‘অসময়’-এর গল্প ও কিছু শিক্ষণীয় বিষয়

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:৫৮ , চলতি সংখ্যা
সিটন হল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আমাদের স্প্যানিশ ভাষার ক্লাসে একটা বিষয় ছিল খুবই আকর্ষণীয় : ‘স্প্যানিশ চলচ্চিত্রে শিক্ষণীয় বিষয়’। স্পেন ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র আমরা দেখতাম, তারপর অধ্যাপক সেই সিনেমা সম্বন্ধে কিছু বক্তব্য রাখার পর আমাদের ওই সিনেমার গল্পে ও অভিনয়ে ভাষা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সমাজব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্র, নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্ক, তাদের অধিকার, শিশুদের লালন-পালন, বয়স্কদের দেখাশোনা ইত্যাদি বহু শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে দিতেন। তাই এখনো কোনো চলচ্চিত্র কিংবা নাটক দেখলে চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নজরে পড়ে। সে কথা চিন্তা করেই বাংলাদেশের নতুন একটি চলচ্চিত্র নিয়ে আজকের এই প্রবন্ধের অবতারণা। আশা রাখি সবার ভালো লাগবে।
গত ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম Bongo-তে মুক্তি পেয়েছে কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত বর্তমান কালের কয়েকজন মানুষের জীবনে ঘটতে থাকা কিছু মন্দ পরিস্থিতির গল্প নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্যরে ওয়েব ছায়াছবি ‘অসময়’। কথায় বলে, ভুল থেকেই মানুষ শেখে। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, শেখার কোনো শেষ নেই। তাই চমৎকার পরিচালনায় সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন দৃশ্য, হৃদয় স্পর্শ করা অভিনয়ে ভরপুর এই সিনেমা থেকে বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আমাদের সাহায্য করবে অসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যারা, তাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে এবং আমাদের ও পরিচিত অন্যদের জীবনকে ‘অসময়’ থেকে সুসময়ের দিকে প্রবাহিত করতে।
আজকের এই আধুনিক ডিজিটাল সময়ে কিছু কি আসল আছে? আসলকে ঢেকে নিজেকে, পরিবেশকে, ব্যবস্থাপনাকে, জীবনধারণকে লোভের কারণে বদলে অনেক মানুষ ‘অসময়’কে ডেকে আনে তাদের জীবনে, সংসারে, কাজে-ব্যবসায়ে, সমাজে এবং আরও বৃহত্তর অঙ্গনে। অযথা লোক-দেখানোর নেশায় যখন কেউ আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন অসময়ের আনাগোনা শুরু হয় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে। কাজল আরেফিন অমি ভালো পরিচালক হিসেবে সমাদৃত হওয়ার পাশাপাশি ভালো গল্পকার হিসেবেও নন্দিত, যা তার অন্যান্য কাজে ও ‘অসময়’ ছবির গল্পে প্রমাণিত হয়েছে। অভিনয়ের সুতোয় গেঁথে বিভিন্ন চরিত্র এতে তাদের জীবনের কিছু পর্যায়ের গল্প উপস্থাপন করেছে, যা তাদের বর্তমানের অসময় কিংবা ভবিষ্যতের অসময়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই প্রথম যে শিক্ষণীয় বিষয়টি আমরা অনুধাবন করি, তা হলো ‘অসময়’ কারও জীবনে বা পরিবারে বলেকয়ে আসে না, তা যেকোনো সময়ই আসতে পারে, এমনকি তারা অসময়ে থেকেও বুঝতে পারে না যে তাদের সময় খারাপ যাচ্ছে। কারণ তাতেই তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
এ রকমই একটা পরিবার উর্বিদের। বাবা, মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংসার। ওর বাবা স্বল্প আয়ের সরকারি কর্মচারী, মা গৃহিণী। অদ্ভুত একটা ব্যাপার চোখে পড়ে, বাবা যখনই বাসায় ফেরে উর্বি ও ওর ভাই দৌড়ে গিয়ে পড়তে বসে এবং উর্বির মা স্বামী কিছু বলার আগেই সবকিছুতেই সায় দেন। বোঝাই যায়, তাদের পারিবারিক জীবন তেমন স্বাভাবিক নয়, যদিও স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসে তারা বেড়াতে গিয়েছিল, বিমানবাহিনীর ফাইটারগুলোর রং ছড়ানো দেখতে। সেটা দৈনন্দিন অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও কিছুটা সুসময়! উর্বি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাওয়াতে সামর্থ্য না থাকলেও ওর বাবা গ্রামের জমি বিক্রি করে ওকে সেখানে ভর্তি করান, যেটা তিনি রেখেছিলেন উর্বির বিয়ের জন্য। উর্বির বুদ্ধিমত্তায় কিছুটা মুগ্ধ ও কিছুটা নিজেদের ক্লাস পরীক্ষায় নিজ স্বার্থ-সুবিধার জন্য কয়েকজন ধনী পরিবারের ছেলেমেয়ে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, প্রায়ই ক্যানটিনে খাওয়ায়। এতে উর্বিও বন্ধুদের ধনী জীবনযাত্রার দিকে আকৃষ্ট হতে থাকে। গ্রুপ স্টাডির নাম করে বন্ধু শুভর জন্মদিন উদ্্যাপন করতে গিয়ে একটা খারাপ ঘটনায় ফেঁসে যায় উর্বি এবং গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় চালান হয় সে। শুরু হয় ওদের পরিবারের সত্যিকার ‘অসময়’।
গাল্পিক কাজল আরেফিন অমি বিভিন্ন ছোট-বড় কোণ থেকে ছবির মূল কাহিনি এভাবেই হৃদয়স্পর্শীভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হলো অসময়ের, অমঙ্গলের, অস্বাভাবিক পরিস্থিতির লাল সংকেত কি আমরা দেখতে পেলাম এখানে? বাবা যখন কাজ শেষে ঘরে আসে, ভালোবাসার উষ্ণতায় পূর্ণ পরিবারে ছেলেমেয়েরা দৌড়ে বাবার কাছে যায়, তাকে জাপটে ধরে, বাবা কখনো কখনো বাচ্চাদের জন্য কিছু উপহার আনে, স্ত্রীও স্বামীকে হাসিমুখে গ্রহণ করে। কিন্তু উর্বির বাবার আগমনে কেমন একটা অস্বস্তিকর থমথমে ভাব বিরাজ করে, রাগের স্বরে শুধু পড়াশোনা করতে বলে, যদিও তার হৃদয়ে সন্তানদের জন্য ভালোবাসা আছে কিন্তু তিনি তা প্রকাশ করেন না। সেটা হয়তো আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জন্যই। চাকরিতে তেমন সুবিধা করতে না পারায় তিনি অসময়ের মাঝেই ছিলেন, তবে মেয়ের এই আকস্মিক ঘটনায় তার দুনিয়া যেন আবর্জনায় ভরে গেল, ডাস্টবিনের আবর্জনার মতোই নোংরা সব বিষয় তার মেয়েকে ঘিরে প্রচারিত হতে থাকল। এ রকম ‘অসময়’ যেন কোনো বাবা-মায়ের জীবনে না আসে!
বিপদে বা ‘অসময়ে’ সত্যিকারের বন্ধু চেনা যায়। উর্বির বন্ধুরা ওর বিপদের দিনে এগিয়ে আসেনি। এই বিষয়টা আমাদের সন্তানদের শেখাতে হবে, যেন তারা বন্ধু চিনতে ভুল না করে। সুন্দর বা নেম ব্র্যান্ডের পোশাক পরলেই কেউ সুন্দর হয়ে যায় না, তাদের চরিত্রের উন্নয়ন কিংবা মূল্যবোধের বৃদ্ধি হয় না। হৃদয় থেকে উপহার দিলে, জন্মদিনের সাধারণ একটা উপহারও অসাধারণ হয়ে যায়। উর্বি এদিক থেকে ভুল করেনি। তবে ও ভুলে গিয়েছিল, ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।’ শুধু বইয়ের জ্ঞানেই পড়াশোনা হয় না, বিদ্যালয়ের শিক্ষায়ই শিক্ষিত হওয়া যায় না। সত্যিকার বিদ্বান ও জ্ঞানবান হতে হলে সঙ্গে লাগে জীবন থেকে শেখা বাস্তব অভিজ্ঞতা। বাবা-মায়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, গুরুজনের সঙ্গে  আলাপচারিতা, শিক্ষকদের অনুসরণ, বন্ধুদের খাঁটি বন্ধুত্ব ও সুশীল সমাজের পরিবেশে সেই অভিজ্ঞতা জীবনে আরোহিত হতে থাকে। সেই সঙ্গে ভুল করেও মানুষ শেখে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
উর্বির বাবার চরিত্রে লেজেন্ডারি অভিনেতা তারিক আনাম খান যেন আসলেই গল্পের সেই ব্যক্তি, চরিত্রের সঙ্গে মিলে গিয়ে পুরোপুরি একাকার। মনে হলো কোনো অভিনয় নয়, স্বাভাবিক দিনেরই কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। আমাদের প্রাণটা ভরপুর করে দিয়েছেন এই কাজে, তবে গল্পের কারণে তার তিরোধানটা মনে হয়েছে অনাবশ্যক ছিল। মণিরা মিঠুও হয়ে যাচ্ছেন লেজেন্ডারি, তারিক আনাম খান স্যারের মতো গুণী মানুষের সংস্পর্শে এসে ও একসঙ্গে কাজ করে। সংসারে পুরোপুরি নিজেকে সঁপে দেওয়া একজন স্ত্রী ও মা হিসেবে তার অভিনয় ছিল দুর্দান্ত।
উর্বি ও ওর বন্ধুদের চরিত্রে একঝাঁক তরুণ অভিনয়শিল্পী ‘অসময়’কে ঝকঝকে করে দিয়েছে। শিমুল শর্মা, লামিমা লাম, শাশ্বত দত্ত, ইসরাত জাহিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী হিসেবে ও উর্বির বন্ধু হিসেবে ভালোই করেছে। যে চরিত্রটি নিয়ে এত বড় একটা ‘অসময়ে’র সূত্রপাত, সেই চরিত্রের উপস্থিতি স্বল্প কয়েক মিনিটের মাত্র। কিন্তু সেই অল্প সময়টাতেই জিয়াউল হক পলাশ সকল দর্শকের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাসনিয়া ফারিণ চমৎকার ও ভিন্ন মাপের অভিনয় করেছে, বিশেষ করে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ও জেলখানায়। ও সব সময়ই বিভিন্ন প্রকার চরিত্রে রূপায়ণ করে বিভিন্ন আঙ্গিকের ও গল্পের ছবি বা নাটকে, বিশেষ করে নারীকেন্দ্রিক কাহিনিতে। তাই এটাও ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা হলো। তবে তাসনিয়ার স্বাভাবিক হাসিমাখা মুখে কান্না বা দুঃখ ভারাক্রান্ত অভিব্যক্তি ঠিক যায় না, এমনকি মানায় না। সে জন্য জেলখানা কিংবা বাবার মৃত্যুর পর কান্নাগুলো অতি-অভিনয় লেগেছে। হয়তো কিছু প্রশিক্ষণে এই রূপায়ণ আরও স্বাভাবিক লাগবে। তবে সব মিলিয়ে চমৎকার কাজ!
এই ছবিতে আরেকটি পরিবারের গল্প আছে-স্বামী দামি BMW গাড়ি চালান, স্ত্রী একজন সফল উকিল, ছেলেমেয়ে ইংরেজি স্কুলে পড়ে ও কাঁটা-চামচ দিয়ে ভাত খায়। এতে সমাজে তাদের উঁচু শ্রেণি, সাফল্য ইত্যাদি প্রকাশ করে। কিন্তু ভেতরের খবর ভিন্ন, সবকিছুই লোক-দেখানো। কাজল আরেফিন অমি এই পরিবারের নকল বিষয়গুলো সূক্ষ্মভাবে নজর দিয়ে লিখেছেন এবং ইন্তেখাব দিনার ও রুনা খান চমৎকারভাবে তাদের অভিনব অভিনয়শৈলী দিয়ে তা উপস্থাপন করেছেন যে সকল দর্শক অভিভূত হবেই। আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হলো, যা নকল, যা অসৎ, তা দিয়ে কিছুদিন হয়তো সংসার চালানো যায় কিন্তু সুখ পাওয়া যায় না, সন্তানদের মানুষ করা যায় না। তেমনি দুটো মুখোশ পরে জীবনধারণ করা যায় না। দম্পতিরা শিখবে অন্তরঙ্গতার ক্ষেত্রেও তাদের কিছু ব্যক্তিগত সীমারেখা আছে, যা সম্মান করা অত্যাবশ্যক। লঙ্ঘন করা একেবারেই অনুচিত অর্থাৎ ‘না’ মানে ‘না’। আশা করি, বুঝতে পারছেন বিষয়টা। বিবাহিত জীবনে ‘অসময়’ এলেও পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে ও ক্ষমা দিয়ে সুসময়ের পথে পা বাড়াতে হবে, প্রয়োজনে বিজ্ঞ ব্যক্তি ও মনোচিকিৎসকের পরামর্শ ও সাহায্য নিতে হবে। আশা কখনো কাউকে নিরাশ করে না। সুসময় আসবে, সুখপাখি একদিন না একদিন ধরা দেবেই। এই কষ্টের বা অসময়ের যাত্রাপথে মহান স্রষ্টার ওপর থেকে বিশ্বাস ও আস্থা হারানো চলবে না।
বন্ধুত্ব অনেক কিছু শেখায়, সাহস জোগায়, সাহায্য করে, নিজের/অন্যের উপকার করে। তেমনি আনন্দময় ও উপকারী এক বন্ধুযুগলকে কাজল আরেফিন অমি তার লেখনী ও পরিচালনায় উপহার দিয়েছেন ইরেশ জাকের ও শরাফ আহমেদ জীবন অভিনীত পুলিশ অফিসার মোখলেস ও ক্রাইম সাংবাদিক হালিমের চরিত্র দুটোতে। এদের দুজনের বন্ধুত্বের রসায়ন, হাস্যরস, সাবলীল সংলাপ হয়েছে ‘অসময়’-এর প্রাণস্বরূপ, সুসময়ের পথে যাত্রার আলোক। শিক্ষণীয় বিষয় হলো, আমরা সবাই বন্ধু চাই কিন্তু সত্যিকার বন্ধু পাওয়া দুষ্কর। তবে আমরা নিজে যদি একজন ভালো বন্ধু হওয়ার জন্য যে গুণাবলি প্রয়োজন সেগুলো আয়ত্ত করি, তাহলে সেগুলোর টানেই বন্ধু আসবে। বন্ধু চিনতে উর্বির মতো ভুল না করে মোখলেস ও হালিমের মতো হলে নিজের এবং অন্যের উপকার হবে। এদের বন্ধুত্বের কারণে উর্বির যে উপকারটা হলো, তা ‘অসময়’ দেখলেই বুঝতে পারবেন। সত্যিকার বন্ধুত্ব টিকে থাকুক চিরকাল!
‘অসময়’-এর সুপ্রশংসার জোয়ারের মাঝে গল্পকার কাজল আরেফিন অমির কাছে একটু অনুযোগ বা সমালোচনা আছে। লেখকের গল্পলেখায় পুরো স্বাধীনতা থাকলেও কিছু বিষয় মাথায়, কল্পনায় ও লেখনীতে রাখতে হয় পাঠকদের কথা ভেবে। কথায় আছে, লেবুকে বেশি চিপলে তা তেতো হয়ে যায়। গল্পে উর্বির বাবার মৃত্যুটা তেমনি অনাবশ্যক ছিল। ‘অসময়’-এর বহু ট্র্যাজেডির মাঝে আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা যোগ হওয়াতে গল্পের জীবনপ্রদীপ যেন নিভে গেল। পরিশেষে সত্য উদ্্ঘাটিত হলেও উর্বি যে দেড়টি বছর হারাল, সেটা তাকে আর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না, সেটা আরও একটা অসময়। নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে সে বেরিয়ে এল আশাহীন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে, জীবনের পথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ও সুসময়কে খোঁজার শক্তি ছাড়াই। দর্শকও তেমনি কিছুটা হলেও আশাহীনতার শোকে মুহ্যমান হবে গল্পের শেষে এসে। 
গল্পলেখকদের একটা সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব আছে ‘অসময়’কালে। জীবনের বৈরী সময় ও তার কারণগুলো পাঠক/দর্শকদের দেখিয়ে দিয়েই তাদের কাজ শেষ হয় না, তাদের উচিত পাঠক/দর্শকদের ইতিবাচক পথনির্দেশনা দেওয়া, যেন তারা ‘অসময়’ পেরিয়ে আবারও সুসময়ের পথে পা বাড়াতে সাহস ও উৎসাহ পায়। কল্পনা করা যেতে পারেÑমাননীয় বিচারক যখন উর্বিকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করলেন, তখন সেই আদালতে যদি উর্বির বাবা-মা-ভাই থাকতেন, তাহলে মিথ্যা অভিযোগ, অপবাদ, বন্ধুদের স্বার্থপরতা, জেলখানায় অমানবিক কষ্ট ও জীবনের সম্ভাবনাময় দেড়টি বছর হারানোর ‘অসময়’কে সামলে নেওয়ার আশা, শক্তি ইত্যাদি আসত পরিবারের সবার সঙ্গে পুনর্মিলনের সুসময়ে। দর্শক যারা ‘অসময়’ কাটাচ্ছেন বা কাটিয়েছেন, তারাও আশায় বুক বাঁধতে পারতেন। বহু সাফল্যের সঙ্গে কিছু ব্যর্থতা তো থাকবেই। এটাই জীবন! তাই জীবনের ‘অসময়’ আমাদের লেবু দিলে তা অতিরিক্ত চিপিয়ে তেতো না করে বরং উচিত হবে লেবুর শরবত বানানো। এটাই লেখক, গল্পকার, শিক্ষকদের দায়িত্ব!
পরিশেষে, Bongo-কে ধন্যবাদ জানাই ‘অসময়’-এর মতো এমন একটি শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা করার জন্য। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাই দর্শকদের যারা Bongo-র মতোই বিভিন্ন OTT মাধ্যমে সদস্য হয়েছেন, যেমন Chorki, Binge, DiptoPlay, ZEE5, Hoichoi, YouTube প্রভৃতি, যার মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে বহু শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু বাংলা ভাষায় আমরা দেখতে, জানতে, উপভোগ করতে পারছি এবং দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিভাগে এর অর্থনৈতিক উন্নয়নে subscription এর মাধ্যমে অল্প কিছুটা হলেও অংশ নিতে পারছি। ‘অসময়’-এর সঙ্গে যুক্ত ক্যামেরার পেছনে ও সামনে এবং পাঠক ও দর্শকদের সবার প্রতি মঙ্গল কামনা নিরন্তরÑসুসময় আসবেই।
লেখক : একজন রোমান ক্যাথলিক যাজক, ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী, নটরডেমিয়ান, নিউজার্সিবাসী এবং ধর্মবিষয়ক কলামিস্ট।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078