অদৃশ্য

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৭ , চলতি সংখ্যা
(গত সংখ্যার পর)
অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থেকে মায়া নিচে আসতেই নোমান আর কাকার তর্ক শুনে দাঁড়িয়ে গেল দোতলার দরজার আড়ালে। কত দিন পর নোমানের কণ্ঠস্বর। অথচ কত অন্য রকম, কত অচেনা। কী বলছে নোমান?
বাবা, এক মাস ওদের সাথে থাকাকে মাত্র বলো না। আনিস লোকটিকে আমি ধরিয়ে দেবই।
যদি তা-ই করিস, তাহলে আমাকেও দে। আমিও সেদিন চেয়েছিলাম, ও হ্যাঁ বলুক, নয়তো আমার মায়া মাকে ওরা...
নোমান, তুই আনিসকে ধরিয়ে দিতে পারিস, কিন্তু এ পাড়ার সকলে ওর পক্ষে থাকবে। দেখে নিস। একবার ভেবে দেখ, যুদ্ধের ময়দানে নিরস্ত্র আমরা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করে চলেছি। যার ঘরে মুক্তিযোদ্ধা ছেলে, তার অবস্থা বোঝো বাবা। সেদিন যদি আনিস বুদ্ধি করে তোর কথা অমন করে না বলত, তাহলে আজ আমার লাশও খুঁজে পাইতি না। আর মায়া? পারতি সহ্য করে মেনে নিতে, যদি সেদিন মায়ার ইজ্জত লুটে নিত? হাসপাতালে বসে শুনলি, আনিস পাক আর্মিদের সাথে হাত মিলিয়েছে, আর কিছু শুনলি না কেন?
এবার মা কাকি কেঁদে ফেলে বলে, নোমান, মায়া ছাদে বসে আছে, তোকে নিজে বলবে বলে। ভাগ্যিস, তোদের কালেমে পড়া আক্দ করানো ছিল। যুদ্ধ বাধল, মায়াকে বউ করে ঘরে তোলা হলো না। এখন যে সময় নেই দেরি করার। এসব ঝগড়া থামা।
মা, কী বলছ? মায়া কী বলবে? কিসের সময় নেই?
তুই যে বাবা হবি, বাপ আমার!
যুদ্ধ নোমানের মতো মানুষকে বদলে দিতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ ঘরের মধ্যে দুজন দেখল, আর বাইরে একজন জানল।
যাত্রাপালার জল্লাদের মতো করে হা হা হা করে হেসে উঠল নোমান।
কী করে তোমরা ধরে নিলে ওর পেটে আমার সন্তান? যাদের ঘরে মিলিটারির আসা-যাওয়া ছিল?
আসা-যাওয়া? নোমান, তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ওই এক দিনের পর কোনো মিলিটারির পায়ের ছাপ আমার বাড়িতে পড়েনি। তোকে আমি চিনতে পারছি না। আমার চোখের সামনে থেকে বের হয়ে যা। আগে লিস্ট বানা তোর আঙ্কেলদের, যাদের জন্য টিকে থাকা দুষ্কর ছিল। পারবি না লিস্টে তাদের আনতে। ষোলো তারিখের পরে তাদের এক কাঁধের বন্দুক এখন অন্য কাঁধে। যাদের মুখে এত দিন ছিল পাকিস্তান জিন্দাবাদ। এখন তাদের মুখে উঠতে-বসতে জয় বাংলা।
তোর যেসব বন্ধু এত দিন বাড়িতে বসে ছিল, ষোলো তারিখ সকাল থেকে তারা এখন মুক্তিযোদ্ধা। আরও শুনবি, লুটপাট, মাস্তানি, খুনখারাবির কথা?
তোর কাছে রাতারাতি মুখোশ পরে যারা ঘুরছে, তারা স্বাধীনতাবিরোধী না। যে ক্ষতি করেনি, যে নিজের জীবন বিপন্ন করে আমাদের রক্ষা করেছে, সে দোষী?
মায়া নিচে নেমে এল। আনিস জানতে চাইল, নোমান কেমন আছে।
হ্যাঁ রে মায়া, আমার সাথে দেখা করতে এল না? না থাক, শরীরটা ঠিক হতে সময় লাগবে। আমিই যাব ওকে দেখতে।
না বাবা, তুমি যাবে না। আমরা কাল সকালে এই বাড়ি থেকে চলে যাব। আপাতত গ্রামে।
মানে?
জানতে চেয়ো না। তবে তুমি দোতলায় যাবে না।
আনিসের বোবা চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে, চলো, খেয়ে নিই।
মায়া খাবার গরম করে একসাথে খেতে বসে।
প্রচণ্ড ঝড়ের তাণ্ডবতার পরে স্তম্ভিত চারপাশের মতো মায়া গম্ভীর, শান্ত।
মায়ার এই আচরণে ভয় পেল আনিস। নোমান সীমান্তের হাসপাতালে আছে। সেই খবর এল মাসখানেক আগে। মায়া সেদিন সারা দিন পড়ে পড়ে কেঁদেছে। আর আজ নোমান আসতে না আসতেই কী হলো? কখন হলো। মায়ার এই অবস্থায় নোমান কী করে রাগ করে থাকতে পারে?
বাবা, সেই তখন থেকে ভাত নাড়ছ, খাচ্ছ না কেন?
হ্যাঁ রে, আমার খুব একটা খিদে নেই। তুই আজ অনেক তাড়াতাড়ি খেতে বসে গেলি।
ঠিক আছে। খেয়ো না। তবে কাপড় গুছিয়ে রেখো শোবার আগে। আপাতত একটাই স্যুটকেস নিয়ো। পরে এসে বাকি জিনিস নিয়ে যাব। আমাদের তো এ মাসের ভাড়া দেওয়াই আছে।
মায়া, আমি কি পুতুল, মা? কী হয়েছে না বললে আমি যাব কেন? আমি উপরে যাচ্ছি।
বাবা, তুমি অপমানিত হতে চাইলে যাও।
মায়া আর কথা বাড়াল না। ঘরে গিয়ে একটা ব্যাগ গুছিয়ে শুয়ে পড়ল।
ভীষণ অসার লাগছে। চোখজুড়ে ঘুম আসছে। মায়ার কানে ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ এল।
আনিস, মায়া কোথায়? মায়া কিছু বলেছে?
মনজুর, কী হয়েছে জানি না। মায়ার চুপ থাকা আমাকে কিছু আন্দাজ করতে দিলেও আমাকে যখন ও বলবে আমি তখন শুনব। এই মুহূর্তে ওর সিদ্ধান্তের পাশে আমাকে থাকতে হবে।
আনিস, মায়া আমার ছেলের বউ, তবে তার আগে ও আমার মেয়ে। এই বাড়িতে ওর অধিকার আছে। আমাদের কাছে ওর অধিকার আছে। নোমানের মাথার ঠিক নেই, ওর কথা...
মনজুর, আমাদের একটু সময় দরকার। তুমি অপরাধের গ্লানিতে ডুবে যেয়ো না।
আমরা কদিন ঘুরে আসি গ্রাম থেকে।
দরজা পর্যন্ত গিয়ে মনজুর কপাটে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। আনিস কাছে গিয়ে বলে, কী হয়েছে, মাথা ঘুরছে?
আনিসকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মনজুর বলে, এ কী হলো? আমরা তো এক যুদ্ধে হেরেই গেলাম। এ দেখার চেয়ে পঁচিশে মার্চে কেন মরে গেলাম না। নিজের সন্তানকে বোঝাতে পারলাম না, চোখের সামনে নিজের মেয়েকে মরে যেতে দেখা যত সহজ, তাকে ধর্ষণ করার জন্য একদল লোকের কাছে দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। একজন অভাগা পিতাকে দেখতে হয় তার মেয়ের হাত ধরে আছে ধর্ষক।
আনিস, বাপ হতে হয় এই অক্ষমতা বোঝার জন্য?
মনজুর কান্না থামিয়ে বলে, না, আমার ভুল হয়েছে। আমি কাঁদছি কেন? মনজুর হঠাৎ সব আবেগ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ডাকে-মায়া মা, কই?
মায়া ওর ঘরে আছে।
মনজুর মায়ার ঘরে ঢুকে বলে, মা, তোর সাথে আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আছি। আমি বাধা দেব না তোকে। যে ভালোবাসায় বিশ্বাসের অভাব থাকে, সেখানে সমাজের কথা ভেবে অপমান মেনে নিস না। তোর মা কাকি খুব ভেঙে পড়েছে। একবার দেখা করে আয়। হ্যাঁ রে মা, একবার এই বাপের বুকে আয়।
কাল রাত থেকে কাঁদেনি মায়া। প্রাণপণ চেষ্টা করে সেই শক্তি ধরে কাকার বুকে মাথা রাখল মায়া।
মনজুর বলে, আমাদের যদি দাদাভাই হয়, তবে তার নাম হবে আনিস মনজুর। তোর এই দুই বাবা এক হয়ে সারা জীবন তোর সাথে থাকবে। তোকে সকল বিপদ থেকে আগলে রাখবে। এবার চল আমার সাথে। তোর কোনো ভয় নাই মা, ওর তোর সামনে আসার সাহস নেই। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করলেই সাহসী হয়ে ওঠে না। বিনা অস্ত্রে যে লড়ে, সেই সাহসী। আজ থেকে তোর লড়াইর শুরু। ও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, তুই বিনা অস্ত্রে মনের জোড়ে লড়বি। এই যুদ্ধ যে সত্য সামনে তুলে ধরেছে, এই তোর অর্জন।
পাশের রুমে আলো না থাকলেও মায়া জানে, নোমান জেগেই আছে। যে ঘরে যেতে এত বছর ধরে কোনো বাধা ছিল না, আজ সেখানে যে বাধার দেয়াল দাঁড়িয়ে গেছে, তা আর কোনো দিন ভাঙবে না। অসংখ্য পেরেক তুলে ফেলা যায় কিন্তু কিছু পেরেক এতটাই অদৃশ্য থাকে, যা তুলে ফেলেও বন্ধ দরজা খোলা যায় না।
মা কাকি কান্নার দমকে কোনো কথাই বলতে পারেনি। মায়ার মাথায় ফুঁ দিয়ে, পেটে হাত রেখে বলতে চেয়েছিল, বাচ্চার কথা ভেবে খাওয়াদাওয়া করিস। মা কাকির এত কান্নায় মায়ার চোখে জল আসেনি। কে যেন বলছে, কাঁদবে না! কে বলে? শরীরের ভেতরে যে সত্য বড় হয়ে উঠছে, সে? মায়া শুকনো চোখে ধীর পায়ে বের হয়ে এল দোতলা থেকে একতলায়।
ডিসেম্বরের শেষ সকাল। আনিস ভাবে, স্মৃতিময় বিশ বছরের বাড়ি থেকে এ কোন স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছে? অপমানের জ্বালার তল থেকে উঠে আসছে ভালোবাসা। কাল রাতে কতবার মনে হয়েছে নোমানকে সেই আগের মতো বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, আনিস কাকুকে এত ভুল কী করে বুঝতে পারলে? কত কথা ছিল তোমাকে বলার।
ইচ্ছা হয়েছিল মায়াকে বলে, একবার ওর কাছে যাই। খুলে বলি সব। তার পরও ও যদি আমাকে ভুল বোঝে, বুঝুক। কিন্তু তোকে ভুল বুঝে ও কি ভালো থাকবে? মায়ার কাছে গিয়েও বলতে সাহস হয়নি। এ যেন অন্য, অচেনা মায়া।
দরজায় তালা দিতে গিয়ে আনিসের হাত থেকে চাবি পড়ে গেল। মায়া হাত থেকে চাবি নিয়ে লাগিয়ে দিয়ে বলে, চলো। আনিস অবাক হয়ে দেখে, একটুতে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া মেয়ের চোখে কোনো জল নেই। পাথর হয়ে গেছে মেয়েটা। কিন্তু পাথরও কি এতটা মৃত পাথর হয় যে বৃষ্টির ফোঁটাতেও ভেজে না?
গাড়িতে ড্রাইভারের পাশে মনজুর বসা। আনিস জানে, বলে লাভ নেই। সে যাবেই। মায়া আর আনিস পেছনের সিটে বসল। ঢাকা শহরের চেহারা বদলে গেছে। মিলিটারিদের গাড়ি নেই। অত সকালে বিজয়ের মিছিলও নেই। কাকতালীয় মনে হলো আনিসের। কোন বিজয়ের মিছিল আসবে তার জন্য!
ওরা দেখে সব দোকানে, বাড়িতে স্বাধীনতার পতাকা উড়ছে। পথচারীরা নির্ভয়ে হাঁটছে। এত নির্ভয়তার মধ্যেও যেন একটা গুমোট ভাব, হাহাকারের অস্পষ্ট ক্রন্দন।
কারা কাঁদছে? ভূমিষ্ঠ হবার পরই যেমন নবজাতক কেঁদে ওঠে তেমন-নতুন আলোতে টিকে থাকার কান্না। বাঁচবে তো শিশুটি? কেমনভাবে বাঁচবে? আর রক্তপাত দেখে? ভাইয়ে ভাইয়ে হিস্যা মেটাবার জন্য? বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ফাটলে পড়ে জন্মে নেওয়া শিশুদেশটি স্বাধীনভাবে বড় হবে তো?
আজ তো ওদের বাড়িতে মহা উৎসব হবার কথা ছিল। সে উৎসব স্বাধীন দেশে পা দিয়েই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেল।
আনিস নীরবতা ভাঙার জন্য বা মনজুরের সাথে কঠিন বিষয় আলাপ করার অভ্যাস থেকেই হোক, বলে, মনজুর, ভাবছি ভাড়াটেকে বলব, দু-চার মাসের মধ্যে বাড়ি খালি করে দিতে।
মনজুর ভাবে, কথাটি আনিস শোনাল মায়াকে। ঢাকা শহরে আনিসের বাড়ি থাকলেও এই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারেনি। মায়ার কাছে এই বাড়ি নিজের বাড়ি ছিল।
আনিসের প্রস্তাবে কেউ নড়েচড়ে উঠল না। আনিস নিজেও কী উত্তর চেয়েছিল?
কমলাপুর রেলস্টেশনই-বা এত জলদি চলে এল কী করে। সবকিছুতেই যেন সময় কম লাগছে।
নয় মাস সময় গড়িয়ে ধাত্রীর হাতে মায়ার ছেলে জন্ম নিল। মনজুর মমতা আগে থেকেই চলে এসেছিল।
যুদ্ধোত্তর গ্রাম-শহর সবই পাল্টে গেছে। যাবারই কথা, তবু মনজুর আর আনিস ভাবে, বাঙালি জাতি কি এতটাই হতবাক হবে বলে ভেবেছিল? যে ছেলেদের সাহসী ভূমিকার জন্য নিরাশার মধ্যে আশার আলো দেখেছিল, তাদের ভূমিকা আবার যখন দুঃসাহসের সীমা ছাড়িয়ে গেল, তখন জোরে না বললেও নিঃশ্বাস চেপে রেখেই বলে হায়রে স্বাধীনতা! হাতে যুদ্ধের অস্ত্র থাকার এই ফলাফল? এত দিন পাকিস্তানি জালেমদের বিরুদ্ধে এক কাঁধে লড়ে, এখন তারা স্বাধীন দেশের মাটিতে ফাটল ধরিয়ে দিল। গড়িয়ে পড়ছে নতুন রাজনীতির খেলার রক্ত। যারা ফাটলের কোনো পাশেই দাঁড়াতে পারল না, তারা কোথায় হারিয়ে গেল।
যারা শুধু দেশকে বাঁচাবে বলেই যুদ্ধে গিয়েছিল, অস্ত্র ফিরিয়ে তারা ঘরে ফিরে গেল। ফিরে গেল যার যেখানে ফিরে যাবার।
রাশিয়া হাত বাড়িয়ে দিল স্কলারশিপের। সুযোগ নিয়ে অনেকেই চলে গেল রাশিয়ায়। নোমান যুদ্ধের জন্য আটকে থাকা স্কলারশিপ ফিরে পেয়ে চলে গেল আমেরিকায়। বাচ্চা নিয়ে মায়া আনিস চলে এল ঢাকায়। নিজেদের বাড়িতে। মনজুর মমতার ঘন ঘন আসা-যাওয়া বেড়ে গেল। শুধু নোমানের নাম ওরা এড়িয়ে যায়। বছরের পর বছর যুদ্ধের কবলে পড়া মানুষ যেমন অস্থির হয় না, চোখে ধ্বংসস্তূপ সয়ে যায়, রক্তপাত-মৃত্যু সয়ে যায়, পেটের খিদে সয়ে যায়, সব অনাচার স্বাভাবিক মনে হয়; অতীত জীবনের স্মৃতি তখন স্বপ্নে দেখা গল্প হয়ে ওঠে। মায়ার অতীত এখন গল্প, যে গল্পের সবটা মুশফিকের কাছে প্রথম বলেছে। নোমান চেয়েছিল মায়া সাহসী হয় উঠুক। মায়ার জীবনের আকস্মিক যুদ্ধও তেমন সয়ে নিতে নোমানের একটি ইচ্ছা নিজের অজান্তে মেনে নিয়েছিলÑমায়া সাহসী হয় ওঠে। সময়ের অদ্ভুত চালিকাশক্তি মায়াকে সঙ্গে নিয়ে চলে। শেখায় জীবনে যত বড় আঘাত আসুক, হয় তা ফেলে রেখে বা সঙ্গে নিয়ে চলো। সময় মায়াকে বলে, তুমি বসে থাকলেও আমার থামার নিয়ম নেই। ঘড়ির দোলক মায়াকে দিয়ে মাস্টার্স করাল। চাকরি করতে করতে মুশফিকের হাত ধরতে শেখাল। মুশফিকের সাথে চার বছরের আনিসকে নিয়ে আমেরিকায় থিতু করে দিল। দুঃসময় পার করে দেওয়ার জন্য সময় তার সাথেই থাকল।
এয়ারপোর্ট থেকে একটানা গাড়ি চালিয়ে লং আইল্যান্ডের বাড়ির এক্সিট নিতেই মায়াকে গাড়ি থামাতে হলো স্টপ সিগন্যালে। মায়া রেড লাইটের দিকে তাকিয়ে ভাবল, তার কি জানা দরকার ছিল মা কাকি ও কাকার মৃত্যুর খবর পেয়েও কেন নোমান যায়নি? জানতে চাওয়া দরকার ছিল, কীভাবে বেঁচে আছ তুমি, নোমান? পনেরো আগস্টের প্রত্যুষে মুক্তিযোদ্ধাদের আঠারোটি বুলেটের আঘাতে জাতির পিতার রক্তাক্ত দেহ মাটিতে গড়িয়ে পড়ার খবর শুনে তুমি কার কাছে কেঁদেছিলে? আমরা কেঁদেছিলাম। আমি কেঁদেছিলাম তোমার জন্য। গাড়ির পেছনে বসে আনিস আধা ঘণ্টা ধরে বাবার সাথে গত এক মাসের সব কথা বলা শেষ না করতেই মায়া বাড়ির ড্রাইভওয়েতে গাড়ি পার্ক করে। আনিস নানাভাই, বাবা ইজ হিয়ার বলে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা নানার কাছে ছুটে যায়। মুশফিক গাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে থেমে যায়। মায়ার কাঁধে হাত রেখে বলে, মায়া, গাড়ি পার্ক করে বসে আছ কেন? সারাক্ষণ চুপ করেই ছিলে। শরীর খারাপ?
মুশফিকের হাত ধরে মায়া কাঁদে। বলে, পরে বলি?
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078