কেউ দেখে কেউ দেখে না  সাংবাদিক নির্যাতন ও বিচারহীনতা

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৫:১৩ , চলতি সংখ্যা
সাংবাদিক নির্যাতন বিশ্বে নতুন কিছু নয়। সর্বত্রই সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও নানাবিধ হয়রানি চলছে। বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতনের ইতিহাস কখনো মসৃণ ছিল না। পৃথিবীর দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র সর্বদাই সত্য খবর প্রকাশে বাধা দিয়েছে এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্রসমূহের অন্যায় শাসনের সত্য-সঠিক খবর পরিবেশনের কোনো সুযোগ নেই। সেসব দেশে সাংবাদিকেরা নির্যাতনের শিকার হন।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই পাক-ভারত উপমহাদেশের সর্বত্র কোনো না কোনোভাবে সাংবাদিক নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। সব সময় রাষ্ট্রশক্তির কঠোর বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত, খর্ব হয়েছে এবং বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সর্বত্রই সাংবাদিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চলেছে। সরকার ও সন্ত্রাসের কোপানলে অনেক সাংবাদিক নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে আমাদের দেশের সাংবাদিকেরা অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন। অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে অনেক সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। সত্য ও সঠিক খবর প্রকাশের অভিযোগে অনেক সাংবাদিককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁদের মধ্যে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দীন আহমদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, শহীদ সাবের, আবুল বাশার, শিবসাধন চক্রবর্তী, চিশতী শাহ্ হেলালুর রহমান, মুহাম্মদ আখতার, সেলিনা পারভীনসহ অসংখ্য সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহাদাতবরণ করেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য অসংখ্য বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী গুম হয়েছেন ও নিখোঁজ হয়েছেন। অনেকে শহীদ হয়েছেন।

সবার প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সাংবাদিকসহ কোনো পেশাজীবীর ওপর আর কোনো জুলুম-নিপীড়ন ও নির্যাতন হবে না। গণতান্ত্রিক নীতি অনুযায়ী সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথ অবারিত থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের ওপর নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও নিপীড়ন। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার প্রতি সরকারি নীতিমালায় অনেক পরিবর্তন ঘটানো হয়। কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর নানা রকম হয়রানি ও নিপীড়ন শুরু হয়। তৎকালীন সরকার কর্তৃক মাত্র চারটি সংবাদপত্র রেখে দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। সারা দেশের হাজার হাজার সাংবাদিক তাদের চাকরি হারিয়ে রাস্তায় নিক্ষিপ্ত হন।

সেই শুরু থেকে এখনো বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া এবং সাংবাদিক নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সত্য-সঠিক খবর পরিবেশনের জের হিসেবে এ পর্যন্ত বহু সাংবাদিক গুম-খুন, নির্যাতন ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন। তিক্ত হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় প্রতিটি সরকারের আমলে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে এবং খড়্্গ নেমে এসেছে। সাংবাদিকদের ওপর নানাবিধ অত্যাচার, জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন হয়েছে।
কিন্তু কোনো নির্যাতনের বিচার হয়নি। বরং সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ওপর নতুন নতুন আইনকানুন প্রয়োগ করে নিপীড়নের মাত্রা ক্রমবর্ধমান বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু জনপ্রিয় পত্রিকা ও টেলিভিশন সরকারি আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রখ্যাত সাংবাদিক সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনির রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রকাশ থাকে যে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি তাদের পেশাগত সাংবাদিকতায় সাহসিকতা ও দৃঢ় কর্মকাণ্ডের কারণেই একটি প্রভাবশালী চক্রের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ঢাকায় নিজ বাসভবনে সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তের আঘাতে (স্বামী-স্ত্রী) উভয়েই মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। তাদের পাঁচ বছরের শিশুসন্তানের সামনেই ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল।
সাগর-রুনি দম্পতির সেই হত্যাকাণ্ডটি উচ্চস্তরের রাজনৈতিক মনোযোগ ও গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বাংলাদেশের সাংবাদিক ইউনিয়নভুক্ত সকল সংগঠনকে একীভূত করে। তারা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে আসছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

জীবদ্দশায় মি. সাগর সরোয়ার জার্মানির ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। ফলে জার্মানিসহ দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমেও সেই হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। পরিতাপের বিষয়, ২০১২ থেকে ১৫ বছরের বেশি একই সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায়। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যার এখনো বিচার হয়নি। ফলে মামলাটি নিয়ে সাংবাদিক মহলসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংস্থাগুলোও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচার আজও হয়নি।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুনÑএই ছয় মাসে দেশে ১১৯ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ২৯ জন এবং চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার ৮ জন করে সাংবাদিক রয়েছেন।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ছয় মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আসক জানায়, ১০টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং তাদের ‘নিজস্ব সূত্র’ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির সংখ্যাগত এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমের ওপর ভয়াবহ হামলা ও হত্যার রেশ না কাটতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাংবাদিক ভয়ংকরভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। নাদিমকে আক্রমণ করে, পিটিয়ে হত্যা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার পুত্র ছাত্রলীগ নেতা রিফাত। তার সঙ্গে জড়িত বিরাট এক অপরাধী চক্র। একই কায়দায় সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদকে মারাত্মক আহত করেছে ছাত্রলীগ নেতারা।

ক্ষমতাশালীদের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার জের হিসেবে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর অব্যাহত হামলা-মামলা-নির্যাতন ও হত্যা স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় সরকারের সদিচ্ছার উদাহরণ তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে। জামালপুরের সাহসী সাংবাদিক নাদিমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে সাংবাদিকতা আরও ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হয়ে উঠছে এবং দিন দিন সাংবাদিকতায় ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে।

মফস্বলের প্রান্তিক এলাকায় প্রায় প্রতিটি সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত হিসেবে শাসক দলের নাম উঠে আসছে। যার প্রধান কারণ, দলীয় পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকায় একধরনের সুবিধাবাদী চক্র নিজেদের স্বার্থে অত্যাচার ও নিপীড়নে অত্যন্ত বেপরোয়া। তাদের অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলাকে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি হিসেবে মনে করেন।
জামালপুরের সাহসী সাংবাদিক নাদিমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গণমানুষের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে বাবু চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একইভাবে খুনিদের কয়েকজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু হত্যায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া চেয়ারম্যান-পুত্র থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে! সেই মামলার অবস্থা পরবর্তী সময়ে কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে, কেউ জানে না। হয়তো সরকারি দল ও রাজনৈতিক প্রভাবে পরে এসব খুনের মামলার গতি মন্থর হয়ে পড়বে। একসময় দেখা যাবে, আসামিরা বের হয়ে যাবে। বিচার হবে না। বিচারের বাণী নিভৃতেই কাঁদবে।

সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনায় বাংলাদেশে অনেক হত্যাকাণ্ডের ভয়ংকর বিচার হয়নি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার মতো অনেক খুনের মামলা বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে। সারা বাংলাদেশে যে পরিমাণ সামাজিক অবক্ষয় ও অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা, তা রুখবার কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ভয়ংকর হত্যাকারীও প্রভাবশালীদের মদদ ও ছত্রচ্ছায়ায় পার পেয়ে যায়। একটি হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ যখন বছরর পর বছর ঝুলতে থাকে (!), অন্য অপরাধসমূহ বল্গাহীনভাবে সমাজকে বিষাক্ত করে তোলে। অধিকাংশ অপরাধের বিচারের জন্যও দেশের নির্বাহী বিভাগের দিকে বছরের পর বছর চেয়ে থাকতে হয়।
এখানে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী নামের একজন মেধাবী, নিষ্পাপ, নিরপরাধ কিশোরের করুণ মৃত্যুর কথা এখনো মনে পড়ে। কী ভয়ংকর ছিল সেই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড। মনে হলে এখনো গা শিউরে ওঠে। সেই হত্যাকাণ্ডে সমগ্র দেশ কেঁদে উঠেছিল। নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ সারা দেশের মানুষ বিচার দাবি করেছিলেন। ঢাকাসহ সমগ্র দেশে বিচার দাবি করা হয়েছিল।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ তরুণ মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। নারায়ণগঞ্জের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান স্কুলের বিজ্ঞানের ছাত্র কিশোর ত্বকী ছিল বিস্ময়কর মেধা ও মননের অধিকারী। অবসর সময়ে ত্বকী পাঠাগারে গিয়ে বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ত এবং সাহিত্যচর্চা করত। পরদিনই মেধাবী এই কিশোরের এ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়, ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে (২৯৭/৩০০) সারা বিশ্বে এবং রসায়নে (২৯৪/৩০০) বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়। সেই ফলাফল দেখার সৌভাগ্য ত্বকীর হয়নি। এমন ঘটনার কথায় আজও গা শিউরে ওঠে।
২০১৩ সালের ৮ মার্চ সকালে শহরের ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা খাল (কুমুদিনী খাল) থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ত্বকী নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেলে শহরের সুধীজন পাঠাগার হয়ে চাষাঢ়ায় তার বাবার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। দোকানে না যাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। পরবর্তী সময়ে খাল থেকে মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।

একই বছরের ১৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙ্গারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমান ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি অবগতিপত্র দেন ত্বকীর বাবা জনাব রাব্বি। তিনি অভিযোগ করেন, ত্বকীকে অপহরণের পর আজমেরী ওসমানের ‘টর্চার সেল’ উইনার ফ্যাশনে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

সংবাদপত্র সূত্রে প্রকাশ, গত কয়েক বছরেও তদন্তকাজ শেষ করা যায়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আদালত এ পর্যন্ত তদন্ত শেষ করতে ৭০ বার সময় বাড়িয়েছেন। বিচার সম্পন্ন করা হয়নি। (সূত্র : বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও অনলাইন মিডিয়া)।
দেশের সমগ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সকল মানুষের আর্তিতে বিচারের বাণী এখনো নিভৃতে কাঁদতে থাকে।

সাগর-রুনি, মেধাবী কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু, কিশোর ত্বকী, রাজন ও রাকীব, মেধাবী মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত নিষ্ঠুরতম কায়দায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পরও সমগ্র দেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিন্দা ও ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। রাজপথে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমিতির মাধ্যমে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। কিন্তু কাজ হয়নি, কোনো বিচার হয়নি। বেদনার আর্তি ও বিষাদময় প্রতিবাদের ঝড় আস্তে আস্তে থেমে যায়। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সমাজের প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় ভয়ংকর অপরাধীরা বেপরোয়া গতিতে আরও বেশি অপরাধকর্ম অব্যাহত রাখে। কেউ দেখে না। সরকার, প্রশাসন কিংবা বিচারালয়ের চোখ বন্ধ থাকে। এ প্রসঙ্গে ব্রায়ান্ট ম্যাকগিলের উক্তি 
মনে পড়ছে :
‘যেখানে দৃষ্টি নেই, সেখানে সত্যিকারের ন্যায়বিচারের আশা নেই।’
যে সমাজে অপরাধীর বিচার হয় না, সে সমাজ অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন বলেন :
‘বিচার বিলম্বিত হওয়া মানে ন্যায়বিচার অস্বীকার করা।’
কোনো রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে সে রাষ্ট্র ও সমাজ অশান্ত হয়ে ওঠে। সমাজে সুস্থতা বজায় রাখার জন্য ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে ডেসমন্ড টুটুর বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে :
‘সকলের জন্য ন্যায়বিচার থাকলেই প্রকৃত শান্তি অর্জিত হতে পারে।’
যখন আদালতে বিচার হয় না, অসহায় মানুষ দু’হাত তুলে খোদার কাছে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করেন। প্রত্যেক অপরাধী তার অন্যায় সম্পর্কে জানে যে একদিন ন্যায়বিচার তাকে পরাজিত করবেই। অতএব, সাধু সাবধান।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078