জীবন ও যুদ্ধের স্মৃতিকথা

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০০:০০ , চলতি সংখ্যা
মায়ের কাছ থেকে শোনা এ গল্প--বাবা বাঙালি পুলিশ অফিসার। মাকে বুঝিয়ে বলতেনÑমনে হয় যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। মনটাকে শক্ত রেখো। আর আমার জন্য দোয়া করবে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। তখন ঢাকা শহর ফাঁকা। রাজারবাগে আগুনের শিখা, বাবার অবস্থান খুব বেশি দূরে নয়। মায়ের মনে অনাকাক্সিক্ষত প্রশ্ন জাগে? বুঝেও না বোঝার ভান করেন। রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েন। আমাদের সঙ্গে মামা ছিলেন।
অন্ধকার রাত। মা-মামা আমাদের বুকে নেন। প্রতিবেশী মামা বাসা বদল করেন। অন্য পাড়ায় চলে যান। আমরা তার বাড়িতে উঠি। পরদিন বাড্ডায় ফুফুর বাসায় যাই। সেখান থেকে নানাবাড়ি বিক্রমপুরে। সবশেষে দাদাবাড়ি মানিকগঞ্জে পৌঁছাই। স্মৃতিতে যতটুকু মনে আছে, বাবা মাত্র দুবার বাড়িতে আসেন। আমাদের খোঁজ নেন। মায়ের দীর্ঘ পদযাত্রা, ৩৫ মাইল হাঁটেন। আমাদের কোলে-পিঠে নেন। অজানা-অচেনা পথ, অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
মা নানার জ্যেষ্ঠ সন্তান। নানা কঠিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। বড় ভাইকে নিয়ে বরিশালে যান। মানিকগঞ্জ থেকে বরিশাল। যাতায়াত-ব্যবস্থা ভালো ছিল না। একদিকে মা-নানা, অপরদিকে বাবা। আরেক দিকে আমরা ভাইবোন। মায়ের ত্রিমুখী মায়া। মফস্বল শহর। নির্জন পরিবেশ। নিঝুম সন্ধ্যা। যষ্ঠ শ্রেণিতে বড় ভাই অধ্যয়নরত। বৈদ্যুতিক আলো নেই। কোনো প্রদীপের আলো নেই। প্রতিটি মুহূর্ত শঙ্কা। তিনজন মানুষ হঠাৎ সামনে এক ছায়ামূর্তি-বিভীষিকা। রিকশাওয়ালার মুখ শুষ্ক। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মায়ের বয়স খুব কম। মায়ের দিকে দৃষ্টি। ভাইকে জিজ্ঞেস করে-
কোথায় যাচ্ছিস?
হাসপাতালে।
কেন যাচ্ছিস?
আমার নানা খুব অসুস্থ। নানাকে দেখতে যাচ্ছি।
তোর সাথে এই মেয়ে? তোর কে হন? বড় ভাইয়ের বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
সাহসের সাথে বলে-
আমার মা? আমার মা।
আমার মা।
যিনি সম্মানদাতা। তিনিই সম্মান দেন। বড় ভাই আর মা রক্ষা পান। ছায়ামূর্তি মিলিয়ে যায়। 
যুদ্ধ মানেই অনিরাপদ-আতঙ্ক-অনিশ্চয়তা-শঙ্কা ইত্যাদি। হাসপাতালে আসা-যাওয়া। নানা চিন্তিত। করুণ দৃষ্টি। মা নানার আদরের সন্তান। বড় সন্তান। সারাক্ষণ নানার শিয়রে বসে থাকতেন। নিউমোনিয়া এখন সাধারণ অসুখ। তখন চিকিৎসা এতটা উন্নত ছিল না। যুদ্ধের সময় অনেক কিছুই সম্ভব ছিল না। মাকে বলতে শুনেছি, ‘আমার বাবা ভালো চিকিৎসা পাননি।’
মামা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরেন। বিজয়ের উচ্ছ্বাস। বাবার দেখা পাননি। অনেক প্রতিকূলতা ছিল সত্যি। আমরা আমাদের বাবাকে ফিরে পেয়েছি। আমাদের আনন্দ। মা! মুক্তিযোদ্ধা মামা। বাবাকে (নানা) বিজয়ের পতাকা দেখতে পারেননি। মা আজীবন এই আফসোস করে গেছেন। একাত্তরের যুদ্ধে মা তার বাবাকে হারান।
লেখক : ফরমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিউইয়র্ক প্রবাসী।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078