ট্রাম্পের পয়লা রাতে বিড়াল মার ► ফুরফুরে ড. ইউনূস

চীন-বাংলা দ্বৈরথে উদ্বিগ্ন ভারত

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ২২:২৭ , চলতি সংখ্যা
পয়লা রাতে বিড়াল মারার মতো দায়িত্ব নিয়েই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি, জ্বালানি নীতিসহ আরও অনেক কিছু বাতিল করে দিয়েছেন। জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার সুবিধা বাতিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জলবায়ু চুক্তি থেকেও বেরিয়ে এসেছেন। ক্যাপিটল হিলে হামলার সঙ্গে জড়িত ১৭০০ দলীয় কর্মীকে মাফ করে দিয়েছেন। এসবের মধ্য দিয়ে ‘মার্কিন  প্রেসিডেন্ট বদল হলেও নীতির বদল হয় না’-এমন পুরোনো কথাটি খাটল না। আমেরিকা তার স্বার্থেই নীতিতে অটল থাকে। আবার বদলায়ও। তারা পৃথিবীতে আইনের শাসন চায়, আবার দায়িত্ব ছাড়ার মিনিট কয়েক আগে নির্বাহী ক্ষমতায় নজিরবিহীনভাবে ভাই, ছেলে, ভায়রা ভাই, শালির দণ্ড মাফ করেও দেয়। যদিও মার্কিন সরকার বদলের সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশে পৌষ মাস অথবা মরা কার্তিক নামে।
প্রথম রাতে বিড়াল মারার ম্যাজিকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারির কাজও সেরে ফেলেছেন খ্যাপাটে ট্রাম্প। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা তো দিয়েছেনই। সেই সঙ্গে যে ‘লাখ লাখ অপরাধী’ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে, তারা যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ফেরত পাঠানোও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তার রিমেইন ইন মেক্সিকো বা ‘মেক্সিকোতেই থাকো’ নীতিও পুনরায় কার্যকর করা হবে। তা করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় আরও সৈনিক ও জনবল পাঠানো হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। মাদক চক্র বা কার্টেলগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হবে এসব নির্বাহী আদেশে। চার বছর পর যেহেতু ট্রাম্পকে আর ভোট চাইতে হবে না, তাই তার কার্যক্রম অনেকটাই বেপরোয়া হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের ভেতর-বাইরের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অপেক্ষা থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের দিকে। অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশও। সেই দৃষ্টে সীমান্তে ভারত প্রশ্নে সিদ্ধান্তে চলে এসেছে বাংলাদেশ। ভারত যত উত্তেজনা সৃষ্টি করবে, বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় তত ঐক্যবদ্ধ হবেÑতা এরই মধ্যে হাতেনাতে প্রমাণিত। বিশেষ করে, সীমান্ত এলাকায় গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষ বিজিবির আগেই সেখানে প্রতিরোধে চলে যায় একটা কমন তাড়নায়। তার ওপর সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বিজিবিকে। অল্পের মধ্যে এটি বিশাল বার্তা। বিজিবিকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। লালমনিরহাট সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়েক দিন ধরে চলা উত্তেজনার পর এ অনুমোদন দেওয়া হলো।
কয়েক দিন ধরে লালমনিরহাট সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং নানা ধরনের সীমান্ত ঘটনা ঘটানোর কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। এ ধরনের উত্তেজনা মোকাবিলায় বিজিবিকে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেল ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সমান্তরালে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঝালাইয়ের দ্রুত আয়োজনও করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তা করেছে চীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আলামত বুঝেই। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অভিষেকের আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ফোন করেছেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। দাওয়াতের তালিকায় শীর্ষস্থানে থাকা শি জিনপিং ওয়াশিংটনে না গিয়ে পাঠিয়েছেন তার অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্টকে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের থাবা ছড়িয়ে পড়ছে। বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানকে অজ্ঞাত এক যুবকের ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ ঘটনা মুম্বাই পুলিশের নিরাপত্তা, হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন লরেন্স বিশ্নোই গ্যাংয়ের যোগসূত্রসহ অনেক বিষয় সামনে আসছে। হামলার টার্গেটে আছেন শাহরুখ খানও। এর আগে সালমান খানকে গুলি, পাঞ্জাবি গায়ককে হত্যাসহ বেশ কিছু ঘটনার পেছনে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও মাফিয়া গ্যাংদের সম্পৃক্ততার জেরে ভারতে শোরগোল পড়ে যায়। বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদী শক্তির উত্থানের মিথ্যা তকমা লাগিয়ে অপপ্রচার চালানো মহল এসব ঘটনায় এখন নিশ্চুপ।
২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শপথ নিলে ভারতের সমর্থনে ফ্যাসিস্টরা মাঠে নেমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে নাস্তানাবুদ করে ফেলার আশাবাদী মহলেরও মোহ ভেঙে গেছে। শেখ রেহানার মেয়ের দুর্নীতির বিষয় আন্তর্জাতিকীকরণ হ‌ওয়ায় পুরো শেখ পরিবার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে, যার দায়ভার নেওয়ার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা। চীন-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কও এ সময়ে দৃঢ় হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট আনুরা কুমারা দিশানায়েক চীন সফর করে এসেছেন। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আনুরার হাই-প্রোফাইল বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। এটি ভারতের জন্য মর্মপীড়াদায়ক। এ সময়ের মাঝেই চীন সফরে গেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এর আমন্ত্রণে তৌহিদ হোসেনের তিন দিনের চীন সফর ভারতের জন্য আরেকটি উদ্বেগের কারণ। এটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
আলোচনায় বাংলাদেশের গুরুত্বের তালিকায় ছিল ঋণ সহায়তার ক্ষেত্রে নানা ধরনের ছাড়, স্বাস্থ্য ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা। অন্যদিকে চীন বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে-জিডিআইতে বাংলাদেশের যুক্ততা, ঢাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স থেকে উড়োজাহাজ বিক্রির বিষয়গুলোতে প্রাধান্য পেয়েছে। পরে বেইজিং থেকে সাংহাই যান তৌহিদ হোসেন। সেখানে সাংহাই চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। মূলত চীন থেকে বাংলাদেশে শিল্প-কলকারখানা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে তিনি কিছু কারখানা পরিদর্শন করেন। তৌহিদ হোসেন ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসেরও চীন যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্চে তাকে বেইজিং নিতে চীনের পক্ষ থেকে ভাড়া করা উড়োজাহাজ পাঠানোর বিষয়ও আলোচিত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করতে মনোযোগ দিচ্ছে চীন। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের ধারাবাহিকতায় সর্বোচ্চ স্তরের সফরে আগ্রহী বেইজিং। ২৭ ও ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে হতে যাওয়া বাও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দিতে এরই মধ্যে ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। বিএফএ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বেইজিং সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করতে আগ্রহী চীন। তিনি সুইজারল্যান্ড থেকে ফেরার পর চীন সফরের বিষয়াদি পাকা হবে। সুইজারল্যান্ডে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক বৈঠকে ব্যাপক সমাদর পেয়েছেন ড. ইউনূস।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েংটার্ন শিনাওয়াত্রাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে রাজসম্মানে তার বৈঠক হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের কন্যা শেখা লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড, মেটাতে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল ড. অ্যাগনেস ক্যালামার্ড, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালার সঙ্গেও। এই প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বাংলাদেশ নিয়ে একটি আলাদা সংলাপও হয়েছে, যার ভ্যালু উচ্চমার্গের।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078