
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার নারীদের নিয়ে একটি সুন্দর বই লিখেছেন। তার লেখা ‘জাতীয় সংসদ : নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন’ বইটি আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। বইটির অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। প্রথমত, বইটির নামকরণের মধ্যেই একটা অসংগতি লক্ষ করেছি। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর অধিকার, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা চাই। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে চাই। নারী-পুরুষ সমভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে-এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাহলে পার্লামেন্টে আলাদা করে নারী আসনে নির্বাচন কেন? পার্লামেন্টের ৩০০ আসনেই দলীয়ভাবে কিংবা স্বতন্ত্র বা অদলীয়ভাবে নারী-পুরুষ একে অন্যের সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জনগণের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হবেন।
পার্লামেন্টে নারী আসন বলতে কি লেখিকা সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের কথা বলেছেন? তাহলে এ বিষয়ে আমার ভিন্নমত আছে। আমি নারী-পুরুষের মধ্যে আলাদা সত্ত্বায় বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, এমন পার্লামেন্ট-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন, যা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের মৌলিক চাহিদা ও শর্তাদি সন্তোষজনকভাবে মোকাবিলায় সক্ষম। আমরা নারী-পুরুষ যেন পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করতে পারি এবং নিরলসভাবে জনগণের সেবা করে যেতে পারি।
আধুনিক বিশ্বে মানুষ জন্মেই নিজেকে দেখে কোনো নির্দিষ্ট শাসন-পদ্ধতির কর্তৃত্বাধীন এবং সে স্বাভাবিকভাবেই তার নির্দেশ মেনে চলা কর্তব্য মনে করে। কারণ সামাজিক জীব হিসেবে সবার সঙ্গে বাস করা তার সহজাত প্রবৃত্তি। অন্যদের সঙ্গে বসবাস করাই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বেঁচে থাকা। এ জন্যই শাসন-পদ্ধতি প্রয়োজন। শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে বাস করতে হলে সবার জন্যই একই রকম বিধি-নিয়ম থাকতে হয় এবং সবাইকে অবশ্যই সমভাবে তা মেনে চলতে হয়।
সাধারণ মানুষ সব সময় সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক সচেতন থাকে না। তাদের জীবনের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই ব্যক্তিগত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে। বন্দিদশা থেকে মুক্তির লড়াই মাত্র গুটি কয়েকজনই করে, যারা ধৈর্যের সঙ্গে নিজের অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। একদল দৃঢ়তাসম্পন্ন মানুষই কেবল ধৈর্য ও সমন্বিত প্রয়াস দ্বারা ওসব প্রতিষ্ঠানকে বদলাতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাড়া জ্ঞান-জগতের আর কোনো অনুষদ এ বিষয়টি নিয়ে এখনো তেমন মাথা ঘামায়নি।
হক্স, লক, রুশো, মার্কসের মতো গুটি কয়েক চিন্তাবিদ এবং সহকর্মী ও অনুসারীরা রাষ্ট্রকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। তাদেরই অনুসারী রাষ্ট্রচিন্তক সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র বিষয়ে তার দেশজ রাষ্ট্রচিন্তা আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন। সমাজ-জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জনগণ চিন্তাভাবনা না করে গুটিকয়েক সংখ্যালঘুর ইচ্ছার প্রতি অনুগত থাকে।
এটা আমাদের জীবনে এক অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা এবং আকস্মিক উপদ্রব, যা এই বিশাল সমাজ-রাজনৈতিক বিষয়টিকে বুঝতে আমাদের অনেককে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এই বিশাল পৃথিবীতে আমাদের পথ নিজ দায়িত্বে আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। যে তত্ত্বের ভিত্তিতে সরকার চলে এবং যার প্রতি আমরা অনুগত থাকি, আমাদের সবার ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা ও চাহিদাকে অবশ্যই সেই তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। সভ্যতার নির্মাণ-কৌশলের কারণে এখন অধিকাংশ মানুষই তার সর্বোচ্চ মানসিক শক্তিকে সর্বোত্তমভাবে বুঝতে পারে। এটাই সভ্যতার আস্থার ভিত্তি। সভ্যতার উন্নতি ও সাফল্য ব্যাপকভাবে নির্ভর করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করার যোগ্যতার ওপর।
বিজ্ঞান আমাদের জীবনযাত্রার পুরো মাত্রাটাই বদলে দিয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের পুরোনো জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা এক সম্পূর্ণ নতুন জীবনে পদার্পণ করেছি। আমরা লাভ করেছি আধুনিক রাষ্ট্র। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান করতে গিয়ে শান্তির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবশ্যই অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। কারণ রাষ্ট্র এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের সঙ্গে সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে সেঁটে থাকে। আর এমন কোনো কাজ নেই, যা তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আধুনিক রাষ্ট্র একটি ভৌগোলিক সমাজ, যার দু’টি অংশ থাকে : এক. প্রশাসন-ব্যবস্থা বা সরকার; দুই. রাষ্ট্রীয় সীমানার অন্তর্ভুক্ত জনগণ।
রাষ্ট্র হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে সামাজিক ইচ্ছার এক আইনগত ভান্ডার, যা অন্য সকল সংস্থার আকৃতি নির্দিষ্ট করে দেয়। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সব ধরনের কর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ইতিহাসের আলোকে রাষ্ট্রের অপরিবর্তনীয় বিষয়গুলোও উল্লেখযোগ্য। রাষ্ট্র সব সময় বিপুল জনগণের আনুগত্যকে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়।
প্রাচীন এথেন্সে রাষ্ট্রের নাগরিকেরা হাট-বাজারে সমবেত হয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। কিন্তু আজ কোটি কোটি নাগরিকের আধুনিক রাষ্ট্রে সেটি অসম্ভব। এই বাস্তবতায় কর্মকাণ্ডের ফলপ্রসূ উৎস হচ্ছে পার্লামেন্ট। গত ৫৩ বছরে আমাদের দেশের পার্লামেন্ট ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে দেশজ চিন্তার পার্লামেন্ট-ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা আমরা করতে পারিনি। আমাদের পার্লামেন্ট পুরুষতান্ত্রিক দলীয় পার্লামেন্ট। নারীদের জন্য রাখা হয়েছে সংরক্ষিত নারী আসন, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান আজও ইতিহাসে স্থান পায়নি। রাজনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীরা আজও দলীয় পুরুষতন্ত্রের অধীনে।
এই অধীন থেকে মুক্তি খুব দরকার। এর জন্য নারীদেরকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। সংসদীয় রাজনীতিতে পার্লামেন্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতিনিধিত্ব সংরক্ষিত আসনে নয়, সর্বজনীন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। ফরিদা আখতার বলেছেন, পার্লামেন্টে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন। এই বক্তব্য নারী-পুরুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। পার্লামেন্টে নারী আসন কিংবা পুরুষ আসনÑকেনই-বা এই বিভক্তি। আমাদের পার্লামেন্টে সদস্যসংখ্যা ৩০০। অর্থাৎ ৩০০ আসনের পার্লামেন্ট।
সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন নারী সদস্য। আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নয়। ৩০০ আসনে নারী-পুরুষ সবাই দলীয় কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জনগণ যাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, তিনিই হবেন পার্লামেন্ট মেম্বার।
আমাদের সংবিধানে আছে, জনগণই রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক। আমরা নারীরা কি তবে জনগণ নই?
লেখক : সাংবাদিক, সংগঠক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী, বস্টন, ইউএসএ।
পার্লামেন্টে নারী আসন বলতে কি লেখিকা সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের কথা বলেছেন? তাহলে এ বিষয়ে আমার ভিন্নমত আছে। আমি নারী-পুরুষের মধ্যে আলাদা সত্ত্বায় বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, এমন পার্লামেন্ট-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন, যা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের মৌলিক চাহিদা ও শর্তাদি সন্তোষজনকভাবে মোকাবিলায় সক্ষম। আমরা নারী-পুরুষ যেন পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করতে পারি এবং নিরলসভাবে জনগণের সেবা করে যেতে পারি।
আধুনিক বিশ্বে মানুষ জন্মেই নিজেকে দেখে কোনো নির্দিষ্ট শাসন-পদ্ধতির কর্তৃত্বাধীন এবং সে স্বাভাবিকভাবেই তার নির্দেশ মেনে চলা কর্তব্য মনে করে। কারণ সামাজিক জীব হিসেবে সবার সঙ্গে বাস করা তার সহজাত প্রবৃত্তি। অন্যদের সঙ্গে বসবাস করাই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বেঁচে থাকা। এ জন্যই শাসন-পদ্ধতি প্রয়োজন। শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে বাস করতে হলে সবার জন্যই একই রকম বিধি-নিয়ম থাকতে হয় এবং সবাইকে অবশ্যই সমভাবে তা মেনে চলতে হয়।
সাধারণ মানুষ সব সময় সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক সচেতন থাকে না। তাদের জীবনের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই ব্যক্তিগত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে। বন্দিদশা থেকে মুক্তির লড়াই মাত্র গুটি কয়েকজনই করে, যারা ধৈর্যের সঙ্গে নিজের অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। একদল দৃঢ়তাসম্পন্ন মানুষই কেবল ধৈর্য ও সমন্বিত প্রয়াস দ্বারা ওসব প্রতিষ্ঠানকে বদলাতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাড়া জ্ঞান-জগতের আর কোনো অনুষদ এ বিষয়টি নিয়ে এখনো তেমন মাথা ঘামায়নি।
হক্স, লক, রুশো, মার্কসের মতো গুটি কয়েক চিন্তাবিদ এবং সহকর্মী ও অনুসারীরা রাষ্ট্রকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। তাদেরই অনুসারী রাষ্ট্রচিন্তক সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র বিষয়ে তার দেশজ রাষ্ট্রচিন্তা আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন। সমাজ-জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জনগণ চিন্তাভাবনা না করে গুটিকয়েক সংখ্যালঘুর ইচ্ছার প্রতি অনুগত থাকে।
এটা আমাদের জীবনে এক অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা এবং আকস্মিক উপদ্রব, যা এই বিশাল সমাজ-রাজনৈতিক বিষয়টিকে বুঝতে আমাদের অনেককে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এই বিশাল পৃথিবীতে আমাদের পথ নিজ দায়িত্বে আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। যে তত্ত্বের ভিত্তিতে সরকার চলে এবং যার প্রতি আমরা অনুগত থাকি, আমাদের সবার ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা ও চাহিদাকে অবশ্যই সেই তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে। সভ্যতার নির্মাণ-কৌশলের কারণে এখন অধিকাংশ মানুষই তার সর্বোচ্চ মানসিক শক্তিকে সর্বোত্তমভাবে বুঝতে পারে। এটাই সভ্যতার আস্থার ভিত্তি। সভ্যতার উন্নতি ও সাফল্য ব্যাপকভাবে নির্ভর করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করার যোগ্যতার ওপর।
বিজ্ঞান আমাদের জীবনযাত্রার পুরো মাত্রাটাই বদলে দিয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের পুরোনো জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা এক সম্পূর্ণ নতুন জীবনে পদার্পণ করেছি। আমরা লাভ করেছি আধুনিক রাষ্ট্র। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান করতে গিয়ে শান্তির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবশ্যই অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। কারণ রাষ্ট্র এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের সঙ্গে সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে সেঁটে থাকে। আর এমন কোনো কাজ নেই, যা তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আধুনিক রাষ্ট্র একটি ভৌগোলিক সমাজ, যার দু’টি অংশ থাকে : এক. প্রশাসন-ব্যবস্থা বা সরকার; দুই. রাষ্ট্রীয় সীমানার অন্তর্ভুক্ত জনগণ।
রাষ্ট্র হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে সামাজিক ইচ্ছার এক আইনগত ভান্ডার, যা অন্য সকল সংস্থার আকৃতি নির্দিষ্ট করে দেয়। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সব ধরনের কর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ইতিহাসের আলোকে রাষ্ট্রের অপরিবর্তনীয় বিষয়গুলোও উল্লেখযোগ্য। রাষ্ট্র সব সময় বিপুল জনগণের আনুগত্যকে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়।
প্রাচীন এথেন্সে রাষ্ট্রের নাগরিকেরা হাট-বাজারে সমবেত হয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। কিন্তু আজ কোটি কোটি নাগরিকের আধুনিক রাষ্ট্রে সেটি অসম্ভব। এই বাস্তবতায় কর্মকাণ্ডের ফলপ্রসূ উৎস হচ্ছে পার্লামেন্ট। গত ৫৩ বছরে আমাদের দেশের পার্লামেন্ট ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে দেশজ চিন্তার পার্লামেন্ট-ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা আমরা করতে পারিনি। আমাদের পার্লামেন্ট পুরুষতান্ত্রিক দলীয় পার্লামেন্ট। নারীদের জন্য রাখা হয়েছে সংরক্ষিত নারী আসন, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান আজও ইতিহাসে স্থান পায়নি। রাজনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীরা আজও দলীয় পুরুষতন্ত্রের অধীনে।
এই অধীন থেকে মুক্তি খুব দরকার। এর জন্য নারীদেরকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। সংসদীয় রাজনীতিতে পার্লামেন্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতিনিধিত্ব সংরক্ষিত আসনে নয়, সর্বজনীন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। ফরিদা আখতার বলেছেন, পার্লামেন্টে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন। এই বক্তব্য নারী-পুরুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। পার্লামেন্টে নারী আসন কিংবা পুরুষ আসনÑকেনই-বা এই বিভক্তি। আমাদের পার্লামেন্টে সদস্যসংখ্যা ৩০০। অর্থাৎ ৩০০ আসনের পার্লামেন্ট।
সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন নারী সদস্য। আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নয়। ৩০০ আসনে নারী-পুরুষ সবাই দলীয় কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জনগণ যাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, তিনিই হবেন পার্লামেন্ট মেম্বার।
আমাদের সংবিধানে আছে, জনগণই রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক। আমরা নারীরা কি তবে জনগণ নই?
লেখক : সাংবাদিক, সংগঠক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী, বস্টন, ইউএসএ।