রাজনীতির এ ময়লা ট্রেন থামবে কোথায়?

প্রকাশ : ২৯ অগাস্ট ২০২৫, ১৬:২০ , চলতি সংখ্যা
একটা সময় পর্যন্ত ইতরামি, বিটলামি, ফাজলামি ধরনের কিছু শব্দ উচ্চারণেও খটকা লাগতো। এদিক-ওদিক তাকানো হতো। পাছে কে কী মনে করে? গত ক’দিন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেসব শব্দ-বাক্য প্রকাশ্যে ছোঁড়া হচ্ছে, যার কোনো কোনোটি যার-তার পক্ষে মুখে আনা অসম্ভব। ফকিন্নির পোলা, বান্দির পুত তো মামুলি। এর বাইরে এমন সব শব্দ উচ্চারণ হচ্ছে, যা মুখে নয়, হরফে লেখাও অসম্ভব। ইশারা ভাষায় প্রকাশও কি সম্ভব? 
সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে ছাড়ছেন হাল রাজনীতির তারকারা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, গোলাম মওলা রনি থেকে নুরুল হক নূর, সারজিস জোয়ান-বুড়া মিলে গালমন্দের এক দুর্ণিবার প্রতিযোগিতা। কেউ কারো চেয়ে কম যাচ্ছেন না। হারছেন না কেউ। সবাই চ্যাম্পিয়ন! তা করতে গিয়ে নিজের জাত-ইজ্জতের অবশিষ্টও কি কেউ বাকি রাখছেন?
ভাব-নমুনায় মনে হচ্ছে জাতপাতে তাদের কিছু যায়, আসে না। বরং অজাতে-কুজাতেই যত সৌন্দর্য। একটা সময় জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, তার মেয়ে জাইমাসহ জিয়া পরিবার, বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ বেশ কিছু নোংরা নেরেটিভ তৈরি করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার বিরাট প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য নিয়মিত বেতন ভাতা দিয়ে কয়েক হাজার সাইবার যোদ্ধা নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সুফল কি শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলা গেছে? 
কয়েকটা দিন নোংরামির হাট-বাজার গরম করা গেছে। আর বিদায় নিয়েছে কলঙ্কজনকভাবে। তাদের সেই সাইবার যোদ্ধারা টিকে আছে খুচরাখাচরা মহড়ায়। বাংলার রাজনীতির বাতাস ও মানুষকে দিচ্ছে জ্বালাযন্ত্রণা। নোংরামির নতুন কিছু আইটেম পেয়েছে তারা। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ মাঠ কাঁপানো দলের নেতারাও এর শরীক। ভুলেই গেছে ১৫-১৬টি বছর কী নিপাতনে ছিল তারা? 
বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল কর্মী থেকে শুরু করে মধ্যম পর্যায়ের নেতা এবং স্বল্প ক’জন সিনিয়র নেতা শেখ হাসিনার আমলে হামলা-মামলা-গুমসহ নানামাত্রিক জুলুম সয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদ পর্যন্ত হয়েছে। তারা প্রতিটা মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকিতে ছিলেন। কেউ কেউ লীগের সাথে সিস্টেম করে চলেছেন। কার সাথে কী সিস্টেম করেছেন, তা জাতীয় পর্যায়ে আলাপ না হলেও স্থানীয় পর্যায়ে গোপন থাকেনি। একই চিত্র জামায়াতে ইসলামীরও। সেই  গোত্রের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুনর্বাসনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এটা তাদের নিজস্ব বন্দোবস্ত। দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু, গালিগালাজ আর গোষ্ঠী উদ্ধার কার সিদ্ধান্তে? 
নির্বাচন যতো ঘনাবে, বিএনপির আন্তঃদলীয় সংঘাত বাড়বে, তা নিশ্চিত। চট্টগ্রামের রাউজান, পটিয়া, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর আর জামালপুরের সৌহার্দ্যপূর্ণ কোলাকুলি খুব বাজে বার্তা দিচ্ছে। সঙ্গে অদ্ভুত সব দুর্গন্ধ। রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন দরকার, তা কর্পূরের মতো অবস্থা। আর ঢাকায় ফজলু, রুমিন, গোলাম মওলা নিয়ে ময়লাবাজি দেখাচ্ছে আরেক নিশানা। আকাশ বাতাসের মতো রাজনীতির পথও ভয়ানক হয়ে উঠেছে দিনকে দিন। চারদিকে শুধু কুয়াশা। নোংলা নানা কথায় রাজনীতির পথ ক্রমশ কাদামাটিতে পিচ্ছিল করে দিচ্ছে তারা। কেউ ব্যস্ত রুমিনকে নিয়ে, কেউ ফজলুকে। বয়সে তাদের ব্যবধান অনেক। দুজনই আইন পেশার। বাড়িও কাছাকাছি, কিশোরগঞ্জ আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তবে, একই সময়ে সাবজেক্ট হয়ে গেলেন বিনা সিডিউলে। দেশজুড়ে যখন আলোচনায় নির্বাচন, সংস্কার, বিচার। তখন অনেকটা কোনো লক্ষ্য ছাড়াই উপলক্ষ হয়ে গেলেন বিএনপির দুই কিছিমের দুই তারকা এডভোকেট ফজলুর রহমান ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। ভিন্ন ভিন্ন কারণে দুজনেই আক্রমণের শিকার। একজন রুমিন কিছুটা শারীরিকভাবে, আরেকজন ফজলু সাংগঠনিকভাবে। তবে, জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।  কেন জরুরি হয়ে পড়লো এ ঘাটাঘাটির? 
তারা দুজনই একবার করে সংসদ সদস্য ছিলেন। এডভোকেট ফজলুর রহমানকে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়ে বিএনপি শো-কজ করেছে, আর রুমিন ফারহানা নির্বাচন কমিশনের শুনানীতে গিয়ে শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। স্বচ্ছল জীবনের আশায় অনেকে দু’টি চাকরি করেন। এটি নির্মম বাস্তবতা। তারাও একই কারণে বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগে চাকরি করছেন। দুই চাকরি করা অপরাধ ও অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। একই সাথে, স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতে যারা বিএনপির পাশাপাশি ছোট প্রতিষ্ঠান তথা জামায়াত, জাতীয় পার্টি, সিপিবি এবং বাসদে চাকরি করছেন, তাদের চাকরিরও একটা সুরক্ষা জরুরি? না-কি ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদদের নিশ্চুপ হয়ে যাবার পর ফজলু-রুমিন, মওলাদেরই প্রিয় নেতা করার মহড়া? 
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা। 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041