দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজন পরিকল্পিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩১ , চলতি সংখ্যা
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেলেও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং সুসংগঠিত শিক্ষানীতির অনুপস্থিতি এই গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের দেশে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করার কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রকৃতপক্ষে আগামী দুই দশকে দেশে কোন খাতে কত সংখ্যক কর্মী প্রয়োজন হবে, কী ধরনের প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত দক্ষতা তাদের অর্জন করতে হবে, এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার অভাব লক্ষ করা যায়। ফলে দেশের তরুণসমাজ উদ্দেশ্যহীনভাবে উচ্চশিক্ষার দিকে ঝুঁকলেও তাদের সেই শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের হার অল্পশিক্ষিত বেকারের তুলনায় বেশি, যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবমুখিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অপরদিকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও কারিগরি শিক্ষার অভাবে বিভিন্ন শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সেবা খাতগুলো কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছে না। ফলে একদিকে শিক্ষিত বেকারত্ব বাড়ছে, অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তির অভাবে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। এই বাস্তবতায় পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে না তুললে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে পারবে না। তাই জীবনমুখী সময়োপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা (রেমিট্যান্স) অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। প্রতিবছর লাখ লাখ কর্মী বিদেশে পাড়ি জমালেও তাদের অধিকাংশই অদক্ষ বা স্বল্পদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, যা আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে সীমিত করে রাখে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মীদের উচ্চ মজুরি ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া গেলেও আমাদের শ্রমশক্তির বড় অংশই সেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষ কর্মীদের আয় স্বল্পদক্ষ কর্মীদের তুলনায় প্রায় ২-৩ গুণ বেশি, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে পরিকল্পিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রবাহ বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে কারিগরি, পেশাগত এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতার অভাবে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, নির্মাণশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির অভাব আমাদের বৈদেশিক আয়ের পরিমাণকে সীমিত করে রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফিলিপাইন দক্ষ কর্মী গঠনে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, বিশেষত নার্সিং, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে। ফলে ফিলিপিনোরা উন্নত বিশ্বে উচ্চ বেতনের চাকরি পেয়ে তাদের দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অধিকাংশ কর্মী তুলনামূলক কম মজুরির শ্রমে নিযুক্ত থাকেন, যা তাদের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো পরিকল্পিত শিক্ষা ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বাস্তবায়ন। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি শিক্ষা, ভাষা শিক্ষা এবং ডিজিটাল দক্ষতার প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া জরুরি। দক্ষ কর্মীদের মাধ্যমে আমরা কেবল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করব না, বরং তাদের জীবনমানেরও উন্নতি হবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে শিক্ষানবিশি (ইন্টার্নশিপ) একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। জীবনমুখী যুগোপযোগী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে শিক্ষানবিশির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে শিক্ষানবিশি সম্পন্ন করে, তারা দ্রুত চাকরি পায় এবং কর্মক্ষেত্রে অধিক সফল হয়। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফিনল্যান্ডসহ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষানবিশি ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে এবং কর্মসংস্থানের জন্য আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে তোলে।
বাংলাদেশেও কাজের অভিজ্ঞতাভিত্তিক এ ধরনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো এটি মূলত তাত্ত্বিক শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল, যেখানে অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগের সুযোগ সীমিত। ফলে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন করলেও চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। তা ছাড়া অধীত জ্ঞানের প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন না করার ফলে উদ্যোক্তা হওয়ার পরিবর্তে তারা চাকরির পেছনে ছুটতে বাধ্য হয় এবং প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বেকারত্বের শিকার হয়। কারিগরি ও পেশাভিত্তিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষানবিশি বাধ্যতামূলক করা গেলে শিল্প ও সেবা খাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তবে শিক্ষানবিশি কার্যক্রমকে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকারি-বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। শিল্প, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, নতুন উদ্যোগ (স্টার্টআপ) ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি সমন্বিত শিক্ষানবিশি কাঠামো তৈরি করা গেলে শিক্ষার্থীরা বাস্তব কর্মপরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবে। এর ফলে তারা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বহুগুণে বাড়াবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবিড় সংযোগ স্থাপন ও পারস্পরিক সহযোগিতা দেশের জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের অন্যতম কার্যকর উপায়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের উপযোগী দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সীমিত, তেমনি শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতেও দক্ষ কর্মীর অভাব প্রকট। এই ব্যবধান দূর করতে হলে এসব খাতের উদ্যোক্তাদের বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সরাসরি অংশীদারত্ব গড়ে তোলা জরুরি। বিভিন্ন খাতের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হলে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং চাকরির বাজারে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। উন্নত বিশ্বে শিক্ষাব্যবস্থা ও বিভিন্ন খাতের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের বহু সফল উদাহরণ রয়েছে। যেমন জার্মানির ‘ডুয়াল এডুকেশন সিস্টেম’ শিক্ষার্থীদের একযোগে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়। এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সরাসরি শিল্পকারখানায় বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে, ফলে তারা শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে না। এমনকি ভারতেও শিল্পকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় শিল্প খাতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও শিল্প ও ব্যবসা খাতের সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার এই সংযোগ স্থাপন করা গেলে তরুণদের জন্য শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে এবং শিল্প খাতও দক্ষ জনবল পাবে। এর জন্য একটি বিশেষ ‘অংশীদারত্ব মডেল’ তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে বিশেষ প্রশিক্ষণ, বৃত্তি ও শিক্ষানবিশির সুযোগ প্রদান নিশ্চিত করা হবে। এ ধরনের উদ্যোগ শুধু শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করবে না, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক অবদান রাখবে।
পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। কেবল সরকারি প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়; এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে কার্যকর অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন সফল অর্থনীতির দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, দক্ষ জনশক্তি গঠনে সরকার কৌশলগত নীতি প্রণয়ন ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করে, আর বেসরকারি খাত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সরাসরি দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশেও এই মডেল অনুসরণ করা গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং বিপুল জনসংখ্যাকে উৎপাদনশীল মানবসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
সরকারের উচিত বিভিন্ন শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতের চাহিদা বিশ্লেষণ করে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা, যা দেশীয় ও বৈশ্বিক শ্রমবাজারের প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নীতিগত সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা জরুরি। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তুলে একযোগে কাজ করে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করাও সময়ের দাবি। এ লক্ষ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে :
১. শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিশেষ দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করা। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে শিল্প ও বাণিজ্য খাতের চাহিদা অনুযায়ী বিশেষায়িত প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করা, যা স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবে।
২. সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা। সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, যেখানে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন করা হবে।
৩. নতুন উদ্যোগ পরিচর্যা কেন্দ্র (স্টার্টআপ ইনকিউবেশন সেন্টার) প্রতিষ্ঠা করা। নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে তরুণেরা নিজেদের চিন্তাভাবনাকে নতুন উদ্যোগ হিসেবে রূপ দিতে পারবে এবং নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।
এই পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের বিকল্প নেই। জনসংখ্যাকে প্রকৃত সম্পদে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে জীবনমুখী যুগোপযোগী করা ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি। আর এটি তখনই সম্ভব, যখন বিভিন্ন খাতের সঙ্গে শিক্ষার কার্যকর সমন্বয় সাধন করা হবে এবং সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে জনশক্তি পরিকল্পনা ও শিক্ষাক্রম আধুনিকায়ন করা হবে। পরিকল্পিত শিক্ষা, বাধ্যতামূলক শিক্ষানবিশি এবং প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা এমন এক মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারি, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থানকে সুসংহত করতে সক্ষম হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে কেবল সরকার নয়, শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তরুণসমাজকেও সম্মিলিতভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের উচিত দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ বাড়ানো, উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব প্রশিক্ষিত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা, আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন জীবনমুখী যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদেরও নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং ক্রমপরিবর্তনশীল শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে বিনিয়োগ শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে না; এটি আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আমাদের বিপুল জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা গেলে বাংলাদেশ শুধু আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে না, বরং বিশ্বের জন্য উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হতে পারবে।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078