লেখক ও সংগঠক ওয়াহেদ হোসেইনি আর নেই

প্রকাশ : ২৯ অগাস্ট ২০২৫, ১৮:৩৪ , চলতি সংখ্যা
জনপ্রিয় লেখক ও সাহিত্যিক ওয়াহেদ হোসেইনি (৮৯) আর  নেই। গত ২৫ আগস্ট সোমবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি মরণব্যাধি ক্যান্সারের রোগী ছিলেন। 
ওয়াহেদ হোসেইনির মৃত্যুর পর তার ঘনিষ্ঠজন আশরাফ আহমেদ এক লেখায় ওয়াহেদ হোসাইনির স্মৃতিচারণ করেছেন। তার লেখাটি এখানে তুলে ধরা হলো। 
ডিসি এলাকায় যেন মৃত্যুর মিছিল চলছে। প্রথমে গেলেন ভয়েজ অব আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিক সৈয়দ জিয়াউর রহমান। এরপর একে একে চলে গেলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম দিককার চিত্রনায়ক ও ভয়েস অব আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিক কাফি খান, লেখক ও বিশ্বব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জলিল, বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং প্রায় দশদিন আগে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ড. সুলতান আহমাদ। তাঁদের সাথে সর্বশেষ যোগ হলো ওয়াহেদ হোসেইনি। 
অনেকের মতো আমিও আমার স্ত্রীসহ এঁদের সবারই স্নেহাসিক্ত ছিলাম বলে এই মৃত্যুগুলো শেলের মতো হৃদয়ে আঘাত হানে।
বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি বাংলা কবিতার ছন্দে কোরআনের তর্জমা লিখছিলেন, যা গত বছর বই আকারে প্রকাশিত হয়। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ডিসি এলাকার কারো মৃত্যু হলে মৃতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিসহ আমরা হোসেইনি ভাইয়ের ইমেইলেই তা জানতে পারতাম। তেমন এক চিঠির ইউলোজি মুসাবিদা করার সময় ঠাট্টা করে তাঁকে বলেছিলাম- “আপনাকে যদি কেউ জিবরাইলের বন্ধু না বলে আজরাইলের বন্ধু বলে সম্বোধন করে, তাতে কি অসন্তুষ্ট হবেন?” কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “না, এতে অসন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। দুজনই তো আল্লাহর প্রিয় ফেরেশতা।” আজ তাঁর প্রয়াণে ওয়াশিংটন ডিসি এলাকার বাঙালি সমাজের সবাই সত্যিই দুঃখভারাক্রান্ত। 
কয়েক সপ্তাহ আগে ফোনে তাঁকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি বলেছিলেন, “আজ নয়, আরেকদিন এসো, এখন আমি হাসপাতালে আছি।” মাত্র দুদিন আগে তাঁর বাসায় যেতে গিয়ে ভেবেছিলাম সেই ইউলোজিটি তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নেবো। কিন্তু আর সুযোগ হলো না। তখন তাঁর বাকরোধ হয়ে গিয়েছিল, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সামনে বসে তাঁর একটি শীর্ণ হাত আমার হাতে নিয়ে বলেছিলাম, “হোসেইনি ভাই, আমি আশরাফ এসেছি আপনাকে দেখতে।” পাশে বসা আযরিনা হোসেইনি ভাবি তাঁকে বললেন, “শুনছো, আশরাফ এসেছে।” একটি গড়গড় আওয়াজ ছাড়া তাঁর গলা থেকে আর কিছু বের হলো না। গত দুদিন ধরে নবতিপর আবু সোলায়মান ভাই ও তাঁর স্ত্রী, ইকবাল বাহার চৌধুরী ভাই, আর গতরাত প্রায় সাড়ে দশটায় আমার স্ত্রীর কাছে নিনা ফখরুদ্দিন ভাবির ফোনে তাঁর ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ার খবর পেতাম। এর এক ঘণ্টা পরই তিনি পরপারে যাত্রা করেন। 
কয়েক মাস আগে আচমকাই ধরা পড়া ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসা নিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং মৃত্যুকে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হন। শুধু তাই নয়, মৃত্যুকে অহেতুক প্রলম্বিত না করার অনুরোধ জানিয়ে নিজের ঘরে দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রেখেছিলেন নির্দেশনা: উঘজ – উড় ঘড়ঃ জবংঁংপরঃধঃব। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন আশি বছরের এক যুবক, দশ বছর আগে নিজ সম্পর্কে তিনি এমনই লিখেছিলেন। জীবনের শেষ কয়েক বছরে কানে কিছুটা কম শুনলেও কুশল জিজ্ঞেস করলে তাঁর উৎফুল্ল উত্তর হতো- “ফার্স্ট ক্লাস!” বিদ্রোহী কবি নজরুলের মতোই যেন বলতেন, “ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা।”
হোসেইনি ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৮৫ সালে। তখন থেকেই তিনি স্থানীয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’র (বর্তমানে ইঅও নামে পরিচিত) সাথে জড়িত ছিলেন এবং পরবর্তীতে এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ করলেও যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ফ্যানি মে নামক আধাসরকারি গৃহঋণ সংস্থায় কাজ করতেন। আশি ও নব্বই দশকে তাঁর সম্পাদিত সংগঠনের নিউজলেটার এই এলাকার বাংলাদেশি সমাজের একমাত্র লিখিত সাংস্কৃতিক বাহন ছিল। কয়েক বছর উত্তর আমেরিকাভিত্তিক ফোবানা’র গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বেও ছিলেন।
অবসরের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার প্রবীণদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব রিটায়ার্ড পারসনস (এএআরপি)-এর সাথে যুক্ত হয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করেন। কোভিডের সময় এলাকার জ্যেষ্ঠদের সাপ্তাহিক ‘শনিবারের কফি ক্লাব’ ভার্চুয়াল হলে একসময় এর পরিচালনার দায়িত্বও তাঁর ওপর পড়ে। সভ্যদের মাঝে কখনও বিবাদ হলে তা সামাল দিতেন ধৈর্য ও দক্ষতায়।
প্রায় ১৫-২০ বছর আগে তিনি রামাদান ফুড উৎরাব নামে জনহিতকর কাজে হাত দেন। কমিউনিটি থেকে সংগৃহীত খাবার ও অর্থ স্থানীয় দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন এবং প্রতিবার দাতাদের কাছে পাইপয়সার হিসাবও বুঝিয়ে দিতেন। ‘বাই’-এর মাধ্যমে এই কাজ এখনও চলছে। তিনি নিউইয়র্কের বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকায় বাংলায় কলাম ও প্রবন্ধ লিখেছেন। ওয়াশিংটনের জানালা নামে তাঁর কলাম বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল। কমিউনিটির কারো অর্জন হলে তিনি সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতেন। আমার প্রথম বই প্রকাশের খবরে তিনি প্রথম সারিতে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন, এমনকি প্রকাশনা উৎসবেও প্রশংসামূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। এলাকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর ছিল নিয়মিত উপস্থিতি। সর্বশেষ তাঁকে বক্তৃতা দিতে দেখেছি ‘বাই’-এর ঈদ মিলনমেলায়।
হোসেইনি ভাইয়ের প্রয়াণে ডিসি বাঙালি সমাজ এক পরম সুহৃদকে হারালো।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041