
প্রথমে আমরা জেনে নেব কলমের কিছু প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। কলম এমন একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, যার প্রয়োজন রয়েছে সবখানে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, বাড়িতে, দোকানে, বাজারসহ সব জায়গাতেই কলম একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে কলমেও।
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তু হচ্ছে কলম। তাই আজকের আর্টিকেলটি লেখা কলম নিয়ে। আমরা যারা স্টুডেন্ট, তারা প্রতিনিয়ত কলমের ব্যবহার করে আসছি। তাই আজ আপনাদের সামনে সুপরিচিত একটি জিনিস কলম নিয়ে উক্তি ও বাণী লেখা হয়েছে। এখান থেকে কলম নিয়ে উক্তি ও বাণী সংগ্রহ করতে পারবেন।
জীবনের প্রতিকূলতা নিকুল স্রোতের মাঝে বন্ধ খাতায় রয়ে যায়, এলোমেলো শব্দের কবিতা মনের প্রতিফলন এর নিস্তব্ধ ছবির আকারে রাতের পর রাত আসে যায় কোভিদ নয়নের ব্যাকুলতা কলমের কালি ছড়িয়ে শব্দের মালা গাঁথে মনের প্রতিচ্ছবির মাঝে। একজন মানুষের মধ্যে এমন হাজারো চিন্তা লুকিয়ে আছে, যা সে জানতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে লেখার জন্য কলম হাতে নেয়।
ছোটবেলায় আমরা পেন্সিল ব্যবহার করতাম আর এখন কলম ব্যবহার করি। কারণ ছোটবেলার ভুলগুলো সংশোধনযোগ্য, কিন্তু বড়দের ভুলগুলো নয়। কলম, তুমি কত না যুগ, কত না কাল ধরে অক্ষরে অক্ষরে গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনি শুরু করে। কলম তুমি কাহিনি লেখো, তোমার কাহিনি কি দুঃখে জ্বলে তলোয়ারের মতন ঝিকিমিকি। অন্যের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে সময় নষ্ট না করে নিজেকে বরং উপযোগী করে তোলা, যাতে অন্যরা তোমার অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে।
কলম হলো আত্মার তৃষ্ণা মেটানোর পরিপূরক; এর দ্বারা মানুষের যেমন চিন্তাভাবনা হয়, তেমনি সেগুলো স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা যায়। রাইফেল-কামানের চেয়ে কলম অধিক শক্তি বহন করে। আমি কলম ছাড়া আর কিছুই নই, একদিন আমার ভেতরের কালি ফুরিয়ে যাবে। আমার একটাই আশা, আমি যেন সকলের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারি। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, একটি বই, একটি শিশু এবং একজন শিক্ষক একটি জাতি পরিবর্তন করতে সক্ষম।
আমি সব সময় কলম হাতে নিয়ে যেকোনো বই পড়তে বসতাম, যেন আমি আর লেখক কোনো কথোপকথনে আছি। যিনি কবিতার অনুভূতি থেকে মহৎ আনন্দ পান, তিনি একজন সত্যিকারের কবি; যদিও তিনি সারা জীবনে কলম দিয়ে কোনো একটি কবিতার চরণ না লেখেন। পৃথিবীতে সকল কিছুর চাহিদা কমে গেলেও কলমের চাহিদা বা প্রয়োজন এতটুকুও কমেনি। তাই কলম নিয়ে যারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে চান, তারা এখান থেকে স্ট্যাটাসগুলো দেখে নিতে পারেন।
তুমি যদি সমগ্র পৃথিবী পরিবর্তন করতে চাও, তবে তোমার কলমটি তুলে লেখা শুরু করো। একটি কলম মানুষের অন্তরের জিহ্বাস্বরূপ। ব্যথা আমার কলমের কালিকে জীবন্ত করে তোলে। আর দুর্দশা সেই শব্দগুলোর পরিস্ফুটন ঘটায়। জীবনের গল্প বলার শুরুতে একটি কলম হাতে নাও, তা-ই গল্পটাকে প্রাণবন্ত রূপ প্রদান করে। পৃথিবীর বড় বড় নির্মাণকাজ পরিচালনার জন্য যেমন লিডারের দরকার, তেমনি পৃথিবীটাকে বসবাসযোগ্য করে তুলতে কলম সকলের হাতে তুলে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রয়োজন।
পৃথিবীতে দুটি শক্তি আছেÑএকটি হলো তলোয়ার এবং অন্যটি হলো কলম। দুজনের মধ্যে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা রয়েছে। এদের থেকেও প্রভাবশালী একটি তৃতীয় শক্তি রয়েছে এবং তা হলো নারী। কবিতা হলো যখন একটি আবেগ শত বাধা পেরিয়ে তার আপেক্ষিক কল্পনাকে খুঁজে পায়, চিন্তা খুঁজে পায় শব্দকে এবং শব্দ খুঁজে পায় কলম দ্বারা প্রেরিত ছোঁয়াকে। কলমের মর্মে লিপিবদ্ধ কবিতা হলো কল্পনা, যা প্রত্যেক চরণে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে এবং শব্দগুলোর মাঝে ভাসিয়ে তুলে জীবনের প্রতিচ্ছবি।
একটি লেখকের লেখার ব্যাখ্যা শুরু হয় তার আন্দাজ এবং কল্পনাতে; আর তা শেষ হয় কোনো পাঠকের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা বই রিভিউ দ্বারা। একটি কলম, একটি প্রিন্টার, যে কাজ করে; তা সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত। কার্যক্রম নিয়তির কলমস্বরূপ। যখন একবার সাহিত্যের চিন্তা একজন মানুষের মনে আসে, তখন কলমের আঁচড় ছাড়া আর কিছুই নিরাময় করতে পারে না সেই ব্যাধিকে।
যেকোনো মানুষ কলমকে তলোয়ারের চেয়েও শক্তিশালী মনে করে। তাকে অভয় দিয়ে আঘাত করা হলেই বুঝতে সক্ষম হবে কোনটি বেশি ক্ষমতাপরায়ণ। কলম শুধু কোনো দলিল বাস্তবায়নের যন্ত্র নয়, বরং এটি যেকোনো আবিষ্কারের মূলমন্ত্র। যে কলমগুলো দ্বারা নিরস্ত্রীকরণের বিরুদ্ধে লেখা হয়, সেগুলো একই ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়, যা থেকে বন্দুক তৈরি করা হয়। একটি গান লিপিবদ্ধ করার সেরা উপায় হলো কলমকে যতটা সম্ভব আপনার হাত থেকে দূরে রেখে কল্পনার সাগরে ডুব দেওয়া।
তবে এটির ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে কলমের স্পর্শ অনিবার্য। কে বলেছে লেখার সময় কেউ কল্পনা এবং স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যায় না? কলমই স্বপ্ন দেখানো শেখায় এবং একটি খালি কাগজ স্বপ্ন দেখার অধিকার দেয়। তুমি যদি এই পৃথিবীতে পরিবর্তন আনার ইচ্ছে প্রেরণ করো, তবে কলম তুলে লেখা শুরু করো। যুদ্ধে নামলেই যেমন যোদ্ধা হওয়ার খেতাব পাওয়া যায়, তেমনি হাতে কলম তুলে নিলেই লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
সুকান্ত ভট্টাচার্য :
কলম, তুমি কত না যুগ কত না কাল ধ’রে
গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনী শুরু ক’রে।
কলম, তুমি কাহিনী লেখো, তোমার কাহিনী কি!
দুঃখের জ্বলে তলোয়ারের মতন ঝিকিমিকি?
কলম, তুমি শুধু বারংবার,
আনত ক’রে ক্লান্ত ঘাড়
গিয়েছ লিখে স্বপ্ন আর পুরনো কত কথা,
সাহিত্যের দাসত্বের ক্ষুদিত বশ্যতা।
ভগ্ন নিব, রুগ্্ণ দেহ, জলের মতো কালি,
কলম, তুমি নিরপরাধ তবুও গালাগালি
খেয়েছ আর সয়েছ কত লেখকদের ঘৃণা,
কলম, তুমি চেষ্টা কর, দাঁড়াতে পার কি না।
হে কলম! তুমি ইতিহাস গিয়েছ লিখে,
লিখে লিখে শুধু ছড়িয়ে দিয়েছ চতুর্দিকে।
তবু ইতিহাস মূল্য দেবে না, এতটুকু কোন,
দেবে না তোমায়, জেনো ইতিহাস বড়ই কৃপণ;
কত লাঞ্ছনা, খাটুনি গিয়েছে লেখকের হাতে,
ঘুমহীন চোখে অবিশ্রান্ত অজস্র রাতে।
তোমার গোপন অশ্রু তাইতো ফসল ফলায়
বহু সাহিত্য বহু কাব্যের বুকের তলায়।
তবু দেখ বোধ নেই লেখকের কৃতজ্ঞতা,
কেন চলবে এ প্রভুর খেয়ালে, লিখবে কথা?
হে কলম! হে লেখনী! আর কত দিন
ঘর্ষণে ঘর্ষণে হবে ক্ষীণ?
আর কত মৌন-মূক, শব্দহীন দ্বিধান্বিত বুকে
কালির কলঙ্ক চিহ্ন রেখে দেবে মুখে?
আর কত আর, কাটবে দুঃসহ দিন দুর্বার লজ্জার?
এই দাসত্ব ঘুচে যাক,
এ কলঙ্ক মুছে যাক আজ,
কাজ কর-কাজ।
মজুর দেখ নি তুমি? হে কলম, দেখ নি বেকার?
বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!
দিন নেই, রাত্রি নেই, শ্রান্তিহীন, নেই কোনো ছুটি,
যেন একটু অবাধ্য হলেই তখুনি ভ্রুকুটি;
এমনি করেই কাটে দুর্ভাগা তোমার বারো মাস,
কয়টি পয়সায় কেনা, হে কলম, তুমি ক্রীতদাস।
তাই যত লেখ, তত পরিশ্রম এসে হয় জড়োঃ
-কলম! বিদ্রোহ আজ! দল বেঁধে ধর্মঘট করো।
লেখক স্তম্ভিত হোক, কেরানীরা ছেড়ে দিক হাঁফ,
মহাজনী বন্ধ হোক, বন্ধ হোক মজুরের পাপ;
উদ্বেগ-আকুল হোক প্রিয়া যত দূর দূর দেশে,
কলম! বিদ্রোহ আজ, ধর্মঘট, হোক অবশেষে;
আর কালো কালি নয়, রক্তে আজ ইতিহাস লিখে,
দেওয়ালে এঁটেছো, হে কলম, আনো দিকে দিকে।
কবির ভাষায়
‘কলম’ তুমি জনম জনম থাক যার সাথে,
সেই বিদ্বান, সেই জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ দুনিয়াতে।
জ্ঞান বিদ্যা যাহার ভিতর আছে একটুখানি,
জগৎটাকে চিনতে পারে আমরা এটা জানি।
কলমের জোরে জনম ধরে জ্ঞানী বৈজ্ঞানিক,
হতে পারে কবি সাহিত্যিক আরো দার্শনিক।
স্রষ্টার সৃষ্টির মহিমা, যার নেই কোন তুলনা,
এই বিশ্বকে জানতে হলে জ্ঞানী হতে ভুলো না।
কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র,
যদি সেই বিদ্বান হয় নিষ্পাপ তার চরিত্রে।
শিক্ষিত হয়ে ডাক্তার মাস্টার জজ ব্যারিস্টার,
কলমের জোরে দেশ চালায় মন্ত্রী মিনিস্টার।
কলম দিবে সত্য সুন্দর আলোকময় জীবন,
নামে-দামে জ্ঞানে-গুণে ভরে উঠবে এ ভুবন।
জ্ঞান অর্জনের জন্য ঘুরতে পারো সারা বিশ্ব,
যত শিখবে তত জানবে স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্য।
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তু হচ্ছে কলম। তাই আজকের আর্টিকেলটি লেখা কলম নিয়ে। আমরা যারা স্টুডেন্ট, তারা প্রতিনিয়ত কলমের ব্যবহার করে আসছি। তাই আজ আপনাদের সামনে সুপরিচিত একটি জিনিস কলম নিয়ে উক্তি ও বাণী লেখা হয়েছে। এখান থেকে কলম নিয়ে উক্তি ও বাণী সংগ্রহ করতে পারবেন।
জীবনের প্রতিকূলতা নিকুল স্রোতের মাঝে বন্ধ খাতায় রয়ে যায়, এলোমেলো শব্দের কবিতা মনের প্রতিফলন এর নিস্তব্ধ ছবির আকারে রাতের পর রাত আসে যায় কোভিদ নয়নের ব্যাকুলতা কলমের কালি ছড়িয়ে শব্দের মালা গাঁথে মনের প্রতিচ্ছবির মাঝে। একজন মানুষের মধ্যে এমন হাজারো চিন্তা লুকিয়ে আছে, যা সে জানতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে লেখার জন্য কলম হাতে নেয়।
ছোটবেলায় আমরা পেন্সিল ব্যবহার করতাম আর এখন কলম ব্যবহার করি। কারণ ছোটবেলার ভুলগুলো সংশোধনযোগ্য, কিন্তু বড়দের ভুলগুলো নয়। কলম, তুমি কত না যুগ, কত না কাল ধরে অক্ষরে অক্ষরে গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনি শুরু করে। কলম তুমি কাহিনি লেখো, তোমার কাহিনি কি দুঃখে জ্বলে তলোয়ারের মতন ঝিকিমিকি। অন্যের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে সময় নষ্ট না করে নিজেকে বরং উপযোগী করে তোলা, যাতে অন্যরা তোমার অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে।
কলম হলো আত্মার তৃষ্ণা মেটানোর পরিপূরক; এর দ্বারা মানুষের যেমন চিন্তাভাবনা হয়, তেমনি সেগুলো স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা যায়। রাইফেল-কামানের চেয়ে কলম অধিক শক্তি বহন করে। আমি কলম ছাড়া আর কিছুই নই, একদিন আমার ভেতরের কালি ফুরিয়ে যাবে। আমার একটাই আশা, আমি যেন সকলের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারি। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, একটি বই, একটি শিশু এবং একজন শিক্ষক একটি জাতি পরিবর্তন করতে সক্ষম।
আমি সব সময় কলম হাতে নিয়ে যেকোনো বই পড়তে বসতাম, যেন আমি আর লেখক কোনো কথোপকথনে আছি। যিনি কবিতার অনুভূতি থেকে মহৎ আনন্দ পান, তিনি একজন সত্যিকারের কবি; যদিও তিনি সারা জীবনে কলম দিয়ে কোনো একটি কবিতার চরণ না লেখেন। পৃথিবীতে সকল কিছুর চাহিদা কমে গেলেও কলমের চাহিদা বা প্রয়োজন এতটুকুও কমেনি। তাই কলম নিয়ে যারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে চান, তারা এখান থেকে স্ট্যাটাসগুলো দেখে নিতে পারেন।
তুমি যদি সমগ্র পৃথিবী পরিবর্তন করতে চাও, তবে তোমার কলমটি তুলে লেখা শুরু করো। একটি কলম মানুষের অন্তরের জিহ্বাস্বরূপ। ব্যথা আমার কলমের কালিকে জীবন্ত করে তোলে। আর দুর্দশা সেই শব্দগুলোর পরিস্ফুটন ঘটায়। জীবনের গল্প বলার শুরুতে একটি কলম হাতে নাও, তা-ই গল্পটাকে প্রাণবন্ত রূপ প্রদান করে। পৃথিবীর বড় বড় নির্মাণকাজ পরিচালনার জন্য যেমন লিডারের দরকার, তেমনি পৃথিবীটাকে বসবাসযোগ্য করে তুলতে কলম সকলের হাতে তুলে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রয়োজন।
পৃথিবীতে দুটি শক্তি আছেÑএকটি হলো তলোয়ার এবং অন্যটি হলো কলম। দুজনের মধ্যে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা রয়েছে। এদের থেকেও প্রভাবশালী একটি তৃতীয় শক্তি রয়েছে এবং তা হলো নারী। কবিতা হলো যখন একটি আবেগ শত বাধা পেরিয়ে তার আপেক্ষিক কল্পনাকে খুঁজে পায়, চিন্তা খুঁজে পায় শব্দকে এবং শব্দ খুঁজে পায় কলম দ্বারা প্রেরিত ছোঁয়াকে। কলমের মর্মে লিপিবদ্ধ কবিতা হলো কল্পনা, যা প্রত্যেক চরণে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে এবং শব্দগুলোর মাঝে ভাসিয়ে তুলে জীবনের প্রতিচ্ছবি।
একটি লেখকের লেখার ব্যাখ্যা শুরু হয় তার আন্দাজ এবং কল্পনাতে; আর তা শেষ হয় কোনো পাঠকের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা বই রিভিউ দ্বারা। একটি কলম, একটি প্রিন্টার, যে কাজ করে; তা সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত। কার্যক্রম নিয়তির কলমস্বরূপ। যখন একবার সাহিত্যের চিন্তা একজন মানুষের মনে আসে, তখন কলমের আঁচড় ছাড়া আর কিছুই নিরাময় করতে পারে না সেই ব্যাধিকে।
যেকোনো মানুষ কলমকে তলোয়ারের চেয়েও শক্তিশালী মনে করে। তাকে অভয় দিয়ে আঘাত করা হলেই বুঝতে সক্ষম হবে কোনটি বেশি ক্ষমতাপরায়ণ। কলম শুধু কোনো দলিল বাস্তবায়নের যন্ত্র নয়, বরং এটি যেকোনো আবিষ্কারের মূলমন্ত্র। যে কলমগুলো দ্বারা নিরস্ত্রীকরণের বিরুদ্ধে লেখা হয়, সেগুলো একই ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়, যা থেকে বন্দুক তৈরি করা হয়। একটি গান লিপিবদ্ধ করার সেরা উপায় হলো কলমকে যতটা সম্ভব আপনার হাত থেকে দূরে রেখে কল্পনার সাগরে ডুব দেওয়া।
তবে এটির ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে কলমের স্পর্শ অনিবার্য। কে বলেছে লেখার সময় কেউ কল্পনা এবং স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যায় না? কলমই স্বপ্ন দেখানো শেখায় এবং একটি খালি কাগজ স্বপ্ন দেখার অধিকার দেয়। তুমি যদি এই পৃথিবীতে পরিবর্তন আনার ইচ্ছে প্রেরণ করো, তবে কলম তুলে লেখা শুরু করো। যুদ্ধে নামলেই যেমন যোদ্ধা হওয়ার খেতাব পাওয়া যায়, তেমনি হাতে কলম তুলে নিলেই লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
সুকান্ত ভট্টাচার্য :
কলম, তুমি কত না যুগ কত না কাল ধ’রে
গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনী শুরু ক’রে।
কলম, তুমি কাহিনী লেখো, তোমার কাহিনী কি!
দুঃখের জ্বলে তলোয়ারের মতন ঝিকিমিকি?
কলম, তুমি শুধু বারংবার,
আনত ক’রে ক্লান্ত ঘাড়
গিয়েছ লিখে স্বপ্ন আর পুরনো কত কথা,
সাহিত্যের দাসত্বের ক্ষুদিত বশ্যতা।
ভগ্ন নিব, রুগ্্ণ দেহ, জলের মতো কালি,
কলম, তুমি নিরপরাধ তবুও গালাগালি
খেয়েছ আর সয়েছ কত লেখকদের ঘৃণা,
কলম, তুমি চেষ্টা কর, দাঁড়াতে পার কি না।
হে কলম! তুমি ইতিহাস গিয়েছ লিখে,
লিখে লিখে শুধু ছড়িয়ে দিয়েছ চতুর্দিকে।
তবু ইতিহাস মূল্য দেবে না, এতটুকু কোন,
দেবে না তোমায়, জেনো ইতিহাস বড়ই কৃপণ;
কত লাঞ্ছনা, খাটুনি গিয়েছে লেখকের হাতে,
ঘুমহীন চোখে অবিশ্রান্ত অজস্র রাতে।
তোমার গোপন অশ্রু তাইতো ফসল ফলায়
বহু সাহিত্য বহু কাব্যের বুকের তলায়।
তবু দেখ বোধ নেই লেখকের কৃতজ্ঞতা,
কেন চলবে এ প্রভুর খেয়ালে, লিখবে কথা?
হে কলম! হে লেখনী! আর কত দিন
ঘর্ষণে ঘর্ষণে হবে ক্ষীণ?
আর কত মৌন-মূক, শব্দহীন দ্বিধান্বিত বুকে
কালির কলঙ্ক চিহ্ন রেখে দেবে মুখে?
আর কত আর, কাটবে দুঃসহ দিন দুর্বার লজ্জার?
এই দাসত্ব ঘুচে যাক,
এ কলঙ্ক মুছে যাক আজ,
কাজ কর-কাজ।
মজুর দেখ নি তুমি? হে কলম, দেখ নি বেকার?
বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!
দিন নেই, রাত্রি নেই, শ্রান্তিহীন, নেই কোনো ছুটি,
যেন একটু অবাধ্য হলেই তখুনি ভ্রুকুটি;
এমনি করেই কাটে দুর্ভাগা তোমার বারো মাস,
কয়টি পয়সায় কেনা, হে কলম, তুমি ক্রীতদাস।
তাই যত লেখ, তত পরিশ্রম এসে হয় জড়োঃ
-কলম! বিদ্রোহ আজ! দল বেঁধে ধর্মঘট করো।
লেখক স্তম্ভিত হোক, কেরানীরা ছেড়ে দিক হাঁফ,
মহাজনী বন্ধ হোক, বন্ধ হোক মজুরের পাপ;
উদ্বেগ-আকুল হোক প্রিয়া যত দূর দূর দেশে,
কলম! বিদ্রোহ আজ, ধর্মঘট, হোক অবশেষে;
আর কালো কালি নয়, রক্তে আজ ইতিহাস লিখে,
দেওয়ালে এঁটেছো, হে কলম, আনো দিকে দিকে।
কবির ভাষায়
‘কলম’ তুমি জনম জনম থাক যার সাথে,
সেই বিদ্বান, সেই জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ দুনিয়াতে।
জ্ঞান বিদ্যা যাহার ভিতর আছে একটুখানি,
জগৎটাকে চিনতে পারে আমরা এটা জানি।
কলমের জোরে জনম ধরে জ্ঞানী বৈজ্ঞানিক,
হতে পারে কবি সাহিত্যিক আরো দার্শনিক।
স্রষ্টার সৃষ্টির মহিমা, যার নেই কোন তুলনা,
এই বিশ্বকে জানতে হলে জ্ঞানী হতে ভুলো না।
কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র,
যদি সেই বিদ্বান হয় নিষ্পাপ তার চরিত্রে।
শিক্ষিত হয়ে ডাক্তার মাস্টার জজ ব্যারিস্টার,
কলমের জোরে দেশ চালায় মন্ত্রী মিনিস্টার।
কলম দিবে সত্য সুন্দর আলোকময় জীবন,
নামে-দামে জ্ঞানে-গুণে ভরে উঠবে এ ভুবন।
জ্ঞান অর্জনের জন্য ঘুরতে পারো সারা বিশ্ব,
যত শিখবে তত জানবে স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্য।