বিন্টুরং ও ব্যক্তিগত হেরেমখানা

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৫, ২৩:৪৩ , চলতি সংখ্যা
সুযোগ পেলেই ঢোঁড়া সাপের শরীর মাড়িয়ে
আমরা ছুটে যেতাম পুরোনো মঠের ধারে।
বর-বউ খেলায় বউ হতে হতে কেবল জানতাম-
নবীন সূর্যের মতো আমাদের বয়স তখনো অনেক কম।

ঝাঁ-চকচকে রোদ মিলিয়ে যেতেই-
বাঁশপাতার আড়ালে উঁকি দিত ডাহুকছানার দল।
কখনো-বা ঝুলে থাকা বিন্টুরং আর গন্ধগোকুলের মুখ দেখে-
আমরা মনের বোতাম খুলে কুশল বিনিময় করতাম।

কেবল ভরা বর্ষার কালে ডুমুর প্রিয় ও লাজুক-
বিন্টুরংকে যখন বেদম পিটিয়ে মেরে ফেলা হতো,
পোয়াতি সন্ধ্যার আকাশের দিকে চেয়ে
আমরা ঈশ্বরকে খুঁজতাম।
কুম্ভু রাশির কাকিমাও তার গাম্ভীর্য গ্রীবাটি নামিয়ে
অসহায় দৃষ্টিতে নিথর পড়ে থাকা বিন্টুরংকে দেখতেন।

দুধেল গাই, আর দুধের কারবারি;
দুইয়ের ভেদটুকু বোঝা আমাদের কখনোই প্রয়োজন হয়নি।
শুধু প্রশ্নহীন জেনেছিলাম-
দুই মাথায় টক্কর লাগলে শিং গজায়!
সোল্লাসে মিথ্যে বললে খসে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত জিহ্বা।
আঁধারে নয়; শত শ্রদ্ধার আধারেতে
আমরা পূর্বপুরুষদের সমাধিতে প্রদীপ জ্বেলে দিতাম।
চৌরাসিয়ার বাঁশি কী আমাদের জানা ছিল না।
কেবল ঘণ্টি শুনলেই ছুটে যেতাম
পলান-কাকুর কাঁধে ঝোলানো কদমা ডালার পিছে।
আমরা সাদাকে সাদাই জানতাম; মিছামিছিকে মিছে।

গ্রামের মাস্টার মশাই ভাগ্য ফেরার স্বপ্ন দেখতেন
এই আমাদের তামাটে মুখের দিকে চেয়ে।
সাদামাটা যাপনের পরও
পরিত্যক্ত প্রাচীন বিশ্বাসে ভর করে
প্রায়শই বলতেন-
নতুন পানি, নতুন ধান, নতুন কিশতি!
নতুন পায়ের ছাপ ধরেই হবে
উজ্জ্বল ও আলোময় এক নতুন ভোরের উত্তরণ!
ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়ে থাকলেও তার ভেতরকার-
তপ্ত মানবিক মনটি খুব একটা যে টের পেতাম তেমন নয়।

শিমুলের ডালে আগুন হয়ে ফুটতে ফুটতে-
আমরা প্রতিদিন বড় হয়ে উঠি।
টান টান স্রোতের মতো,
উদয়ী ঘুঘুর ডাকে হঠাৎ একদিন-
কপাল থেকে চোখ অবধি নেমে আসা চুলগুলো
সরাবার ভান করে-
আমরা চিনে যাই আমাদের বয়সী বসন্তের ফুল।

সুযোগ এখনো আসে!
আমরা ছুটে যাইÑহাডসন থেকে হাওয়াই,
মিয়ামি থেকে মিসিসিপি;
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন হয়ে নীল জলের নায়াগ্রার ধার!
মাথায় হ্যাট পরে ক্যাপাচিনো হাতে বসিÑ
সেন্ট্রাল পার্কের বেঞ্চে;
কানুন-কালো সময়ের ভিড়ে হাতড়ে বেড়াই পরিচিত মুখ।
ভাবি, এই বুঝি লেকের জলে ভেসে উঠবে ছোট্ট ডাহুক,
বুক থেকে নেমে যাবে বহুদিনের জমে থাকা অনন্ত ভার।

আমাদের ঘরজুড়ে এখন লোবানের ধোঁয়া,
আমাদের পোশাকে পরিপুষ্ট ক্যালভেন ক্লেইনের ঘ্রাণ;
কাব্য সংসার না হলেও আমরা নিয়ম করে কবিতা পড়ি।
আমরা দেখা হলেই একে অপরকে বুকে বুকে ধরি।

হিপহপ মিউজিকে ডুবে
কীভাবে চিয়ার্স করতে হয় আমাদের সব জানা।
ক্ষত-আহ্লাদ শেষে নিজস্ব ড্রয়িংরুমই
এখন আমাদের একেকটি ব্যক্তিগত হেরেমখানা।
গন্তব্যের গাড়িটি কখন থামবে, না জানলেওÑ
নাগরিক বন্ধুরা এক পিরামিডেই হব সমাহিত;
এটুকু মানি।
আমরা এখন পাতক আর পাপীর ভেদটুকুও জানি।

কেবল জানা হয় না, ফেলে আসা স্মৃতিচিহ্নে
সেই অতীত রহস্য-রুমালের খোঁজ।
আমরা ভুলে গেছি বিন্টুরঙের নির্মল চাহনি।
ভুলে গেছি চুমু এঁকে দেওয়া কুমারী চিঠির হলুদ সেই খাম।
আমাদের ভালোবাসাগুলোর বদল হয়েছে-

বদলে গেছে-
সুরামিশ্রিত কর্পূর জীবনে প্রিয় তালিকার নাম।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078