অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ মাসে সাফল্য-ব্যর্থতা

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:১৯ , চলতি সংখ্যা
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাস পূর্ণ হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পলায়নের পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই চার মাসে সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথে অগ্রগতি, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন, ভারতের আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ, ঝিমিয়ে পড়া পুলিশের কাজে গতি ফেরানো, তথ্যপ্রবাহে বাধা দূর করা প্রভৃতি। অন্যদিকে সরকারের ব্যর্থতাগুলো হলো বেসামাল বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারা, সংখ্যালঘুদের আস্থাহীনতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আনা প্রভৃতি।
নানা চ্যালেঞ্জ আর সংকটের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের গুরুদায়িত্ব এই সরকারের ওপর। ১০টি সংস্কার কমিশনের রাষ্ট্রের ১০টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির কাজ চলমান। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসেই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার হাতে পৌঁছাবে। তবে দেশে কবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা এখনো অস্পষ্ট। রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখেও সরকার এ বিষয়ে পথনকশা ঘোষণা করেনি। এ নিয়ে দলগুলোর অস্বস্তি বাড়ছে।
এদিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পলায়নের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বেশ সরব ভূমিকায় রয়েছে ভারতের গণমাধ্যম, যা অতিরঞ্জিত এবং সংঘবদ্ধ অপপ্রচার বলে প্রমাণ হচ্ছে। গত ২৫ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারতের আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়; যদিও এই হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু তার পরও চলছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এক কাতারে দাঁড়িয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের অস্তিত্ব রক্ষা এবং অপপ্রচার ও আগ্রাসন ঠেকাতে দলগুলো সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের থানাগুলো। থানা ভবন, সরকারিভাবে বরাদ্দ গাড়িসহ পুলিশের ব্যক্তিগত কিছু মোটরসাইকেলও পুড়ে যায়। লুট হয় অস্ত্র। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লাশ উদ্ধার করে, যেটি পুলিশের করার কথা। ৫ আগস্ট-পরবর্তী পুলিশের কার্যক্রমে একেবারে ধীরগতি লক্ষ করা যায়। আতঙ্কিত অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশের আভিযানিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রম থেকে শুরু করে পুলিশের রুটিন কাজকর্ম পুরোদমে চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশ টহল দিচ্ছে, চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। গ্রেপ্তার হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা। উদ্ধার হচ্ছে মাদকদ্রব্য। অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে ডাকাত, ছিনতাইকারী। ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমেও গতি ফিরেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
এ ছাড়া গত চার মাসে সহকারী সচিব থেকে সচিব পদে ৭৬৮ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং প্রায় ১০০ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে দেড় শ কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। এ ছাড়া প্রায় ১০০ জনকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে শিক্ষাঙ্গনে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরেনি। দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। তবে শিক্ষা পরিবারের সঙ্গে যুক্ত দেশের প্রায় সব পরিবার। কিন্তু সেই শিক্ষা খাতে এখনো পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরেনি। নানা ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে দাবি আদায়ে সড়কে নামছে। একাধিকবার সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়েছে। এমনকি শিক্ষা প্রশাসন এখনো ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের চার মাসের সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর পৃথিবীর যেকোনো দেশেই অরাজকতা তৈরি হয়। সে জন্য গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক যেভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে পারেনি। বাজার পরিস্থিতিও বেসামাল। সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ইতিবাচক। তা ছাড়া ভারতের আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়ে এই সরকারের উদ্যোগও প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে একমাত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠনসহ সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনগুলোর রিপোর্ট চলে আসবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে নির্বাচনী পথনকশা প্রণয়ন করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করা গেলে এখন যেটুকু আস্থাহীনতা আছে তা কেটে যাবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘গত চার মাসে কিছু কালাকানুন বাতিল ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশসহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সফলতা। তবে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। এর মধ্যে ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নিহত ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী শক্তিগুলোকে আস্থায় নিয়ে সরকারের এই কাজটি করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার সেই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় জনগণ, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের আস্থাহীনতা বেড়েছে। বাজারব্যবস্থা সংস্কারে উদ্যোগ না নিয়ে পুরোনো ব্যবস্থা বহাল রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এতে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078