‘তুমি আসবে বলে সুখেও কেঁদে ওঠে মন’

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৪ , চলতি সংখ্যা
ঈদ আমাদের আনন্দ উৎসব। ঈদে তোমরা নতুন জামা-কাপড় পেতে না! অবিশ্বাস্য হাসিতে ওরা লুটোপুটি খায়। তোমাদের মা-বাবা তোমাদের ভালোবাসতো না? অবাক বিস্ময়ে উচ্চারিত হতে থাকে যে- প্রতি ঈদে তোমরা প্রত্যাশিত নতুন জামা-কাপড় পেতে না! আমার তৃতীয় প্রজন্ম। এদেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শেকড়ে প্রোথিত ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ওরা ধারক।
ওরা অনেকটাই জানে আমাদের সমাজ বিবর্তনের আদি ইতিহাস- ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পথ পরিক্রমা। আদি বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তি গ্রামবাংলা। স্বপ্নময় আগামী বিনির্মাণের অনন্ত প্রত্যয়ে সূচিত নতুন দিনের সত্য, ন্যায়বোধ ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার পথ চলার অনুপ্রেরণা। বহুমাত্রিকতায় মনুষ্যত্ব বিকাশের অদম্য শক্তি কোথায়- ওরা এর অনুসন্ধান করে।
হ্যাঁ, আমি বলছিলাম আমার তৃতীয় প্রজন্ম অরিত্র, আদিত্য’র কথা। তারা জানে আমাদের একান্ত নিজস্ব মূল্যবোধের গরীমায় জন্মকথার ইতিহাস। এসব কথামালার পথ ধরে তারা জেনে আলোকিত হয় উন্নয়নের আলোকরশ্মিতে বাঙালির বাংলা বছরের নতুন মাস বৈশাখের কথা। এ পথ ধরেই আমাদের ভাষার সংগ্রাম, নিজস্বধারা ও সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশ, আর সেই দেশের জন্মদাতা এক বিশ্ব মহামানবকে।

তাইতো আজ আমরা ধর্ম, বর্ণ বহুভাষিক, বহুমাত্রিক মানুষের এ দেশে বসে সবার কথা ভাবার পাশাপাশি একান্ত নিজস্বতা নিয়ে ভাববো। যেখানে থাকবে আমার পূর্ব প্রজন্ম, আমরা ও আমাদের গৌরময় পরবর্তী প্রজন্ম। যারা আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, ইতিহাস নিয়ে বিদগ্ধ চিত্তে পর্যালোচনা করবে।
বাংলা নববর্ষ আমাদের দ্বারপ্রান্তে। ঈদুল ফিতর পালনে আমরা প্রস্তুত। প্রকৃতির নিয়মে বারবার ফিরে আসে ঈদুল ফিতর, বাংলা নববর্ষ। অতীতের হাত ধরে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ হই। কথায় আছে- সময় আর জীবনকে রশিবদ্ধ করা যায় না। তাইতো বুঝি এ মনটা অর্ধশত অধিক আগের মুহূর্তে লম্ফ দেয়। মনে পড়ে সেই ছোট্ট বেলায় ঈদের জামা পাবার আকাঙ্খায় বাবার কাছে আবদার, কান্নাকাটি অবশেষে প্রাণপণে চীৎকার!
কিন্তু হলে কি হবে- বেশিরভাগ ঈদে জামা পেতাম না। বাবা বলতেন, দেখে এসো আমাদের প্রতিবেশী তোমার বন্ধুরা সবাই জামা পেয়েছে কিনা। ‘আনন্দ সবার’। মনে রেখো- আনন্দ সবার সাথে ভাগ করে নিতে হয়। আর জানামতে কারো দুঃখের কারণ হতে নেই। দুঃখটা রেখে দিও নিজের জন্য। সেই ছোট্ট বয়সে বাবার পরামর্শ কতটা মনোপুতঃ হয়েছিল, মনে পড়ে না। এত বছর পর আজ বাংলা নববর্ষ আর ঈদ উৎসবের পূর্বপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাবার কথা বারবার মনে পড়ছে। বাবার মানবতার এই দর্শন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যুগ যুগ ধরে পালণীয়।

আজ দৃষ্টি প্রসারিত করলে সহজভাবে দেখা যায়Ñ শিশুরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে লুটোপুটি খাচ্ছে। বলা হয় শিশুরা দেবশিশু। ওদের পরশে বিশ্ব সব মালিন্য মুক্ত হয়ে যায়। এমন শিশুদের আনন্দ ধরে রাখতে পারলেও অভিভাবকদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। কচি শিশুদের সামান্য আবদার রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয়। জমিতে, পুকুরে ফলন থাকলেও বাজারে আগুন। এ আগুন কিছুতেই নিভছে না। ছোট্ট শিশুদের আবদার পূরণ হচ্ছে নাÑ কিন্তু ওরাতো নিষ্পাপ অবুঝ। ওরা আসল-নকল, লাভ-লোকসান বোঝে না। ধনী-গরিব বোঝে না। মা-বাবার দুশ্চিন্তাক্লিষ্ট মুখের ভাষাও বোঝে না। ওরা ধনীদের মুনাফা আর দরিদ্র মানুষের দুঃখের মানে জানে না। ওরা সবাই নিজের বাবাকে শ্রেষ্ঠ ও ধনী মনে করে। নিজের আনন্দই আনন্দ মনে করে।
যদি সত্যি এমনটা হতো- সবাই ধনী, সবাই শ্রেষ্ঠ হয়ে যেতো। আর ঈদে নতুন নতুন জামা-কাপড়, খেলনা পেতো- তবে কতোই না জমা হতো। তেমনটা নয়। নয়-কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না নিষ্পাপ ছোট্ট মন।

আজ আনন্দময় ঈদ আর বাংলা নববর্ষকে বুকে ধারণ করে নিজ নিজ ধর্মের হাত ধরেই আমরা মানবতার প্রতি নিজেদের উৎসর্গ করি। সবার আনন্দ হয়ে উঠুক নিজের আনন্দ। তাইতো তুমি আসবে বলে/ সুখেও কেঁদে ওঠে মন।
লেখক : প্রাক্তন অধ্যাপক, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা

 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078