ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভিড়  বাড়ছে হাসপাতালে

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৭ , চলতি সংখ্যা
তীব্র ঠাণ্ডার কারণে বিভিন্ন রাজ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বাড়ছে। নিউইয়র্ক সিটির হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির হার বাড়ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে বেশী। চিকিৎসকেরা বলছেন, যাদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ আছে, তাদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই সময়টা বেশ জটিলতা তৈরি করে। 
সাধারণত শীতকালে ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব একটু বেশি দেখা যায়। ভাইরাসজনিত রোগ শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। তাই শীতে শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নিতে তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয়। একটু অসাবধানতা ডেকে আনতে পারে অনেক বড় সমস্যা। শীতকালের অসুখের মূল কারণ বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগ-জীবাণু যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে শিশুদের সহজেই আক্রমণ করে। 
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, শীতের এই সময়টা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়, যেমন কাশি, অ্যাজমা, সাময়িক জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি। এসময় অনেকের ঠাণ্ডজনিত অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষের কাশি কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক সময় শনাক্ত করা না গেলে সেটা অনেক সময় নিউমোনিয়াতে রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায়, অল্প ঠাণ্ডায় তাদের নানা সমস্যা দেখা দেয়। বয়স্ক মানুষের কমন সমস্যা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা বা শ্বাসনালীর প্রদাহ। যা ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে বাড়তে পারে। এজন্য ঠাণ্ডা থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। 
আঠারো মাস বয়সি রবিউল আলম নিশাত বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। এর সঙ্গে রয়েছে সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্টও। চিকিৎসকের পরামর্শে শিশুটির ব্যবহার করতে হচ্ছে নেবুলাইজার।
তার বাবা রাশেদুল আলম জানান, জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ছেলেটা বেশ কষ্ট পাচ্ছে। শীত এলেই অসুস্থতা চেপে বসে তার। শুধু আমার সন্তান নয়। আমাদের আশপাশের বাসার অনেক বাচ্চাই এখন ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত।
কয়েকদিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই জেঁকে বসেছে শীত। পৌষের শুরু থেকেই সারাদেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এ সময় ঠাণ্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকদের মতে, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, কলেরা হাসপাতালসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে আসা সর্দি-জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। এছাড়াও সেখানে বর্হিবিভাগে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা জ্বর, ঠাণ্ডা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছরে হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ার কারণে দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই শিশু। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে গেছে। আক্রান্ত অনেক শিশুকে দেরিতে তাদের কাছে আনা হচ্ছে। আগেই অভিভাবকরা স্থানীয় ফার্মেসির ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে শারীরিক জটিলতা বাড়ছে।
আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, কামরাঙ্গীচর থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছে ৭ মাস বয়সী শিশু খালিদ হাসান। গত ১৮ ডিসেম্বর শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয় তাকে। এখনো চলছে তার চিকিৎসা। সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিদিন তিনবার নেবুলাইজার করার ফলে অবস্থা আগের থেকে কিছুটা উন্নত।
শুধু খালিদ নয়, এমন প্রায় শতাধিক শিশু ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে হাসপাতালটিতে।
আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা জানান, বর্তমানে শীতের সঙ্গে বায়ুদূষণও যোগ হয়েছে। যা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু শিশু বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়লে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, শুধু শীতে নয়, এখন বায়ুদূষণেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জ্বর-সর্দি-কাশি গলায় ইরিটেশন হচ্ছে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ব্রংকিউলাইটিস এবং দুই বছরের বেশি বয়সি শিশুদের নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। যাদের অ্যাজমা আছে, শীতে তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শীতে শিশুদের ডায়রিয়ার ঝুঁকিও থাকে।
গরমের তুলনায় শীতকালে শিশুদের তুলনামূলক পানি কম খাওয়ানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যাতে শিশুরা শীতে পর্যাপ্ত পানি পান করে। বাসায় বড়দের যদি জ্বর-সর্দি-কাশি হয়, তাহলে তারা যেন বাসায় মাস্ক ব্যবহার করেন। কারণ তারা যখন হাঁচি, কাশি দেবেন তা দ্বারা শিশুরা যেন সংক্রমিত না হয়। শিশুদের বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রেসপিরেটরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাবিলা আকন্দ বলেন, নিউমোনিয়ার লক্ষণ হচ্ছে- কাশি, তার সঙ্গে জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে। খেতে না পারা, বমি করে দেওয়া। নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি মিনিটে ৬০ বার থাকে, নবজাতক পরবর্তী এক বছর বয়সি শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি ৫০ বার বা তার অধিক হয় এবং এক বছর থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি মিনিটে যদি ৪০ বার বা তার বেশি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে অবশ্যই ঝুঁকি আছে। তখন বাসায় বসে না থেকে অবশ্যই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বুকের দুধপানে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। সময়মতো টিকাগুলো দিতে হবে। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, দুর্বল প্রকৃতির শিশু, যাদের নিউমোনিয়া বারবার হয় বা হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য সরকারি টিকার পাশাপাশি প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে পারলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমে আসবে।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078