
নিউইয়র্ক বইমেলা এবার ৩২ বছরে পড়ল। ৩২তম বইমেলা হবে মধ্য জুলাইয়ে। আমি আগেরবার নিউইয়র্ক বইমেলা উদ্বোধন করতে গিয়েছিলাম। সে ছিল এক বিরল অভিজ্ঞতা। বিরল সম্মানও। একটা বইমেলা কীভাবে দেশভাগের সমস্ত কষ্ট-বেদনা আর কালিমাকে মুছে দিতে পারে, তা আমাদের স্বাধীনতা এবং দেশভাগের পঁচাত্তর বছরে নিউইয়র্ক বইমেলা উদ্বোধনে গিয়ে অনুভব করেছিলাম। নিউইয়র্ক বইমেলা পরবাসে সবচেয়ে বড় বই উৎসব। বাংলা বইয়ের উৎসব। গত ২০২২ সালের ২৮ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই চার দিন ছিল এই বই উৎসব। মহামারির কারণে তার আগের দুই বছর হয়েছিল ভার্চুয়াল।
গতবারের মেলা ছিল তাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরা। নিউইয়র্কের এই বইমেলার আয়োজক নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। মুক্তধারা একটিমাত্র বাংলা বইয়ের দোকান নিউইয়র্ক শহরে। ভেবে দেখুন, সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে বাংলা বই, বাংলা গান নিয়ে দোকান পাতিয়ে বসে ছিলেন বিশ্বজিত সাহা নামের এক পুস্তকপ্রেমিক, সংগীতপ্রেমিক। যেদিন পৌঁছেছিলাম, ২৬ জুলাই দুপুরে, সেদিনই কত রাত অবধি মুক্তধারা বিপণিতে আড্ডা মেরেছিলাম অনেকের সঙ্গে। তাঁদের ভেতর বাংলাদেশ থেকে মেলা করতে আসা তরুণ প্রকাশকেরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন নিউইয়র্কের বাঙালিরা, যাঁরা সেই মেলার সঙ্গে জড়িত। সেই রাতে আলাপ হয়েছিল আহমদ মাযহারের সঙ্গে। তাঁর কথাটি খুব মনে আছে। প্রাজ্ঞ মানুষটির সঙ্গে এবং তরুণ প্রকাশকদের সঙ্গে আড্ডায় আনন্দ ছিল। হ্যাঁ, মুক্তধারার বিশ্বজিত সাহা ছিলেন সেই আড্ডার মধ্যমণি। আর ছিলেন আমার তরুণ বন্ধু তানভীর রব্বানি। যেমন পড়ুয়া তেমনি আনন্দময়। তানভীরের সঙ্গে আমার আলাপ ২০১৮ সালে ওই নিউইয়র্ক শহরেই। সারা দিন আমায় নিয়ে ঘুরেছিল রব্বানি। চিনিয়েছিল এমন সব জায়গা, যার পেছনে আমেরিকার ইতিহাস অন্বিত।
মুক্তধারা পুস্তক বিপণির বাংলাদেশের বিশ্বজিত সাহা মশায় বাংলা গান এবং বাংলা পুস্তক নিয়ে ৩২ বছর তো আছেন জ্যাকসন হাইটসে তাঁর বিপণি নিয়ে। গানের সিডির আর বিক্রি নেই এখন। দেখলাম শচীন দেব বর্মণ, আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল জব্বার, আঞ্জুমান আরা বেগম কিংবা লতা, হেমন্ত, সন্ধ্যা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাবিনা ইয়াসমিনের ছবি দেওয়া সিডি এখনো রয়েছে সাজানো। দেশ ভাগাভাগি তুচ্ছ করে দিতে পারে বাংলা বই, বাংলা গান। বাঙালির যত পরব সব যেন বইমেলাতেই মিলেছে এসে। জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে ছিল গতবারের মেলা।
আমি গিয়েছি মেলা উদ্বোধন করতে। এই মেলা আগে ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী, লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার ও পবিত্র সরকার উদ্বোধন করেছেন। পরবাসে, পশ্চিম গোলার্ধের বাঙালি এবং বাংলা বইয়ের টানে আমি চলে এসেছি। চলে এসেছি এক অনাস্বাদিত ভালোবাসার টানে। লিখতে লিখতে এই ভালোবাসা অর্জন, এর কোনো বিকল্প হয় না। এত মধুর অভিজ্ঞতা আর হয় না যেন। কেন হয় না, কারণ গত বছরটি ছিল স্বাধীনতার হীরকজয়ন্তী। ৭৫ বছর আগে আমাদের পিতৃপুরুষ যে গ্রাম যে নদী ছেড়ে এসেছিলেন পূর্ববঙ্গে, সেই গ্রাম সেই নদীর সঙ্গে আমার দেখা হলো নিউইয়র্ক শহরে। কপোতাক্ষ, বেতনা নদীর জলে সিঞ্চিত হলাম আমি। ধূলিহর গ্রামের বাতাস গায়ে লাগল আমার। বাতাস তুমি কোথা হইতে আসিতেছ, বেতনা, কপোতাক্ষ ছুঁইয়া ছুঁইয়া, তোমার সন্ধান করিতে করিতে। এত আদর এত ভালোবাসা দিয়ে তাঁরা ডেকে নিয়েছিলেন, না গিয়ে পারিনি।
২৬ জুলাই দ্বিপ্রহরে নিউইয়র্ক জেএফ কেনেডি বিমানবন্দরে নেমে আমি যখন ঈষৎ উ™£ান্ত, তখন দেখা পেয়েছিলাম ইতিপূর্বে না দেখা লেখক স্বপন বিশ্বাসের। তিনি বাংলাদেশের মানুষ, নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে চাকরি করেন। সেই ছিল আতিথেয়তার আরম্ভ। আমার লাগেজ টেনে টেনে তিনি নিয়ে গেলেন আদনান সৈয়দের কাছে। ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন তার সঙ্গে। না, তিনি বইমেলা কমিটির কেউ নন। কিন্তু আমাকে চিনতেন। নিউইয়র্ক যেন বাঙালির শহর হয়ে গিয়েছে। হয়ে তো গিয়েছেই। সে জ্যামাইকা, কুইন্স সিটিতে গেলেই বোঝা যায়। সব বাংলা। ঢাকা শহরের একটা অংশ যেন। ফুটপাতের হকার থেকে বড় দোকানের দোকানি, রেস্তোরাঁর মালিক, কর্মচারী সকলের মুখে বাংলা। আর সে বাংলা, ঢাকাইয়া, সিলেটি, খুলনাÑকত জায়গার! আমি যে হোটেলে ছিলাম, সেই হোটেলে পৌঁছে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন লেখক কুলদা রায়। তিনি তো বন্ধুর চেয়েও বড় বন্ধু, অনুজপ্রতিম। আমি পৌঁছালে ফোনে আমার কন্যা উত্তর ক্যারোলাইনাবাসী চকোরিকে খবর দিলেন, বাবা এসে গেছেন, চিন্তা নাই।
২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ছিল বইমেলার সাংবাদিক বৈঠক। জ্যামাইকা পারফর্মিং সেন্টারের হলে। হলেই দেখা হলো কবি সুনির্মল বসুর পুত্র কবি অভীক বসুর সঙ্গে। অভীক এসেছিলেন তাঁর পুত্রকে নিয়ে। পুত্রের নাম অভীরু। অভীরু গানে মেধাবী। সেই সময় অভীক ছিলেন তাঁর কন্যার বাড়িতে। তাঁর সঙ্গে এই বইমেলার খুব যোগাযোগ আছে যে তা বুঝেছিলাম। ভারতীয় বাঙালি বলতে তেমন আর কাউকে দেখিনি দু-একজন অপরিচিত ব্যতীত। এক বৃদ্ধ আমার হাত ধরে বলেছিলেন, তিনি টালিগঞ্জের মানুষ। কলকাতায় আর ফেরা হবে বলে মনে হয় না। সাংবাদিক বৈঠক এবং তারপর ডিনার, চমৎকার হয়েছিল। সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছিলাম বিমল সরকারের সঙ্গে আলাপ করে। বিমল এক উজ্জ্বল সফল তরুণ। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধায় বাড়ি। বছর চল্লিশও হবে না। সাড়ে তিন ঘণ্টা উড়ে টেক্সাসের রাজধানী অস্টিন থেকে এসেছিলেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে গ্লোবাল বুক ফেয়ার করেন। আশ্চর্য পরিকল্পনা। বিমল পত্রিকা করেন। পত্রিকা বিক্রয়ের সব টাকা (ডলার) ক্যানসার নিরাময়ে ব্যয় করেন। বিমলের পত্রিকায় আমাকে লিখতে হয়েছে পরে। না লিখে উপায় নেই, এমনই তার জোর।
নিউইয়র্ক বইমেলার গতবারের থিম ছিল, ‘বই হোক বিশ্ব বাঙালির মিলন সেতু’। বাঙালির তো অনেক দেশ। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকা তো ছিলই ১৯৪৭ থেকে, এখন দেশে দেশে তার ঘর। অস্ট্রেলিয়া থেকে ছুটে এসেছেন নিরূপমা, নীরা রহমান। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক, গানের ভেতর দিয়ে দ্যাখেন ভুবনখানি। তাঁর গলায় রবীন্দ্রনাথের গান হলো। হয়েছিল আমাদের প্রিয় শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান। তাঁদের গানের অনুষ্ঠানে হল ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। আবার দাঁড়িয়ে ছিল কতজন। নীরা রহমানের সঙ্গে গল্প, উপন্যাস নিয়ে কথা হলো।
মনে পড়ে মস্ত প্রাঙ্গণে পরপর বইয়ের স্টল। ম্যাগাজিনের স্টল। পরবাসে কত যে পত্রিকা বের হয়। টেনেসি থেকে হুমায়ূন কবীর এনেছিলেন তাঁর ঘুংঘুর পত্রিকা। মননশীল পত্রিকা। ওই পত্রিকায় ২০২১ সালে আমি লিখেছিলাম।
নিউইয়র্ক বইমেলা কতজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। কুলদা রায়, তানভীর রব্বানি বা আনোয়ার শাহাদাত বা লুৎফননাহার লতা, স্মৃতি ভদ্র তো পুরোনো বন্ধু। কানাডার টরেন্টো থেকে এসেছিলেন সালমা বানী। তাঁকে দেখতে পেলাম সংবাদ সম্মেলনে গিয়েই। তিনি পূর্বপরিচিত। তাঁর গল্প পড়েছি কত, দেখা হয়েছিল ২০ বছর আগে। দেখা হতে বললেন, দাদা কেমন আছেন, ভালো আছেন তো। যাকে চিনতাম না, সেই আনন্দময় মানুষ ছড়াকার লেখক লুৎফর রহমান রিটন, তিনি এসেছেন কানাডার আরও উত্তরের শহর অটোয়া থেকে, মুখে ওই প্রথম কথাটি, ভালো আছেন তো। ভালো না থেকে কেমন থাকব, মুক্তধারার ডাকে এসেছি যে। মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. নূরুন নবী সাহেবের ডাকে এসেছি। এসেছি বাংলাদেশের ডাকে। লুৎফর রহমান রিটন অপূর্ব ছড়া লেখেন। মুখে মুখে ছড়া তৈরি করেন। তাঁর সাহচর্য আমার মনে থাকবে বহুদিন। বিশেষত, ২৬ তারিখ রাতে একসঙ্গে ডিনার। আমি স্বল্পাহারী। রিটন বললেন, তিনিও স্বল্পাহারী। তারপর যা হলো। তিনি হা হা করে হাসতে লাগলেন। রিটন মঞ্চে উঠলে একাই সব। কথায় রং ছড়াতে পারেন।
ঢাকা থেকে এসেছিলেন কবি প্রকাশনীর সজল আহমেদ। চার দিন তিনিই আমার সঙ্গী। রুচিমান প্রকাশক। ছেপেছেন সতীনাথ ভাদুড়ী থেকে মৃণাল সেনের চার্লি চ্যাপলিন, লাতিন আমেরিকার গল্প, জাপানি গল্প। তিনি নিজেও কবি। এবারও যাবেন নিউইয়র্ক বইমেলায়। এবার আমার অশ্বচরিত উপন্যাসের বাংলাদেশ সংস্করণ নিয়ে যাবেন। আর থাকবে উত্তর আমেরিকার লেখকদের গল্প নিয়ে একটি সংকলন। সেই বইয়ের সংক্ষিপ্ত একটি কথামুখ লিখেছি আমি।
গতবার বাংলাদেশ থেকে বাতিঘর, প্রথমা, সময় প্রকাশন, কাকলি, অংকুর, কথা প্রকাশ, নালন্দা, অ্যাডোর্ন, আকাশ, অনন্যা, ইত্যাদি প্রকাশÑএমনই অনেক প্রকাশক এসেছিলেন তাঁদের মূল্যবান বইয়ের সম্ভার নিয়ে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসেছিল কালের চিঠি, তিন বাংলা, ঘুংঘুর, ছড়াটে, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবÑএমনই অনেক প্রকাশক। মেলা আমি উদ্বোধন করলাম শফিক মিয়ার মৃদু ঢাকের বোলের সঙ্গে। এটি হল প্রাঙ্গণে। ভেতরের মঞ্চে ৩১ প্রদীপ জ্বালানো হলো। কবি আসাদ মান্নান, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নীরা রহমান, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার থেকে এই শহর এবং অন্য শহরের বিশিষ্ট মানুষজন ৩১ জন প্রদীপ জ্বালালেন। আমিও। মিনিট কুড়ির বক্তৃতায় ছিল ‘বই হোক মিলনের সেতু’ এই মর্মে আমার ভাষণ। আমার পিতৃপুরুষের হারানো দেশ হারানো নদী ফিরে পেয়েছি বইয়ের ভেতরে। ৭৫ বছর হয়ে গেল পার্টিশনের, বই আর ভাষা যদি মিলনের পদ্মা সেতু হয়ে দাঁড়ায়। এই রকম কিছু বলেছিলাম মনে হয়।
নিউইয়র্কে সন্ধ্যা হয় রাত আটটার পরে। মঞ্চের উদ্বোধনের কাজ শেষ হলে প্রাঙ্গণে এসে দেখি মেলা জমজম করছে আড্ডায় আড্ডায়। বন্ধু-লেখক কুলদা আমাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আবার এলেন রাত করে। আবহাওয়া মনোরম। বিরাম নেই। ঘুরে ঘুরে সব জায়গায় যেতে হচ্ছে। এত ভালোবাসা এঁদের। অস্টিনবাসী গাইবান্ধার বিমল আমাকে মুড়িমাখা এনে দিল। আপনি দাদা অতিথি। বড় একটি চকলেট এনে দিল। বিমল এত আনন্দময় মানুষ। বিশ্বজিত সাহা, যিনি মুক্তধারার কর্ণধার, তিনি যেন একাই মেলা সাজাচ্ছেন। শক্তিও ধরেন। কী অফুরন্ত প্রাণ তাঁর। তিনিই গৃহকর্তা বুঝি। তিনি কেন, তরুণ উদ্যোগী তানভীর রব্বানী, প্রবীণ ফাহিম রেজা নূর, আহমদ মাযহারÑকতজনের নাম করব। এঁরা পশ্চিমবঙ্গের সকল লেখকের খোঁজ রাখেন। একটা অভিমান আছে, আমরা পড়ি না বাংলাদেশের সাহিত্য। আমি তা খণ্ডন করেছিলাম কিছুটা। ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, আল মাহমুদ, মাহমুদুল হক থেকে নাসরীন জাহান, শাহীন আখতার পড়ি তো। তরুণতম লেখকদের পেলেই পড়ি। হ্যাঁ, এই মেলায় রোমহর্ষক গপ্পো-উপন্যাসের দাপট ছিল না মনে হয়। শাহাদৎ হুসেইন যেমন ছিলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসও। ছিলেন তারাশঙ্কর, সতীনাথ, মানিক, বিভূতি। আমরাও আছি মুক্তধারায়।
মেলায় অনেক অনুষ্ঠান। আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন স্মৃতি ভদ্র। প্রায় সব সেমিনারে মঞ্চে উঠেছিলাম। তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। ভালোবাসার ঘাটতি হয়নি এক বিন্দুও। বড় আনন্দে কেটেছিল এই বইমেলা। সবচেয়ে বড় কথা, এই মেলায় প্রবাসের তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ। নতুন প্রজন্ম নিজের মাতৃভাষা ভোলেনি প্রবাসে জন্মেও। বই পড়ে। কত সব নবীন-প্রবীণ পাঠকের সঙ্গে দেখা হলো। একজনের কথা মনে পড়েÑকৌশিক আহমেদ। তিনি একটি বাংলা পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ওখান থেকে। আর, আর কতজন যে বন্ধু হয়ে গিয়েছিল ওই কয়েক দিনের ভেতর। স্প্যানিশ থেকে বাংলায় পেদ্রো পারামো অনুবাদক আনিস উজ্জামানের সঙ্গে প্রথম দেখা হলো এই মেলাতেই। আর মনে পড়ে গোপাল সান্যালের কথা। সকলে এক রাত্রে ডিনারে গেলাম ইস্ট নদী পেরিয়ে সেই ম্যানহাটনের দিকে গোপালের বাড়িতেই। আনোয়ার শাহদাত ছিলেন, সজল আহমেদ, আনিস উজ্জামান ছিলেন, অনেকে ছিলেন। ফিরতে রাত একটা। আনন্দ হয়েছিল খুব। ভালোবাসা, ভালোবাসা, ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নয়। বই হলো ভালোবাসার পাখি। তার কোনো সীমানা নেই। বই-ই আমাকে নিউইয়র্ক নিয়ে গিয়েছিল। এবারের মেলা আরও সফল হোক। আরও উজ্জ্বল হোক। আমি নিউইয়র্ক বইমেলার উদ্দেশে, মুক্তধারার বিশ্বজিত সাহার ঠিকানায় শ্বেত কবুতর উড়িয়ে দিলাম ভালোবাসার কথা লিখে। যাও পাখি উড়ে যাও, সাত সাগর পেরিয়ে যাও। বইয়ের কথা নিয়ে যাও।
লেখক পরিচিতি : গল্পকার-কথাসাহিত্যিক। কলকাতা, ভারত
গতবারের মেলা ছিল তাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরা। নিউইয়র্কের এই বইমেলার আয়োজক নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। মুক্তধারা একটিমাত্র বাংলা বইয়ের দোকান নিউইয়র্ক শহরে। ভেবে দেখুন, সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে বাংলা বই, বাংলা গান নিয়ে দোকান পাতিয়ে বসে ছিলেন বিশ্বজিত সাহা নামের এক পুস্তকপ্রেমিক, সংগীতপ্রেমিক। যেদিন পৌঁছেছিলাম, ২৬ জুলাই দুপুরে, সেদিনই কত রাত অবধি মুক্তধারা বিপণিতে আড্ডা মেরেছিলাম অনেকের সঙ্গে। তাঁদের ভেতর বাংলাদেশ থেকে মেলা করতে আসা তরুণ প্রকাশকেরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন নিউইয়র্কের বাঙালিরা, যাঁরা সেই মেলার সঙ্গে জড়িত। সেই রাতে আলাপ হয়েছিল আহমদ মাযহারের সঙ্গে। তাঁর কথাটি খুব মনে আছে। প্রাজ্ঞ মানুষটির সঙ্গে এবং তরুণ প্রকাশকদের সঙ্গে আড্ডায় আনন্দ ছিল। হ্যাঁ, মুক্তধারার বিশ্বজিত সাহা ছিলেন সেই আড্ডার মধ্যমণি। আর ছিলেন আমার তরুণ বন্ধু তানভীর রব্বানি। যেমন পড়ুয়া তেমনি আনন্দময়। তানভীরের সঙ্গে আমার আলাপ ২০১৮ সালে ওই নিউইয়র্ক শহরেই। সারা দিন আমায় নিয়ে ঘুরেছিল রব্বানি। চিনিয়েছিল এমন সব জায়গা, যার পেছনে আমেরিকার ইতিহাস অন্বিত।
মুক্তধারা পুস্তক বিপণির বাংলাদেশের বিশ্বজিত সাহা মশায় বাংলা গান এবং বাংলা পুস্তক নিয়ে ৩২ বছর তো আছেন জ্যাকসন হাইটসে তাঁর বিপণি নিয়ে। গানের সিডির আর বিক্রি নেই এখন। দেখলাম শচীন দেব বর্মণ, আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল জব্বার, আঞ্জুমান আরা বেগম কিংবা লতা, হেমন্ত, সন্ধ্যা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাবিনা ইয়াসমিনের ছবি দেওয়া সিডি এখনো রয়েছে সাজানো। দেশ ভাগাভাগি তুচ্ছ করে দিতে পারে বাংলা বই, বাংলা গান। বাঙালির যত পরব সব যেন বইমেলাতেই মিলেছে এসে। জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে ছিল গতবারের মেলা।
আমি গিয়েছি মেলা উদ্বোধন করতে। এই মেলা আগে ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী, লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার ও পবিত্র সরকার উদ্বোধন করেছেন। পরবাসে, পশ্চিম গোলার্ধের বাঙালি এবং বাংলা বইয়ের টানে আমি চলে এসেছি। চলে এসেছি এক অনাস্বাদিত ভালোবাসার টানে। লিখতে লিখতে এই ভালোবাসা অর্জন, এর কোনো বিকল্প হয় না। এত মধুর অভিজ্ঞতা আর হয় না যেন। কেন হয় না, কারণ গত বছরটি ছিল স্বাধীনতার হীরকজয়ন্তী। ৭৫ বছর আগে আমাদের পিতৃপুরুষ যে গ্রাম যে নদী ছেড়ে এসেছিলেন পূর্ববঙ্গে, সেই গ্রাম সেই নদীর সঙ্গে আমার দেখা হলো নিউইয়র্ক শহরে। কপোতাক্ষ, বেতনা নদীর জলে সিঞ্চিত হলাম আমি। ধূলিহর গ্রামের বাতাস গায়ে লাগল আমার। বাতাস তুমি কোথা হইতে আসিতেছ, বেতনা, কপোতাক্ষ ছুঁইয়া ছুঁইয়া, তোমার সন্ধান করিতে করিতে। এত আদর এত ভালোবাসা দিয়ে তাঁরা ডেকে নিয়েছিলেন, না গিয়ে পারিনি।
২৬ জুলাই দ্বিপ্রহরে নিউইয়র্ক জেএফ কেনেডি বিমানবন্দরে নেমে আমি যখন ঈষৎ উ™£ান্ত, তখন দেখা পেয়েছিলাম ইতিপূর্বে না দেখা লেখক স্বপন বিশ্বাসের। তিনি বাংলাদেশের মানুষ, নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে চাকরি করেন। সেই ছিল আতিথেয়তার আরম্ভ। আমার লাগেজ টেনে টেনে তিনি নিয়ে গেলেন আদনান সৈয়দের কাছে। ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন তার সঙ্গে। না, তিনি বইমেলা কমিটির কেউ নন। কিন্তু আমাকে চিনতেন। নিউইয়র্ক যেন বাঙালির শহর হয়ে গিয়েছে। হয়ে তো গিয়েছেই। সে জ্যামাইকা, কুইন্স সিটিতে গেলেই বোঝা যায়। সব বাংলা। ঢাকা শহরের একটা অংশ যেন। ফুটপাতের হকার থেকে বড় দোকানের দোকানি, রেস্তোরাঁর মালিক, কর্মচারী সকলের মুখে বাংলা। আর সে বাংলা, ঢাকাইয়া, সিলেটি, খুলনাÑকত জায়গার! আমি যে হোটেলে ছিলাম, সেই হোটেলে পৌঁছে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন লেখক কুলদা রায়। তিনি তো বন্ধুর চেয়েও বড় বন্ধু, অনুজপ্রতিম। আমি পৌঁছালে ফোনে আমার কন্যা উত্তর ক্যারোলাইনাবাসী চকোরিকে খবর দিলেন, বাবা এসে গেছেন, চিন্তা নাই।
২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ছিল বইমেলার সাংবাদিক বৈঠক। জ্যামাইকা পারফর্মিং সেন্টারের হলে। হলেই দেখা হলো কবি সুনির্মল বসুর পুত্র কবি অভীক বসুর সঙ্গে। অভীক এসেছিলেন তাঁর পুত্রকে নিয়ে। পুত্রের নাম অভীরু। অভীরু গানে মেধাবী। সেই সময় অভীক ছিলেন তাঁর কন্যার বাড়িতে। তাঁর সঙ্গে এই বইমেলার খুব যোগাযোগ আছে যে তা বুঝেছিলাম। ভারতীয় বাঙালি বলতে তেমন আর কাউকে দেখিনি দু-একজন অপরিচিত ব্যতীত। এক বৃদ্ধ আমার হাত ধরে বলেছিলেন, তিনি টালিগঞ্জের মানুষ। কলকাতায় আর ফেরা হবে বলে মনে হয় না। সাংবাদিক বৈঠক এবং তারপর ডিনার, চমৎকার হয়েছিল। সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছিলাম বিমল সরকারের সঙ্গে আলাপ করে। বিমল এক উজ্জ্বল সফল তরুণ। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধায় বাড়ি। বছর চল্লিশও হবে না। সাড়ে তিন ঘণ্টা উড়ে টেক্সাসের রাজধানী অস্টিন থেকে এসেছিলেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে গ্লোবাল বুক ফেয়ার করেন। আশ্চর্য পরিকল্পনা। বিমল পত্রিকা করেন। পত্রিকা বিক্রয়ের সব টাকা (ডলার) ক্যানসার নিরাময়ে ব্যয় করেন। বিমলের পত্রিকায় আমাকে লিখতে হয়েছে পরে। না লিখে উপায় নেই, এমনই তার জোর।
নিউইয়র্ক বইমেলার গতবারের থিম ছিল, ‘বই হোক বিশ্ব বাঙালির মিলন সেতু’। বাঙালির তো অনেক দেশ। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকা তো ছিলই ১৯৪৭ থেকে, এখন দেশে দেশে তার ঘর। অস্ট্রেলিয়া থেকে ছুটে এসেছেন নিরূপমা, নীরা রহমান। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক, গানের ভেতর দিয়ে দ্যাখেন ভুবনখানি। তাঁর গলায় রবীন্দ্রনাথের গান হলো। হয়েছিল আমাদের প্রিয় শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান। তাঁদের গানের অনুষ্ঠানে হল ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। আবার দাঁড়িয়ে ছিল কতজন। নীরা রহমানের সঙ্গে গল্প, উপন্যাস নিয়ে কথা হলো।
মনে পড়ে মস্ত প্রাঙ্গণে পরপর বইয়ের স্টল। ম্যাগাজিনের স্টল। পরবাসে কত যে পত্রিকা বের হয়। টেনেসি থেকে হুমায়ূন কবীর এনেছিলেন তাঁর ঘুংঘুর পত্রিকা। মননশীল পত্রিকা। ওই পত্রিকায় ২০২১ সালে আমি লিখেছিলাম।
নিউইয়র্ক বইমেলা কতজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। কুলদা রায়, তানভীর রব্বানি বা আনোয়ার শাহাদাত বা লুৎফননাহার লতা, স্মৃতি ভদ্র তো পুরোনো বন্ধু। কানাডার টরেন্টো থেকে এসেছিলেন সালমা বানী। তাঁকে দেখতে পেলাম সংবাদ সম্মেলনে গিয়েই। তিনি পূর্বপরিচিত। তাঁর গল্প পড়েছি কত, দেখা হয়েছিল ২০ বছর আগে। দেখা হতে বললেন, দাদা কেমন আছেন, ভালো আছেন তো। যাকে চিনতাম না, সেই আনন্দময় মানুষ ছড়াকার লেখক লুৎফর রহমান রিটন, তিনি এসেছেন কানাডার আরও উত্তরের শহর অটোয়া থেকে, মুখে ওই প্রথম কথাটি, ভালো আছেন তো। ভালো না থেকে কেমন থাকব, মুক্তধারার ডাকে এসেছি যে। মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. নূরুন নবী সাহেবের ডাকে এসেছি। এসেছি বাংলাদেশের ডাকে। লুৎফর রহমান রিটন অপূর্ব ছড়া লেখেন। মুখে মুখে ছড়া তৈরি করেন। তাঁর সাহচর্য আমার মনে থাকবে বহুদিন। বিশেষত, ২৬ তারিখ রাতে একসঙ্গে ডিনার। আমি স্বল্পাহারী। রিটন বললেন, তিনিও স্বল্পাহারী। তারপর যা হলো। তিনি হা হা করে হাসতে লাগলেন। রিটন মঞ্চে উঠলে একাই সব। কথায় রং ছড়াতে পারেন।
ঢাকা থেকে এসেছিলেন কবি প্রকাশনীর সজল আহমেদ। চার দিন তিনিই আমার সঙ্গী। রুচিমান প্রকাশক। ছেপেছেন সতীনাথ ভাদুড়ী থেকে মৃণাল সেনের চার্লি চ্যাপলিন, লাতিন আমেরিকার গল্প, জাপানি গল্প। তিনি নিজেও কবি। এবারও যাবেন নিউইয়র্ক বইমেলায়। এবার আমার অশ্বচরিত উপন্যাসের বাংলাদেশ সংস্করণ নিয়ে যাবেন। আর থাকবে উত্তর আমেরিকার লেখকদের গল্প নিয়ে একটি সংকলন। সেই বইয়ের সংক্ষিপ্ত একটি কথামুখ লিখেছি আমি।
গতবার বাংলাদেশ থেকে বাতিঘর, প্রথমা, সময় প্রকাশন, কাকলি, অংকুর, কথা প্রকাশ, নালন্দা, অ্যাডোর্ন, আকাশ, অনন্যা, ইত্যাদি প্রকাশÑএমনই অনেক প্রকাশক এসেছিলেন তাঁদের মূল্যবান বইয়ের সম্ভার নিয়ে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসেছিল কালের চিঠি, তিন বাংলা, ঘুংঘুর, ছড়াটে, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবÑএমনই অনেক প্রকাশক। মেলা আমি উদ্বোধন করলাম শফিক মিয়ার মৃদু ঢাকের বোলের সঙ্গে। এটি হল প্রাঙ্গণে। ভেতরের মঞ্চে ৩১ প্রদীপ জ্বালানো হলো। কবি আসাদ মান্নান, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নীরা রহমান, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার থেকে এই শহর এবং অন্য শহরের বিশিষ্ট মানুষজন ৩১ জন প্রদীপ জ্বালালেন। আমিও। মিনিট কুড়ির বক্তৃতায় ছিল ‘বই হোক মিলনের সেতু’ এই মর্মে আমার ভাষণ। আমার পিতৃপুরুষের হারানো দেশ হারানো নদী ফিরে পেয়েছি বইয়ের ভেতরে। ৭৫ বছর হয়ে গেল পার্টিশনের, বই আর ভাষা যদি মিলনের পদ্মা সেতু হয়ে দাঁড়ায়। এই রকম কিছু বলেছিলাম মনে হয়।
নিউইয়র্কে সন্ধ্যা হয় রাত আটটার পরে। মঞ্চের উদ্বোধনের কাজ শেষ হলে প্রাঙ্গণে এসে দেখি মেলা জমজম করছে আড্ডায় আড্ডায়। বন্ধু-লেখক কুলদা আমাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আবার এলেন রাত করে। আবহাওয়া মনোরম। বিরাম নেই। ঘুরে ঘুরে সব জায়গায় যেতে হচ্ছে। এত ভালোবাসা এঁদের। অস্টিনবাসী গাইবান্ধার বিমল আমাকে মুড়িমাখা এনে দিল। আপনি দাদা অতিথি। বড় একটি চকলেট এনে দিল। বিমল এত আনন্দময় মানুষ। বিশ্বজিত সাহা, যিনি মুক্তধারার কর্ণধার, তিনি যেন একাই মেলা সাজাচ্ছেন। শক্তিও ধরেন। কী অফুরন্ত প্রাণ তাঁর। তিনিই গৃহকর্তা বুঝি। তিনি কেন, তরুণ উদ্যোগী তানভীর রব্বানী, প্রবীণ ফাহিম রেজা নূর, আহমদ মাযহারÑকতজনের নাম করব। এঁরা পশ্চিমবঙ্গের সকল লেখকের খোঁজ রাখেন। একটা অভিমান আছে, আমরা পড়ি না বাংলাদেশের সাহিত্য। আমি তা খণ্ডন করেছিলাম কিছুটা। ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, আল মাহমুদ, মাহমুদুল হক থেকে নাসরীন জাহান, শাহীন আখতার পড়ি তো। তরুণতম লেখকদের পেলেই পড়ি। হ্যাঁ, এই মেলায় রোমহর্ষক গপ্পো-উপন্যাসের দাপট ছিল না মনে হয়। শাহাদৎ হুসেইন যেমন ছিলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসও। ছিলেন তারাশঙ্কর, সতীনাথ, মানিক, বিভূতি। আমরাও আছি মুক্তধারায়।
মেলায় অনেক অনুষ্ঠান। আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন স্মৃতি ভদ্র। প্রায় সব সেমিনারে মঞ্চে উঠেছিলাম। তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। ভালোবাসার ঘাটতি হয়নি এক বিন্দুও। বড় আনন্দে কেটেছিল এই বইমেলা। সবচেয়ে বড় কথা, এই মেলায় প্রবাসের তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ। নতুন প্রজন্ম নিজের মাতৃভাষা ভোলেনি প্রবাসে জন্মেও। বই পড়ে। কত সব নবীন-প্রবীণ পাঠকের সঙ্গে দেখা হলো। একজনের কথা মনে পড়েÑকৌশিক আহমেদ। তিনি একটি বাংলা পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ওখান থেকে। আর, আর কতজন যে বন্ধু হয়ে গিয়েছিল ওই কয়েক দিনের ভেতর। স্প্যানিশ থেকে বাংলায় পেদ্রো পারামো অনুবাদক আনিস উজ্জামানের সঙ্গে প্রথম দেখা হলো এই মেলাতেই। আর মনে পড়ে গোপাল সান্যালের কথা। সকলে এক রাত্রে ডিনারে গেলাম ইস্ট নদী পেরিয়ে সেই ম্যানহাটনের দিকে গোপালের বাড়িতেই। আনোয়ার শাহদাত ছিলেন, সজল আহমেদ, আনিস উজ্জামান ছিলেন, অনেকে ছিলেন। ফিরতে রাত একটা। আনন্দ হয়েছিল খুব। ভালোবাসা, ভালোবাসা, ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নয়। বই হলো ভালোবাসার পাখি। তার কোনো সীমানা নেই। বই-ই আমাকে নিউইয়র্ক নিয়ে গিয়েছিল। এবারের মেলা আরও সফল হোক। আরও উজ্জ্বল হোক। আমি নিউইয়র্ক বইমেলার উদ্দেশে, মুক্তধারার বিশ্বজিত সাহার ঠিকানায় শ্বেত কবুতর উড়িয়ে দিলাম ভালোবাসার কথা লিখে। যাও পাখি উড়ে যাও, সাত সাগর পেরিয়ে যাও। বইয়ের কথা নিয়ে যাও।
লেখক পরিচিতি : গল্পকার-কথাসাহিত্যিক। কলকাতা, ভারত