সুতা কাটা ঘুড্ডি

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:২৪ , চলতি সংখ্যা
লাবলু কাজী


জীবনঝড়ের রাত্রি, বেড়েই চলেছে তাণ্ডবে, সকালের রৌদ্রের দেখা মেলার আর কত বাকি! কয়েক দিন যাবৎ খারাপ ক্ষণের ভুক্তভোগী জীবন কামড়ে হেমলগ পানে আকণ্ঠ ম্রিয়মাণ থাকার কবলেই কালবৈশাখী ঝড় আমার বউয়ের আত্মীয়া সাইকো রোগী হঠাৎ করেই চলে গেল পরপারে স্ট্রোকের মরণকামড়ে। বিষধর সাপে ভয় পাই আমরা। এর কামড়ে ব্যথার প্রবাহ আত্মার কত প্রবল, কামড়-অনভিজ্ঞ লোকের পক্ষে কি বোঝা সম্ভব, সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে কষ্ট বিরামহীন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো হৃদয়হরণে ক্ষত সৃষ্টি করে যায়। 

এই সরল-সহজ মেয়েটা স্বামী আর উদীয়মান তরুণ ছেলেকে রেখে চলে যাওয়ায় বড্ড আনমনা করে ফেলে সবাইকে। প্রতিটা মৃত্যুই আল্লাহর ইচ্ছা, মঙ্গলের তরে। ওরটাও তা-ই হবে, এটাই ভরসা। এভাবেই বাঁচার সান্ত্বনা আমাদের এই ধরায়। দুনিয়াটা আমার মনে হয় ঝড়-ঝঞ্ঝার এক অথৈ দরিয়া। এর কান্ডারি আমরা শক্ত আর দক্ষ না হলে সাগর পাড়ি দিয়ে তীরে পৌঁছা কঠিন। ভাবি যারা নিরীহ, গোবেচারা, ছাপোষা তাদের দুনিয়া কোথায়? বাঁচবেই-বা কীভাবে, যদি না মেলে সেই দুনিয়া এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। আমার প্রশ্ন ইথারে-পাথারে ছড়িয়ে প্রতিবিম্ব হয়ে ফিরে আসে, উত্তর মেলে না...।

কয়েক দিন আগে Thanksgiving Day চলে গেল। বাসার সামনের রাস্তাটা নীরব, গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা। সবাই Turkey Dinner serving-এ ব্যস্ত। Duplex বাসার বিশাল পরিসরে আমরা তিনটি প্রাণী জেগে আছি স্মৃতির জাবর কেটে। গত বছরও এ দিনে রমরমা ছিল বাড়িভর্তি আপনজনে। ওরা আজ দূরে নিজ নিজ পরিবার নিয়ে, বানাতে সুখের পায়রায় ভর করে ডানা মেলায়। এক বছরে জীবনবিবরের এই বিভাজন হতাশা আনে বৈকি? ওদের অভিমানিনী মা তাই হয়তো মন খারাপে তার signature receipe-এর turkey dinner Avi pumkin pie বানালই না। হয়তো সাধারণ খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ব। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে বিভোর হব পুরোনো বছরগুলোর রঙে সুতাছেঁড়া ঘুড়ির পাগলা হাওয়ার টানে উড়িয়ে নিয়ে যাবে অজানায়। ধপাস করে পড়ে যাব নীল আকাশ ভেদে মর্ত্য,ে দেখব শুয়ে আছি খাটে। আমার কি এরপর দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভেজে? হয়তো পড়ে, মনে হয় অন্ধকারে আর দেখতে না পাই অথবা ঠান্ডার হিটের তাপে শুকিয়ে মিলিয়ে যায় অজানায়...।

কয়েক দিন যাবৎ বড় ভাইকে অনেক মনে পড়ছে। তার গুণাবলি, কীর্তি আজও লোকেরা স্মরে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে। সালটা আমার ভালো মনে নেই কিন্তু স্মৃতির আলোর জ্যোতি সোনালি সকালের রৌদ্রের মতো আমার আঁখি দুটোর কোটরে এখনো জ্বলজ্বল করছে। এমন স্মৃতি কি ভোলা যায়? পল্লিকবি জসীমউদ্্দীন এসেছিলেন হলিক্রস হাইস্কুলে। যথারীতি তাকে সংবর্ধনা দেওয়া ব্রজেন স্যারের সঞ্চালনে। মানপত্র পাঠ করেন আমার বড় ভাই কাজী মোশাররফ। কবি খুব প্রশংসা করে বললেন, ‘তুমিও আমার মতো বড় কবি হবে বড় হলে।’ সন্ধ্যায় কবি আমাদের বাসার বাংলোঘরে এসে হাজির। এসে বললেন, ‘তোমার মেধার কথা অনেক শুনেছি, আরেকবার দেখতে মন চাইল। পদ্মা নদী দেখতে যাচ্ছি, তোমায় আর ব্রজেন স্যারকে নিয়ে যাব, চলো।’ আমাদের বাড়ির সামনে আর আঙিনা ভরে গেল মানুষে। সেই গুণী লোকটা, আউলিয়াবাদের গর্ব, কৃতী সন্তান আজ কোথায়? রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা...

শব্দচয়ন ও বাক্যবিন্যাস লেখকের রচনাশৈলীর মাধুর্য ও সাবলীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তেমনি কথাবার্তার ঢং ও প্রকাশভঙ্গির গাম্ভীর্যে আমাদের ব্যক্তিত্ব ও মানবিক আবেগগুলোর সুষ্ঠু ও সুন্দর প্রকাশ ফুটে ওঠে। ইদানীং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে ফেসবুকের সুবাদে আমরা সবাই এখন লেখক হয়ে উঠেছি, তার জাদুকরি প্রভাবের তাড়নার নিষ্কৃতি লাভে প্রতিদিন সেই মহার্ঘ, ফেসবুকে প্রকাশ না করলেই নয়। ভাষার সুষ্ঠু প্রয়োগ, কবিতার ছন্দ, বানান শুদ্ধ না হলেও চলে; নামটা তো জাহির হচ্ছে, এটাই বড় পাওনা। 

সবচেয়ে বড় কষ্টদায়ক ব্যাপারটা হচ্ছে আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে চাহিদামাফিক ডিমান্ড না মেটালে বা না মিটলে নামে-বেনামে তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্বার করে ফেলছে, মানসম্মান চলে যায় গারবেজে। এটা কোনো অবস্থায়ই ঠিক নয়। 

পরিণামে রক্তীয় সম্পর্কে ফাটল ধরছে। হিংসা আর গিবত খুব খারাপ জিনিস। এতে আল্লাহ আর বান্দার মধ্যে পর্দা টেনে দেয়। কাজেই আসুন, আমরা ফেসবুক পোস্টে আরও সতর্ক হই।
আমার জন্মস্থান দোহার থানার আউলিয়াবাদ গ্রামে। পাশের গ্রামে তখনকার দিনে বান্দুরা হলিক্রস হাইস্কুল বড়ই নামকরা ছিল। লেখাপড়া, খেলাধুলায় এর জুড়ি মেলা ভার ছিল। আমেরিকান মিশনারি দ্বারা পরিচালিত এই স্কুলের নিয়মশৃঙ্খলা আমি এ দেশের স্কুল-কলেজেও দেখি না। 

পুরোনো ক্লাসমেটরা সব সময়ই আমার প্রিয়পাত্র ও অন্তরে গাঁথা থাকে। এই সুরের টানে বিমোহিত হয়ে দেশে যাওয়ার বাহানায় আমি বিভোর। ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান করব স্কুলে। সাজ সাজ রবে আপ্লুত বন্ধুরা। 

অনেকে চলে গেছে পরপারে। খুব কষ্ট হয় শুনে, মন কান্দে, কত দিন দেখিনি তাদের। স্মৃতিরা কখনো কখনো বেজায় গরমিলের ধাক্কা খাওয়ায় হালখাতার লাল মলাটের ভেতরের পাতায় হিসাব-নিকাশের মতো। জীবন তবু চলে পানির মতো উজান-ভাটায়, গন্তব্য মহাসাগর, তার অপেক্ষায়ই আছি...।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078