চিরচেনা শরতের কাশফুল

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ , চলতি সংখ্যা
মেয়েটি সরকারি কলেজের প্রভাষক। নতুন চাকরি। বিসিএস ক্যাডার। বাবা-মায়ের ইচ্ছে এখনই বিয়েটা হয়ে যাক। ছেলেটি আর্কিটেক্ট। দুই পক্ষের পারিবারিক সম্মতিতেই বিয়ে ঠিক হয়। দুজনকেই আংটি পরানো হয়। স্থির হয়-এক বছর পর আর্কিটেক্ট ছেলেটি মেয়েটিকে ঘরে তুলে আনবেন।
মফস্বলে কর্মস্থল মেয়েটি কাজে যোগদান করেন। ঢাকা থেকে দূরে এক ছোট্ট মফস্বল শহর। কর্মব্যস্ততা নেই, হইচই নেই, কোলাহল নেই। চিরপরিচিত ঢাকাকে ছেড়ে দূরে থাকা। প্রতিদিনের কলেজ-প্রভাত আসে সন্ধ্যা লাগে। যদিও নতুন চাকরি। আনন্দের স্বাদ পাচ্ছে। দিনগুলো দ্রুত চলে যাচ্ছে। এমনি করে বছর কেটে যায়।
মেয়েটি বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে। সামনে বিয়ের সানাই বাজছে। মা-বাবা, ভাইবোন সবার প্রস্তুতি চলছে। মেয়েটি নিজেও একধরনের মানসিক পরিবর্তন বুঝতে পারে। গায়েহলুদÑপায়ে আলতা, হাতে মেহেদির আয়োজন চলছে। ছোট দুটি ভাইবোন। অনেক প্ল্যান মাথায়। সবাই মহাব্যস্ত।
হঠাৎ আরিফের ফোন (ছেলেটির নাম), তুমি এখনই চলে আসো। আমার কথা আছে। মেয়েটি সেকেন্ড বিলম্ব না করে আরিফের মুখোমুখি বসে।
আরিফ খুব ধীরে ধীরে বলে, আমাকে তোমার সাহায্য করতে হবে। আমি তোমার সাহায্য চাইছি। মিলা (মেয়েটির নাম) খুব শান্ত। বলুন, কী করতে পারি?
একটি মেয়ে আমার সহপাঠী। আমাকে খুব পছন্দ করে। কোনো দিন আমাকে জানায়নি, আমিও কোনো দিন কোনো কথা দিইনি। পাঁচটি বছর অপেক্ষা করে আসছে। ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। সে আমার ঝঃঁফু’র পার্টনার।
আপনিও কি কষ্ট পাচ্ছেন? নীরবতা অনেক শব্দের অর্থ বহন করে। আরিফ নিজেকে কিছুটা সময় দিচ্ছে।
মিলা বিন্দুমাত্র অপ্রস্তুত না হয়ে বলেন, আমার মনে হয় আপনারা দুজনই কষ্ট পাচ্ছেন। আর দুজন দুজনকে খুব পছন্দ করেন। আপনি একজন সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব। তাকেই বিয়ে করুন। কাউকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা যায় না।
তোমার বাবা-মা? আমার বাবা-মা?
সেসব আমি দেখব। সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে আপনাকে একটি কথা দিতে হবে।
বলো কী কথা?
আমার কোনো স্মৃতি রাখবেন না। আপনার কোনো ভাবনায় আমাকে কোনো দিনও জড়াবেন না।
কেন এমন বলছ? আরিফ জানতে চায় কী সেই কারণ?
মিলা খুবই স্বাভাবিক-শান্ত হয়ে বলে, আপনাকে অভিনন্দন। কারণ ‘সব ফুলে মালা হয় না’।
আরিফ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তার মনের আকুতি মিলা বুঝতে পারে না। সরাসরি মিলার চোখে তাকায়। মিলা! অমূল্যের মূল্য দিতে হবে আমি জানি। তুমি আমার জন্য এত কিছু করছÑতোমার জন্য আমি এতটুকু করব না? তোমার ভাই মনে হয়? বেশ তা-ই হবে, আমি কথা দিলাম।
মিলা সরে পড়ে। আর্কিটেক্ট ছেলেটির সঙ্গে মিলার ঘর বাঁধা হয় না।
মিলা আবার কাজে যোগ দেন। কলেজ ক্যাম্পাস, ছাত্রছাত্রী, কলিগ, পরীক্ষা, পরীক্ষার খাতাÑসব মিলিয়ে চাঁদের হাট। মাঝেমধ্যে মাকে লেখেন-মা, আমি খুব ভালো আছি। কোনো চিন্তা করবে না। মনে হচ্ছে, এই পথ যেন শেষ না হয়। কোনো দিন যেন ছুটির ঘণ্টা না বাজে।
অনেক দিন পর আরিফের চিঠি-
সুপ্রিয় মিলা,
তোমাকে বিব্রত করার ইচ্ছা আমার ছিল না। একটি কথা না বলে পারলাম না-আমার দেখা তিনজন ভালো মানুষের মধ্যে তুমি একজন, অন্য দুজন বাবা-মা। আমি সফল কিংবা বিফল আজও জানি না। তুমি শরতের কাশফুল। তুমি অতল জল। তুমি এক বিস্ময়!!!
-আরিফ
আরিফের অকপট, নির্ভেজাল বর্ণনা। মিলা চিঠিটি শতবার পড়ে। কলেজ কোয়ার্টারে এই মুহূর্তে মিলা সম্পূর্ণ একা শরতের আকাশ। এই লেখা স্বরলিপি-মিলা অনেক যত্ন করে রেখে দেয়। নির্জন বিকেল, সবকিছুই শান্ত। চুপচাপ ভাবনা মায়াভরা মাটি!!!
আরিফকে মনে হয় কত চেনাজানা? আর মনে হয় দূরে, ওই বহুদূরে কাশফুলের বাগান : ‘চিরচেনা শরতের কাশফুল’।
লেখক : সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078