গণতন্ত্র নির্বাসিতও হতে পারে!

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৫, ১৬:০৩ , চলতি সংখ্যা
সামরিক হেলিকপ্টারে করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী এবং বিএনপি-জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকারের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানিয়েছিলেন। সাত মাস    পর এসে সেই সেনাপ্রধান এখন ব্যথিত চিত্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘এনাফ ইজ এনাফ’।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াতের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও হিংসাত্মক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে অসন্তুষ্ট সেনাপ্রধান। কোনো রাজনৈতিক দল বা কারও নামোল্লেখ না করে, আকার-ইঙ্গিতও না করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কৌশলে বক্তব্য রেখেছেন, এটা রাজনীতিসচেতন মানুষসহ সাধারণ মানুষেরও বুঝতে অসুবিধা হয়নি। এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বক্তব্য মনে করার কারণ নেই। গোটা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেই সেনাপ্রধান কথা বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের চরম ব্যর্থতা দেশের মানুষকে এই সরকারের প্রতি চরম হতাশ ও আস্থাহীন করে তুলেছে। বিএনপি-জামায়াতের পরস্পর মারামারি, হানাহানিকর পরিস্থিতিতেও মানুষ অতিষ্ঠ। বিগত সাত মাসে তাদের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষের মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ সেনাপ্রধান ঘটিয়েছেন ‘যথেষ্ট হয়েছে’ এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। সংগতভাবে পরক্ষণেই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ব্যর্থ এই সরকারের স্থলাভিষিক্ত কে হবে? সশস্ত্র বাহিনী? সেনাপ্রধান গত ২৫ ফেব্রুয়ারি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমতার আকাক্সক্ষা তার নেই। সে রাতেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের এক নেতা টেলিভিশনে সেনাপ্রধানের এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আকাক্সক্ষা নেই যিনি বলেন, দেখা যায় তারই বেশি আকাক্সক্ষা। ছাত্রনেতার এই বক্তব্যের ঐতিহাসিক সত্যতাও রয়েছে। তবে জেনারেল ওয়াকার ব্যতিক্রমীও হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনার উল্লেখ করে সেনাপ্রধান এ বছরের ডিসেম্বর কি আগামী বছরের গোড়ায় কিংবা মাঝামাঝি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের চরম অবনতির প্রসঙ্গও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী-উপদেষ্টার বৈঠকের পর সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলেই কূটনৈতিক মহল আশা করছিলেন। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা দেখা যাচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর। অভিন্ন সুরে ও ভাষায় কথা বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। দুই দেশের সম্পর্কে এখন কার্যত স্থবিরতা চলছে। সীমান্তে সতর্কতা, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত।
নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই দল বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তির আপাত সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূলসহ বিভিন্ন পর্যায়ে শক্ত রাজনৈতিক ভিত গড়ে তোলার স্বার্থে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা এবং জামায়াতে ইসলামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন চাচ্ছে। বিএনপি এর ঘোরতর বিরুদ্ধে। তারা সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তা ডিসেম্বরের মধ্যেই চাচ্ছে। পরে নির্বাচিত সরকারই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে। এ নিয়ে রাজনৈতিক শক্তিসমূহের বৈরী অবস্থান পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলতেই ভূমিকা রাখছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে দেশে বিশৃঙ্খলা, গৃহযুদ্ধ হবে। কূটনৈতিক মহল মনে করেন, সেনাপ্রধান রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা বা আকাক্সক্ষা না থাকার কথা বলে গণমানুষের আস্থা, ভক্তি কুড়িয়েছেন। কিন্তু চলমান ঘটনাপ্রবাহ দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তা চিন্তাশীলদের উদ্বিগ্ন, বিচলিত করে তুলছে। শেখ হাসিনার সরকার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ বা দখলবিরোধী কঠোর আইন করে গেছে। নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী ও নিরঙ্কুশ করার একমাত্র উদ্দেশ্যেই শেখ হাসিনা তা করেন। কিন্তু প্রয়োজন সব আইনের ঊর্ধ্বে- এই বাস্তবতায় সেনাবাহিনীকে সাদরে ডেকে আনা ছাড়া কোনো পথ সামনে না-ও থাকতে পারে। বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কার কথা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গেই তুলে ধরেন সেনাপ্রধান। সে ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের স্বার্থে নির্দিষ্ট মেয়াদে দুই থেকে আড়াই বছর নির্বাচন নির্বাসিত হলেও বিস্ময়ের হবে না। এই পরিকল্পনার পেছনে কর্তৃত্ববাদী শক্তির সক্রিয় সমর্থন, মদদ সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করতে পারে- রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের এ ধরনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078