সংখ্যালঘুদের ছদ্মাবরণে ‘সর্বলীগ’ ✪ সালমান-আইনমন্ত্রীসহ ৫০ মন্ত্রী-এমপি আটক

আ’লীগকে ‘মুসলিম লীগ’ বানাতে চায় ছাত্ররা

প্রকাশ : ১৫ অগাস্ট ২০২৪, ০৮:৩৪ , চলতি সংখ্যা
কথা ছিলো ‘১৫ আগস্ট’ প্রতিবিপ্লব ঘটাবে আ‘লীগ। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধুর সপরিবার হত্যাদিবস। ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে বহাল ছিলো জাতীয় ছুটি। ঢাকায় ‘মৌনমিছিল’ করার নির্দে’শনা ছিলো দলনেত্রী শেখ হসিনার। কিন্তু সবকিছু উল্টিয়ে দিয়েছে ত্রিমাত্রিক রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপির অনুরোধে ছুটি বাতিল করেছে ‘ইউনুস সরকার।’ আ‘লীগের ‘ঢাকা-মার্চ’ কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। বিপুল সংখ্যক মন্ত্রী-এমপি আটক করেছে সামরিক বাহিনী। হুলিয়া পাল্টিয়ে পলায়নকালে ‘টাকার কুমির’ সালমান, আইনমন্ত্রী আটক। 
দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বন্ধে গৃহীত হয়েছে পদক্ষেপ। ‘তিলকে তাল’ করার অভিযোগ ভারতীয় পোর্টাল ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরসমূহে সংখ্যালঘুদের শান্তিপুর্ণ সমাবেশ সম্পন্ন। সেসবে ছদ্মাবরণে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অংশগ্রহণের অভিযোগ। বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে খুন-সন্ত্রাসের নিয়ামক বলছে। ৫০০ ছাত্র-জনতা হত্যার হুকুমদাতারূপে নেতাদের বিচার চেয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় ‘মুসলিম লীগ’ বানাতে চায় বিশাল আ‘লীগকে। 
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার যে বক্তব্য থেকে নতুন উত্তেজনা 
১৫ আগস্ট উপলক্ষে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব). সাখাওয়াত। বঙ্গব›ধুর নাম না নিয়ে বলেন- তিনি স্বপ্নদ্রষ্টা। মুক্তিযুদ্ধ ওনার নামেই হয়েছিলো এবং শ্রদ্ধা পেতেই পারেন। তিনি আরো বলেন- সামনেই নির্বাচন। তাতে নি:সন্দেহে আ’লীগ অংশ নেবে। তখন দলটিও জেগে উঠবে কারণ দলের নিবন্ধন রয়েছে। নিষিদ্ধ বা বতিল তো করা হয়নি। সেক্ষেত্রে প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনাও ফিরতে পারেন। 
মুলত ১১ আগস্ট দেওয়া বক্তব্য ছিলো এটুকুই। সাবেক নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ওনার মন্তব্য গুরুত্ব পায়। আওয়ামী লীগের বিরোধী মহল সোচ্চার হয়ে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা বিশাল ছাত্রসভা ডাকে। তাতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন বিষয়ে প্রতিবাদ ওঠে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ‘খুনী হাসিনার দালাল’ও বলা হয়। কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকার থেকে ওনার পদত্যাগও চায়। 
উত্তেজিত ছাত্রনেতাদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসিতে ফের রক্তগরম ছাত্রসভা। প্রধান আলোচক ছিলো আন্দোলন-সংগঠক সারজিস আলম। সভার অন্য তিনটি বিষয় ছিলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ক). ১৫ আগস্ট ঢাকা শহরে আ‘লীগকে প্রতিহত করা। খ). আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনার বিচার করা। গ). বিশাল আ’লীগকে ‘মুসলিম লীগ’ বা ক্ষুদ্রদলে পরিণত করা। 
সেদিন শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও সমালোচিত হন। নেতারা বলেন, জয়-এর কথাবার্তা উস্কানিমূলক। বিদেশে থেকে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাঁর অর্থনৈতিক কেলেংকারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। 
উল্লেখ্য, আ’লীগের আদি সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ।’ ১৯০৬-এর ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৫-এ বঙ্গ ভঙ্গ হলে প্রতিবাদস্বরূপ দলটির জন্ম। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা খাজা সলিমুল্লাহ দলটির কর্ণধার ছিলেন। ১৯৪৭-এর পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর মুসলিম লীগ বিভাজিত হয়। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৪৯-এর ২৩ জুন গঠিত হয় কমিটি। মাওলানা ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সম্পাদক। যুগ্ম সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও খন্দকার মোশতাক আহমদ। ১৯৫৪ সালে মূল মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ‘যক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়। ৩০৯টি আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ পেয়েছিলো মাত্র ১০ টি। অধিকাংশ আসন পেয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ বিজয়ী হয়। 
পরে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ বিভাজিত হয়। মাওলানা ভাসানী গড়েন ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি/ন্যাপ।’ মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে বহাল থাকে ‘আওয়ামী লীগ।’ বঙ্গবন্ধু সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৬৬ সালে। অন্যদিকে মূল ‘মুসলিম লীগ’ এর অবস্থান তলানিতে ঠেকে। যুদ্ধবর্ষ ১৯৭১-এ দলটি পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। স্বাধীনতার পর থেকে টিম টিম আকারে জ্বলতে থাকে। যদিও নেতাদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দেওয়া হয়। 
কোটা-সংস্কার আন্দোলনে ‘রাজাকার’ অভিধাটি সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। সাবেক প্রধানমন্দ্রী শেখ হাসিনা পরোক্ষভাবে ছাত্রদের ‘রাজাকার’ বলেন। এখন ছাত্রনেতারা চায়- আ’লীগকে ‘মুসলিম লীগ’ বানাতে। সত্যিকারের রাজাকারদের দলে রূপান্তর ঘটাতে চায় তারা। 
উল্লেখ্য, বিজয়ের পরও সড়ক ছাড়েনি বিপ্লবী ছাত্রেরা। ৭-৮-৯ আগস্ট সড়ক, গণভবন, সংসদভবন পরিষ্কার করেছে। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরাই ট্রাফিকিং করছে। দেশব্যাপী সড়কস্থ দেওয়ালে এঁেকছে গ্রাফিতি, চিত্রমালা। বর্ণিল সাজে সাজানোর পাশে বহাল রেখেছে আব্দোলনের চেহারা-চরিত্র। 
১৫ আগস্ট ঢাকায় শোকদিবস প্রতিপালনে শেখ হাসিনার মোবাইল নির্দেশনা ॥     আবারও অন্ধকারে ধানমন্ডি ৩২
দিল্লী থেকে মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। কর্মী-নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছেন ‘ঢাকা-মার্চ’ সফল করতে। সারাদেশ থেকে কমী সমর্থকদের ‘শো-ডাউন’ প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, ৩২ নম্বর কেন্দ্রিক মৌনমিছিল করতে হবে। এছাড়া ৩২ নম্বর ও দেশের আ‘লীগ অফিসসমূহে অগ্নিকান্ড ঘটেছে। প্রত্যেকটি আক্রমণাত্নক ঘটনার ‘জিডি’ও করতে বলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ফোনালাপটি ‘ভাইরাল’ হয়। ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নতুন চেহারায় উদ্ভাসিত হন। বলেন রাজধানী ঢাকায় কোনরকম অরাজকতা চলবেনা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে। 
১৩ আগস্ট বিকেলে সরকারের উপদেষ্টাদের বৈঠক হয়। ১৫ বছর পর বাতিল হয় ১৫ আগস্টের জাতীয় ছুটি। এছাড়া ‘ঢাকা-মার্চ’ কর্মসূচিও আলোচ্য ছিলো। একাধিক উপদেষ্টা বলেন, ঐদিন ঢাকায় আসতে হবে কেনো? বঙ্গব›ধুর সমাধি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। শোকদিবসের শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে যেতে পারে। কিন্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে ‘ঢাকা-মার্চ কমসূচি।’ যে কোন মূল্যে এটি প্রতিহত করতে হবে। 
অর্থাৎ শোকাবহ ১৫ আগস্ট আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন হলো। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারত যান। আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যেবেলা ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পুড়িয়ে দেয়। এখানেই ১৯৭১-এ মাতৃত্বের স্বাদ নেন শেখ হাসিনা। বাসররাতও হয়েছিলো এই রাড়িতে। স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিমুখর প্রাঙ্গন ৩২ নম্বর। পচাঁত্তরের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত। ১৫ আগস্ট আবারও এলো কিন্তু বাড়িটি আর নেই।   
সংখ্যালঘুদের ছদ্মাররণে সর্বলীগ॥ 
রাজনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। মাঝে একাংশ জড়িয়েছিলো ‘ডাকাতি প্রকল্পে।’ সার্বজনীন উদ্যোগে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে আ‘লীগের ব্যাপক সংখ্যক মন্ত্রী-এমপি সেনা-হেফাজতে। মামলা দায়ের না হওয়ায় আইনের কাছে সোপর্দ হচ্ছেন না। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার শিল্প উপদেষ্টা সালমান রহমান ধৃত। ‘দরবেশ-খ্যাত’ এই ধনকুবের সাদা দাড়ি ফেলে দিয়েছিলেন। মাঝির পোশাক পরে নদীপথে ভেগে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন হাসিনা-সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। হাতকড়া পরা নব চেহারায় দুজনের আলোচিত্র এখন ‘ভাইরাল।’ 
এমতাবস্থায় নতুন কৌশল নিয়েছে আ’লীগ। সংখ্যালঘু ম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর-গুলোতে মৈত্রীমিছিল হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে- তাতে ‘সর্বলীগ’ অংশ নিচ্ছে। অর্থাৎ আ‘লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ। ইতোমধ্যে ভারতীয় মিডিয়া ও পোর্টাল সরব। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ম্প্রদায় ব্যাপক আক্রমণের শিকার। কিন্তু বিবিসি বাংলা দিয়েছে উল্টৈাচিত্র। বলেছে, ৮০% ভিডিও বা সংবাদ ‘ফেইক বা ফেব্রিকেটেড।’ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিবরণের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং মাদ্রাসা ছাত্রদের মন্দির পাহারা দিতে দেখা গেছে। 
এদিকে উল্লিখিত বিষয়ে সচেতন হয়েছে সরকারপক্ষ। সারাদেশে সরকারি বেসরকারি পাহারা নিশ্চিত করেছে। জাতীয় মন্দির ‘ঢাকেশ্বরী’তে গিয়েছেন সরকারপ্রধান ড. ইউনুস। পুরোহিতেরা বলেছেন, আমরা আর রাজনীতির ফাঁদে পড়বো না। 
উল্লেখ্য স্বৈরশা সনকালের ছাত্র-জনতা-পুলিশ হত্যার বিবরণ চায় ‘জাতিসংঘ।’ সঠিক তদন্ত ও বিচার প্রত্যাশা করে প্রতিষ্ঠানটি। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়েও প্রকাশ করেছে উদ্বেগ। ফলে দিনে দিনে চাপ বাড়ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078