শেক্সপিয়ারের জন্মভূমি

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১৩:৩৭ , চলতি সংখ্যা
পৃথিবীর তাবৎ সাহিত্যপ্রেমীর ঈশ্বর কিংবা সাহিত্যের ঈশ্বর যিনি, তিনি আর কেউ নন-ব্রিটেনে জন্ম নেওয়া উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের অন্তর্গত অ্যাভন নদীর তীরে স্ট্রাটফোর্ড শহরে শেক্সপিয়ার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২৩ এপ্রিল ১৫৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আর মৃত্যু ২৩ এপ্রিল ১৬১৬ সালে। তিনি মাত্র ৫২ বছর জীবিত ছিলেন। সাহিত্যের পণ্ডিতেরা তাকে নাম দিয়েছেন ‘বার্ড অব অ্যাভন’। তিনি অ্যাভনের চারণ কবি ছিলেন। গ্রিসের মহাকবি হোমারও ছিলেন চারণ কবি। হাটে-মাঠে-ঘাটে, স্থানে স্থানে ঘুরে ঘুরে যেসব কবি কাব্যচর্চা করেন, তাদের বলা হয় ‘চারণ কবি’।

বিশ্বের ইতিহাসে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এক বিস্ময়! সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকারÑযার সৃষ্টি সম্বন্ধে এত বেশি আলোচনা হয়েছে, তার অর্ধেকও অন্যদের নিয়ে হয়েছে কি না সন্দেহ। তিনি সেই নাট্যকার, যার নাটক পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার মঞ্চস্থ হয়েছে বলে দাবি করেন তার ভক্তরা। অ্যাভন নদীর তীরে জন্মেছেন এই কিংবদন্তি, যে নদী সাক্ষী তার শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের।
স্ট্রাটফোর্ড বেশ ছিমছাম পরিপাটি একটা শহর। আমি বেশ কয়েকবার লন্ডনে এসেছি, কিন্তু লন্ডনের আশপাশের শহরগুলোতে যাওয়া হয়নি। তাই এবার নিউইয়র্ক থেকেই গ্রে হনড বাসে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বুক করে পে করে এসেছি। যাব বাথ, অক্সফোর্ড, স্টোন হেইঞ্জ ও শেক্সপিয়ারের জন্মস্থান।

আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি শেক্সপিয়ারের পৈতৃক বাড়ির সামনে, যে বাড়িতে তিনি জন্মেছেন! এখন যা সংগ্রহশালা বা জাদুঘর। জাদুঘরের উদ্দেশ্যে আসতে পথে দেখলাম উঁচু বেদিতে শেক্সপিয়ারের আবক্ষ মূর্তি। এ ছাড়া হ্যানলি স্ট্রিটে কার্টুন মূর্তি দেখলাম, তা শেক্সপিয়ারের নাটকের কার্টুন চরিত্রের আদলে করা হয়েছে। ওনার বাড়িতে যাওয়ার আগেই ওনার সঙ্গে পরিচিত হতে থাকলাম।

জাদুঘরের প্রবেশমুখেই রয়েছে শেক্সপিয়ারের মূর্তি। এই সংগ্রহশালায় বিভিন্ন নথি, চিত্র, পেপার কাটিং, ফটো নানা উপাদান সংগ্রহ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পারিবারিক এবং সেই সময়ের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
সংগ্রহশালা থেকে বের হলেই একটি মাঝারি আকারের বাগানসহ কাঠের দোতলা বাড়ি। অতি সাধারণ কাঠের ফ্রেমের তৈরি বাড়ি। বাবা জন শেক্সপিয়ার ও মা মেরির বাড়ি। তারা সন্তানদের নিয়ে একটি বাড়িতে বাস করতেন। বাবার ছিল উলের ব্যবসা। প্রথমে বাবার দুটি বাড়ি থাকলেও উইলিয়াম শেক্সপিয়ার তার পাশে নিজে আরও দুটি বাড়ি তৈরি করেন।

আঠারো বছর বয়সে অ্যানি হাতওয়েকে শেক্সপিয়ার বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তানসহ পাঁচ বছর এই পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করেছেন। পরবর্তী সময়ে স্ট্রাটফোর্ড ছেড়ে লন্ডনে যান। লন্ডনে তিনি পেশাদারি রঙ্গমঞ্চে কাজের অভিজ্ঞতায় দর্শকের মনোরঞ্জনের উপযোগী ভালো নাটকের অভাব অনুভব করেন এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে নাটক লেখার সূত্রপাত। একের পর এক সফল নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে পৃথিবীজোড়া তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

তার লিখিত নাটকগুলো এক অসাধারণ সৌন্দর্যে উজ্জ্বল। প্রতিটি চরিত্রই জীবন্ত, প্রাণবন্ত সজীবতায় ভরপুর। শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে কমেডি, ঐতিহাসিক নাটক, ট্র্যাজেডি ও রোমান্স, মেলোড্রামা। বিচিত্র কল্পনার এক সংমিশ্রণ ঘটিয়ে লিখিত ছিল তার প্রতিটি নাটক। শুধু নাটক নয়, কবি হিসেবেও তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিদের অন্যতম। তার প্রতিটি কবিতাই এক অপূর্ব কাব্যদ্যুতিতে উজ্জ্বল। আসলে সাহিত্যের সব শাখায়ই তার স্বাচ্ছন্দ্য পদচারণ ছিল।
একদিন লন্ডন শহরের কোলাহল ছেড়ে স্ট্রাটফোর্ডে ফিরে আসেন। ছয় বছর থাকার পর তিনি নিজের জন্মদিনেই মৃত্যুবরণ করেন।

এত বড় এক নাট্যকারের বাসায় দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম। এ সময় অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করতে লাগল। মিউজিয়ামে এত মানুষ একসঙ্গে যে আমাদের নিচে পনেরো মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। ধীরে ধীরে ঢুকলাম। ঘরের আসবাব, ফার্নিচার, বিছানা, বাচ্চাদের খাট, সে সময়কার আদলে তৈরি পোশাক, তার ব্যবহৃত খাবার টেবিল এবং তাতে সাধারণত যা খেতেন তা সাজানো। প্লেট-বাটি, গ্লাস সেই ৪০০ বছর আগেকার। সেই সময়ের পরিবেশ তৈরি করতে টেবিলে পরিবেশনের জন্য সাজানো, মনে হয় এইমাত্র কেউ নাশতা সারছিলেন, এমন জীবন্ত করে রাখা হয়েছে! তখনকার দিনের ডিজাইনের টেবিল-চেয়ার, টেবিল ল্যাম্প, লোহার ইস্ত্রি, কেটলি, ব্ল্যাঙ্কেট রাখা আছে আলনায়। খাটের কাছে স্যান্ডেল, সেই রকম করে রাখা, যেন তিনি এখনো এখানে আছেন! পানির জগ ও পানি ফেলার জন্য একটি গামলা মাটিতে এক কোনায় রাখা। জানালার ধারে টেবিল-চেয়ার, কালি ও কলম রাখা। এখানে বসেই শেক্সপিয়ার লিখতেন।
গাইড আছে আমাদের সাহায্যে। সে সময়ের আদলে পাথর কয়লার উনুন, কয়লা জ্বলছিল তাতে। জীবন্ত করে রাখার প্রয়াস। অপেক্ষাকৃত অন্ধকার কক্ষে ও সিঁড়ির কোনায় কোনায় মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর আলোকিত করে রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে।

একসময় ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে উঠোনে এসে দাঁড়ালাম। বেশ গাছগাছালি ভরা। চারদিক সবুজ আর সবুজ। বাগানের ফুলগাছে অনেক ফুল চোখে পড়ল। মিষ্টি রোদে ফুলের সুবাসে এক অনাবিল আনন্দ দেয়। এই সুন্দর পরিবেশে পেলাম আরেক চমক! তা হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ ভাস্কর্য। খুব ভালো লাগল। উষ্ণ হয়ে উঠলাম মনে ও শরীরে। সেই রকমটি লাগছিল নিউইয়র্কে সেন্ট্রাল পার্কে মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য দেখে। ভারতীয় হাইকমিশন শেক্সপিয়ারের জন্মভিটায় রবীন্দ্রনাথের এই আবক্ষ ভাস্কর্যটি স্থাপন করে ১৯৯৪ সালে।
শেক্সপিয়ারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। পথে অনেক দোকান, স্যুভেনিরের দোকান, কফিশপ, রেস্টুরেন্ট। পথে বেশ লোকজন, তাদের গন্তব্য হলো শেক্সপিয়ারের বাড়ি ও মিউজিয়াম।

আমার বহুদিনের ইচ্ছা আজ পূরণ হলো। শেক্সপিয়ারের বাড়িতে অনেক ছবি বাঁধানো আছে। আমি সেই ছবির সঙ্গে আমার ছবি নিয়েছি। তৃপ্ত মন নিয়ে ট্যুর বাসের দিকে রওনা দিলাম।
কাল সকালে ঠিক আজকের মতো গ্রে হনড বাস ডিপো থেকে যাব বাথ শহরে। সেটিও এক দিনের ভ্রমণ।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078