অজানা-অচেনা মা

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ১৮:০৭ , চলতি সংখ্যা
প্রখর রোদ, অলস প্রহর। ভদ্রমহিলা পার্কের কর্নারে বসে নীরবে কাঁদছেন। খারাপ লাগলো। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
নিউইয়র্কে এক আত্মীয়ার বাসায় বেড়াতে এসেছেন। আত্মীয়া এই মুহূর্তে কাজে। পেনসেলভেনিয়া ফিরে যেতে হবে। এ দেশে কাজ থেকে কেউ সচরাচর ফোন রিসিভ করেন না। মেট্রো কার্ড হারিয়ে ফেলেছেন। নিউইয়র্কের কিছুই চেনেন না। কিভাবে যাবেন- বুঝতে পারছেন না!
দু’জনে মিলে ম্যাগডোনাল্ডসে গেলাম। কফি পান করলাম। ঘণ্টাখানেক ব্যক্তিগত-পারিবারিক আলোচনা চললো। উনি আর হাজবেন্ড এখানে আছেন। মেয়ে দু’টি মায়ের সাথে পাকিস্তান থাকেন। মেট্রোর কার্ড হাতে ধরিয়ে দিলাম। অনুরোধ রাখলেন- মরিয়ম (ভদ্র মহিলার নাম) আপনি পেনসেলভেনিয়া পৌঁছানোমাত্র আমাকে জানাবেন প্লিজ। ঠিক সময়মত পৌঁছালেন, ফোন করলেন। বারবার কৃতজ্ঞতা জানালেন। আমিও ফোনে আমার সামাজিক কর্তব্যের কথা প্রকাশ করলাম।
দিন-মাস-বছর যায়- মরিয়মের সাথে বন্ধত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে তার পারিবারিক পূর্ণাঙ্গ চিত্র আমার চোখের সামনে তুলে ধরে। মাঝে মাঝে প্রিয়জনের জন্য মন খারাপ করে। আমি ফোনে সময় দেই।
সান্তনা দিতে চেষ্টা করি। বাস্তবতা বুঝিয়ে দেই। 
গভীর রাত। মরিয়মের ফোন। ভয় পেলাম। 
ডোরা টিকিট কেটে ফেলেছি। সকাল পাঁচটায় আমার ফ্লাইট। পাকিস্তান যাচ্ছি। মা অসুস্থ। তোমার সাথে কথা বলতে মন চাচ্ছে।
ঠিক আছে। সাবধানে যেও। খুশি হলাম। মাকে সালাম দেবে।
ডোরা, আমি কি তোমার ঠিকানাটা জানতে পারি।
নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই! বিনা দ্বিধায় জানিয়ে দিলাম।
কাজ থেকে ফিরে মেইল বক্স চেক করছি। মনে হচ্ছে একটি প্যাকেজ ইউএস-এর বাইরে থেকে আসা। আগ্রহী হয়ে তখনই ওপেন করলাম। একটি লাল স্কার্ফ। হাতে বোনা। খুব সুন্দর। একবিংশ শতাব্দী। এখন আর কেউ চিঠি লিখে না। ভালো লাগলো। চিঠি পড়া শুরু করলাম-
‘ডোরা ঠিক করেছি বাকিটা জীবন মায়ের সাথে এখানেই কাটাবো। ইউএসএতে ফিরছি না। মায়ের নিজ হাতে বুনন। তোমার জন্য সামান্য উপহার। ভালো থেকো।
‘ক্ষণিকের পরিচিতা।’
স্বযত্নে লাল স্কার্ফ আলমারিতে রেখে দেই।
বছর খানেক পর আবার মরিয়মের চিঠি- খুবই ছোট চিঠিÑ
ডোরা- 
আমাকে তোমার মনে পড়ে? মা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মায়ের জন্য দোয়া করবে।
‘ক্ষণিকের পরিচিতা’
লাল স্কার্ফ চোখের সামনে তুলে ধরি। মাকে চোখে দেখিনি। চিনি না, জানি না। কথা বলিনি। কথা বলার চেষ্টাও করিনি। সেই মায়ের ছবি ভেসে উঠছে।
মা হারানোর শোক বুঝতে পারি। মায়ের হাতে বুনন লাল স্কার্ফ- মায়ের পরশ পাই। হাজার হাজার মাইল দূরে মা শায়িত।
কেন জানি সেই অজানা-অচেনা মাকে এখন খুব বেশি মিস করি।
একটিবার যদি কথা বলতে চেষ্টা করতাম...! লেখক : সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078