কমিউনিটিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের বিরুদ্ধে ভয়ানক অভিযোগ

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০০ , চলতি সংখ্যা
বাংলাদেশ থেকে কৃষ্ণাঙ্গ ভাড়া করে প্রবাসী স্ত্রী ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গৌরব সাঞ্জারি নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। জানা গেছে, গৌরব যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট বার্লিন পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি। স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও জামিন পাওয়া গৌরবের বিরুদ্ধে নিউজার্সি সুপরিয়র আদালত থেকে আটটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আবারও গ্রেপ্তার হওয়া এড়াতে এক বছর আগে বাংলাদেশে পালিয়ে যান তিনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের কিছু টিভি চ্যানেলসহ গণমাধ্যমে স্ত্রী কনিকা মজুমদার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ তুলে ধরেন গৌরব। অভিযোগে তিনি বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায় একটি মানবপাচার চক্র। এমনকি দেহ ব্যবসায়ও বাধ্য করা হয় তাকে। একপর্যায়ে মুক্তিপণ হিসেবে দেশে থাকা পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে চক্রটি।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের বিরুদ্ধে এমন ভয়ানক অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে নিউজার্সি, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। স্বামী নাকি স্ত্রী কার অভিযোগ সঠিক, এ নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পড়ে গেছেন মহা ধান্দায়। তারা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার নানা বিচার-বিশ্লেষণ করলেও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না। কোনো কোনো প্রবাসী মনে করছেন, স্ত্রী কনিকার অভিযোগই সঠিক; কারও কারও মতে, গৌরবই নির্যাতনের শিকার। তবে অধিকাংশ প্রবাসীর ধারণা, স্বামী-স্ত্রীর এ ধরনের পরিণতির জন্য উভয়েই সমান দায়ী।
জানা গেছে, গৌরবের বাড়ি চট্টগ্রামের জুবলি রোডে। তার বাবা শিবু শীল লোহা-লক্কড়ের ব্যবসা করেন। মার্কিন মার্শাল অফিস এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে গৌরবকে গ্রেপ্তারের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। তিনি নিউজার্সি স্টেটের ক্যামডেন কাউন্টি ফ্যামিলি কোর্টের চূড়ান্ত আদেশের শুনানিতে নানা অজুহাতে অনুপস্থিত থাকছেন। ফলে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কনিকা মজুমদার নোয়াখালী জেলার চরজাবেরের হাজীপুরের বাসিন্দা।
২০১৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ফেরার সময় কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিউইয়র্কগামী একটি ট্রানজিটে (সংযোগস্থল) প্রথম দেখা হয় গৌরব-কনিকার। এরপর দীর্ঘদিনের পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে উভয়ের সম্মতিতে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। নিয়ম অনুসারে কনিকার স্বামী গৌরব সাঞ্জারি অভিবাসন ভিসা নিয়ে আমেরিকায় চলে আসেন। কিছুদিন তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। গৌরব গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর থেকেই সংসারে কলহ শুরু হয়।
কনিকা মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, প্রথমে তার সঙ্গে বাজে আচরণ করতে থাকেন গৌরব। অশ্লীল ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। দিন দিন এর মাত্রা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে মারধর করা শুরু করেন। অত্যাচারের মাত্রা সীমার বাইরে চলে যায়। ২০২২ সালের ২৪ জুলাই তাকে বেদম মারধর করেন গৌরব। গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। পরে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে রক্ষা করেন। এ ঘটনার পর পুলিশ গৌরবকে গ্রেপ্তার করে। দুই দিন পর জামিনে বেরিয়ে তিনি নিউইয়র্কে কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি আরও বলেন, নিউজার্সির ক্যামডেন সুপরিয়র আদালত থেকে ১৬ নভেম্বর ২০২৩ সালে গৌরবের বিরুদ্ধে আটটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় (মামলা নম্বর ২২০০৪৪৫৫)। তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে ই-মেইলে কৃষ্ণাঙ্গদের ভাড়া করে পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এর ফলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ ডিপার্টমেন্টে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে গৌরব সাঞ্জারি বলেন, ওদের মূলত একটা ফন্দি ছিল, পাঁচ দিন আমাকে দিয়ে যৌনকর্ম করাত। আর সপ্তাহে দুই দিন দেখাত যে আমি কাজ করছি। এ সময় গৌরব যার মাধ্যমে বিয়ে করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সেই শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, শাহাবুদ্দিন আমাকে বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম বাসায় বন্দী করে রাখে। একপর্যায়ে নিউজার্সির একটি ভবনের বেসমেন্টেও আটকে রাখে। আমি তিন দিন না খেয়ে থাকার পর যখন তাকে বলি, আমার খুব খারাপ লাগছে, তিন দিন না খেয়ে আছি, তখন শাহাবুদ্দিন এসে আমার দুই হাত পেছন দিকে নিয়ে বেঁধে স্কচটেপ দিয়ে মুখ বন্ধ করে সেখানে ফেলে রাখে। তিনি আরও জানান, একপর্যায়ে নিউ বার্লিন শহরেও তাকে বন্দী রাখা হয়। শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানের ছবি তুলে রেখে হুমকি দেওয়া হয়, যদি পুলিশের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়, তাহলে এসব ছবি পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটে ছেড়ে দেবে। পরে দেশে থাকা পরিবারের কাছে ৬০ হাজার ডলার দাবি করা হয়। গৌরব জানান, তারা চাপ দিয়ে বলতে থাকে, তোমার বাবা-মাকে বলো টাকা দেওয়ার জন্য। বাড়িঘর বিক্রি করে বা কিডনি বিক্রি করে টাকা দিতে বলা হয়। পরে গৌরব যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনকে ই-মেইলে সব ঘটনা জানান। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল রিপোর্টেও উঠে আসে যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য। অবশেষে সেখান থেকে পালিয়ে এক সংগঠনের দ্বারস্থ হন তিনি। পরে তাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গৌরব দেশে ফিরে এই চক্রের ১৪ জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আর ঘটনা সম্পর্কে জানতে গৌরবকে ডেকেছে ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস।
গৌরবের এসব অভিযোগ নিয়ে তার স্ত্রী কনিকা মজুমদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যৌনকর্ম নিষিদ্ধ। এ ছাড়া তিনি (গৌরব) যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন কখনো পুলিশের কাছে কিংবা আমাকেও এসব বিষয়ে জানাননি। তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যা বলে বেড়াচ্ছেন, তাতে আমি বা আমার পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে, কলঙ্কিত করা হয়েছে। তার এসব বক্তব্য সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
অভিযোগ উঠেছে, গৌরব প্রতিদিন বিভিন্ন নম্বর ব্যবহার করে ফোনে কনিকার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং তার বন্ধুদের হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থার নামও ব্যবহার করছেন। কনিকা বলেন, আমার পরিবারকে হেয় করতে গৌরবের বাবা চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের নামে একটি মানবপাচার মামলা করেন। এ মামলার অভিযোগ খুবই হাস্যকর। মামলাটি মানবপাচার আইনে হলেও অভিযোগ করা হয়েছে যৌন নির্যাতনের।
কনিকার মা বীণা মজুমদার বলেন, আমেরিকায় যা ঘটেছে, এর জন্য দেশে আমার ছেলের পরিবারকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার ছোট নাতি-নাতনিরা কেন এর খেসারত দেবে। তাদের ভবিষ্যৎ জীবনটাকে নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। আমি এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ আমেরিকা থেকে পলাতক আসামির গ্রেপ্তার দাবি করছি।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078