
সেদিন আমার এক বন্ধু আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন, ‘এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্ভব নয়। কারণ আমাদের কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধা নেই, ভালোবাসা নেই। এই আকার আর নিরাকারের যুদ্ধ আজীবন চলবেই।’
কথা হলো ঝগড়াটা কী নিয়ে? একদিকে মূর্তি পূজা, আবার অন্যদিকে একেশ্বরবাদ। এক পক্ষ আকারে আছেন, আরেক পক্ষ নিরাকারে। শুধু হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে নয়, হিন্দু-হিন্দু, মুসলমান-মুসলমানের মধ্যেও। বিষয় ধর্ম। কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধা নেই, ভালোবাসা নেই। সবাই ভেবেই নিয়েছেন ‘আমারটাইতো শ্রেষ্ঠ!’
আমার বড় ফুপু পান খেতে ভালোবাসতেন। গায়ের রংটা ছিল দুধে আলতায় মেশানো। পান খেয়ে মুখ লাল করে তিনি যখন কথা বলতেন, আমরা তখন তাঁর সুন্দর মুখখানার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকতাম। আমার ফুপু স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষিত হননি। কিন্তু তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের একজন আরজ আলী মাতব্বর। জগৎ সংসারের সবকিছুতেই তাঁর জ্ঞান ছিল টনটনে। তিনি আর ইহধামে নেই, কিন্তু ধর্ম নিয়ে তাঁর ছিল গভীর পড়াশুনা।
ছেলেবেলায় তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,
‘ফুপু এই যে ইসলাম ধর্মের শরিয়ত আর মারিফত নিয়ে এত কথাবার্তা, এই নিয়ে কত ঝগড়া-ফ্যাসাদ! বিষয়টা কী? একটু বুঝাইয়া বলো দেখি?
ফুপু তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় বলতে শুরু করেন, ‘ধর, তোর একটা সুন্দর বাগান আছে। সেই বাগানে সুন্দর ফুল ফুটেছে, গাছে গাছে ফলে ফুলে নুয়ে আছে। এখন এই বাগানে ঢুকে তোর সাধের ফুলগুলোকে যাতে গরু-ছাগল বা অন্য কোন ইতর প্রাণী নষ্ট না করতে পারে, সে জন্যে তোর দরকার কাঁটাতারের বেড়া। তাই না?
আমি বললাম, ‘ অবশ্যই।’
ফুপু বললেন, ‘এই বেড়াটাই হলো শরিয়ত।’
আচ্ছা বুঝলাম। বেড়াটাই হলো শরিয়ত। তাহলে মারিফত কি?
‘মারিফত হলো এই যে বেড়া দিয়ে ঘেরা বাগানে কত শত ফুল আর ফলগুলো সুন্দর করে ফুটে আছে, সেসব হলো মারিফত! শরিয়তের কাজ মারিফতকে আগলে রাখা। যাতে বাইরে থেকে কেউ সেসব নষ্ট করতে না পারে। মারিফত ছাড়া শরিয়ত অঢ়ল, আবার শরিয়ত ছাড়া মারিফত বাঁচে না।’
নাহ! সেই ছেলেবেলায় ফুপুর এই রূপকধর্মী কথাবর্তা গভীর মানে বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যখন অনেক বড় হলাম, তখন ফুপুর কথাগুলো বুঝতে শুরু করলাম। তবে এটাও লক্ষ্য করলাম, বর্তমান সময়ে ফুপুর এই কথাগুলো গুড়িয়ে দিতে একদল উদ্যত তরবারি হাতে নিয়ে আমার কানের পাশেই তাক করে দাঁড়িয়ে আছে!
বিশিষ্ট লেখক গবেষক এবং চিন্তক ক্যারেন আর্মস্ট্রং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The battle for God’ বলেছেন, ‘ধর্ম শুধুই মানুষের বিশ্বাস আর গল্প-কাহিনী নয়, বরং ধর্ম হলো একজন মানুষ বাস্তব জীবনে কি পালন করছে, তাই।’
এবার আকার আর নিরাকার নিয়ে যুগ যুগ ধরে হিন্দু-মুসলমানের যে ঝসড়া, সেই দিকে একটু আলোকপাত করা যাক। মুসলমানদের বিশ্বাস আল্লাহ নিরাকার। আল্লাহর কোন আকার নেই। তিনিই জগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং উপাস্য। তার কোনো শরিক নেই। কোনো সমকক্ষ নেই। আল্লাহতায়ালা নিজ সত্ত্বায় ও গুণাবলীতে একক ও অদ্বিতীয়। দুনিয়ার কোনো বস্তু তাঁর সদৃশ নয়। গুণাবলীর ক্ষেত্রেও তিনি অদ্বিতীয়। পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখ আছে, ‘তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোনো কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।’ (সুরা শূরা : ১১)
সনাতন হিন্দু ধর্মেও রয়েছে সেই একেশ্বরবাদে বিশ্বাস। প্রাচীন ঋষিরা বলেছেন, ‘ঈশ্বরের কোনো নির্দিষ্ট রূপ নেই। তাই সে কারণেই বলা হয় ব্রহ্ম নিরাকার, তাই তিনি অপরূপ। ঋকবেদে বলা আছে ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’ অর্থাৎ ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ঈশ্বর সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, তিনি ‘অবাংমনসগোচর’ অর্থাৎ তাকে মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- ‘না চস্য কসুজ জানিত না কধিপহ’
অর্থ- ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোনো বাবা-মা নেই, তাঁর কোন প্রভু নেই, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই’।
শ্রীমদভগবদগীতা-১৮/৬১ বলা হয়েছে, ‘ঈশ্বর সকল ভূতপ্রাণীর হৃদয়ে বাস করেন।’
ছান্দেগ্য উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ২ নম্বর পরিচ্ছেদের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- ‘একাম এবাদ্বিতীইয়ম।’ অর্থ- ‘স্রষ্টা মাত্র একজনই, দ্বিতীয় কেউ নেই।’
ঠিক কোরআনেও একইভাবে বলা আছে, ‘আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়।’ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) যা চান, তাই করেন।’ (সুরা বুরুজ : ১৬)। তিনি বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ও পশুপাখি সৃষ্টি করেছেন। গাছপালা-তরুলতা সৃষ্টি করেছেন। ফল-ফসলে পৃথিবী সাজান। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্ম ও মৃত্যু দেন।
কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য, যা কিছু জমিনে রয়েছে সেসব।’ (সুরা বাকারা : ২৯)
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একেশ্বরবাদে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তাহলে হিন্দু-মুসলমানে এই একেশ্বরবাদ নিয়ে এত ঝগড়া ফ্যাসাদ কেনো? দুটো ধর্মতো সেই একই কথা বলছে!
এবার চলুন দেব-দেবীদের নিয়ে কিছু আলাপ আলোচনা করি। দেব-দেবী কারা? লেখক এবং গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী তাঁর ‘দেবতার মানবায়ন’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘ঈশ্বর কিংবা ব্রহ্মের সঙ্গে দেবতাদের বিলক্ষণ তফাৎ আছে।’ তার মানে হলো দেব-দেবীগণ ঈশ্বর নন। বুঝতে হবে ঈশ্বর চাইলে তিনি বিভিন্ন শক্তি এবং গুণের অধিকারী হতে পারেন। হিন্দু ধর্মে দেব-দেবীগণ মূর্তির আকার নিয়ে সেই ঈশ্বরের শক্তিকেই রূপকভাবে প্রকাশ করেন। ইসলাম ধর্মেও আল্লাহর রয়েছে ৯৯টি নাম। কিন্তু আল্লাহ নিরাকার। তাঁর প্রতিটি নাম একেকটি শক্তি। যেমন-
১. রহমানুর রাহিম, অর্থাৎ তিনি দয়ালু।
২. মালিক, অর্থাৎ তিনি অধিপতি।
৩. কুদ্দুস, অর্থাৎ তিনি নিখুঁত।
৪. তাঁর নাম আল আজিজ, অর্থাৎ তিনি সবচেয়ে সম্মানীত।
৫. তিনি আল ওয়াদুদ, অর্থাৎ তিনি স্নেহশীল।
এভাবে ৯৯টি নামে আল্লাহ তাঁর শক্তি এবং রূপ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে হিন্দু ধর্মেও ঠিক তাই। ঈশ্বরের এক একটি গুণকেই প্রকাশ করছে দেবতা। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি যে কোন রূপ ধারণ করতে পারেন।
ঈশ্বরের শক্তির রূপ- কালী, নবদুর্গা, কার্তিক।
বিদ্যার রূপ- সরস্বতী, গণেশ।
ঐশ্বর্যের রূপ- লক্ষ্মী, কূবের।
মৃত্যুর রূপ- কালভৈরব, ভূতনাথ, যম।
তেমনি ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন, তখন ব্রহ্মা (দেব)।
যখন পালন করেন, তখন বিষ্ণু (দেব)।
আর প্রলয়রূপে, শিব (দেব)।
তিনি যখন আলোপ্রদান করেন, তখন তিনি সূর্য ও চন্দ্র। তিনি আবার পঞ্চভূত- ক্ষিতি, অপ, মরুৎ, বোম, তেজ।
এভাবে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুণের প্রকাশ হয়।
তাহলে সমস্যাটি কোথায়, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। হিন্দু ধর্মে পূজা একটি রূপক বিষয় মাত্র। গীতায় বলা আছে, যারা নিরাকার, নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করেন, তারাও ঈশ্বরপ্রাপ্ত হন। তাহলে এতক্ষণে মূর্তি বিষয়টি আমাদের মধ্যে পরিস্কার হওয়ার কথা। মূর্তিগুলি ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ ও কার্যকারীতাকেই প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন- ১. ব্রহ্মার ৪টি মাথা কেনো? কারণ ভগবানের ঐ গুণবাচক নাম ব্রহ্মা অর্থাৎ স্রষ্টা যিনি ৪টি বেদের উৎপত্তি করেছিলেন। এই গুণটিকে বোঝাবার জন্য ব্রহ্মার মূর্তিতে ৪টি মাথা দেওয়া হয়েছে।
২. শিবের তিনটি চোখ কেনো? কারণ ভগবানের ঐ গুণবাচক নামে ৩টি গুণ- সত্ত্বঃ,রজোঃ ও তমোঃ প্রকাশ হচ্ছে। এর জন্য শিবের মূর্তিতে তিনটি চোখ দেয়া হয়েছে।
শ্রীমদভগবদগীতা ৭.২১ তে বলা হয়েছে-
‘যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।
তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম।’
‘পরমাত্মারূপে আমি সকলের হৃদয়েই বিরাজ করি। যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করেতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।’
কোরান শরীফেও সেই একই কথা।
{ وَللَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [البقرة-১১৫]
পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত। (সূরা বাকারা-১১৫)
সবাই সবার ধর্মকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে। তা করুক। কিন্তু অন্য ধর্মকে কেউ সহ্য করতে পারে না কেনো? এই প্রশ্ন নিয়ে আমি আবার দ্বারস্থ হয়েছিলাম আমার সেই ফুপুর কাছে।
ফুপু তাঁর ভাষায় বলেছিলেন, ‘ধর তুই গুলিস্তান থাইকা বাসে কইরা ময়মনসিংহ যাবি। তাইলে ঢাকা থাইকা ময়মনসিংহ ভৈরব দিয়াও যাওয়া যায়, গাজীপুর দিয়াও যাওয়া যায়, আবার নরসিংদী দিয়াও যাওয়া যায়। তুই কোন রাস্তায় যাবি, সেটা তোর বিষয়। বাবারে, এখানে রাস্তার নামটা শুধু আলাদা। কিন্তু যাত্রাপথের লক্ষ্য কিন্তু একটাই। নাকি? তুই যাবি ময়মনসিংহ। একই ডেস্টিনেশন। সমস্যা হলো সবাই মনে করে তার রাস্তাটাই বুঝি একমাত্র রাস্তা! তখন আর কেউ কাউরে আর সহ্য করতে পারে না।’
হায়! এই সাধারণ তত্ত্ব কথাটি আমার বিশ্ববিদ্যালয় না পড়ুয়া ফুপু যদি বুঝতে পারেন, তাহলে বড় বড় পন্ডিতরা কেনো বুঝতে পারেন না? কেনো তারা এই বিষয়গুলো নিয়েই সারাক্ষণ ঝগড়া করে বেড়ান? এটাই আমার মাথায় আসে না। আল্লাহতায়ালা কোরান শরীফে বলছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। ’ (সূরা আনআম : ১০৮)
একটি হাদিসে রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করলো, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না, অথচ তার সুগন্ধ ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৯৫)
গীতায় বলছে, ‘যে যথা মাং প্রপদ্যান্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম, মম বর্ত্মানুবর্তস্তে মনুষ্যা : পার্থ সর্বশঃ’ (গীতা, জ্ঞানযোগ, শ্লোক-১১, পৃষ্ঠা-১২৮)। যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে, আমি তাকে সেভাবেই তুষ্ট করি। মনুষ্যগণ সর্বপ্রকারে আমার পথেরই অনুসরণ করে। অর্থাৎ মানুষ যে পথই অনুসরণ করুক না কেনো, সব পথেই আমাতে পৌঁছাতে পারে।’
তাহলে আমাদের ‘কাইজা’টা কি নিয়ে ভাই? সব ধর্মতো সেই একই কথা বলছে, একই পথের কথাই বলছে! কেনো এই ধর্ম নিয়ে কাটাকাটি আর মারামারি??
স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।
স্বস্তি নোস্তার্ক্ষ্যাে অরিষ্টনেমিঃ।
স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।
(ঋগ্বেদ ১।৮৯।৮, ৬)
পারস্পরিক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ ছাড়া এর থেকে আপাত কোন পরিত্রাণ আমাদের হাতে নেই। এসব দেখেশুনে আমার নিউইয়র্কের বন্ধু ধনেশ গোস্বামী একটা প্রস্তাব করলেন, ‘চলেন হিন্দু-মুলসমানে বিয়া-শাদির চল ব্যপকভাবে শুরু কইরা দেই। কাজটা নিজেরাই শুরু করি। আমার একটা মেয়ে আছে। দেইখেন কোন ভালো মুসলমান পাত্র পাওয়া যায় কিনা!’
ধনেশদার কথাই হয়তো সত্য। আমি তাঁর আবেগকে শ্রদ্ধা জানাই। পরস্পরকে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। অতএব ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা। শান্তি, শান্তি, শান্তি।
কথা হলো ঝগড়াটা কী নিয়ে? একদিকে মূর্তি পূজা, আবার অন্যদিকে একেশ্বরবাদ। এক পক্ষ আকারে আছেন, আরেক পক্ষ নিরাকারে। শুধু হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে নয়, হিন্দু-হিন্দু, মুসলমান-মুসলমানের মধ্যেও। বিষয় ধর্ম। কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধা নেই, ভালোবাসা নেই। সবাই ভেবেই নিয়েছেন ‘আমারটাইতো শ্রেষ্ঠ!’
আমার বড় ফুপু পান খেতে ভালোবাসতেন। গায়ের রংটা ছিল দুধে আলতায় মেশানো। পান খেয়ে মুখ লাল করে তিনি যখন কথা বলতেন, আমরা তখন তাঁর সুন্দর মুখখানার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকতাম। আমার ফুপু স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষিত হননি। কিন্তু তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের একজন আরজ আলী মাতব্বর। জগৎ সংসারের সবকিছুতেই তাঁর জ্ঞান ছিল টনটনে। তিনি আর ইহধামে নেই, কিন্তু ধর্ম নিয়ে তাঁর ছিল গভীর পড়াশুনা।
ছেলেবেলায় তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,
‘ফুপু এই যে ইসলাম ধর্মের শরিয়ত আর মারিফত নিয়ে এত কথাবার্তা, এই নিয়ে কত ঝগড়া-ফ্যাসাদ! বিষয়টা কী? একটু বুঝাইয়া বলো দেখি?
ফুপু তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় বলতে শুরু করেন, ‘ধর, তোর একটা সুন্দর বাগান আছে। সেই বাগানে সুন্দর ফুল ফুটেছে, গাছে গাছে ফলে ফুলে নুয়ে আছে। এখন এই বাগানে ঢুকে তোর সাধের ফুলগুলোকে যাতে গরু-ছাগল বা অন্য কোন ইতর প্রাণী নষ্ট না করতে পারে, সে জন্যে তোর দরকার কাঁটাতারের বেড়া। তাই না?
আমি বললাম, ‘ অবশ্যই।’
ফুপু বললেন, ‘এই বেড়াটাই হলো শরিয়ত।’
আচ্ছা বুঝলাম। বেড়াটাই হলো শরিয়ত। তাহলে মারিফত কি?
‘মারিফত হলো এই যে বেড়া দিয়ে ঘেরা বাগানে কত শত ফুল আর ফলগুলো সুন্দর করে ফুটে আছে, সেসব হলো মারিফত! শরিয়তের কাজ মারিফতকে আগলে রাখা। যাতে বাইরে থেকে কেউ সেসব নষ্ট করতে না পারে। মারিফত ছাড়া শরিয়ত অঢ়ল, আবার শরিয়ত ছাড়া মারিফত বাঁচে না।’
নাহ! সেই ছেলেবেলায় ফুপুর এই রূপকধর্মী কথাবর্তা গভীর মানে বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যখন অনেক বড় হলাম, তখন ফুপুর কথাগুলো বুঝতে শুরু করলাম। তবে এটাও লক্ষ্য করলাম, বর্তমান সময়ে ফুপুর এই কথাগুলো গুড়িয়ে দিতে একদল উদ্যত তরবারি হাতে নিয়ে আমার কানের পাশেই তাক করে দাঁড়িয়ে আছে!
বিশিষ্ট লেখক গবেষক এবং চিন্তক ক্যারেন আর্মস্ট্রং তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The battle for God’ বলেছেন, ‘ধর্ম শুধুই মানুষের বিশ্বাস আর গল্প-কাহিনী নয়, বরং ধর্ম হলো একজন মানুষ বাস্তব জীবনে কি পালন করছে, তাই।’
এবার আকার আর নিরাকার নিয়ে যুগ যুগ ধরে হিন্দু-মুসলমানের যে ঝসড়া, সেই দিকে একটু আলোকপাত করা যাক। মুসলমানদের বিশ্বাস আল্লাহ নিরাকার। আল্লাহর কোন আকার নেই। তিনিই জগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং উপাস্য। তার কোনো শরিক নেই। কোনো সমকক্ষ নেই। আল্লাহতায়ালা নিজ সত্ত্বায় ও গুণাবলীতে একক ও অদ্বিতীয়। দুনিয়ার কোনো বস্তু তাঁর সদৃশ নয়। গুণাবলীর ক্ষেত্রেও তিনি অদ্বিতীয়। পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখ আছে, ‘তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোনো কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।’ (সুরা শূরা : ১১)
সনাতন হিন্দু ধর্মেও রয়েছে সেই একেশ্বরবাদে বিশ্বাস। প্রাচীন ঋষিরা বলেছেন, ‘ঈশ্বরের কোনো নির্দিষ্ট রূপ নেই। তাই সে কারণেই বলা হয় ব্রহ্ম নিরাকার, তাই তিনি অপরূপ। ঋকবেদে বলা আছে ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’ অর্থাৎ ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ঈশ্বর সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, তিনি ‘অবাংমনসগোচর’ অর্থাৎ তাকে মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- ‘না চস্য কসুজ জানিত না কধিপহ’
অর্থ- ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোনো বাবা-মা নেই, তাঁর কোন প্রভু নেই, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই’।
শ্রীমদভগবদগীতা-১৮/৬১ বলা হয়েছে, ‘ঈশ্বর সকল ভূতপ্রাণীর হৃদয়ে বাস করেন।’
ছান্দেগ্য উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ২ নম্বর পরিচ্ছেদের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- ‘একাম এবাদ্বিতীইয়ম।’ অর্থ- ‘স্রষ্টা মাত্র একজনই, দ্বিতীয় কেউ নেই।’
ঠিক কোরআনেও একইভাবে বলা আছে, ‘আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়।’ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) যা চান, তাই করেন।’ (সুরা বুরুজ : ১৬)। তিনি বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ও পশুপাখি সৃষ্টি করেছেন। গাছপালা-তরুলতা সৃষ্টি করেছেন। ফল-ফসলে পৃথিবী সাজান। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্ম ও মৃত্যু দেন।
কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, ‘তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য, যা কিছু জমিনে রয়েছে সেসব।’ (সুরা বাকারা : ২৯)
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একেশ্বরবাদে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তাহলে হিন্দু-মুসলমানে এই একেশ্বরবাদ নিয়ে এত ঝগড়া ফ্যাসাদ কেনো? দুটো ধর্মতো সেই একই কথা বলছে!
এবার চলুন দেব-দেবীদের নিয়ে কিছু আলাপ আলোচনা করি। দেব-দেবী কারা? লেখক এবং গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী তাঁর ‘দেবতার মানবায়ন’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘ঈশ্বর কিংবা ব্রহ্মের সঙ্গে দেবতাদের বিলক্ষণ তফাৎ আছে।’ তার মানে হলো দেব-দেবীগণ ঈশ্বর নন। বুঝতে হবে ঈশ্বর চাইলে তিনি বিভিন্ন শক্তি এবং গুণের অধিকারী হতে পারেন। হিন্দু ধর্মে দেব-দেবীগণ মূর্তির আকার নিয়ে সেই ঈশ্বরের শক্তিকেই রূপকভাবে প্রকাশ করেন। ইসলাম ধর্মেও আল্লাহর রয়েছে ৯৯টি নাম। কিন্তু আল্লাহ নিরাকার। তাঁর প্রতিটি নাম একেকটি শক্তি। যেমন-
১. রহমানুর রাহিম, অর্থাৎ তিনি দয়ালু।
২. মালিক, অর্থাৎ তিনি অধিপতি।
৩. কুদ্দুস, অর্থাৎ তিনি নিখুঁত।
৪. তাঁর নাম আল আজিজ, অর্থাৎ তিনি সবচেয়ে সম্মানীত।
৫. তিনি আল ওয়াদুদ, অর্থাৎ তিনি স্নেহশীল।
এভাবে ৯৯টি নামে আল্লাহ তাঁর শক্তি এবং রূপ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে হিন্দু ধর্মেও ঠিক তাই। ঈশ্বরের এক একটি গুণকেই প্রকাশ করছে দেবতা। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি যে কোন রূপ ধারণ করতে পারেন।
ঈশ্বরের শক্তির রূপ- কালী, নবদুর্গা, কার্তিক।
বিদ্যার রূপ- সরস্বতী, গণেশ।
ঐশ্বর্যের রূপ- লক্ষ্মী, কূবের।
মৃত্যুর রূপ- কালভৈরব, ভূতনাথ, যম।
তেমনি ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন, তখন ব্রহ্মা (দেব)।
যখন পালন করেন, তখন বিষ্ণু (দেব)।
আর প্রলয়রূপে, শিব (দেব)।
তিনি যখন আলোপ্রদান করেন, তখন তিনি সূর্য ও চন্দ্র। তিনি আবার পঞ্চভূত- ক্ষিতি, অপ, মরুৎ, বোম, তেজ।
এভাবে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুণের প্রকাশ হয়।
তাহলে সমস্যাটি কোথায়, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। হিন্দু ধর্মে পূজা একটি রূপক বিষয় মাত্র। গীতায় বলা আছে, যারা নিরাকার, নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করেন, তারাও ঈশ্বরপ্রাপ্ত হন। তাহলে এতক্ষণে মূর্তি বিষয়টি আমাদের মধ্যে পরিস্কার হওয়ার কথা। মূর্তিগুলি ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ ও কার্যকারীতাকেই প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন- ১. ব্রহ্মার ৪টি মাথা কেনো? কারণ ভগবানের ঐ গুণবাচক নাম ব্রহ্মা অর্থাৎ স্রষ্টা যিনি ৪টি বেদের উৎপত্তি করেছিলেন। এই গুণটিকে বোঝাবার জন্য ব্রহ্মার মূর্তিতে ৪টি মাথা দেওয়া হয়েছে।
২. শিবের তিনটি চোখ কেনো? কারণ ভগবানের ঐ গুণবাচক নামে ৩টি গুণ- সত্ত্বঃ,রজোঃ ও তমোঃ প্রকাশ হচ্ছে। এর জন্য শিবের মূর্তিতে তিনটি চোখ দেয়া হয়েছে।
শ্রীমদভগবদগীতা ৭.২১ তে বলা হয়েছে-
‘যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।
তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম।’
‘পরমাত্মারূপে আমি সকলের হৃদয়েই বিরাজ করি। যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করেতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।’
কোরান শরীফেও সেই একই কথা।
{ وَللَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [البقرة-১১৫]
পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত। (সূরা বাকারা-১১৫)
সবাই সবার ধর্মকেই শ্রেষ্ঠ মনে করে। তা করুক। কিন্তু অন্য ধর্মকে কেউ সহ্য করতে পারে না কেনো? এই প্রশ্ন নিয়ে আমি আবার দ্বারস্থ হয়েছিলাম আমার সেই ফুপুর কাছে।
ফুপু তাঁর ভাষায় বলেছিলেন, ‘ধর তুই গুলিস্তান থাইকা বাসে কইরা ময়মনসিংহ যাবি। তাইলে ঢাকা থাইকা ময়মনসিংহ ভৈরব দিয়াও যাওয়া যায়, গাজীপুর দিয়াও যাওয়া যায়, আবার নরসিংদী দিয়াও যাওয়া যায়। তুই কোন রাস্তায় যাবি, সেটা তোর বিষয়। বাবারে, এখানে রাস্তার নামটা শুধু আলাদা। কিন্তু যাত্রাপথের লক্ষ্য কিন্তু একটাই। নাকি? তুই যাবি ময়মনসিংহ। একই ডেস্টিনেশন। সমস্যা হলো সবাই মনে করে তার রাস্তাটাই বুঝি একমাত্র রাস্তা! তখন আর কেউ কাউরে আর সহ্য করতে পারে না।’
হায়! এই সাধারণ তত্ত্ব কথাটি আমার বিশ্ববিদ্যালয় না পড়ুয়া ফুপু যদি বুঝতে পারেন, তাহলে বড় বড় পন্ডিতরা কেনো বুঝতে পারেন না? কেনো তারা এই বিষয়গুলো নিয়েই সারাক্ষণ ঝগড়া করে বেড়ান? এটাই আমার মাথায় আসে না। আল্লাহতায়ালা কোরান শরীফে বলছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। ’ (সূরা আনআম : ১০৮)
একটি হাদিসে রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করলো, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না, অথচ তার সুগন্ধ ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৯৫)
গীতায় বলছে, ‘যে যথা মাং প্রপদ্যান্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম, মম বর্ত্মানুবর্তস্তে মনুষ্যা : পার্থ সর্বশঃ’ (গীতা, জ্ঞানযোগ, শ্লোক-১১, পৃষ্ঠা-১২৮)। যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে, আমি তাকে সেভাবেই তুষ্ট করি। মনুষ্যগণ সর্বপ্রকারে আমার পথেরই অনুসরণ করে। অর্থাৎ মানুষ যে পথই অনুসরণ করুক না কেনো, সব পথেই আমাতে পৌঁছাতে পারে।’
তাহলে আমাদের ‘কাইজা’টা কি নিয়ে ভাই? সব ধর্মতো সেই একই কথা বলছে, একই পথের কথাই বলছে! কেনো এই ধর্ম নিয়ে কাটাকাটি আর মারামারি??
স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।
স্বস্তি নোস্তার্ক্ষ্যাে অরিষ্টনেমিঃ।
স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।
(ঋগ্বেদ ১।৮৯।৮, ৬)
পারস্পরিক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ ছাড়া এর থেকে আপাত কোন পরিত্রাণ আমাদের হাতে নেই। এসব দেখেশুনে আমার নিউইয়র্কের বন্ধু ধনেশ গোস্বামী একটা প্রস্তাব করলেন, ‘চলেন হিন্দু-মুলসমানে বিয়া-শাদির চল ব্যপকভাবে শুরু কইরা দেই। কাজটা নিজেরাই শুরু করি। আমার একটা মেয়ে আছে। দেইখেন কোন ভালো মুসলমান পাত্র পাওয়া যায় কিনা!’
ধনেশদার কথাই হয়তো সত্য। আমি তাঁর আবেগকে শ্রদ্ধা জানাই। পরস্পরকে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। অতএব ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা। শান্তি, শান্তি, শান্তি।