
মার্কিন সরকারের ১৬টি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরম আস্থাভাজন, ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ধর্মানুরাগী তুলসী গ্যাবার্ড সম্প্রতি ভারত সফর করার সময় বিজেপি মিডিয়া সেলের অন্যতম একটি, এনডিটিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এনডিটিভির প্রশ্নকারী বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রশ্নটি এমনভাবে করেছেন, যেন বাংলাদেশের প্রধান কাজই হলো হিন্দু নির্যাতন, তুলসীও সেভাবেই উত্তর দিয়েছেনÑএটা নিয় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন, ট্রাম্প মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইত্যাদি ইত্যাদি। তুলসী গ্যাবার্ডের উত্তর নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দেশের নিয়মিত ও সোশ্যাল মিডিয়া, এমনকি নিউইয়র্কের গণমাধ্যমেও বেশ শোরগোল হয়েছে। আসলে ওই বক্তব্য নিয়ে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নিয়ে জর্জ বুশের আমল থেকে শুরু করে সকল ইহুদি ও হিন্দু মিডিয়া অহর্নিশি চর্বিত হয়ে এখন ক্লিশেতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে কতটুকু হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে, সেটা আমেরিকান দূতাবাস জানে এবং তারা সকল খবরই ওয়াশিংটনে পাঠায়। সে জন্যই তুলসী গ্যাবার্ডের সাক্ষাৎকার নিয়ে ভারতীয়দের একটু বাড়াবাড়ি দেখে দুই দিন পর স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র টনি ব্রুস বলে দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু ভারত বারবার এই বিষয়টি নিয়ে চর্বণ করছে তিনটি কারণে : ১. ড. ইউনূস সরকার ভারতের দাদাগিরিকে সম্মান করেনি, বরং পাকিস্তানের দিকে হাত বাড়িয়েছে; তাই তাকে হটাতে হবে, ২. পতিত শেখ হাসিনাকে বা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে হবে এবং ৩. হিন্দু নির্যাতনের কাহিনি বেচে বিজেপির ভোটব্যাংক বাড়াতে হবে।
তুলসী গ্যাবার্ড অবশ্য কৌশলে একটি কথা আগেই বলে দেওয়াতে বাংলাদেশ নিয়ে এনডিটিভি বেশি দূর যেতে পারেনি। তিনি প্রথমেই বলে দিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এখানে লক্ষণীয় যে, তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, এখানে আসার আগেই তিনি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিশ্চয় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলেছেন এবং তুলসী গ্যাবার্ড যদি তার অভিযোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করতেন, তাহলে তিনি বলতেন না সবে মাত্র আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। দ্বিতীয়ত, তুলসী গ্যাবার্ড জানেন, ভারত শেখ হাসিনার প্রতি অতিশয় সংবেদনশীল, কিন্তু তার অপসারণটি ছিল আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান চলে না। জাতীয় নিরাপত্তার কারণে রিপাবলিকান পার্টি কোনো বিদেশি রেজিম পরিবর্তন ঘটালে পরবর্তীকালের ডেমোক্র্যাটরা তা নিয়ে কোনো কথা বলে না বা ডেমোক্র্যাটরা করলে রিপাবলিকানরাও করে না। সে কারণেই নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরকালে এক বোকা ভারতীয় সাংবাদিক ডিপ স্টেট দিয়ে শেখ হাসিনাকে সরানো নিয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, আমেরিকান ডিপ স্টেট এ কাজ করেনি, বরং নরেন্দ্র মোদির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ কাজটি ভালো করেন, যা তিনি দীর্ঘদিন করে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের এই উত্তরটির তাৎপর্য অনেক। শেখ হাসিনার সরকার অন্তত দুবার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর শারীরিক আক্রমণে ইন্ধন জুগিয়েছিল, প্রথমবার ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সুজন নেতা বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে রাতে ডিনার খেতে গেলে ছাত্রলীগের ছেলেরা তার গাড়িতে আক্রমণ চালায়। দ্বিতীয়বার ২০২৩ সালে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একজন মানবাধিকার কর্মীর বাড়িতে গেলে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক একদল লোক সেই বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেয়। পৃথিবীর যত বড় শক্তিশালী দেশই হোক, আমেরিকার রাষ্ট্রদূতদের প্রতি শারীরিক আক্রমণ আমেরিকা কখনো উপেক্ষা করে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব, প্রশাসনে তুলসী গ্যাবার্ডসহ সকল ভারতীয় প্রভাব এবং ড. ইউনূসকে ট্রাম্প অপছন্দ করলেও হাসিনাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা আমেরিকা করবে না, সেটা শতভাগ নিশ্চিত। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যখন এলিট ফোর্স র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা, তখন সেই প্রজ্ঞাপনপত্রের চতুর্থ লাইনে বলা হয়, ওইসব মানবাধিকার লঙ্ঘন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ‘Widespread allegations of serious human rights abuse in Bangladesh by the Rapid Action Battalion (RAB)—as part of the Bangladeshi governmentÕs war on drugs—threaten U.S. national security interests by undermining the rule of law and respect for human rights and fundamental freedoms, and the economic prosperity of the people of Bangladesh.’
শেখ হাসিনার পতনের পর মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছিল, আমেরিকা তার ভিসা বাতিল করেছে। আবার বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে দাঁড়ানোর মতো কোনো অবস্থা নেই। এসব বৈরী পরিস্থিতি সত্ত্বেও তুলসী গ্যাবার্ডকে ব্যবহার করে হাসিনাকে পুনর্বাসন করা হবে-ভারতীয় মিডিয়ার এসব প্রোপাগান্ডা শুধুই আষাঢ়ে গল্প। অতি সম্প্রতি ট্রাম্পের খরচ কমানোর মেন্টর ইলন মাস্ককে পেন্টাগনে চীন-আমেরিকা যুদ্ধ নিয়ে ব্রিফিং করার সংবাদ নিউইয়র্ক টাইমস ফাঁস করে দিলে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। ইলন মাস্ক, যে ফাঁস করেছে তাকে বিচারের আওতায় আনতে বলেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, নিউইয়র্ক টাইমস ফেক নিউজ ছেপেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, চীন যুদ্ধ নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই নেই। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস তার রিপোর্টে অবিচল থেকেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ চীনের সঙ্গে আমেরিকার একটা যুদ্ধ বা বোঝাপড়া না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে মেজর কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
--নিউইয়র্ক
তুলসী গ্যাবার্ড অবশ্য কৌশলে একটি কথা আগেই বলে দেওয়াতে বাংলাদেশ নিয়ে এনডিটিভি বেশি দূর যেতে পারেনি। তিনি প্রথমেই বলে দিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এখানে লক্ষণীয় যে, তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, এখানে আসার আগেই তিনি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিশ্চয় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলেছেন এবং তুলসী গ্যাবার্ড যদি তার অভিযোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করতেন, তাহলে তিনি বলতেন না সবে মাত্র আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। দ্বিতীয়ত, তুলসী গ্যাবার্ড জানেন, ভারত শেখ হাসিনার প্রতি অতিশয় সংবেদনশীল, কিন্তু তার অপসারণটি ছিল আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান চলে না। জাতীয় নিরাপত্তার কারণে রিপাবলিকান পার্টি কোনো বিদেশি রেজিম পরিবর্তন ঘটালে পরবর্তীকালের ডেমোক্র্যাটরা তা নিয়ে কোনো কথা বলে না বা ডেমোক্র্যাটরা করলে রিপাবলিকানরাও করে না। সে কারণেই নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরকালে এক বোকা ভারতীয় সাংবাদিক ডিপ স্টেট দিয়ে শেখ হাসিনাকে সরানো নিয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, আমেরিকান ডিপ স্টেট এ কাজ করেনি, বরং নরেন্দ্র মোদির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ কাজটি ভালো করেন, যা তিনি দীর্ঘদিন করে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের এই উত্তরটির তাৎপর্য অনেক। শেখ হাসিনার সরকার অন্তত দুবার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর শারীরিক আক্রমণে ইন্ধন জুগিয়েছিল, প্রথমবার ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সুজন নেতা বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে রাতে ডিনার খেতে গেলে ছাত্রলীগের ছেলেরা তার গাড়িতে আক্রমণ চালায়। দ্বিতীয়বার ২০২৩ সালে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একজন মানবাধিকার কর্মীর বাড়িতে গেলে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক একদল লোক সেই বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেয়। পৃথিবীর যত বড় শক্তিশালী দেশই হোক, আমেরিকার রাষ্ট্রদূতদের প্রতি শারীরিক আক্রমণ আমেরিকা কখনো উপেক্ষা করে না।
ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব, প্রশাসনে তুলসী গ্যাবার্ডসহ সকল ভারতীয় প্রভাব এবং ড. ইউনূসকে ট্রাম্প অপছন্দ করলেও হাসিনাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা আমেরিকা করবে না, সেটা শতভাগ নিশ্চিত। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যখন এলিট ফোর্স র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা, তখন সেই প্রজ্ঞাপনপত্রের চতুর্থ লাইনে বলা হয়, ওইসব মানবাধিকার লঙ্ঘন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ‘Widespread allegations of serious human rights abuse in Bangladesh by the Rapid Action Battalion (RAB)—as part of the Bangladeshi governmentÕs war on drugs—threaten U.S. national security interests by undermining the rule of law and respect for human rights and fundamental freedoms, and the economic prosperity of the people of Bangladesh.’
শেখ হাসিনার পতনের পর মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছিল, আমেরিকা তার ভিসা বাতিল করেছে। আবার বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে দাঁড়ানোর মতো কোনো অবস্থা নেই। এসব বৈরী পরিস্থিতি সত্ত্বেও তুলসী গ্যাবার্ডকে ব্যবহার করে হাসিনাকে পুনর্বাসন করা হবে-ভারতীয় মিডিয়ার এসব প্রোপাগান্ডা শুধুই আষাঢ়ে গল্প। অতি সম্প্রতি ট্রাম্পের খরচ কমানোর মেন্টর ইলন মাস্ককে পেন্টাগনে চীন-আমেরিকা যুদ্ধ নিয়ে ব্রিফিং করার সংবাদ নিউইয়র্ক টাইমস ফাঁস করে দিলে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। ইলন মাস্ক, যে ফাঁস করেছে তাকে বিচারের আওতায় আনতে বলেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, নিউইয়র্ক টাইমস ফেক নিউজ ছেপেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, চীন যুদ্ধ নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই নেই। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস তার রিপোর্টে অবিচল থেকেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ চীনের সঙ্গে আমেরিকার একটা যুদ্ধ বা বোঝাপড়া না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে মেজর কোনো পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
--নিউইয়র্ক