ফিরে যখন সম্পর্কের সমীকরণ মেলে না, তখন আপনারা ধর্ষণের অভিযোগ আনেন? এটা কি হাস্যকর নয়? এটা কি আইনের সঙ্গে, আর আসল ভুক্তভোগীদের সঙ্গে চরম এক পরিহাস নয়?

একজন নারী হয়ে বলছি...আপনারা ভান করবেন না যে আপনারা কিছু বোঝেন না। একজন নারী ঠিকই বুঝতে পারে কোন পুরুষের চোখে সততা আর কোন পুরুষের চোখে কেবল লালসা। আপনারা বুঝতে পারেন কে আপনাকে বিয়ে করার জন্য ভালোবাসে, আর কে কেবল বিছানায় নেওয়ার জন্য ভালোবাসার অভিনয় করে। আপনারা জেনে-বুঝেই এই খেলায় নামেন। আপনারা ভাবেন, শরীর দিয়ে হলেও ছেলেটাকে আটকে রাখবেন। আর যখন সেই ফাঁদ ছিঁড়ে ছেলেটা বেরিয়ে যায়, তখনই আপনারা ‘ধর্ষিতা’র অভিনয় শুরু করেন।

লক্ষ করে দেখবেন, খেটে খাওয়া, গরিব ঘরের মেয়েরা এ ধরনের অভিযোগে খুব কম জড়ায়। কারণ তারা তাদের শরীর আর সম্মানের মূল্য বোঝে। যত নষ্টামি এই তথাকথিত ‘আধুনিক’, ‘শিক্ষিত’ আর ‘চাকরিজীবী’ মেয়েদের মধ্যে। কারণ তারা জানে, কীভাবে আইনকে ব্যবহার করে একটা পুরুষের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া যায়।

তবে শেষ করার আগে, সেই মেয়েদের উদ্দেশে বলছি, যারা নিজেদের শরীরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন :
আপনার যে শরীরটা আপনি স্বেচ্ছায় একজনকে উপভোগ করতে দিয়েছিলেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সেই শরীরটাকে ‘ধর্ষিত’ বলে চিৎকার করার আগে আপনার লজ্জা করে না?

পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আপনি যখন একটা মিথ্যা মামলা করেন, তখন কি আপনার একবারও মনে হয় না, আপনার কারণে একজন সত্যিকারের ধর্ষিতা বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে? আপনার কারণে ‘ধর্ষণ’ শব্দটা তার ভয়াবহতা হারাচ্ছে।
আসলে যে মজাটা আপনিও সমানভাবে নিয়েছেন, তার দায়ভার একা আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়াটা কি চরম পর্যায়ের কাপুরুষতা নয়? আপনি কি একজন ভালোবাসার কাঙাল প্রেমিকা, নাকি একজন ব্যর্থ শিকারি যে শিকার হাতছাড়া হওয়ার পর তাকে ছোবল মারতে উদ্যত?

আপনি নিজের শরীরকে ভালোবাসুন, নিজের সম্মানকে ভালোবাসুন। শরীর কোনো দর-কষাকষির বস্তু নয়, আর আইন আপনার ব্যক্তিগত প্রতিশোধের খেলার মাঠ নয়। যদি তা-ই করেন, তাহলে জেনে রাখুন-আপনি ধর্ষিতার কাতারে পড়েন না, আপনি পড়েন সেই সব ঘৃণ্য অপরাধীর কাতারে, যারা ন্যায়-ব্যবস্থাকেই ধর্ষণ করে।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041