দশ মিনিটের ভালোবাসা

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ০০:০০ , চলতি সংখ্যা
বয়ঃসন্ধিকালে শৈশব ও কৈশোরের মাঝে যখন তখন মজার মজার অনেক ঘটনা ঘটে। এমনই এক ঘটনার কথা আজ বলছি।
আসিফ ও হাসিব দুই বন্ধু।
স্থান গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন।
সময়টা ১৯৬৬ সাল, পাক-ভারত যুদ্ধের পর।
সোনামাখা মিষ্টি এক সকাল। বিহারি পানদোকানির দোকান থেকে ‘তুমহি মাহবুব মেরে ম্যায় কিউ না তুমে পেয়ার না করু...’ গানের আওয়াজ ভেসে আসছে। স্টেশনে খুব একটা যাত্রী নেই। সে সময় রেলওয়ের ৮০ শতাংশ কর্মচারী ছিল বিহারি এবং স্টেশনে তাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। দুই বন্ধু আসিফ আর হাসিব দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনে। গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। স্কুল ছুটি। দুজনই ক্লাস নাইনে উঠেছে। গোঁফ-দাড়ি উঠছে উঠছে করছে। এই সেদিন হাফপ্যান্ট থেকে ফুলপ্যান্ট ধরেছে। বাজারে ক্যারোলিন এসেছে কটনকে সরিয়ে। আসিফের পরনে আকাশি রঙের ক্যারোলিনের শার্ট আর কালো প্যান্ট। সেয়ানা সেয়ানা ভাব। কণ্ঠস্বর সেটা জানান দিয়ে যাচ্ছে। আসিফের ফরসা লম্বা বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা আর ক্লাসে ফার্স্ট বয়। আর হাসিব কালো মোটা নাদুসনুদুস বাবা-মায়ের আদুরে বেবি বেবি চেহারা। বয়ঃসন্ধিক্ষণের এই সময়টা খুব দুষ্কর। হঠাৎ করেই সবকিছু চেঞ্জ। এ সময় না যাওয়া যায় ছোটদের সঙ্গে আর বড়রা তো পাত্তাই দিতে চায় না। দুই বন্ধুর মধ্যে হাসিব দুষ্ট প্রকৃতির। সে নিজে হাসবে আর সবাইকে হাসাবে। বন্ধু ছাড়াও এরা আবার কাজিন ও মানিকজোড়। ওরা দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনের এক মাথায়, যেখানে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। দুষ্টুমি করতে যাতে সুবিধা হয় আর কেউ দেখতে না পায়। মফস্বল শহরে সবাই সবাইকে চেনে এবং দুষ্টুমিতে ধরা পড়ে গেলে বাবা-মায়ের কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে। এই বয়সের সময়টাই এমন যে চারপাশে আকাশে-বাতাসে শুধু ভালো লাগা। যেদিকে তাকানো যায়, রঙিন চশমা ছাড়াই সব রঙিন মনে হয়। ভালো লাগারা হৃদয়ের মাঝে শত শত রঙিন ঘুড়ি ওড়ায়। দু’চোখজুড়ে শুধু স্বপ্ন আর স্বপ্ন। স্বপ্নরা আকাশে লাল-নীল কত রঙের ঘুড়ি ওড়ায়। এমনই একটা সময় দুই বন্ধু এই দুষ্টুমিতে ব্যস্ত। হঠাৎ হাসিব বলে ওঠে, কাল মুভিটা তোর কেমন লেগেছে?
-খুব ভালো।
-ইচ্ছে করে মুভির মতো একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করি।
-কার সঙ্গে?
-গ্রামে যাচ্ছি, দেখি ওখানে অমনি একটা মিষ্টি মেয়ে পাওয়া যায় কি না? আসিফ কথা বাড়াল না। বোঝা গেল তার এতে অত ইন্টারেস্ট নেই।
হঠাৎ করে ঢাকা থেকে আসা ঢাকা মেইল স্টেশনে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ করে স্টেশনটা একটা ঝাঁকুনি খেয়ে জেগে উঠল। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠল চতুর্দিকে।
-চায়ে গরম...
-বাদাম, বাদাম... গরম বাদাম।
কত রকম শব্দ চারদিকে। তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একটি এসি কম্পার্টমেন্ট। হঠাৎ করে কম্পার্টমেন্টের জানালাটা খুলে গেল। যে সময়ের কথা বলছি, সে সময় ট্রেনে ছিল চারটা ক্লাস। ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস, ইন্টার ক্লাস ও থার্ড ক্লাস। মধ্যবিত্তরা ইন্টার ক্লাস, তার থেকে বিত্তবান ও উচ্চশ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা ফার্স্ট ক্লাস কিংবা সেকেন্ড ক্লাস ভ্রমণ করত। তবে ঢাকা মেইল, দ্রুতযান এসব ট্রেনে এয়ারকন্ডিশন কম্পার্টমেন্ট নামে সুপার এক কম্পার্টমেন্ট শুরু হয়েছে। হঠাৎ এসি কম্পার্টমেন্টের জানালাটা খুলে গেল ঘুমজড়ানো অদ্ভুত একটা মায়াবী মুখ পূর্ণিমা চাঁদের মতো। দুধে আলতা রং, মাথায় ঘন কালো চুল এলোমেলো ছড়িয়ে আছে মুখের ওপর। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। সবচেয়ে সুন্দর গভীর কালো দুটো চোখ। মেয়েটি তাদের বয়সী হবে হয়তো। জানালা দিয়ে মাথা বের করে স্টেশনের ডান-বামে দেখতে লাগল। হঠাৎ দশ গজ দূরে দাঁড়ানো আসিফের সঙ্গে তার চোখে চোখ পড়ে গেল। মেয়েটি মিষ্টি করে হাসল। আসিফও মিষ্টি করে হাসির উত্তর দিল। দুজনের চোখে চোখে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ মেয়েটির পেছন থেকে আরেকজনের মাথা দেখা গেল। চেহারা দেখেই বোঝা গেল, এরা দুই বোন হবে হয়তো। হাসিব তার বন্ধু আসিফ আর মেয়েটির চোখাচোখি দেখে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেও পরমুহূর্তে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হঠাৎ করেই হাসিব স্টেশনের উঁচু রেলিংয়ের পাশে থেকে একটা জবা ফুল আসিফের হাতে দিয়ে ইশরা করল মেয়েটিকে দেওয়ার। আসিফ ইন্টারেস্ট দেখাল না। ওদিকে মেয়েটির বোনও মেয়েটির কানে কানে কী যেন বলছে আর দুজন হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আসিফের মনটা নীল আকাশে পাখি হয়ে উড়ছিল। মনে হচ্ছিল, এমন ভালো লাগার মুহূর্ত যেন শেষ না হয়।
হঠাৎ কুয়ুয়ুয়ু...ঝিকঝিক করে ট্রেন চলতে শুরু করে। আসিফের দিবাস্বপ্নটা মুহূর্তেই ভেঙে গেল। হঠাৎ আসিফ ও হাসিব দুজনই অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করে, মেয়েটি খোলা জানালা দিয়ে হাত নাড়ছে। তা দেখে আসিফও কখন যে হাত উঠিয়ে নাড়তে শুরু করেছে। যতদূর দেখা গেল, আসিফ হাত নাড়তে থাকল। ওদিকে মেয়েটিও...
-রলি, নর্থ ক্যারোলিনা, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078