হাসিনা আপদে মোদি ⭐ উজবুকে জয় ⭐ অ্যাটম বোমে সাখাওয়াত

প্রতিবিপ্লবের শনিচক্রে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১৫ অগাস্ট ২০২৪, ০৭:৪৯ , চলতি সংখ্যা
দ্রুত অ্যাকশনে জুডিশিয়াল ক্যু ঠেকানো গেলেও বিপদ এখনো ঘুরছে। প্রশাসন-কূটনীতি-রাজনীতি মিলিয়ে শনির চক্কর দেখছেন অনেকে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে ছাত্র-জনতাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য জাতীয় সনদ জরুরির তাগিদ তাদের। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে চলছে বেশ তর্ক-বিতর্ক। তার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। ড. ইউনূসের পর সবচেয়ে জটিল-কঠিন অবস্থায় আছেন এই উপদেষ্টা।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাতে গিয়ে তার কিছু প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পরিস্থিতির মাঝে টোকা পড়েছে। আওয়ামী লীগকে ‘রি-অর্গানাইজ’ হওয়ার পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি দলটির ঐতিহ্যের কথা আনেন। এতে একধরনের অ্যাটম বোমে পড়ে গেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তার ওপর খেপেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তার কথার মাঝে আওয়ামী লীগকে আবার সামনে আনার চেষ্টা আঁচ করছে তারা। খুনিদের পুনর্বাসনের চেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সমন্বয়কেরা। গত ৫ আগস্টের পর কিছু ষড়যন্ত্র হলেও তা রুখে দেওয়া হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। সেই সঙ্গে ৫ আগস্টের কথা স্মরণ করিয়ে সতর্কতাও দেওয়া হয়। বিএনপিও বেশ খেপেছে তার ওপর। চটেছে হেফাজতে ইসলামও। জামায়াত এ ব্যাপারে বেশ কৌশলী।
এ সরকারের আয়ুষ্কাল তিন-চার মাস নয়, আরও বেশি হবে, তা এরই মধ্যে পরিষ্কার। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, নির্বাচনের মাঠ তৈরি করতে এ সরকারকে সময় দিতে চান তারা। কিন্তু সময়টা কত সময় পর্যন্ত, সেই প্রশ্ন এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত ভালো রকমের যন্ত্রণায় পড়ে গেছেন। বিচার বিভাগের ক্যু ঠেকানো, সেনাবাহিনীর শক্তি দিয়ে বিনা রক্তপাতে গোপালগঞ্জের প্ল্যান বানচাল, দ্রুত সময়ের মধ্যে থানাগুলোতে পুলিশ আর ট্রাফিক পুলিশকে কাজে ফেরানোর মাঝে এই ধাক্কাটা খেলেন তিনি। গত ১৫ বছর যে অল্প কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আওয়ামী লীগের অন্যায় আর দুঃশাসন নিয়ে নিয়মিত সোচ্চার ছিলেন, ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত তাদের একজন। এখন মাত্র দুই লাইনের কথায় নতুন কাঠগড়ায় তিনি।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত ইস্যু ক্ষমতাহারা আওয়ামী লীগের জন্য পুলকের মতো। অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরীণ যেকোনো মন্দ খবরই তাদের কাম্য। কিন্তু এক পা এগোলেই তাদের দুই পা পিছিয়ে দিচ্ছেন হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। একেক দিন একেক কথা বলার উজবুকি কাণ্ডে তিনি মাঠে মেরে ফেলছেন শেখ হাসিনার রাজনীতিকেও। ৫ আগস্ট ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া বা নির্দেশনা জানতে চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে দলের সিনিয়র নেতারা কেউ আত্মগোপনে, আর কেউ দেশ ছাড়ার শূন্যতায় ভার্চুয়ালি এগিয়ে আসেন শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক তার বক্তব্যে হতাশার পাশাপাশি বিভ্রান্তিতেও পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বলতে গেলে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় নিজেই নিজের বক্তব্যের বিরুদ্ধে হাজির হন তিনি। এতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মনোবল দৃঢ় হওয়ার পরিবর্তে বাড়ছে বিভ্রান্তি। দিশাহীন হয়ে পড়েন ঐতিহ্যবাহী দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
এ ধারাবাহিকতায় আরেকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য নিয়ে হাজির সজীব ওয়াজেদ জয়। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করে বসলেন, দেশ ছাড়ার আগে-পরে কোনো বিবৃতি দেননি তার মা শেখ হাসিনা। জানান, মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। নিশ্চিত হয়েছেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে বিবৃতিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ১১ আগস্ট ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তা শেখ হাসিনার বলে দাবি করে। যেখানে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। সেখানে পদত্যাগের কারণও ব্যাখ্যা করেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এদিকে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আরেক ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন জয়। বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতা ও তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বলে মনে করছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’। নিজের মতামতের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে মনোবল অটুট রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, দেশে ফিরবেন শিগগিরই।
এ সংবাদকেও মিথ্যা বলে দাবি জয়ের। এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্কে অস্বস্তির বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মালদ্বীপ সফরে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বলেছেন, প্রতিবেশী দেশের উন্নয়ন, নিরাপত্তা আর অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বা চীন নয়; ভারতেরই আন্তরিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। মালদ্বীপে ভারতের অবদানকে উদাহরণ হিসেবে নিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। গোটা পরিস্থিতিটি ভারতের মোদি সরকারের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। তা সামলাতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের তথ্য অ্যাজেন্ডা না নিয়ে উপায়ও নেই তার। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়াগুলো এতই মিথ্যাচার করছে যে, সত্যিকারের নির্যাতনগুলোর কথাও মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না।
এদিকে সজীব ওয়াজেদ জয় অস্বীকার করলেও শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাচ্যুতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করার বক্তব্যকে আমলে নিয়েছে দেশটি। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কোনো ভূমিকা অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছাতেই এ পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয় সময় গত ১২ আগস্ট নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারিন জ্যঁ পিয়েরে। জানান, শেখ হাসিনাকে হটাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা সংক্রান্ত সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব। বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্তেই এটি হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষই দেশটির সরকারের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থান, ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা একটি গোলমাল বাধিয়ে দিয়েছে। এই সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের বাংলাদেশে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাসে কূটনীতিতে যোগ হয়েছে আরেক মাত্রা। সেখানে আবার ‘শেখ হাসিনা ভারতে থাকলেও দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না’ জানিয়ে আরেক বার্তা দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, যার সারসংক্ষেপ দেশে আরেকটি গন্ডগোলের ছাপ।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078