
মার্কিন জনগণের একটি বিরাট অংশ সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করে জেলে পাঠানোর চলমান নানা প্রক্রিয়া নিয়ে রীতিমতো শ্রান্ত-ক্লান্ত। পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন খুললেই এ সংক্রান্ত খবরের ছড়াছড়ি। সবকিছু দেখে মনে হয়- আমেরিকায় ট্রাম্প ছাড়া আর কোনো বিষয় বা সমস্যা নেই।
ফ্লোরিডার মারা আ লাগোর বাসভবনে সরকারি গোপন নথিপত্র রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত করে মায়ামির ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা মামলায় গত ১৩ জুন ট্রাম্প আত্মসমর্পণ করেন। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিচারকের সামনে হাজির করা হলে মামলার ৩৭টি অভিযোগের প্রতিটিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর ট্রাম্প ও তার আইনজীবীরা আদালত ভবন ত্যাগ করে যার যার বাড়িতে ফিরে যান। এ সময় আদালতের আশেপাশে সমবেত প্রায় দু’হাজার ট্রাম্প সমর্থক তার সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রায় দু’মাস পূর্বে জনৈকা পর্নো তারকাকে ঘুষ প্রদানের ঘটনায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে নিউইয়র্কের আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। বিচারাধীন ঐ মামলায় আগামী ৪ ডিসেম্বর ট্রাম্পের হাজিরা দেয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তোলা হয়। বিশেষ আইনজীবী জন ডুরহাম এ বিষয়ে চার বছর ধরে তদন্ত চালান। তদন্তে এ বিষয়ে ট্রাম্পের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডুরহাম রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, এফবিআই-এর এ বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয়াই উচিৎ হয়নি। উপরে বর্ণিত দুটি মামলা ছাড়াও অন্ততঃ আরো দুটি মামলায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু রয়েছে। এর একটি হলো ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জর্জিয়া রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা এবং অন্যটি হলো ৬ জুন ক্যাপিটল ভবন হামলার ঘটনায় তার ভূমিকা সংক্রান্ত। এসব মামলা দায়ের ও চালানোর জন্য বহু নাগরিক ও রিপাবলিকান মহল বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগ ও এফবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। তারা এসব তৎপরতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করে এহেন কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথিপত্র নিজেদের হেফাজতে রাখার অভিযাগ তোলা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, বাইডেন বহু নথিপত্র নিজের বাড়ি, গ্যারেজ, ওয়াশিংটন ডিসির বাইডেন-পেন সেন্টার ও ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখেন। নথিপত্রের বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় ও বহু সংখ্যক আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করা হলেও, বাইডেনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
তাছাড়া ইউক্রেনের এনার্জি কোম্পানি বুরিজমা কর্তৃক বাইডেন পরিবারকে ১০ মিলিয়ন ডলার প্রদান এবং তাদের কথিত বিভিন্ন বৈদেশিক বিজনেস ডিল নিয়েও কোনরূপ তদন্ত করা হচ্ছে না, যদিও সম্প্রতি কংগ্রেসের হাউজ ওভারসাইট কমিটি এসব বিষয় খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাম্প ও বাইডেনের ক্ষেত্রে আইনের ভিন্নধর্মী প্রয়োগকে অনেকে Selective Justice হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
গত ১৩ জুন মায়ামিতে ফেডারেল কোর্টে হাজিরার পর ট্রাম্প তার নিউ জার্সির বেড মিনস্টারের বাড়িতে ফিরে সেখানে সমবেত দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে তিনি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বাইডেনের কথিত দুর্নীতির তদন্তের জন্য স্পেশাল প্রসিকিউটর নিয়োগ করবেন বলে জানান।
দুর্নীতির মামলায় আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হলে বাইডেনকে তার বাকি জীবন জেলে কাটাতে হলে পারে। মার্কিন রাজনীতিতে এহেন Tit for tat রাজনীতির ধারার সূচনা মার্কিন সমাজ ও গণতন্ত্রের জন্য যে অত্যন্ত অশুভ হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।
অতীতে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কিউবা ও ভেনিজুয়েলাসহ আরো অনেক দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক রেষারেষি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সেসব দেশের জন্য বিপর্যয় ও ক্ষতি ছাড়া আর কিছু বয়ে আনেনি। ভিয়েতনামের উত্তরাংশে সোভিয়েত সমর্থিত কমিউনিস্ট নেতা হোচি মিন এবং দক্ষিণে মার্কিন সমর্থিত কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী নেতা এনগো দিন দিয়েমের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সুদীর্ঘ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সূচনায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মানুষকে কম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। সম্প্রতি পাকিস্তানে পিটিআই নেতা ইমরান খান ও মুসলিম লীগ নেতা নওয়াজ শরীফের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে পুরো দেশজুড়ে ব্যাপক অরাজকতা ও সংঘর্ষ-সংঘাতের সৃষ্টি হয়। নওয়াজ শরীফ সমর্থক সরকার কর্তৃক ইমরান খানকে গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদে ইমরান সমর্থকরা গত ৯ মে পিন্ডিতে সেনাসদর ও লাহোরে শীর্ষ সেনা কমান্ডারের বাসভবনে হামলা চালায়। এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত শতাধিক ব্যক্তিকে বর্তমানে সেনা আইনে বিচার করা হচ্ছে।
চোখের বদলে চোখ নীতি (Eye for an eye) কখনই কাম্য ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, If you go for eye for an eye, one day the whole world will be blind।
৬০-এর দশকের শেষদিকে তরুণ বয়সে ‘যে আগুনে পুড়ি’ নামের একটি বাংলা ছবি দেখেছিলাম। মনে পড়ে, সেই ছবিতে প্রখ্যাত অভিনেতা ফতেহ লোহানীর মুখে একটি সংলাপ ছিল, ‘সাবধান আগুন নিয় খেলা করিস না। জানিস না, আগুন নিয়ে খেললে হাত পুড়ে যায়’।
মার্কিন জনগণ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির সার্বিক মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে বাইডেন প্রশাসন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেনস্থা ও হয়রানি করা থেকে বিরত থাকলে ভালো করবেন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। এর ফলে জনগণের কাছে বাইডেনের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।
মি. ট্রাম্পের সমস্যা হলো- তার নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি ২০১৬ সারে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরে তিনি তার দলের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী শীর্ষ নেতা হয়ে উঠেন। বর্তমানে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ দখলের প্রতিযোগিতায় বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এ কারণে বহু মহল ও নেতার কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন পথের কাঁটা ও চোখের বালি। এ কারণে এসব নেতা ও মহলের সার্বক্ষণিক নিন্দা-সমালোচনা ও তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুও তিনি।
রাজনীতির ময়দান থেকে তাকে যেকোনো প্রকারে বিতাড়ন না করতে পারা পর্যন্ত তাদের শান্তি নেই। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার পূর্ণ সহযোগিতায় তাদের এহেন তৎপরতা জারি রয়েছে। তাকে জেলে না পাঠানো পর্যন্ত এহেন তৎপরতার অবসান হবে বলে মনে হয় না।
মার্কিন সংবিধানে কোন ব্যক্তি কোন অপরাধে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্দোষ বলে বিবেচিত হবেন বলে বলা হয়েছে। ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত কোন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হননি। তা সত্ত্বেও কোন কোন মহল যেভাবে তাকে গিল্টি এবং ক্রিমিনাল হিসাবে আখ্যা দিয়ে মিডিয়া এবং বিভিন্ন ফোরামে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, তা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বন্ধ হওয়া উচিৎ।
লেখক : কলামিস্ট।
ফ্লোরিডার মারা আ লাগোর বাসভবনে সরকারি গোপন নথিপত্র রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত করে মায়ামির ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা মামলায় গত ১৩ জুন ট্রাম্প আত্মসমর্পণ করেন। তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিচারকের সামনে হাজির করা হলে মামলার ৩৭টি অভিযোগের প্রতিটিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর ট্রাম্প ও তার আইনজীবীরা আদালত ভবন ত্যাগ করে যার যার বাড়িতে ফিরে যান। এ সময় আদালতের আশেপাশে সমবেত প্রায় দু’হাজার ট্রাম্প সমর্থক তার সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেন। প্রায় দু’মাস পূর্বে জনৈকা পর্নো তারকাকে ঘুষ প্রদানের ঘটনায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে নিউইয়র্কের আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। বিচারাধীন ঐ মামলায় আগামী ৪ ডিসেম্বর ট্রাম্পের হাজিরা দেয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তোলা হয়। বিশেষ আইনজীবী জন ডুরহাম এ বিষয়ে চার বছর ধরে তদন্ত চালান। তদন্তে এ বিষয়ে ট্রাম্পের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডুরহাম রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, এফবিআই-এর এ বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয়াই উচিৎ হয়নি। উপরে বর্ণিত দুটি মামলা ছাড়াও অন্ততঃ আরো দুটি মামলায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু রয়েছে। এর একটি হলো ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জর্জিয়া রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা এবং অন্যটি হলো ৬ জুন ক্যাপিটল ভবন হামলার ঘটনায় তার ভূমিকা সংক্রান্ত। এসব মামলা দায়ের ও চালানোর জন্য বহু নাগরিক ও রিপাবলিকান মহল বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগ ও এফবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। তারা এসব তৎপরতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করে এহেন কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথিপত্র নিজেদের হেফাজতে রাখার অভিযাগ তোলা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, বাইডেন বহু নথিপত্র নিজের বাড়ি, গ্যারেজ, ওয়াশিংটন ডিসির বাইডেন-পেন সেন্টার ও ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখেন। নথিপত্রের বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় ও বহু সংখ্যক আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করা হলেও, বাইডেনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
তাছাড়া ইউক্রেনের এনার্জি কোম্পানি বুরিজমা কর্তৃক বাইডেন পরিবারকে ১০ মিলিয়ন ডলার প্রদান এবং তাদের কথিত বিভিন্ন বৈদেশিক বিজনেস ডিল নিয়েও কোনরূপ তদন্ত করা হচ্ছে না, যদিও সম্প্রতি কংগ্রেসের হাউজ ওভারসাইট কমিটি এসব বিষয় খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাম্প ও বাইডেনের ক্ষেত্রে আইনের ভিন্নধর্মী প্রয়োগকে অনেকে Selective Justice হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
গত ১৩ জুন মায়ামিতে ফেডারেল কোর্টে হাজিরার পর ট্রাম্প তার নিউ জার্সির বেড মিনস্টারের বাড়িতে ফিরে সেখানে সমবেত দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে তিনি ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বাইডেনের কথিত দুর্নীতির তদন্তের জন্য স্পেশাল প্রসিকিউটর নিয়োগ করবেন বলে জানান।
দুর্নীতির মামলায় আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হলে বাইডেনকে তার বাকি জীবন জেলে কাটাতে হলে পারে। মার্কিন রাজনীতিতে এহেন Tit for tat রাজনীতির ধারার সূচনা মার্কিন সমাজ ও গণতন্ত্রের জন্য যে অত্যন্ত অশুভ হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।
অতীতে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কিউবা ও ভেনিজুয়েলাসহ আরো অনেক দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক রেষারেষি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সেসব দেশের জন্য বিপর্যয় ও ক্ষতি ছাড়া আর কিছু বয়ে আনেনি। ভিয়েতনামের উত্তরাংশে সোভিয়েত সমর্থিত কমিউনিস্ট নেতা হোচি মিন এবং দক্ষিণে মার্কিন সমর্থিত কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী নেতা এনগো দিন দিয়েমের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সুদীর্ঘ ভিয়েতনাম যুদ্ধের সূচনায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মানুষকে কম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। সম্প্রতি পাকিস্তানে পিটিআই নেতা ইমরান খান ও মুসলিম লীগ নেতা নওয়াজ শরীফের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে পুরো দেশজুড়ে ব্যাপক অরাজকতা ও সংঘর্ষ-সংঘাতের সৃষ্টি হয়। নওয়াজ শরীফ সমর্থক সরকার কর্তৃক ইমরান খানকে গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদে ইমরান সমর্থকরা গত ৯ মে পিন্ডিতে সেনাসদর ও লাহোরে শীর্ষ সেনা কমান্ডারের বাসভবনে হামলা চালায়। এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত শতাধিক ব্যক্তিকে বর্তমানে সেনা আইনে বিচার করা হচ্ছে।
চোখের বদলে চোখ নীতি (Eye for an eye) কখনই কাম্য ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, If you go for eye for an eye, one day the whole world will be blind।
৬০-এর দশকের শেষদিকে তরুণ বয়সে ‘যে আগুনে পুড়ি’ নামের একটি বাংলা ছবি দেখেছিলাম। মনে পড়ে, সেই ছবিতে প্রখ্যাত অভিনেতা ফতেহ লোহানীর মুখে একটি সংলাপ ছিল, ‘সাবধান আগুন নিয় খেলা করিস না। জানিস না, আগুন নিয়ে খেললে হাত পুড়ে যায়’।
মার্কিন জনগণ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির সার্বিক মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে বাইডেন প্রশাসন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেনস্থা ও হয়রানি করা থেকে বিরত থাকলে ভালো করবেন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। এর ফলে জনগণের কাছে বাইডেনের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।
মি. ট্রাম্পের সমস্যা হলো- তার নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি ২০১৬ সারে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরে তিনি তার দলের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী শীর্ষ নেতা হয়ে উঠেন। বর্তমানে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ দখলের প্রতিযোগিতায় বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এ কারণে বহু মহল ও নেতার কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন পথের কাঁটা ও চোখের বালি। এ কারণে এসব নেতা ও মহলের সার্বক্ষণিক নিন্দা-সমালোচনা ও তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুও তিনি।
রাজনীতির ময়দান থেকে তাকে যেকোনো প্রকারে বিতাড়ন না করতে পারা পর্যন্ত তাদের শান্তি নেই। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার পূর্ণ সহযোগিতায় তাদের এহেন তৎপরতা জারি রয়েছে। তাকে জেলে না পাঠানো পর্যন্ত এহেন তৎপরতার অবসান হবে বলে মনে হয় না।
মার্কিন সংবিধানে কোন ব্যক্তি কোন অপরাধে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্দোষ বলে বিবেচিত হবেন বলে বলা হয়েছে। ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত কোন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হননি। তা সত্ত্বেও কোন কোন মহল যেভাবে তাকে গিল্টি এবং ক্রিমিনাল হিসাবে আখ্যা দিয়ে মিডিয়া এবং বিভিন্ন ফোরামে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, তা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বন্ধ হওয়া উচিৎ।
লেখক : কলামিস্ট।