ভূতের মেয়ে রানুফুফু

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫২ , চলতি সংখ্যা
পাশের বাড়ির রানু ফুফুরে ভূতে ধরেছে! ভূত সবসময় সাথে থাকে না। মাঝে মাঝে এসে ভর করে। আবার ছেড়েও যায়। যখন ছেড়ে যায়, তখন একেবারে স্বাভাবিক থাকেন। আবার যখন ভূত এসে ভর করে, তখন উল্টা-পাল্টা সব আচরণ করেন। পুরুষদের কণ্ঠে কথা বলেন। যেই রানুফুফু কখনো পান-সুপারি খেতেন না, ভূত এসে ভর করলে, শুনেছি, তার পান-সুপারি লাগে। ছোট-বড় সবাইকে তুই-তোকারি করে কথা বলেন। সেদিন নাকি নিজের বাপকে বললেন, ‘ওই মফিজ, যা আমার জন্যে পান-সুপারি নিয়ে আয়। দুইটা পান ভরে চুন দিবি। চুনে বেশি করে খয়ের দিবি, সাথে হাকিমপুরী জর্দা’। 
ভাত খাওয়ার সময় চার প্লেটের কম দিলে নাকি ভাতের প্লেট ছুঁড়ে মারেন। কেউ কাছে গেলেই তার মুখের দিকে তাকিয়ে অতীতে কে কি করেছেÑ সব ফরফর করে বলে দেন রানুফুফু। ঘটনাটা চলতে আছে প্রায় বছরখানেক হয়।
রানু ফুফুরে ভূতে ভর করেছেÑ শুনলেই আগে পাড়ার সবাই দলে দলে গিয়ে ভিড় জমাতেন তাদের বাড়িতে। যেদিন ভূতে ধরা অবস্থায় পাড়ার রহিমা ভাবিকে দেখেই বললেন, ‘তোর বাচ্চাতো তোর জামাইর ঘরের না, বাচ্চাটা হইছে তোদের দোকানের ওই সুন্দর পোলাটার। তোর জামাইর বাচ্চা দেয়ার মুরোদ নাই, সেইটা কেউ না জানলেও তুইতো জানিস’। 
ঘরভর্তি মানুষের সামনে রহিমা ভাবি লজ্জায় কোন কথা না বলে, মাথা হেঁট করে চলে গিয়েছিলেন। 
আরেকদিন ভূতে ধরা অবস্থায় তার নিজের বড়বোন বেনুফুফুরে বললেন, ‘ভাবিদের ঘাড় মটকে সংসারে অশান্তি লাগাতে দিনের পর দিন বাপের বাড়ি পড়ে আছিস। ওইদিকে তোর জামাই তোর ঘাড় মটকে দিতে আরেকটা বিয়ে করতে যাচ্ছে। যা, আগে নিজের সংসার সামলা গিয়া’। 
বেনুফুফু সেই যে তার শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলেন, আর আসেননি।
এখন লোকজন দলবেঁধে যায় না। একা একা যায়। ব্যক্তিগত কিসব প্রশ্ন করে, যার উত্তর কারো সামনে দিলে ভীষণ লজ্জায় পড়তে হবে। মুডের উপর উত্তর দেন রানুফুফু। বেশিরভাগ সময়ই উত্তর ঠিকঠাক মিলে না আর। বলেন একটা, হয় আরেকটা। বহু ডাক্তার, কবিরাজ, পীর-ফকিরের কাছে রানু ফুফুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোন ফল পাওয়া যায়নি। কয়দিন ভালো থাকেন তো আবার শুরু হয় পাগলামি। এতো সুন্দরী রানু ফুফু দেখলে এখন চেনার উপায় নেই। স্কুলে যাবার সময় দেখেছি, তার দিকে একবার কারো চোখ পড়লে অপলক চেয়েই থাকতো। 
দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখন ঘন ঘন ভূত এসে ভর করে। সেদিনও নতুন এক হুজুর এসে রানু ফুফুরে একটা চেয়ারে বসিয়ে হাত-পা বেঁধে মাথার উপর পড়া তেল ঢালছিলেন। আর ঝাড়ু দিয়ে পিটাতে পিটাতে বলছিলেন, ‘বল কবে ছেড়ে যাবি?’ 
রানুফুফু পুরুষের গলায় চিৎকার করে বলছিলেন, ‘ওরে ছেড়ে আমি জীবনেও যাবো না, গেলে ওরে সাথে করে নিয়েই যাবো। ও আমার মেয়ে। আমার মেয়েকে তোমরা আমার কাছে ফিরিয়ে দাও’। 
হুজুর ঝাড়ু দিয়ে পিটাতে পিটাতে বলছিলেন, ‘ও তোর মেয়ে হলো কবে থেকে? যা যা ওরে ছেড়ে চলে যাদ। 
রানু ফুফু চীৎকার দিয়ে বলছিলেন, ‘তোরা আমার কিছুই করতে পারবি না। আমারে করার মতো আর কিছু নেই। যা করার এখন নিজেই করবো’। 
এযাবৎকালে পীর-ফকিরের হাতে রানুফুফু যেই পরিমাণ জুতার বারি, ঝাড়ুর বারি খেয়েছেন, নাকেমুখে শুকনো মরিরের গুঁড়ো যেই পরিমাণ ঢুকিয়ে দিতে দেখেছি, সত্যিকারের ভূতে না ধরে থাকলে টিকে থাকার কথা না। আগে ভূতে বিশ্বাস না করলেও এখন করি।
রানুফুফু আমার থেকে বছর দু’য়েকের বড়। আমরা একই স্কুলে পড়তাম। প্রতিদিন একসাথে স্কুলে যেতাম। একদিন কথায় কথায় রানুফুফু বলেছিলেন, উনার বড়চাচা রানু ফুফুকে দেখলেই কেমন অদ্ভুত আচরণ করেন! তার মাকেও নাকি কথাটা জানিয়েছিলেন। মা এই বিষয়ে আর একটা কথাও না বলতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ পুরো সংসারের সবকিছু বড় চাচাই দেখেন। তিনিই পরিবারের কর্তা। 
পরে কি হয়েছিল, আর জানা হলো না। হঠাৎ করে ক্লাস নাইনে উঠতেই রানু ফুফু স্কুলে আসা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমি ক্লাস সেভেনে উঠেছি। বহুদিন ঘরে থেকেও কারো সামনে বের হতেন না। দেখা করতে গেলেই পরিবারের লোকজন বলতেন ঘুমাচ্ছে, নয়তো নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। 
রানু ফুফুর সাথে সেই থেকে আর কখনো একা কথা বলার সুযোগ হয়নি। সুস্থ অবস্থায় যখন দেখতে গিয়েছি, তখনও কেউ না কেউ পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। 
জীবিত রানু ফুফুর সাথে আর দেখা হবে না এই জীবনে! যাক, অবশেষে রানু ফুফু মুক্তি পেয়েছেন সেই ভয়ানক ভূতের কবল থেকে...।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078