
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন শেষে দেশে ফিরে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯ দিনের সফরে প্রধান উপদেষ্টার ঝুলিতে যোগ হয়েছে অনেক অর্জন। আর এই অর্জনে প্রবাসীরা কী পেলেন তা নিয়ে চলছে নানান বিশ্লেষণ।
জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব, নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ভোটাধিকার প্রদান, দেশে প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। এসব দাবি পূরণে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের আগমনের পর ‘তীর্থের কাক’-এর মত অপেক্ষায় থাকেন প্রবাসীরা। কিন্তু সরকার যায়, সরকার আসে। এবার ব্যতিক্রম ছিল অন্তর্বর্তী সরকার। প্রবাসীরা একবুক স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টার। কিন্তু প্রবাসীদের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হলো তার এই আগমনে, সেই হিসাব-নিকাশ চলছে সর্বত্র।
নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ ফ্লাইট চালু এখনো অধরা রয়ে গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ চলছে। সহসাই এ দুটি বড় প্রত্যাশার প্রাপ্তি ঘটতে পারে। কিন্তু জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি এখনো। তবুও হাল ছাড়েননি প্রবাসীরা। তাদের বিশ্বাস- অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।
ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে বিমানবন্দরে নানান অজুহাতে প্রবাসীদের হয়রানি করা হতো। এখন এটা নেই বললেই চলে। কিন্তু এমন একটি ব্যবস্থা বা সংস্কার প্রয়োজন, যেখানে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলেও প্রবাসীরা বিমানবন্দরে নামার পর আর হয়রানির শিকার হবেন না। তাদের প্রবাসী হিসাবে সম্মান করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউঞ্জ করলেও তা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, প্রবাসীরা দেশে গেলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন। তাদের নিরাপত্তায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস, অর্থাৎ একজন প্রবাসী স্বজন, প্রতিবেশী বা এলাকার দুষ্কৃতকারী দ্বারা হয়রানি হলে সুনির্দিষ্ট একটি নম্বরে কল করলে দ্রুত প্রতিকার পাবেন। প্রবাসীরা এখনো মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন। যদিও এমন কোনো ঘোষণা আসেনি প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে।
জাতিসংঘের কর্মসূচির বাইরে প্রবাসীদের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে তিনি জাতি পুনর্গঠনে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু প্রবাসীদের ওই সমাবেশ এতটাই ‘নিয়ন্ত্রিত’ ছিল যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রবাসীরা কোনো দাবি উত্থাপনের সুযোগ পায়নি।
২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসার পর প্রধান উপদেষ্টা বিরামহীন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা সমস্যা, যুদ্ধ-সংঘাতসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন। তরুণদের জন্য কীভাবে নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলা যায়, সেই আকাক্সক্ষা এবং পথ নিয়েও কথা বলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চার বিশ্বনেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। প্রবাসীরাও মনে করেন- এটা প্রধান উপদেষ্টার বড় সাফল্য। কিন্তু প্রবাসীদের যেসব দাবি, সেগুলোর বাস্তবায়ন দরকার। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সযোদ্ধা। তারা অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তারা বিদেশে বাংলাদেশে ব্র্যান্ডিং করছেন। বিনিময়ে তারা প্রাপ্যটুকু পাচ্ছেন কীনা।
আক্ষেপের সুরে একাধিক প্রবাসী বলেছেন, একজন প্রবাসী বিদেশেও প্রবাসী। নিজ দেশে গেলেও তিনি প্রবাসী। অথচ দেশের একজন সাধারণ মানুষের যে অধিকার সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের মানুষের ভোটাধিকার আছে। জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। কিন্তু বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্সে মুখ্য ভূমিকা পালন করা একজন প্রবাসী এসব পাচ্ছেন না। অথচ সরকার প্রধানরা বিদেশে এলে প্রবাসীদের কাছে শত আশ্বাসের ফুলঝুঁড়ি ছড়ান। উড়োজাহাজে ওঠার পর সব ভুলে যান। বিদেশে দূতাবাস, কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় সেবা পান না। এসবের অবসান হওয়া দরকার।
বিগত সরকারের আমলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সযোদ্ধার কথিত মর্যাদা পেলেও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার দাবির ব্যাপারে কখনো সাড়া পাননি। বরং প্রবাসীরা কেন সংসদে আসবে সে প্রশ্ন ওঠে। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে উন্নয়ন অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান। বিশ্বের বহু দেশে এর নজির রয়েছে। কিন্তু নানান কারণে প্রবাসীদের এ ব্যাপারে অবহেলা করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগ এসেছে প্রবাসীদের যথাযথ মর্যাদা প্রদানের। কিন্তু তাদের সময় ক্ষীণ। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে। সে হিসাবে হাতে আছে অল্প সময়। এই সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা একটি উদ্যোগ নেবেন, এমনটি আশা করছেন প্রবাসীরা।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর বুধবার নিউইয়র্কে ইতালি, পাকিস্তান, ফিনল্যান্ড ও কসোভোর সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে চার দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে দুজনের সাক্ষাৎ হয়। পাশাপাশি নিউইয়র্কে যে হোটেলে অধ্যাপক ইউনূস অবস্থান করছেন, সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের উন্নয়নশীল দেশ-সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ (উচ্চ প্রতিনিধি) রাবাব ফাতিমা।
৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য রাখেন।
পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় (ঔড়রহঃ জবংঢ়ড়হংব চষধহ) অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
এরআগে ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্কে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সংস্থার সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাবাব ফাতিমা নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিথি হিসাবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবারগার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তাঁরা বাংলাদেশকে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর কন্যা দিনা ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এর সাক্ষাৎ ঘটে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর কন্যা দিনা ইউনূস গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা এসব সাফল্য নিজ ঝুলিতে নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। প্রবাসীরা অপেক্ষায় আছেন তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের।
জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব, নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ভোটাধিকার প্রদান, দেশে প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। এসব দাবি পূরণে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের আগমনের পর ‘তীর্থের কাক’-এর মত অপেক্ষায় থাকেন প্রবাসীরা। কিন্তু সরকার যায়, সরকার আসে। এবার ব্যতিক্রম ছিল অন্তর্বর্তী সরকার। প্রবাসীরা একবুক স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টার। কিন্তু প্রবাসীদের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হলো তার এই আগমনে, সেই হিসাব-নিকাশ চলছে সর্বত্র।
নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ ফ্লাইট চালু এখনো অধরা রয়ে গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ চলছে। সহসাই এ দুটি বড় প্রত্যাশার প্রাপ্তি ঘটতে পারে। কিন্তু জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি এখনো। তবুও হাল ছাড়েননি প্রবাসীরা। তাদের বিশ্বাস- অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।
ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে বিমানবন্দরে নানান অজুহাতে প্রবাসীদের হয়রানি করা হতো। এখন এটা নেই বললেই চলে। কিন্তু এমন একটি ব্যবস্থা বা সংস্কার প্রয়োজন, যেখানে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলেও প্রবাসীরা বিমানবন্দরে নামার পর আর হয়রানির শিকার হবেন না। তাদের প্রবাসী হিসাবে সম্মান করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউঞ্জ করলেও তা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, প্রবাসীরা দেশে গেলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন। তাদের নিরাপত্তায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস, অর্থাৎ একজন প্রবাসী স্বজন, প্রতিবেশী বা এলাকার দুষ্কৃতকারী দ্বারা হয়রানি হলে সুনির্দিষ্ট একটি নম্বরে কল করলে দ্রুত প্রতিকার পাবেন। প্রবাসীরা এখনো মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন। যদিও এমন কোনো ঘোষণা আসেনি প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে।
জাতিসংঘের কর্মসূচির বাইরে প্রবাসীদের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে তিনি জাতি পুনর্গঠনে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু প্রবাসীদের ওই সমাবেশ এতটাই ‘নিয়ন্ত্রিত’ ছিল যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রবাসীরা কোনো দাবি উত্থাপনের সুযোগ পায়নি।
২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসার পর প্রধান উপদেষ্টা বিরামহীন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা সমস্যা, যুদ্ধ-সংঘাতসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন। তরুণদের জন্য কীভাবে নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলা যায়, সেই আকাক্সক্ষা এবং পথ নিয়েও কথা বলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চার বিশ্বনেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। প্রবাসীরাও মনে করেন- এটা প্রধান উপদেষ্টার বড় সাফল্য। কিন্তু প্রবাসীদের যেসব দাবি, সেগুলোর বাস্তবায়ন দরকার। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সযোদ্ধা। তারা অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তারা বিদেশে বাংলাদেশে ব্র্যান্ডিং করছেন। বিনিময়ে তারা প্রাপ্যটুকু পাচ্ছেন কীনা।
আক্ষেপের সুরে একাধিক প্রবাসী বলেছেন, একজন প্রবাসী বিদেশেও প্রবাসী। নিজ দেশে গেলেও তিনি প্রবাসী। অথচ দেশের একজন সাধারণ মানুষের যে অধিকার সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের মানুষের ভোটাধিকার আছে। জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। কিন্তু বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্সে মুখ্য ভূমিকা পালন করা একজন প্রবাসী এসব পাচ্ছেন না। অথচ সরকার প্রধানরা বিদেশে এলে প্রবাসীদের কাছে শত আশ্বাসের ফুলঝুঁড়ি ছড়ান। উড়োজাহাজে ওঠার পর সব ভুলে যান। বিদেশে দূতাবাস, কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় সেবা পান না। এসবের অবসান হওয়া দরকার।
বিগত সরকারের আমলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সযোদ্ধার কথিত মর্যাদা পেলেও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার দাবির ব্যাপারে কখনো সাড়া পাননি। বরং প্রবাসীরা কেন সংসদে আসবে সে প্রশ্ন ওঠে। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে উন্নয়ন অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান। বিশ্বের বহু দেশে এর নজির রয়েছে। কিন্তু নানান কারণে প্রবাসীদের এ ব্যাপারে অবহেলা করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগ এসেছে প্রবাসীদের যথাযথ মর্যাদা প্রদানের। কিন্তু তাদের সময় ক্ষীণ। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে। সে হিসাবে হাতে আছে অল্প সময়। এই সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা একটি উদ্যোগ নেবেন, এমনটি আশা করছেন প্রবাসীরা।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর বুধবার নিউইয়র্কে ইতালি, পাকিস্তান, ফিনল্যান্ড ও কসোভোর সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে চার দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে দুজনের সাক্ষাৎ হয়। পাশাপাশি নিউইয়র্কে যে হোটেলে অধ্যাপক ইউনূস অবস্থান করছেন, সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের উন্নয়নশীল দেশ-সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ (উচ্চ প্রতিনিধি) রাবাব ফাতিমা।
৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য রাখেন।
পঞ্চমত, যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় (ঔড়রহঃ জবংঢ়ড়হংব চষধহ) অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
এরআগে ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্কে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সংস্থার সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাবাব ফাতিমা নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিথি হিসাবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবারগার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তাঁরা বাংলাদেশকে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর কন্যা দিনা ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এর সাক্ষাৎ ঘটে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর কন্যা দিনা ইউনূস গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা এসব সাফল্য নিজ ঝুলিতে নিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। প্রবাসীরা অপেক্ষায় আছেন তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের।