প্রবাসীদের স্বপ্ন এবং ভাবনা বাস্তবায়ন কতদূর

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৮:৫২ , চলতি সংখ্যা
প্রবাসীদের আমরা কাগজ-কলমে অর্থনীতির মেরুদন্ড বলি। অথচ প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় খবর দেখা যায়, নিজের দেশের বিমান বন্দরে প্রবাসী কর্মীদের প্রচণ্ড দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। হয়রানির শিকার হওয়া তো তাদের নিয়তির লিখন। 
ইদানিং প্রবাসীদের সমস্যার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। তাঁদের ভোগান্তি যেন শুরু হয় দূর থেকেই। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বেশিরভাগ গ্রামের অর্ধশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত মানুষ। দালালরা প্রবাসীদের কষ্টের কথা গোপন করে উচ্চ বেতন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাজের জায়গা, রাজকীয় জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়ে বিদেশ, পাঠানোর ফাঁদে ফেলে। তারপর পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ডাক্তারি পরীক্ষা, ভিসা, ইমিগ্রেশন, স্মার্টকার্ড, বিমান ভাড়া ইত্যাদির কথা বলে সূক্ষ্মভাবে হাতিয়ে নেয় প্রয়োজনের দ্বিগুণ টাকা। সহজ-সরল এসব মানুষ প্রবাসে গিয়ে দুর্দিন পার করেন। 
প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের দূতাবাস থেকে সেবা পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক আমেরিকান প্রবাসী। তাঁদের অভিযোগ, দূতাবাসে গিয়েও অনেক সংকটের কোনো সুরাহা হয় না। সময় মতো পাসপোর্ট পাওয়া যায় না, যায় না অন্য কোনো সেবা পাওয়াও। এটা ঠিক কোন মাত্রায়, তা নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশিদের বাস্তব অভিজ্ঞতাই বলে দেয়। 
নিউইয়র্কের বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই পাসপোর্টের আবেদন করে এক বছরেও পাসপোর্ট হাতে পাননি। ছয় মাসে পাসপোর্টে মেলেনি এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। কারণ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা ছাড়পত্র না মেলা। 
তবে প্রতিমাসে রেমিট্যান্স হিসেবে কত বৈদেশিক মুদ্রা এল দেশে, রিজার্ভ বেড়ে কত হলো, এই সবের ফিরিস্তি বেশ বড় করে দেওয়া হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আমলাদের গর্বে গলা ফুলে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু যে প্রবাসীরা এই অর্থ পাঠাচ্ছেন, তাদের সেবা দিতেই প্রশাসনের যত অনিচ্ছা। 
শুধু অনিচ্ছা কেন, প্রবাসীদের পকেটও কাটা হচ্ছে দারুণভাবে। পাসপোর্ট পেতে কনস্যুলেট পরামর্শ দিচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জোগাড়ের। এই ব্যক্তিগত যোগাযোগ মানে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় গিয়ে হত্যে দিয়ে বসে থাকা। কিন্তু সেটি যেহেতু প্রবাসীরা সরাসরি করতে পারছেন না। তাঁরা এজন্য তৃতীয় কোনো লোকের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে, সোজা বাংলায় যাকে দালাল বলে। এই দালালসহ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বের করে আনতে প্রবাসীর পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ৪০ হাজার টাকা বা তারও বেশি। 
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পদোন্নতি না দিয়ে ভারতের মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার করা হয়েছিল। তবে সাদিয়া নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যোগ দেবার পর কনস্যুলেট সেবা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। সেবা পেতে গিয়ে প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত চরম হয়রানির শিকার হতেন। এসব ফিসহ প্রায় দুই শতাধিক পাসপোর্টের আবেদন রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায়।  হদিছ পাওয়া যায়নি প্রায় ৭০ হাজার ডলারের। ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাসের তদন্তে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে। দূতাবাসের তদন্ত প্রতিবেদনে কনস্যুলেটর সেবার নিম্নমানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কিন্তু মুম্বাইয়ে না গিয়ে তদবিরের জোরে সাদিয়া ফয়জুন্নেসা কেন ব্রাজিলে বদলি হলেন-তা নিয়েও সর্বত্র আলোচনা চলছে। 
এ অবস্থা চলতে পারে না। বিশেষত বিদেশে দীর্ঘদিন অবস্থানরত ব্যক্তির দেশের পুলিশ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নটি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। আর কনস্যুলেট কার্যালয়কে সেবার মান বাড়িয়ে বোঝাতে হবে। যে, তারা কোনো অলংকার নয়, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। 
বাংলাদেশের প্রবাসীরা যতই বিড়ম্বনার শিকার হন, নির্যাতিত হন, খুন হন ও বিমান বন্দরে হয়রানি হন বা তাদের জমি দখল হয়ে গেলেও সরকারের কোনো টনক নড়ে না। অথচ সরকারের মুখপাত্ররা বলেন, প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। প্রবাসীদের হয়রানী বা নিপীড়ন সহ্য করা হবে না। প্রবাসীদের বিশেষ মর্যাদার কথাও তারা বলেন। বাস্তবে এর কোনো মিল নেই। তাছাড়া প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে প্রবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা বা অভিযোগের ভিত্তিতে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোনো দফতর নেই। এই মন্ত্রণালয়ে বিদেশগামী প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন হয়। প্রবাসীদের সহযোগিতা বা কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মসূচী দেখা যায়নি। 
কিন্তু সংসারে সফলতা আনতে এবং পরিবারের সদস্যদের মলিন মুখে হাসি ফোটাতে যারা বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে যায়, তারা যখন লাশ হয়ে দেশে ফিরে আসে, তখন শুধু পরিবারের নয়, সমগ্র দেশই দুঃখে কাতর হয়ে উঠে। বিশেষ করে, মেয়েদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে যখন অন্য রকম ইঙ্গিত প্রকাশ পায়, তখন দারিদ্র্য আর কাউকে মহান করে প্রকাশ করে না। 
এখন ফিরে আসি বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন প্রসঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর বের হলো, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সৌদি আরব থেকে ৫৩ জন নারী কর্মীর মৃতদেহ এসেছে বাংলাদেশে, যা খুবই নগণ্য। -তাঁর ওই বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড়। এটা নগণ্য হয় কি করে? একজন মানুষের মৃত্যুই যেখানে কত বিরাট, অপূরণীয়। 
বুয়েটের আবরার হত্যার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা হরহামেশা ঘটেছে থাকে। এ বক্তব্য যদি দিয়েও থাকেন, তা নিয়েও ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ আছে। 
বাংলাদেশে মূলো দেখানোর গল্প সবাই জানে। মুলোর ঝুঁটি ঝুলিয়ে থাকে, আর কি গাধা ঝিমিয়ে থাকে’? গাধা বোঝা টেনে বেড়ায় জীবনভর। ক্লান্তি মানুষ থেকে শুরু করে সবার জীবনেই আসে। ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু’-বলে আমরা যতই সুর ধরি প্রভু কখনো জীবের ক্লান্তি ক্ষমা করে না। তবে দেখেন কত রকমের মূলো! কখনো ভোট দিতে দেওয়ার মূলো, কখনো আবার বিমানের ফ্লাইট চালু হওয়ার, কখনো বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার মূলো। যেমন গত ২০ এপ্রিল ২০২২ সংখ্যা ঠিকানা পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামের একটি নিউজ প্রবাসীদের প্রলুব্ধ করার মতোই এই সংবাদ তবে শুরু হয়েছে নেগেটিভ বাক্য দিয়ে। বলা হয়েছে, ‘কোনো বাংলাদেশিকে বিয়ের সূত্রে একজন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করলে তার ভোটার হওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত সনদ বাধ্যতামূলক’। এর পরপরই আবার বলা হচ্ছে, ‘তবে ছাড় দেওয়া হয়েছে আমেরিকা ইউরোপের কয়েকটি দেশের দ্বৈত নাগরিকদের’। অর্থ কী দাঁড়াল : তবে কি এসব দেশে বাংলাদেশি বিয়ে করে যারা নাগরিক হয়েছেন, তারাও ছাড় পাবেন? তবে কি আইন দুই চক্ষুবিশিষ্ট হয়ে গেল না। এখানেও কেমন যেন একটা চালাকি এবং স্ববিরোধিতার গন্ধ মেলে। তবে কি দ্বৈত নাগরিক প্রবাসীদের দেশে গিয়ে ভোটার হতে হবে এবং দেশে গিয়েই ভোট দিতে হবে? না-হলে ‘মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা’ দেবেন কেন? সে ক্ষেত্রে তো নির্দেশনা দেওয়ার কথা প্রবাসের কনস্যুলেট বা দূতাবাস/হাইকমিশনগুলোকে। শুরুর সেই মূলোর গল্পই কি নতুন করে শুনতে হচ্ছে প্রবাসীদের। প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস কি তবে মূলোর মতোই গাধার নাকে  ঝুলবে। মুখ পর্যন্ত পৌঁছাবে না। 
প্রবাসীদের দেশে সম্পদ ভোগ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ জেনেও কোনো কিছু করতে প্রথমেই তারা স্বদেশের কথা ভাবেন। অনেকেই স্বদেশে গিয়ে নানা দুর্ভোগ, হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেকের জীবন পর্যন্ত কেড়ে নেয় স্বদেশ। তবু স্বদেশের জন্য তাদের মন পোড়ায়। তারা বার বার ছুটে যান স্বদেশে। স্বদেশের মাটিতে মাথা ছোঁয়ান। কী যে  কাতরতা স্বদেশের জন্য, তা কে বুঝবে? 
নিউইয়র্ক-ঢাকা বিমান চালু করেও তা আবার বন্ধ করে দিল। বিমানের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফল ভোগ করেন প্রবাসীরা। দ্বৈত নাগরিকত্ব সহজীকরণের দাবি, ভোটারের অধিকারের দাবি উপেক্ষিত। নিউইয়র্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দাবিটিও আজ পর্যন্ত পূরণ হলো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক অঙ্গীকারও বাস্তবায়িত হয়নি। জানি না ভূত কিসের মধ্যে লুকিয়ে আছে? যারা বয়স্ক, মুরব্বি-তারা দেশের পতাকাবাহী বিমানে বাংলায় কথা বলতে বলতে একটু মনের সুখে দেশে যাবেন সে স্বপ্নও সইল না কারও। দেশকে সবকিছু উজাড় করে দিয়ে মৃত্যুর পর বিনা ভাড়ায় দেশে লাশ হয়ে যাওয়ার সুযোগও বন্ধ হয়ে গেল। 
নিউইয়র্ক থেকে দুবাই, ১৪ ঘন্টা প্রায়, বিমান ভ্রমণ শেষে ক্লান্ত, শ্রান্ত দেহ। অনলাইনে হোটেল বুক করা ছিলো। ছবির চেয়েও সুন্দর পরিপাটি হোটেলটি। চারধারে বাগানে ঘেরা। হিম শীতল বাতাসে সাদা ফুলের ডগাগুলো নেচে ওঠে। 
হোটেলের বেলকনি থেকে ফুলের সুবাস ভেসে আসে। শুনেছি এই ফুলগুলো শুধু রাতেই ফোটে, দিনের আলোয় হারিয়ে যায়। 
রিসিপসনের প্রতিটি ছেলেমেয়ের চমৎকার ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রত্যেকেই ভারতীয়। 
কাউন্টার থেকে কিছুদূর এগুলোতেই বুফে, দেশীয় খাবারের সুঘ্রাণে মুখরিত বুফেতে প্রবেশ করতেই কয়েকজন ভারতীয় অভ্যর্থনা জানালো এবং নির্ধারিত আসনের চেয়ারটি এগিয়ে ছিলো। প্রত্যেকের বয়স ২৩-৩৩ এর মাঝে।খাবারের সাথে সাথে টুকটাক কথাবার্তায় জানা গেলো তারা সবাই ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যের প্রত্যেকই কলেজ গ্র্যাজুয়েট এবং ইংরেজীতে পটু। তাদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম, সবাই যেনো উদগ্রীব, কিভাবে ইউরোপ-আমেরিকা পাড়ি দেয়া যায়। আর আমাদের ছেলেরা সেই হোটেলেই করে ধোয়া-মোছার কাজ। দক্ষকতার অভাব আর ভাষাগত সমস্যার দরুণ আমরা কতো পিছিয়ে আছি। তখনই একজন আক্ষেপ করে বললেন, শুধু বাঙালি হওয়ার কারণে আমাদের শ্রমের মূল্য, কম হয় অন্যদের তুলনায়। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে বিশেষ করে বাঙালিদের তত প্রাধান্য দেওয়া হয় না। যতটা ভারতীয় বা পাকিস্তানিদের দেয়া হয়। তাহলে এর জন্য কি শুধু বাঙালি শ্রমিকদের অদক্ষতাই দায়ী? নাকি আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা দূতাবাসগুলোরও দায়িত্বে হেরফের হচ্ছে কোথাও?
যাক সে প্রসঙ্গ।
জরুরি কাজে বাইরে বের হলাম। ঝকঝকে ট্যাক্সি, বেশ নতুন। চালক বাংলাদেশি দেশের বাড়ি বরিশাল। ভাইটির নাম জীবন। বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে এই মরুভূমির দেশে। দেশের কথা জিজ্ঞেস করতেই চোখ ছলছল করে উঠলো। দেশে রেখে এসেছেন বাবা-মা, প্রাণপ্রিয় স্ত্রী আর এক বছরের ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। 
দেশের রাজনীতির প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ, বিদ্বেষ, ঘৃণা তার কথাবার্তায় টের পেলাম। জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলো-তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনে গিয়েছিলো সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে। কর্তব্যরত কর্মকর্তা ১০০০ টাকা ঘুষ দাবি করাতে স্ত্রী ফেরৎ আসেন। লক্ষ্য করলাম স্টিয়ারিং হুইলকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দাঁত কিটমিট করে বলে উঠলো যে, সন্তান পৃথিবীতে আসতেই ঘুষ দিয়ে তাঁর জন্ম নিবন্ধন করতে হয়, আমরা সেই দেশের বাসিন্দা। 
আমরা সেই দেশের বাসিন্দা, যে দেশে সাগর-রুনীর হত্যার বিচার হয় না। বিচার হয় না কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবি ছাত্রী তনু, বিচার হয় না বুয়েট এর ছাত্র আবরার হত্যার, বিচার হয় না এম.সি কলেজ হোস্টেল পোড়ানোর, বিচার হয় না শাহজালাল বিমান বন্দর কর্মকর্তাদের হাতে ও ওসমানী বিমান বন্দরে যাত্রী হয়রানি। যুক্তরাজ্য প্রবাসী জামিলা চৌধুরীর। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে দেশে পদ্মা সেতু হয়, মেট্রোরেল হয়, হয় না শুধু আমাদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও ভাগ্যের পরিবর্তন। অনর্গল কথা বলতে বলতে তার চোখের কোনে লক্ষ্য করলাম বিন্দু বিন্দু জলকণা। 
তবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, ভুটান ও থাইল্যান্ডের বিমান বন্দরের বা যাত্রী সাধারণকে গন্তব্যের দিকনির্দেশনাসহ তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করা মাত্রই লক্ষ্য করলাম সব অনিয়মই যেনো নিয়ম হয়ে যায়। চারপাশের দেয়ালে দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি আর জয়গান, আর বর্তমান সরকারের উন্নয়নের জোয়ারের ফিরিস্তি। সিঁড়ি দিয়ে নামতে চোখ পড়লো উপরে বড় করে লেখা welcome to foreign investors.পরক্ষণেই মনে পড়ে গেলো প্রবাসী ভাইদের কথা, যাদের অহনির্শ, অবিরাম হাড়ভাঙ্গা খাটুনি অর্থে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, প্রয়োজন তাদেরকে গুরুত্ব এবং অগ্রাধিকার দেয়া। তাদের পাঠানো অর্থের সঠিক মূল্যায়ন করা এবং উৎসাহিত করা বিনিয়োগের জন্য। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ছোট একটি কাজের জন্য ভূমি অফিসে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে, বোধ করি সেই অভিজ্ঞতা দেশে থাকা প্রতিটি জনসাধারণের কম বেশি আছে। ঘুষ বাণিজ্যের মহোৎসব অফিসগুলোতে। 
এমন কি তথ্য অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্ন করলেও, টাকা দিয়ে প্রশ্ন করতে হয়। ঘন্টাখানেক হলো Dhaka Airport G Arival লাইনে দাঁড়িয়ে আছি চেকিংয়ের জন্য। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম এক পুলিশ অফিসার (সম্ভবত ইমিগ্রেশন পুলিশ) একজন মহিলাকে এনে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। বললাম আমি তো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি বেশ অনেকক্ষণ। আপনি লাইন ভঙ্গ করে একজনকে এভাবে সামনে দাঁড় করাতে পারেন না। 
এ কথা বলতেই পুলিশ অফিসার অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো। 
তাঁর ভাবখানা এ রকম-যেনো আমিই ভুল করলাম প্রতিবাদ করে। পুলিশের অগ্রাধিকার যেনো সমাজের সব পর্যায়ে।
’৯০ দশকের একটি জনপ্রিয় টিভি বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেলো-বাতির রাজা ফিলিপস, আর মানুষের রাজা পুলিশ (প্রতীকী অর্থে)।
যাই হোক লাইনে দাঁড়ানো অন্যদের তীব্র প্রতিবাদে পুলিশ তার ব্যক্তিটিকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। 
তবে প্রবাসীদের খুব বেশি চাওয়া নেই, হাজারো প্রবাসী স্বপ্ন দেখে কিছু অর্থ আয় করে দেশে ফিরে যাবে। ফিরে যাবে প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে, সন্তানের কাছে, বাবা-মায়ের কাছে। কিন্তু দেশে গিয়ে কী করবে সেই ভাবনা তাদের ঘিরে ধরে। অনেকে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার ফলে দেখে ফিরে দেখে, যে সন্তানের বয়স ছিল পাঁচ সে এখন ১২ কিংবা ১৫ বছরের কিশোর। এই যে সন্তানকে কাছে না পাওয়ার হাহাকার, আদর করতে না পারার যন্ত্রণা, সেটা কাউকে বুঝতে দেন না। আবার অনেক সময় দেখা যায় ভিটেমাটি সব দখল করে বসে আছে অন্যরা। কিংবা আপনজনরা অনেক সময় দখল করে রাখে, আর বলে কী জন্য দেশে আইছস? সবচেয়ে বড় ভয়টা থাকে নিরাপত্তার অভাব। 
তাছাড়া দেশে গিয়ে নিজ উদ্যোগে কোনো একটা ব্যবসা শুরু করলে সেখানেও শুরু হয় আমলাতান্ত্রিক হয়রানি, হেনস্তা। তখন তারা প্রায় দিশেহারা হয়ে আবার ফেরৎ আসে প্রবাসে। তবে বিশ্বাস করুন, ভালো না লাগলেও থাকতে হয় জীবনের প্রয়োজনে। 
যাদের অর্থনৈতিক সমস্যা নেই, তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু যারা এই প্রবাসে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে অল্প আয় করে, তাদের দীর্ঘশ্বাস জানে, তাদের ঘাম জানে, তাদের শরীর জানে প্রবাস কী, শ্রম কী! নিরলস কাজ করে যাওয়া প্রতিটি শ্রমিকের ভোর হয় দেশে ফিরে যাবে এই স্বপ্ন নিয়ে।
কিন্তু এই শ্রমিকদের বিমানবন্দরে এমনভাবে হয়রানি করা হয়, যেন এরা মানুষ না। যাদের মানুষ ভাবা হয় তা ভিআইপি। এর মধ্যে আছে আবার নানারকম ভিআইপি। যেমন মন্ত্রীর শালীর বান্ধবীর দেবরের বউ, সাংসদের ভাগনের বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড। বাংলা একটা প্রবাস আছে-‘দূর মাঠে বিয়াইছে গাই, সেই সম্পর্কে তালতো ভাই’-এসব ভিআইপির অবস্থা হচ্ছে এমন। 
তবে প্রবাসীদের জীবন এক বাঁদুরের মতো ঝুলে থাকা। আর অসুস্থ হলে তো কথাই নেই, একা একাই সবকিছু করতে হয়। একশ চার ডিগ্রী জ¦র নিয়েও কাজে যেতে হয়, শরীর কুলায় না, মন সায় দেয় না, তবুও ছুটতে হয় জীবনের তাগিদে। কাজ না করলে চলবে কেমন করে? তবে বাস্তবতা কতটা কঠিন তারা বুঝতে পারে। কিন্তু আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। অথচ উপরে উল্লেখিত ভিআইপির চেয়ে শ্রমিকরাই দেশের জন্য বেশি অবদান রাখছে। তাদের অবদানকে তুচ্ছই ভাবা যায়। এ আর এমন কী! 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078