ঈদের একাল-সেকাল

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ২৩:৫৩ , চলতি সংখ্যা
বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের প্রধান উৎসব ঈদ। ঈদ মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, এক অন্যতম আনন্দের দিন। এই ঈদকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। মুসলিমপ্রধান দেশে সারা বছরে যত পণ্য আর সেবা কেনাবেচা হয়, তার বড় অংশ হয় ঈদের সময়ে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ঈদ যেমন জাঁকজমক ও ব্যাপক উৎসবের আকার পেয়েছে, শুরুতে তেমন ছিল না। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ পরিবারে ঈদ উৎসবে কোনো ধুমধাম ছিল না।
মুঘলদের বঙ্গে আগমনের পরবর্তী সময়ে ঢাকার নবাব ও তাদের নায়েব, নাজিম এবং অভিজাত ধনিক-বণিক সম্প্রদায় ঘটা করে ঈদ উদযাপন করত। ঈদের চাঁদ দেখার পরপরই তারা কামান দেগে আনন্দ উৎসব শুরু করতেন। ঈদের দিনে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে এক ঈদগাহে নামাজ পড়তেন। নামাজ থেকে ফেরার পথে হাতি বা ঘোড়ার পিঠে বসে তারা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়ানো মানুষের দিকে পয়সা ছুড়ে দিতেন। পরবর্তী সময়ে দিল্লির মুঘলদের অনুকরণে ঢাকায় ঈদের মিছিল বের করা হতো এবং ঈদ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হতো।
বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার (১২০৪) অনেক আগে থেকেই পূর্ববঙ্গে ইসলাম অনুসরণের অনুষঙ্গ হিসেবে নামাজ, রোজা ও ঈদের প্রচলন ছিল। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত আব্বাসীয় খলিফাদের আমলের রৌপ্যমুদ্রা থেকে জানা যায়, অষ্টম দশকের দিকে পূর্ববঙ্গে বহিরাগত মুসলমানদের আগমন ঘটে। আর ওই বহিরাগত সুফি, দরবেশ, পীর, আউলিয়া এবং আরব, ইরানি বণিকদের মাধ্যমেই পূর্ববঙ্গে ইসলাম প্রচার, নামাজ, রোজা ও ঈদের প্রবর্তন হয়।
১৯৩৭ সাল থেকে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, কাজী নজরুল ইসলাম, আব্বাস উদ্দিন প্রমুখের রাজনীতি, সাহিত্য ও সংগীত ঈদকে সাধারণ মানুষের উৎসবে পরিণত হতে সাহায্য করে। রমজানের শেষে ঈদের চাঁদ দেখার যে আকুলতা, উৎসাহ, উদ্দীপনা বাংলার আবালবৃদ্ধের ছিল, তা বর্তমানে অনুপস্থিত।
আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমাদের দেশের নাম ছিল পাকিস্তান। তখন বাংলার গ্রামাঞ্চলে শিক্ষিত ও সম্পন্ন পরিবারের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। রোজার শেষ দিকে বাড়ির বউ-ঝিরা নানা রকম নকশি পিঠা তৈরি করে রোদে শুকিয়ে রাখত। শবে কদরের রাতে মেহেদির পাতা বেটে হাতে নানা রকম নকশা আঁকা হতো। ঈদের চাঁদ দেখার পর গৃহিণীরা চাল কুটে চালের গুঁড়ির পিঠা তৈরি করত। বাড়িতে পোষা মোরগ, হাঁস জবাই করে পরিবারের সবাই মিলে ঈদ উদ্্যাপন করত। তিনবেলা ভরপেট খাবার জোগানো সম্ভব হতো না, তেমন পরিবারের বাবা বিমর্ষ মুখে সন্তানদের কাছ থেকে পালিয়ে থাকতেন। তাদের একমাত্র ভরসা ছিল জাকাতের কাপড়, ফিতরার টাকা ও দান-খয়রাত। জাকাতের কাপড়ের জন্য গরিব মানুষেরা ঈদের দিন ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত। ইদানীং আবার ঈদ বানান নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক। ঈদ না ইদ-কোনটি সঠিক? ঈদ না ইদ-কোন বানানটি অধিক গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে আমাদের দেশের ভাষাবিশারদদের মধ্যে মতভিন্নতা চলছে। মানুষ দীর্ঘকাল কোনো বানান ব্যবহার করলে সেটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়। ঈদ বানানটি তেমনই। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের মতে, ‘ঈদ বানানটি প্রচলিত, আর ইদ বানানটি সংস্কারকৃত।’
সাম্প্রতিক কালে প্রতিবছর ঈদ উদযাপনে নানা অভিনবত্ব যুক্ত হচ্ছে। এখন শুধু এক দিনের ঈদ নয়, মাসজুড়ে চলে ঈদ পুনর্মিলনী, ঈদ আড্ডাসহ নানা নামের ঈদ উদযাপন।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078