এক অপার্থিব হলুদ আলো এবং আমার মা

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ২১:৩৭ , চলতি সংখ্যা
তখন ছিল বর্ষাকাল। ভরা বর্ষা। উঠোন ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। টিনের চালে খই ফোটার শব্দ। আমার বয়স সাত-আট হবে। সেবার আমার খুব জ্বর হয়েছিল। মনে হয় টাইফয়েড। জ্বর ভালোই হয় না। বিছানায় থাকতে চাইতাম না বলে লেপ জড়িয়ে আমাকে বসিয়ে রাখা হতো বাইরে। সারা দিন কাঙালের মতো বসে উঠোনজুড়ে বৃষ্টিপাত দেখতাম। দুর্বল শরীর। দিনে তেমন জ্বর থাকত না, কিন্তু বিকেল হলেই চোখ জ্বালা আর শীতভাব টের পেতাম। তারপর প্রবল কাঁপুনি দিয়ে আস্তে আস্তে আধ-চেতনার মধ্যে ডুবে যেতাম। কত এলোমেলো ঘোর ঘোর দৃশ্য স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পেতাম। গা ভরে জ্বর আসত। পরিপূর্ণ টলটলে জ্বর। কানে ঝিঁঝি একটানা একটা শব্দ। চারদিক নিস্তব্ধ লাগত। আর মনে হতো এক অবাস্তব জগতে রয়েছি। ফিরে ফিরে জ্বর আসত আমার। প্রবল পানির পিপাসা পেত। একদিন অন্ধকারে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল পানির পিপাসায়। বুঝতে পারছিলাম না কোথায় শুয়ে আছি। কিন্তু বাতাসে মায়ের শরীরের মা মা গন্ধটি টের পেয়ে পাশ ফিরতেই মায়ের বুকের মধ্যে গিয়ে পড়ল আমার জ্বরতপ্ত মাথাটি। মা আমার কপালে গাল ঠেকিয়ে বললেন, একটু গমগম করছে শরীর। মা আমার পাখির মতো দুর্বল মাথাটা কোলে নিয়ে বসে থাকতেন। খাওয়ার পর মাঝে মাঝে পান খেয়ে লাল টুকটুক করত মায়ের ঠোঁট। আমি জ্বরমুখে বলতাম, মা, ছাবা দেন। মা মুখ থেকে পানের একটু ছিবড়ে দিতেন। অনেকক্ষণ ধরে সেটুকু খেতাম।
ছোটবেলায় আমার খুব জ্বর হতো বলেই এমন মনে হতো। ভালোই হতে চাইত না সে জ্বর। আমাদের ছিল টিনের দোচালা ঘর। সেখানে আমি জ্বর নিয়েই উঠে পড়তাম মাঝে মাঝে। পাশেই লাগোয় পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা পাড়তাম। চালে উঠলেই মনে হতো একটা আলাদা জগতে চলে এসেছি। কত দূর পৃথিবীকে দেখা যায় চাল থেকে। উঁচুতে ওঠার তীব্র আনন্দে আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে দেখি। হাওয়া দেয়। লাউ পাতার রোয়া পায়ে লাগে। এমন চমকে উঠি। একধরনের রোমাঞ্চকর শীতে শিউরে ওঠে গা। নিচের দিকে চেয়ে দেখি, এক অদ্ভুত অচেনা জগতে দাঁড়িয়ে আছি। লাউ-ডগার মাচায়Ñচারধারে অপার্থিব মায়াবী সবুজ। আমার বুকসমান উঁচু সব পাতা বাতাসে দোলে। আনন্দে দু’হাত তুলে নাচতে ইচ্ছে করে। চোখ বুজে আমি এক প্রকাণ্ড অরণ্যে একাকী গভীর চলার মধ্যে ডুবে গেছি। কখন যে জ্বর আসবে, তার কোনো ঠিক ছিল না। জ্বর আসত ক্লাসঘরে, রাস্তায়, খেলার সময়ে। হু হু করে বয়ে আসত শীত। শরীর কাঁটা দিত, কাঁপতে থাকত। স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে কিংবা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ উল্টো দিকে ঘুরে কিংবা খেলার মাঝখানে খেলা থামিয়ে আমি বাড়ির দিকে দৌড়াতে থাকতাম। গায়ে লেপ দিয়ে চেপে ধরতেন মা। কাঁপুনি থামত টইটম্বুর জ্বর এসে গেলে। বাইরে তখন উত্তুরে হাওয়া মর্মর শব্দ তুলছে জলপাই গাছে। বারান্দায় কাঠের জাফরির তলায় ক্ষয়ে যাওয়া সিমেন্টের খাঁজে হেলে সাপ এসে ব্যাঙ ধরেছে। মর্মন্তুদ শেষ কঁ কঁ শব্দ করছে ব্যাঙটা। জ্বরের মধ্যে সেই ব্যাঙের ডাক, সাপ মারার শব্দ, উত্তরের বাতাসÑআমার আচ্ছন্নতার মধ্যে তীব্র ভয় হয়ে দেখা দিত। মনে হতো, আমি বাঁচব না। তখন মা এসে আমার মাথাটা কোলে নিতেন। একবার জ্বরের সময় মনে হচ্ছিল পাতকুয়ার মধ্যে ডুবে গেছি। প্রবল জলপ্রপাতের শব্দ। আমি তখন লাল ওয়ালক্লথের ওপর শুয়ে আছি। মা মাথায় পানি ঢালছেন। সেই জ্বরতপ্ত শরীরেও মায়ের গা থেকে মাছের আঁশটে গন্ধ পেয়েছিলাম। মা মাছ কাটা রেখে আমার মাথায় বরফঠান্ডা পানি ঢালছিলেন।
এবার ঢাকায় গিয়ে প্রবল জ্বর হয়েছিল। প্রতিবার হয়। জ্বরের ঘোরে এক রাতে একাকী ঘরে আমি। তখন মায়ের মতো একজন আসে অবচেতনে। ঘোর ঘোর অবস্থায় টের পাই নদীর জল স্থির, শান্ত। বহুদূর পর্যন্ত শান্ত মহা নীলাকাশ। দিগ্বলয়ে হস্তীযূথের মতো মেঘখণ্ড চলে যাচ্ছে। ওপারে কাশবনে বাতাসের খেলা। প্রবল জ্বর হলে শৈশবের অনেক স্মৃতি ভেসে ওঠে। যখন মা ছিল, মায়ের সাথে যখন ঢাপরকাঠি যেতাম নৌকায় চড়ে, সেসব স্মৃতি সহজে ভোলা যায় না। অনেক এলেবেলে কথা, এলেবেলে শাসন, এলেবেলে আদরে ভরা ছিল আমার শৈশব। মনে পড়ে, বিকেলবেলায় মা অল্প একটু সাজগোজ করতেন। উড়ুখুড়ো চুল টান করে খোঁপা বাঁধতেন, মুখ মেজে একটু ক্রিম দিতেন। পরিষ্কার একখানা শাড়ি পরতেন। নিঃসঙ্গ মা বিষণ্ন মুখে রোদে দেওয়া জামা-কাপড় তুলে এনে আলনা গোছাতেন। তখন তাকে বড় অচেনা লাগত, মনে হতো যেন বাড়িতে কেউ বেড়াতে এসেছে। অচেনা লাগত সবকিছুই। পুবের ভিট ঘেঁষে ওঠা লাউ-ডগা, বড় ঘরের বারান্দায় প্রকাণ্ড জাঁতাখানা, দক্ষিণের ঘরের বাইরে ঠেস দিয়ে রাখা সাইকেল। মনে হতো, এসব জিনিস সঠিক জায়গায় নেই, কে যেন উল্টেপাল্টে রেখে গেছে। হঠাৎ মনে হতো, দক্ষিণের ঘর বড় ঘরের জায়গায় চলে গেছে, বড় ঘর জায়গা পাল্টে বসেছে দক্ষিণের ঘরে। বাগানের পশ্চিম কোণে যে কলার ঝাড়, সেটা যেন ছিল উত্তরের দিকে। এমনই ওলট-পালট লাগত সবকিছু। মনে হতো বিকেলের মায়াবী আলোয় যখন সব জায়গায় এক অপার্থিব হলুদ আলো এসে পড়ে, তখন বদল হয়ে যায় সব জায়গার চেহারা, সব চেনা চিহ্ন মুছে যায়। ঘুমটা ভেঙে গেলেই মা হারিয়ে যান।
আজব এই শহরে!
আমার জীবনটা যদি তিন ভাগে ভাগ করি, তাহলে দেখা যায় প্রতি ভাগ প্রায় সমান। প্রথম ভাগ বরিশাল, দ্বিতীয় ভাগ ঢাকা এবং তৃতীয় ভাগ টরন্টো। শেষ ভাগটা ক্রমেই বাড়ছে। হয়তো বাড়তেই থাকবে যদি না সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফিরে যাই। সত্যি কি ফেরা যায়! কার কাছে ফিরব! তবু বছর বছর ছুটে যাই। মা, বাবা, ভাই, বোনরা ঘুমিয়ে আছে কবরে। আপনজনদের জন্য টান অনুভব করি, তাই যাই। দেশের জন্য টান অনুভব করি, তাই যাই। আবার ফিরে আসি। কেন ফিরতে হয়! নিজের সন্তান, পরিবারের টানে ফিরে আসি। এই যে ছুটে চলা, মৃত্যুতেই এর যবনিকাপাত ঘটবে। সেটা কখন জানা নেই। জানা থাকলে ভালো হতো। বস্তুত, আমি মনের কাছে খুবই একা। চিবুকের কাছেও একা। আমাকে বেশি মানুষ বোঝে না। খুবই অল্প কয়েকজন আমাকে বোঝে, প্রশ্রয় দেয়, সহ্য করে, তাই হাজার মাইল দূরে হলেও ছুটে যাই। এ রকম সারা পৃথিবীতেই একজন-দুজন আছে, যারা আমাকে ভালোবাসে। টরন্টোতেও আছে। তবে আমাকে না দেখেও অনেকে ভালোবাসা প্রকাশ করে। এটাই বেঁচে থাকার আনন্দ।
এই যে এতটা বছর বিদেশে আছি, নিজের কাছেই অবাক লাগে। আমার কখনো বিদেশে স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল না। কোনো কারণও নেই। মা একবার আমাকে বলেছিল, ‘তুমি কেন বিদেশ গেলা! ওই দেশে কী আছে! নিজের দেশ ছেড়ে কেউ যায়!’ মা লেখাপড়া জানতেন না কিন্তু দেশপ্রেম ছিল প্রগাঢ়। মা সত্যি বুঝেছিলেন বিদেশে আসলে কিছু নাই। আলগা চাকচিক্য, বাগাড়ম্বর, বাড়ি-গাড়ির গল্প, মেকি বন্ধুত্ব আর হাসি ছাড়া কিছু নাই। মা কখনো চাননি আমি বিদেশে যাই কিন্তু কখনো আমাকে আটকাতেও চাননি। সন্তান দূরে চলে গেলে বাবা-মা কতখানি শূন্য হয়ে যায়, সেটা এখন আমি টের পাই। এতটা বছরেও আমার নিঃসঙ্গতা ঘোচেনি। কখনো ঘুচবেও না। কারও সাথেই আমার বেশি কথা থাকে না। এমনকি আমার স্ত্রীর সাথেও না। সে কথা বলে, আমি মন দিয়ে শুনি। আমি ভালো শ্রোতা। যেখানেই যাই মানুষ অনেক কথা বলে। কথা বলতে মানুষ ভালোবাসে। মানুষ অনেক কোলাহলপ্রিয়। মানুষ তার নিজের কথাই বেশি বলে। অন্যের কথা একদম শুনতে চায় না। অন্যকে বুঝতে চায় না। সেটা আমি বিদেশে পা দিয়েই টের পেয়েছিলাম। এই শহরটাকে আমি পছন্দ করি। তাই দিনমান একলা ঘুরতে আমার খারাপ লাগে না। মানুষের সঙ্গ ছাড়াও আমি দিব্যি বেঁচে আছি। গর্তেই সুখে আছি। আমি কি একটু কিম্ভুত!
অনেক দিন পর সেদিন টরন্টোর বাঙালি অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ এলাকায় গিয়েছিলাম। নয়ন সরকারের সঙ্গে আমার কিছু কাজ ছিল। নয়নের দোকান ৩০০০ ড্যানফোর্থের দোতলায়। নয়নের দোকানের ঠিক নিচেই বিক্রমপুর মিষ্টান্ন বা এই জাতীয় একটা দোকান আছে। ছোট্ট আউটলেট কিন্তু বেশ চালু। সারাক্ষণই ভিড়ভাট্টা লেগেই থাকে। বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। ভেতরে একজন বা দুজনের বেশি জায়গা হয় না। বেশির ভাগ ক্রেতা যারা নতুন ভিজিটর হিসেবে এসেছেন তারা এবং বেশির ভাগই রিফিউজি ক্লেম করেছেন, বিকেল হলে এখানেই ঘোরাঘুরি করেন। তাদের ভাষাও তেমন বোধগম্য নয়। সম্ভবত ইংরেজিই হবে বা অন্য কোনো ভাষা। এখানকার ল’ অফিসগুলো মহাব্যস্ত এসব ক্লায়েন্ট নিয়ে। তেমনি একজন ব্যস্ত নারীকে কালকে দেখলাম। সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ কেউ হবেন। ঘটনাটা খুলে বলি।
আমি চায়ের জন্য বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে একজন তরুণ। সম্ভবত শহরে তিনি নতুন। আমার পেছনে আরও সাত-আটজন তরুণ। দোকানের ভেতরে আরো দুজন। আকস্মিক আমাদের সবাইকে হতবাক করে দিয়ে, দেখি দেখি বলে ব্যস্ত নারীটি দ্রুততার সঙ্গে কান্নি মেরে দোকানে ঢুকে গেলেন। ঢোকার সময় বললেন, একটা অত্যন্ত জরুরি কাজ আছে। একটা জিনিস রেখে গেছি। বেশ ফরসা মতো নারী। গোলগাল। ক্যাপসুল সাইজ। কিন্তু সুশ্রী দেখতে। তিনি ভেতরে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় খাবার অর্ডার করতে লাগলেন। তেমন তাড়া নেই আর। শান্ত ভঙ্গি। চা, শিঙাড়া, ভেজিটেবল রোল, পিঠা ইত্যাদি নিলেন। খাবার নিয়ে যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে অমায়িক একটা হাসি দিয়ে বললেন, ক্লায়েন্ট বসে আছে তো, তাই একটু তাড়া ছিল, এই বলে ৩০০০ এর বেসমেন্টে নেমে গেলেন। আমার সামনের তরুণ আস্তে করে নিয়মভঙ্গের জন্য একটা অশ্লীল গালি দিল, যা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।
যন্ত্রণাময় এই পৃথিবীতে আমরা মানুষেরা
মাঝে মাঝে মনটা কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। আউলা ঝাউলা লাগে। সবকিছু খাপছাড়া মনে হয়। জগতের সবকিছু বিষময় লাগে। কোনো কিছুতে মন বসে না। কোনো কিছু ভালো লাগে না। খেতে ভালো লাগে না, পড়তে ভালো লাগে না, সিনেমা দেখতে ভালো লাগে না, বেড়াতে ভালো লাগে না, গল্প করতে ভালো লাগে না। এমনকি প্রিয় গানও বেসুরো হয়ে কানে বাজে। এর পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ হয়তো নেই, তবু মন বিক্ষিপ্ত লাগে। তখন ভালো ভালো কথাও ভালো লাগে না। সংসার অসহ্য লাগে, বাজার করতে অসহ্য লাগে, চারপাশের মানুষজনকে অসহ্য লাগে। ঠিক সেই রকম মুহূর্তে লেখার টেবিলে বসে বসে ঝিমোই। ডেক্সটপের সাদা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি। ফেসবুক লগ অন করি। কিন্তু কিছুই মন দিয়ে দেখি না। সুন্দর সুন্দর নারী-পুরুষের ছবিও আর সুন্দর লাগে না, সুন্দর লেখাও হৃদয়ঙ্গম হয় না। সব ঝাপসা মনে হয়। কম্পিউটারের সামনে বসা মানেই তো লেখা নয়, এটা একটা অভ্যাসের মতো। সব লেখকেরই মনে হয় এমন দৈন্য দশা হয়। বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যন্ত্রণাময় সময় পার করেন কিন্তু কিছুই লিখতে পারেন না বা কিছুই লিখেন না। কোনো একদিন ঘুম ভেঙে হয়তো একটা মেসেজ আশা করছি হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে, বিশেষ কারও রিপ্লাই আশা করছি কিন্তু সেই রিপ্লাই আসে না, মেসেজ সিনও হয় নাই, তখন মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। কেন মেসেজ এল না! নানা শঙ্কা কাজ করে। কোনো বিপদ হয়নি তো! কিন্তু জানার কোনো উপায় নেই। তখন খুবই হেল্পলেস লাগে। দ্রুত লিখে দ্রুত উত্তর পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ, সেটা ঘটে না বলে হতাশা ভর করে। একসময় পত্রমিতালি করতাম। একশর মতো পত্রমিতা ছিল আমার। চিঠি লিখে এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম। কবে আসবে চিঠির উত্তর! কবে ডাকপিয়ন সাইকেলের ঘণ্টি বাজিয়ে সুগন্ধি মাখা এনভেলাপ এনে হাতে দেবে! সেই মুহূর্তের আনন্দের কোনো তুলনা নাই। ডাক বিভাগ কি থাকবে শেষ পর্যন্ত! পার্সেল আদান-প্রদান ছাড়া চিঠির আবেদন কি শেষ হয়ে যাবে! নতুন প্রজন্ম জানেই না ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদানের কী তীব্র আবেদন ছিল! এখন চ্যাটবক্সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সবাই। সোশ্যাল মিডিয়া দূরের মানুষকে কাছে এনে দিয়েছে। নৈকট্য তৈরি করতে সাহায্য করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপদ যেমন আছে, বিপদমুক্তিও আছে। শঙ্কা যেমন আছে, আনন্দও আছে। অপেক্ষা যেমন আছে, উপেক্ষাও আছে।
কিছু মানুষ আছে খুবই নির্লিপ্ত। আবেগের মূল্য দিতে পারে না। আমার মধ্যেও নির্লিপ্ততা আছে। উদাসীনতা আছে। এটা আমার স্বভাবের অংশ। এটা আমি সব সময় কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করি। তবে আমার উদাসীনতা কোনোভাবেই উপেক্ষা নয়। আমি কাউকে উপেক্ষা করি না। আমি নিজেও উপেক্ষা জিনিসটা একদম নিতে পারি না। আজকের পৃথিবীতে সবকিছু এত দ্রুত ঘটছে, এত দ্রুত সবকিছু ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ভাইরাল হচ্ছে যে, কোনো একটা ঘটনায় মনোনিবেশ করা যাচ্ছে না। আপনজন বিয়োগে শোক পর্যন্ত করার সময় নেই। শোকের আয়ু দ্রুত কমে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এত এত ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটছে, আপনজন চলে যাচ্ছে, ভালোবাসার মানুষ চিরবিদায় নিচ্ছে, রোগে-শোকে কাতর পৃথিবী। একটা থেকে আরেকটা ঘটছে প্রতিনিয়ত। চোখের পানি শুকোতে না শুকোতেই অন্য একটা ঘটনা সামনে চলে আসছে। অচিন্ত্যনীয় সব ঘটনা, হৃদয় বিদীর্ণ করা শোকগাথা। কিন্তু কোনোটারই স্থায়িত্ব নেই। তাই আবেগটাও ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। এসব যখনই ভাবি, তখনই মনটা এলোমেলো হয়ে যায়।
কী এক যন্ত্রণাময় পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। এই যে যুদ্ধে গাজায় হাজার হাজার নারী-শিশু মারা যাচ্ছে, তাও আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করছে না। পৃথিবী নির্বাক তাকিয়ে দেখছে। এত অন্যায়, এত ক্ষমতার দাপট পৃথিবীজুড়ে। অথচ মানুষ কত অসহায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছে মানুষ। শুধু তো যুদ্ধই নয়, পৃথিবীজুড়েই শুধু অন্যায়। ঘরে, বাইরে, সমাজে, রাষ্ট্রে সর্বত্র অন্যায়। এত অন্যায়, অনাচার, অনিয়ম, দুঃখ, কষ্ট, শোক সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের নেই। এত কিছু একসাথে মানুষ ধারণ করতে পারে না। মানুষ দুঃখ, কষ্ট, শোক ভুলে যায়, ভুলতে পারে বলেই বাঁচে, টিকে থাকে। আমরা সবাই কষ্ট ভুলে থাকতে চাই। মা-বাবার মৃত্যু বা প্রিয় সন্তানের মৃত্যুও আমরা সহ্য করি, প্রিয়তম স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যু সহ্য করি। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ভুলে যায় ঠিকই কিন্তু হারিয়ে যায় না। যখন নির্জনতা বা একাকিত্ব গ্রাস করে, তখন আপনজনেরা সামনে চলে আসে। আমার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। আপন মানুষদের জন্য, যাদের ভালোবেসেছি বা যেসব আপনজন হারিয়েছি, তাদের জন্য একটা কষ্টকর অনুভূতি, একটা যন্ত্রণা অহর্নিশ আমাকে ভোগায়, আমাকে এলোমেলো করে দেয়। আউলা ঝাউলা করে দেয়। -টরন্টো
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078