
প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিস বা কাগজপত্র খুঁজে না পাওয়া ও হারানো একটা বড় ধরনের বিপত্তির ও মুসিবতের বিষয়। সেটা টাকা, কানের দুল, আংটি, ক্রেডিট কার্ড, আইডি বা সে রকম অনেক কিছু হতে পারে। আর তা যদি হয় তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের সময়, তাহলে তো আর কথাই নেই। এর থেকে দুঃস্বপ্নের বিষয় আর কিছু হতে পারে না।
যিনি নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তার জন্য পাসপোর্ট হারানো যে কতটা বিড়ম্বনা ও অসুবিধার হতে পারে, সেটা খুলে বলার দরকার নেই। সম্প্রতি এমন ধরনেরই এক বড় বিড়ম্বনার ভুক্তভোগী হতে হয়েছিল আমার একমাত্র স্নেহধন্য শ্যালিকা কামরুন্নাহার বহ্নিকে। ঢাকায় তার পরিবারের একটি বাড়ি বিক্রির সুবাদে ও অন্যান্য কাজে একাধিকবার তার মার্কিন পাসপোর্টের ফটোকপি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই পাসপোর্ট নিয়ে একাধিকবার তার আইনজীবীর পরামর্শে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে তাকে যেতে হয়। এ জন্য তাকে তার হাতব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করেও রাখতে হয়। প্রতিবারই সে অত্যন্ত যত্ন ও মনোযোগ দিয়ে এ কাজটি করেছে। দলিল-সেটা তার বিলক্ষণ জানা ছিল। এমনিতেও সব বিষয়ে সে বেশ মনোযোগী (Savvy) এবং মোটেও বেখেয়ালি নয়। কিন্তু কথায় বলে না, ‘সব ভালো তার, শেষ ভালো যার’। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বহ্নির ক্ষেত্রে সেটাই ঘটে গেল।
দুই সপ্তাহ আগে একই কাজে তাকে আরও একবার কনস্যুলেট অফিসে যেতে হয়। সঙ্গে ছিল তার ভাই নেসার, মনির, শামস ও ফালাহ। সেখানে পাসপোর্টের ব্যবহার শেষে তা হাতব্যাগে রেখে অ্যাস্টোরিয়ার বাঙালি রেস্টুরেন্ট বৈশাখীতে দুপুরের খাবার খেয়ে সে বাসায় ফিরে এলে তার হাজব্যান্ড শাহীন সতর্কতাবশত বহ্নি তার পাসপোর্ট ঠিকমতো ফিরিয়ে এনেছে কি না, তা জানতে চায়। সে হ্যাঁ-সূচক জবাব দেয়। তার পরও শাহীন পাসপোর্টটি তাকে দেখাতে বলে। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। বহ্নি ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাসপোর্ট খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। অন্য কোথাও হয়তো রাখা হয়েছে ভেবে হাতব্যাগ ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখার সম্ভাব্য সব স্থানে সে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এদিকে বাইরে যাওয়ার তাড়া থাকায় শাহীন বারবার বহ্নিকে পাসপোর্ট নিয়ে আসার তাগাদা দিচ্ছিল। বারবার আসছি আসছি বলে বহ্নি পাসপোর্টের খোঁজে বিভিন্ন ড্রয়ার হাতড়ে বেড়াচ্ছিল। সব ড্রয়ার দেখে পাসপোর্টের সন্ধান না পেয়ে শেষমেশ দুঃখভরা চেহারা নিয়ে শাহীনের সামনে হাজির হয়ে তাকে পাসপোর্ট না পাওয়ার কথা জানায়। অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের মানুষ শাহীন বহ্নিকে কিছু না বলে বাইরে চলে যায়। কিন্তু গাড়ি চালাতে চালাতে তার কেবলই হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্ট কীভাবে পুনরুদ্ধার ও নতুন পাসপোর্ট করা যায়, সেটা মনে হতে থাকে। ইতোমধ্যে বহ্নি তার সঙ্গে যাওয়া ভাইদের ফোন করে তাদের কাছে তার পাসপোর্ট আছে কি না জানতে চায়। সবাই না-সূচক জবাব দেয়। কিছুক্ষণ পর শাহীন বাইরে থেকে ফিরে কম্পিউটারে গুগল সার্চে গিয়ে পাসপোর্ট খোয়া গেলে কী করণীয়, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে লেগে যায়।
চার-পাঁচ দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাসপোর্টের কোনো হদিস না পাওয়া গেলে শাহীন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টটি বাতিলের (Cancel) সিদ্ধান্ত নেয়। এ উদ্দেশ্যে সপ্তাহান্তের এক রোববারে কম্পিউটার খুলে পাসপোর্ট বাতিলের কাজ শুরু করে। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যাওয়ার দু-এক মিনিট পর পাশের কক্ষ থেকে চিৎকার করে শাহীনকে পাসপোর্ট বাতিল না করতে বলে বহ্নি। দৌড়ে এসে সে পাসপোর্ট পাওয়া যাওয়ার কথা জানায়। প্রকৃতপক্ষে সে তখন তার প্রয়াত মায়ের মার্কিন পাসপোর্ট খুঁজতে সেই কক্ষে রাখা মায়ের স্মৃতিমাখা গরম কোট ও জ্যাকেটগুলোতে হাত দিয়ে মায়ের পাসপোর্টের খোঁজ করছিল। আর সেটা করতে গিয়েই ঘটল বিস্ময়কর এক কাণ্ড। সেখানে রাখা জ্যাকেটগুলোর একটিতে পাওয়া গেল বহ্নির হারিয়ে যাওয়া মহামূল্যবান পাসপোর্ট। এই জ্যাকেটটি পরে সে কনস্যুলেটে গিয়েছিল। সে সময় পাসপোর্টটি ভুল করে হাতব্যাগে না রেখে সে জ্যাকেটের পকেটে রেখেছিল। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। জ্যাকেটে পাসপোর্ট রাখার বিষয়টি সে বেমালুম ভুলে যায়। ভুল জায়গায় (Misplaced) পাসপোর্ট রাখায় তার চিন্তার শেষ ছিল না। পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ায় সেই চিন্তার অবসান ঘটে। পাসপোর্ট হারানোর ঘটনার মধুরেণ সমাপয়েৎ হওয়ায় আনন্দে অভিভূত বহ্নির চোখ খুশিতে কিছুটা অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। সেই মুহূর্তে বহু পূর্বে পড়া কানাডিয়ান ঔপন্যাসিক ডগলাস কোপল্যান্ডের একটি উক্তির কথা তার মনে পড়ে। উক্তিটি হলো : ‘There are three things we cry for in life : things that are lost, things that are found and things that are magnificent.’
যিনি নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তার জন্য পাসপোর্ট হারানো যে কতটা বিড়ম্বনা ও অসুবিধার হতে পারে, সেটা খুলে বলার দরকার নেই। সম্প্রতি এমন ধরনেরই এক বড় বিড়ম্বনার ভুক্তভোগী হতে হয়েছিল আমার একমাত্র স্নেহধন্য শ্যালিকা কামরুন্নাহার বহ্নিকে। ঢাকায় তার পরিবারের একটি বাড়ি বিক্রির সুবাদে ও অন্যান্য কাজে একাধিকবার তার মার্কিন পাসপোর্টের ফটোকপি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই পাসপোর্ট নিয়ে একাধিকবার তার আইনজীবীর পরামর্শে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে তাকে যেতে হয়। এ জন্য তাকে তার হাতব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করেও রাখতে হয়। প্রতিবারই সে অত্যন্ত যত্ন ও মনোযোগ দিয়ে এ কাজটি করেছে। দলিল-সেটা তার বিলক্ষণ জানা ছিল। এমনিতেও সব বিষয়ে সে বেশ মনোযোগী (Savvy) এবং মোটেও বেখেয়ালি নয়। কিন্তু কথায় বলে না, ‘সব ভালো তার, শেষ ভালো যার’। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বহ্নির ক্ষেত্রে সেটাই ঘটে গেল।
দুই সপ্তাহ আগে একই কাজে তাকে আরও একবার কনস্যুলেট অফিসে যেতে হয়। সঙ্গে ছিল তার ভাই নেসার, মনির, শামস ও ফালাহ। সেখানে পাসপোর্টের ব্যবহার শেষে তা হাতব্যাগে রেখে অ্যাস্টোরিয়ার বাঙালি রেস্টুরেন্ট বৈশাখীতে দুপুরের খাবার খেয়ে সে বাসায় ফিরে এলে তার হাজব্যান্ড শাহীন সতর্কতাবশত বহ্নি তার পাসপোর্ট ঠিকমতো ফিরিয়ে এনেছে কি না, তা জানতে চায়। সে হ্যাঁ-সূচক জবাব দেয়। তার পরও শাহীন পাসপোর্টটি তাকে দেখাতে বলে। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। বহ্নি ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাসপোর্ট খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। অন্য কোথাও হয়তো রাখা হয়েছে ভেবে হাতব্যাগ ছাড়াও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখার সম্ভাব্য সব স্থানে সে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এদিকে বাইরে যাওয়ার তাড়া থাকায় শাহীন বারবার বহ্নিকে পাসপোর্ট নিয়ে আসার তাগাদা দিচ্ছিল। বারবার আসছি আসছি বলে বহ্নি পাসপোর্টের খোঁজে বিভিন্ন ড্রয়ার হাতড়ে বেড়াচ্ছিল। সব ড্রয়ার দেখে পাসপোর্টের সন্ধান না পেয়ে শেষমেশ দুঃখভরা চেহারা নিয়ে শাহীনের সামনে হাজির হয়ে তাকে পাসপোর্ট না পাওয়ার কথা জানায়। অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের মানুষ শাহীন বহ্নিকে কিছু না বলে বাইরে চলে যায়। কিন্তু গাড়ি চালাতে চালাতে তার কেবলই হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্ট কীভাবে পুনরুদ্ধার ও নতুন পাসপোর্ট করা যায়, সেটা মনে হতে থাকে। ইতোমধ্যে বহ্নি তার সঙ্গে যাওয়া ভাইদের ফোন করে তাদের কাছে তার পাসপোর্ট আছে কি না জানতে চায়। সবাই না-সূচক জবাব দেয়। কিছুক্ষণ পর শাহীন বাইরে থেকে ফিরে কম্পিউটারে গুগল সার্চে গিয়ে পাসপোর্ট খোয়া গেলে কী করণীয়, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে লেগে যায়।
চার-পাঁচ দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাসপোর্টের কোনো হদিস না পাওয়া গেলে শাহীন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টটি বাতিলের (Cancel) সিদ্ধান্ত নেয়। এ উদ্দেশ্যে সপ্তাহান্তের এক রোববারে কম্পিউটার খুলে পাসপোর্ট বাতিলের কাজ শুরু করে। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যাওয়ার দু-এক মিনিট পর পাশের কক্ষ থেকে চিৎকার করে শাহীনকে পাসপোর্ট বাতিল না করতে বলে বহ্নি। দৌড়ে এসে সে পাসপোর্ট পাওয়া যাওয়ার কথা জানায়। প্রকৃতপক্ষে সে তখন তার প্রয়াত মায়ের মার্কিন পাসপোর্ট খুঁজতে সেই কক্ষে রাখা মায়ের স্মৃতিমাখা গরম কোট ও জ্যাকেটগুলোতে হাত দিয়ে মায়ের পাসপোর্টের খোঁজ করছিল। আর সেটা করতে গিয়েই ঘটল বিস্ময়কর এক কাণ্ড। সেখানে রাখা জ্যাকেটগুলোর একটিতে পাওয়া গেল বহ্নির হারিয়ে যাওয়া মহামূল্যবান পাসপোর্ট। এই জ্যাকেটটি পরে সে কনস্যুলেটে গিয়েছিল। সে সময় পাসপোর্টটি ভুল করে হাতব্যাগে না রেখে সে জ্যাকেটের পকেটে রেখেছিল। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। জ্যাকেটে পাসপোর্ট রাখার বিষয়টি সে বেমালুম ভুলে যায়। ভুল জায়গায় (Misplaced) পাসপোর্ট রাখায় তার চিন্তার শেষ ছিল না। পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ায় সেই চিন্তার অবসান ঘটে। পাসপোর্ট হারানোর ঘটনার মধুরেণ সমাপয়েৎ হওয়ায় আনন্দে অভিভূত বহ্নির চোখ খুশিতে কিছুটা অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। সেই মুহূর্তে বহু পূর্বে পড়া কানাডিয়ান ঔপন্যাসিক ডগলাস কোপল্যান্ডের একটি উক্তির কথা তার মনে পড়ে। উক্তিটি হলো : ‘There are three things we cry for in life : things that are lost, things that are found and things that are magnificent.’