খেলাপি ঋণে বাংলাদেশের অবস্থান

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৩ , চলতি সংখ্যা
ঋণ গ্রহণ করা একটি আদিম প্রক্রিয়া। এই ঋণ গ্রহণ করা হতে পারে নানা পর্যায়ে। সাধারণত কোনো কাজ যখন নিজস্ব তহবিলে বা সঞ্চয়ে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তখন মানুষ ঋণ নিয়ে থাকে। এই ঋণ ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যক্তি নিতে পারে। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও কোনো ব্যক্তি নিতে পারে। আবার কখনো সরকার থেকে সরকার বা কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকেও সরকার ঋণ নিতে পারে। ঋণ সাধারণত পরিশোধের সাধ্য বিচারে বা পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে দেয়া হয় এবং ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনার নিরিখে। আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থা প্রচলনের পর থেকে ঋণ গ্রহণ এবং ঋণ পরিশোধের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রবর্তিত হওয়ায় ঋণ গ্রহণ যেমন সহজ, তেমনি জটিলও হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আবার ঋণ পরিশোধ না করলে তাদের ঋণখেলাপি বলা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে সক্ষমতা এবং ঋণগ্রহীতার মতলব বিবেচনায় না নিয়ে রাজনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে যথেচ্ছ ঋণ বিতরণের ফলে ঋণখেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে এবং অভ্যন্তরীণভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেওয়ার প্রবণতায় ব্যাংকগুলো সব দেউলিয়া হওয়ার পথ ধরেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণখেলাপির তালিকায় বাংলাদেশ এখন এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ‘এশিয়ার খেলাপি ঋণে শীর্ষে বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। ‘নন-পারফরমিং লোনস ওয়াজ ইন এশিয়া ২০২৫’ শীর্ষক এডিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।

আসলে বাংলাদেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা প্রতিটি সরকারের আমলেই বেড়েছে বৈ কমেনি। যে কারণে হিসাব ঠিকই আছে, প্রতিবছরই আগের বছরের চেয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে গত সরকারের সকল কাজের সমালোচনা করে তার বিদায়ঘণ্টা বাজালেও তার স্থলে, যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা ভালো কিছু করার পথে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে পুরোনো পথেই গা ভাসিয়েছে। নতুন কিছুই দেশের মানুষকে দিতে পারেনি, যা সাধারণ মানুষের কল্যাণে এসেছে বা সাধারণ মানুষের দুঃখ মোচনে সহায়ক হয়েছে।

বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের প্রশ্নে পুরোনো সরকার যে শৈথিল্য দেখিয়েছে, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করেছে বা অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে সমর্থন সংগ্রহ করেছে; পরবর্তী সরকারও সেই পথ অনুসরণ করে তারাও তাদের দলে টেনে রেখেছে। নতুন পথ খুঁজে কোনো ঝুঁকির মধ্যে যেতে চায় না। প্রতিবেদনটিতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বাণিজ্য দ্বন্দ্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলোতে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ এবং যেসব দেশের ঋণ বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর অধিক নির্ভরশীল, এসব দেশের পরিস্থিতি খুবই নাজুক।

এ রকম পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে চাইলে কতগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ অতি আবশ্যক। কঠোর আইন প্রণয়ন এবং সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার সঙ্গে সেই আইনের প্রয়োগ। কার্যকর বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ। বাজার-ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত সক্রিয়ভাবে সব বিষয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এখন প্রশ্ন, ক্ষমতাসীন সরকার কি পুরোনো ব্যবস্থার অনুসরণ ছেড়ে নতুন ব্যবস্থার দিকে পা বাড়াবে পারবে? নাকি পুরোনো ব্যবস্থার ঘানি টেনে বাংলাদেশ তার খেলাপি ঋণের তালিকার শীর্ষস্থান বজায় রাখবে? খেলাপি ঋণ যত বাড়বে, দেশের অর্থনীতি তত দুর্বল হবে? উন্নয়ন অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। দেশ সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়বেÑযা কোনো দেশই প্রত্যাশা করতে পারে না।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041