ঈদের স্মৃতি

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০১ , চলতি সংখ্যা
ঈদে পাই না আর আগের মতো সেই আনন্দ। আগে ঈদ এলে ঈদের কত প্রস্তুতি নেওয়া হতো। বন্ধুরা সবাই একত্র হয়ে কত ঘোরাঘুরি করা হতো। কোন বন্ধুর বাড়িতে আগে যাব, কোন বন্ধুর বাড়িতে পরে যাব, ঈদে কে কোন ধরনের পাঞ্জাবি-পায়জামা পরব, কারটা দেখতে অনেক ভালো হবে, কে কার কাছ থেকে কী গিফট পেয়েছে, কে কাকে কী গিফট দেবেÑএ নিয়ে চলত নানা আলোচনা। কার পছন্দ ভালো, কে দামাদামি করে জিনিস কিনতে পারে, কোন দোকানে ভালো পোশাক মেলে, কারা দাম বেশি রাখে, কারা কম রাখে, কোন মার্কেটে ঈদের ভালো জামাকাপড় পাওয়া যায়, কোথায় বন্ধুরা দল বেঁধে বসে চা খাব, কত বান্ধবী নিয়ে চা খেতে বসে গল্প করব, কে দেখতে পরির মতো, কে আবার কার প্রেমে পড়লÑএ রকম কত গল্প যে করা হতো। কত যে হাসাহাসি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলেও গল্প আর শেষ হয় না। কয়েকজন বন্ধু মিলে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ঘুমানো। রাত বারোটা বেজে গেলেও না ঘুমিয়ে গল্প করা। গল্পের মাঝে জোরে জোরে শব্দ করে হাসা। অনেক রাত করে ঘুমানোর জন্য দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা। সকালে একসঙ্গে টিউবওয়েলের কাছে গিয়ে ব্রাশ করা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কত গল্প করা। সবাই একসঙ্গে রেডি হয়ে কত জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। কখনো আবার সাইকেলে করে ঘুরতে যাওয়া। এক সাইকেলে দুজন করে ওঠা। কখনো সাইকেল চালাতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাওয়া।

একসঙ্গে ঈদের মাঠে নামাজ পড়তে যাওয়া। সবাই একসঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা। বন্ধুরা মিলে ঈদের মাঠে ইমাম সাহেবের জন্য টাকা ওঠানো। কত টাকা ওঠানো হলো, তা আবার মাইকে ঘোষণা দেওয়া। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করা। বন্ধুরা দল বেঁধে খাজার দোকানে গিয়ে খাজা কেনা। একসঙ্গে খাজা খাওয়া। দাঁড়িয়ে গল্প করা। এক বন্ধু আরেক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পায়েস ও সেমাই খাওয়া। কাছারিঘরে বসে গল্প করা। বন্ধুদের সবাই একই রকম পাঞ্জাবি পরিধান করে ঘুরে বেড়ানো। খেলার মাঠে গিয়ে সবাই একসঙ্গে খেলা করা। বিবাহিত ও অবিবাহিত দুই দলের মধ্যে ফুটবল খেলা এবং যারা জয়ী হবে তারা মিলে একটা খাসি কিনে জবাই করে খাওয়া। মাইক ভাড়া করে এনে রাতে পিকনিক করা। মালতে বন্ধুরা মিলে শিরনি খেতে যাওয়া। একেক জনের বাড়ি থেকে ডিশ ভরে শিরনি নিয়ে গ্রামের মোড়লের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া। ডিশ-প্লেটের শব্দে কান ঝালাপোড়া হয়ে যাওয়া। কলার পাতায় করে শিরনি খাওয়া। কত যে চেঁচামেচি করা। মালত থেকে আসার সময় আবার ডিশ ভরে শিরনি নিয়ে আসা। বিভিন্ন বাড়ির শিরনির স্বাদ নেওয়া। একসঙ্গে আবার চেঁচামেচি করতে করতে বাসায় ফিরে আসা। রাতে সাদা-কালো টিভির সামনে বসে টিভি দেখা। বড় রঙিন টিভি ভাড়া করে এনে ভিসিআর দেখা। কত আনন্দের ছিল ঈদের সেই দিনগুলো।

এখন সব হয়ে গেছে ইতিহাস। এ যুগে সমাজ গেছে ভেঙে আর মানুষের মধ্যে হিংসা গেছে ভরে। একে অপরের বাড়িতে তেমন যেতে চায় না। ঈদে বন্ধুরা তেমন একত্রিত হয় না। একই মাঠে নামাজ পড়তে গিয়ে দলাদলি ও রেষারেষির কোনো শেষ নেই। অনেক সময় একেক গোষ্ঠীর লোক একেক জায়গায় নামাজ পড়তে যায়।
মানুষের মধ্যে আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঈদে একে অপরের বাড়ি যাওয়ার জন্য তেমন ডাকাডাকি করে না। সহপাঠীরা একসঙ্গে খেলাধুলা না করে মোবাইলে কত কিছু দেখে।
এখন সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে পারে না। তাই মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ আগের মতো বিরাজ করে না। আগে পরিবারের সবাই বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসায় এসে একসঙ্গে ঈদ করত। কী আনন্দ যে তাদের মধ্যে বিরাজ করত। এখন একসঙ্গে তেমন হতে চায় না। আগে যৌথ পরিবার থাকলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না। ঈদে বাড়িতে সবাই একত্রিত হলে জমিজমা নিয়ে লাগে ঝগড়া। কে কম পেল, কে বেশি পেল? সবাই পৃথক হয়ে যাবে। ভাবিতে ভাবিতে ঝগড়া লেগে ভাইয়ে ভাইয়েও দ্বন্দ্ব লেগে যায়। কত পরিবারে মারামারি, কাটাকাটি হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। ঈদের আনন্দও মাটি হতে বসেছে। অনেকে আবার ঈদের দিনে কোথাও ঘুরতে না গিয়ে বাসায় ঘুমায়।
কোথায় গেল আগের সেই ঈদের আনন্দ? সে কথা মনে পড়লে মনটা আনচান করে। ছোটবেলার সেই ঈদের আনন্দ ভুলতে পারি না কোনোভাবেই।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078