কানাডার আকাশে ঈদের চাঁদ

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৩ , চলতি সংখ্যা
এই পৃথিবীতে যত দেশ আছে, সব দেশের আকাশের রং নীল। সেই আকাশে শাওয়ালের চাঁদ যখন উঁকি দেয়, তা সবার মনে খুশির ঝিলিক নিয়ে আসে। আটলান্টিকের দ্বীপ এই লেব্রাটরে আকাশ খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। তাই বেশির ভাগ গবেষণা এখান থেকে, মানে মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি থেকে হয়। যার প্রমাণ পেলাম শাওয়ালের চাঁদ দেখতে গিয়ে। এই শহরে খুব উঁচু বিল্ডিং নেই, আবার ঘরগুলো এমনভাবে সাজানো, চারপাশ খুব খোলামেলা, অনায়াসে চাঁদের হাসি দেখা যায়। নীল স্বচ্ছ আকাশ, সন্ধ্যা নামতেই ধীরে ধীরে রুপালি শাড়ি জড়িয়ে নেয় তার শরীরে, তারাদের দেখে মনে হয় এই শাড়িতে চিকুয়েন্সের কাজ। এই অপরূপ সৌন্দর্য পরিপূর্ণ হয় রুপালি চাঁদের আগমনে। শাওয়ালের চাঁদ এই হাসি আমাদের সবার মুখে যেন জাফরানি রং ছড়িয়ে দিল। যদিও মাইনাস ৪ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় দাঁড়িয়ে আমরা ঈদের চাঁদ দেখছি, আমাদের চারপাশ সাদা বরফে ঢাকা। আমার ঘরের ব্যাক ইয়ার্ডের ছোট-বড় গাছ ছটের বস্তা দিয়ে ঢাকা। প্রথম লেব্রাটরে আসার পর গাছের এমন অদ্ভুত পোশাক দেখে আমার ভীষণ হাসি পেত। পরে জানলাম, বরফ থেকে গাছকে বাঁচাতে এখানে সবার বাগানে রাস্তায় এই ব্যবস্থা। বরফ পুরোপুরি সরে গেলে গাছের এই কাপড় খুলে দেওয়া হবে। আমি আকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখছি আর বস্তায় মোড়ানো গাছ দেখছি। আফসোস হচ্ছে গাছেরা ঈদে কোনো নতুন জামা পাবে না।
রমজান মাস বছরের সেরা মাস, আবেগের মাস, উৎসবের মাস। গত রমজান মাসের ৩০ দিনের ১০ দিন ছিলাম ইংল্যান্ডে আর শেষ ২০ দিন ছিলাম কানাডায়।

আমি যে জায়গায় ছিলাম, তা নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডর, তা হচ্ছে কানাডার সবচেয়ে পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি প্রদেশ। প্রদেশটি কানাডার আটলান্টিক অঞ্চলে অবস্থিত, এটি নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপ এবং উত্তর-পশ্চিমে মূল ভূখণ্ড লাব্রাডর নিয়ে গঠিত। এই মোট সংযুক্ত এলাকা ৪,০৫,২১২ বর্গকিলোমিটার (১,৫৬,৫০০ মাইল)। ২০১৩ সালে প্রদেশের আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ৫২৬,৭০২ জন। প্রদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯২% নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপে (এবং এর প্রতিবেশী ছোট দ্বীপসমূহে) বসবাস করে, যাদের অর্ধেকের অধিক এভালন উপদ্বীপে বাস করে।
অত্যন্ত সুন্দর নিরিবিলি প্রাকৃতিক সুন্দর এলাকা হলেও ঠান্ডা মারাত্মক। আমি মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আর এই ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে বাংলাদেশি অনেক ছাত্রছাত্রী।

দেশ ছেড়ে শুধু ভালোভাবে থাকার জন্য যারা আজ প্রবাসী, তারা কতটুকু ভালো আছে, তা উৎসব এলে বোঝা যায়। প্রবাসীদের ঈদ আছে, তবে দেশে সবাইকে নিয়ে ঈদ উদ্যাপনের মতো আনন্দ সেখানে নেই। বরং প্রিয়জন ছাড়া ঈদের সময় একধরনের বিষাদ কাজ করে মনে। ইচ্ছে করলেই বাস-ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি ফেরা যায় না। দেখা হয় না পরিবার-পরিজনের সঙ্গে।
মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটিতে আমার ছেলের খুব কাছের কিছু বন্ধুবান্ধবকে আমি বলি সবাই ঈদের আগের দিন আমার বাসায় চলে আসো, আমরা একসঙ্গে ঈদ করব। ওরা সবাই খুশি হয়ে চাঁদরাতে চলে আসে। ভারতের মধ্যপ্রদেশ থেকে কানাডায় পড়তে আসা মাহিন খান আমার জন্য মেহেদি নিয়ে আসছে, আমি অবাক হয়ে যাই বরফে মোড়ানো এই দেশে সে মেহেদি পেল কী করে।

মাহিন খুব সুন্দর ডিজাইন দিয়ে আমার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেয়। আমরা সবাই মিলে ঈদের নাশতা বানাই, যার মধ্যে বেশির ভাগ ছিল বাংলাদেশি পিঠাপুলি। ফুল ভলিউমে সিডি প্লেয়ারে বাজতে থাকে, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’
সবাই মিলে একসঙ্গে সবকিছু শেষ করে কিছু সময়ের জন্য ঘুমাই। যখন ফজরের অজু করব, হাতের মেহেদির দিকে তাকাই। এত সুন্দর করে যে মেয়েটি আমায় সাজিয়ে দিয়েছে, তার সঙ্গে খুব অল্প দিনের পরিচয়, অথচ এই ভালোবাসা যেন অনন্তকালের।
সবাই নামাজ পড়ে আমার বাসায় চলে আসে। ২৪ জনের এই টিমে একজন কানাডিয়ান ছিলÑনাম স্যামস। স্যামস এই প্রথম ঈদ আনন্দ উপভোগ করল। আমাদের নাশতা ছিল হালিম, ভেজিটেবল শিঙাড়া, চিকেন রোল, নারকেল বল, ডিমের পুডিং, ডালপুরি, নুনের পিঠা আর দুপুর ও রাতের খাবারে ছিল বিফ শামি কাবাব, চিকেন রোস্ট, বিফ রেজালা, মুগডাল চিকেন, পোলাও, ডেজার্ট, পায়েস। বলা যায়, সব আইটেম ছেলেরা বানিয়েছে, আমি শুধু ওদের দেখিয়ে দিয়েছি। চমৎকার হয়েছিল এই আয়োজন।

দুপুরের খাবারের পর আমরা সবাই মিলে সিগন্যাল হিলে বেড়াতে যাই এবং আরও অনেক দর্শনীয় জায়গা ঘুরে বেড়িয়ে বাসায় ফিরে রাতের খাবার শেষ করে টিভিতে একটা ছবি দেখি। সব মিলিয়ে আটলান্টিকের এই দ্বীপের ঈদ আনন্দ ছিল অপরিসীম। সবাইকে ঈদ মোবারক।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078