আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলেই দুর্নীতিবাজদের বিচার সম্ভব

প্রকাশ : ১৪ অগাস্ট ২০২৪, ২১:৪১ , চলতি সংখ্যা
বাংলাদেশ এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলনের ঝড়ে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার চেয়ার থেকে ছিটকে পড়েছে। শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে ৮ আগস্ট নতুন করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। দেশে এখন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে অনেকের বাড়িতে লুটপাট, আগুন দেওয়া, পিটিয়ে মারা, ডাকাত অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে।
কিন্তু সবার মনে একই প্রশ্ন এই যে এত সব ঘটনা ঘটছে, তার বিচার হবে কি? তা ছাড়া আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার বিচার হবে নাকি ঝুলে থাকবে? শুধু দুর্নীতি নয়, মহাদুর্নীতি হয়েছিল বলা চলে। পি কে হালদার থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বেনজীর, প্রশ্নফাঁস আবেদ আলী, মতিউর, পিয়ন কে নেই এই দলে! অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু বিচার হয়নি। এখন কি সেই সব দুর্নীতির বিচার হবে? আমরা চাই এই দুর্নীতিবাজদের বিচার হোক এবং অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের জন্য ব্যয় করা হোক।
এই মুহূর্তে ক্ষমতার চেয়ারে থাকা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন সব অন্যায়ের বিচার হবে। আমরা ভরসা রাখতে চাই, বিশ্বাস করতে চাই উনি ওনার কথায় অটল থাকবেন। কারণ অতীতে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে কথার ফুলঝুরি দিয়ে মন ভরালেও শেষে ফুল নয়, কথার কাঁটার বাক্যবাণে জর্জরিত করেছে। তাই ভরসার জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার হাতে শুরুতে ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ দেওয়া হয়। এগুলো হলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে দুজন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও ডা. বিধান রঞ্জন রায় শপথ নেওয়ায় তাদের হাতে যথাক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করা হয়। এখনো প্রধান উপদেষ্টার হাতে ২৫টি মন্ত্রণালয়। এতগুলো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কীভাবে উনি পালন করবেন, তাও এক প্রশ্ন। কারণ উনি মানুষ, যন্ত্র নন।
দুর্নীতির বিচার করতে হলে আগে দরকার ন্যায়ের সুশাসন। তার জন্য এই সরকারকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। যতদূর জেনেছি, তিন থেকে ছয় বছরের মেয়াদ থাকবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। যারা শপথ নিয়েছেন তারা সবাই শিক্ষিত হলেও রাজনীতিবিদ নন। দেশ চালাতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রয়োজন। আমরা অতীতে দেখেছি খেলোয়াড়, শিল্পী, নায়ক, গায়িকা সবাই ছিল। কিন্তু তারা সে রকম কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেননি তাদের দায়িত্বের ক্ষেত্রে। এর মূল কারণ হলো একজন ভালো অভিনেতা মানে ভালো রাজনীতিবিদ নন। দেশের দুঃসময়ে প্রজ্ঞা, মেধা দিয়ে অনেক কিছু মোকাবিলা করতে হয়। জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়। তাদের কথা শুনে সমস্যা সমাধান করতে হয়। আর সেগুলো শুধু রাজনীতিবিদরাই করতে পারেন। তবে অন্যরা যে ব্যর্থ, তা নয়। তবে রাজনীতিবিদদের মতো দক্ষ নন।
আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা ভালো রাজনীতিবিদ অতীতে পেলেও তাদের লোভের কারণে তাদের দক্ষতা ঢাকা পড়ে যায়। তারা হয়ে ওঠেন লোভের দৈত্যের জাহাজ। উন্নয়ন যা করেছে তার চেয়ে বেশি করেছে দুর্নীতি। ফলে উন্নয়নের চেহারায় অন্ধকারের কালিমা পড়ে গেছে। ফলে আমরা দেখেছি তাদের ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়া।
প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমানে যারা ক্ষমতার চেয়ারে আছেন, তারা কি অভিজ্ঞতার আলোকে দক্ষ হয়ে পূর্বের সরকারের মতোই হবে? তাদের লোভের চারাগাছটা বটগাছে পরিণত হবে না তো? কারণ ক্ষমতার চেয়ার হলো এমন এক চেয়ার, যেই বসে সেই বদলে যায়। হয়ে ওঠে লোভের দানব। বর্তমানে উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহউদ্দিন আহমেদকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আদিলুর রহমান খানকে শিল্প, হাসান আরিফকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, মো. তৌহিদ হোসেনকে পররাষ্ট্র, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, শারমিন এস মুরশিদকে সমাজকল্যাণ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র, আ ফ ম খালিদ হোসেনকে ধর্ম, ফরিদা আখতারকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, নুরজাহান বেগমকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, মো. নাহিদ ইসলামকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কত দূর সফলতা অর্জন করতে পারেন, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা ট্রাফিক কন্ট্রোল করছে। খুব ভালো উদ্যোগ এবং সাধুবাদ ছাত্রদের। ছাত্ররা তোমরা এগিয়ে যাও, তোমাদের আরও অনেক যুদ্ধ করার বাকি আছেÑদুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অনেক কাজ বাকি। আর হাওয়া ভবন হতে দিয়ো না, আয়নাঘর হতে দিয়ো না, আইনের শাসন ফিরে এলেই বিচার হতে দিয়ো সাগর-রুনী হত্যার, তনু হত্যার, নোয়াখালীর নুসরাত হত্যার। এমন আরও অনেক হত্যাকাণ্ড আছে, তাদের যেন বিচার হয় এবং এখন যে অরাজকতা হচ্ছে এটারও যেন বিচার হয়। কারণ আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
আমার দাবি থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর কাছে, ভবিষ্যতে এই ছাত্রদের পার্টটাইম জব দেওয়া হোক। পুলিশের পাশাপাশি ছাত্ররাও দায়িত্ব পালন করবে। একজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায় ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে অনেক বেশি টায়ার্ড হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে পুলিশ ৮-৯ ঘণ্টা কাজ করবে, বাকি সময় ছাত্ররা করতে পারে। এতে তাদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতে হলো না আবার পুলিশের ওপরও চাপ পড়ল না। আমাদের চাওয়া সুন্দর বাংলাদেশ, যেখানে বৈষম্য থাকবে না। মিডিয়া, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।
অতীতের দুর্নীতির বিচার করতে হলে বর্তমানদের থাকতে হবে স্বচ্ছ। তাদের জবাবদিহি করতে হবে জনগণের কাছে, তাদের হয়ে উঠতে হবে জনবান্ধব। তার জন্য রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে তারা কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছেন, প্রতি তিন মাসেই তার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কারণ নিজেদের স্বচ্ছতা না থাকলে অন্যদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো খুব কঠিন, তখন জনমনেও প্রশ্ন উঠবে। তারা তখন বলবে, কী লাভ হলো এত আন্দোলন করে, এত জীবন দিয়ে। তখন হয়ে উঠতে পারে হিরো থেকে জিরো। তা ছাড়া চারপাশে চাটুকার থেকে, তেল দেওয়ার লোক থাকলে পিছলে পড়ে যেতে পারে। গঠনমূলক সমালোচনাই তাদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠবে। আমরা অতীতে ফিরে যেতে চাই না, যেখানে চাটুকার দ্বারা বেষ্টিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ছিলেন জনবিচ্ছিন্ন।
গত এক সাপ্তাহে যে ঝড় বয়ে গেল জনজীবনে, তার বিচার চাই, চাই অতীতের দুর্নীতিবাজদের বিচার। তবেই সুন্দর হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078