বড়দিন : ঈশ্বরের ভালোবাসার গল্প

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:১৪ , চলতি সংখ্যা
রেভা. যোষেফ ডি বিশ্বাস


ঊর্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা

পৃথিবীতে [তাঁর] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি। লুক ২ : ১৪

সকল ধর্মের অনুসারীরা ধর্মীয় উৎসব ও পর্ব পালন করে থাকেন। প্রায় সকল ধর্মের সঙ্গে উৎসব, পর্ব ও আনুষ্ঠানিকতার নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। আমরা দেখতে পাই, স্থান ও কাল ভেদে একই ধর্মের অনুসারীরা একই উৎসব ভিন্ন ভিন্ন ভাবধারায় পালন করে থাকেন। প্রতিটি ধর্ম ও তার উৎসবের সঙ্গে সকল ধর্ম পালনকারীদের স্থানীয় সংকৃতি এবং ওই ধর্মের উৎপত্তিস্থানের সংকৃতিরও ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়।

আমরা যারা বাইবেলের ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি, আস্থা রাখি এবং জীবনচলার পথে ঈশ্বরের বাক্যকে চরণের প্রদীপ ও পথের আলো হিসেবে নিয়েছি, আমরা প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের ভালোবাসা অনুভব করি। সমগ্র সৃষ্টিই ঈশ্বরের মহিমা, পরাক্রম ও তার ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকে। ঈশ্বরের সমগ্র সৃষ্টি একটি সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্য দিয়ে পথ চলছে। আমরা দেখতে পাই, আমাদের গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্রমালা ও প্রকৃতি সবাই যেন এক স্বর্গীয় সংগীতের তালে সুশৃঙ্খলভাবে নৃত্য করছে। ঈশ্বরের সমগ্র সৃষ্টি যেন এক গভীর মমতায় আমাদের তার কোলে লালন-পালন করে চলছেন। মনে পড়ে, সাধু দাউদ বলেছেন, ‘সদা প্রভুই আমার পালক।’

আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয়-চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বকের সাহায্যে ঈশ্বরের অবিস্মরণীয় সৃষ্টিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। আমরা দুটি চোখ দিয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছি, দুটি কান দিয়ে সৃষ্টির সকল সুর ও শব্দে মোহিত হচ্ছি। এ ছাড়া নাক দিয়ে ঘ্রাণ, জিহ্বা দিয়ে স্বাদ ও ত্বক দিয়ে স্পর্শ অনুভব করছি। এসব কিছু সৃষ্টির একটি বিস্ময়, যার কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসা। ঈশ্বর তাঁর গভীর ভালোবাসায় আমাদের উত্তম রূপে সৃষ্টি করেছেন। আমরা ঈশ্বরের উত্তম সৃষ্টি।
পবিত্র বাইবেলে দেখতে পাই :

‘পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন। পরে ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্বাদ করিলেন। ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত করো, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষীগণের উপরে এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্তৃত্ব করো।’ আদি ১ : ২৭-২৮।

সৃষ্টির শেষ পর্বে ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, যেন মানুষ সৃষ্টি হয়েই একটি পরিপূর্ণ পরিবেশ পায়, যেখানে তারা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে। ঈশ্বর তাঁর নিজ প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তাদের স্বাধীন ইচ্ছা প্রদান করেছেন, শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, সৃষ্টির ওপর তত্ত্বাবধান ও কর্তৃত্বদানের ক্ষমতা দিয়েছেন।

সৃষ্টির শুরু থেকেই ঈশ্বরের ভালোবাসা আমাদের ঘিরে রয়েছে।
মানুষ ঈশ্বরের ভালোবাসা পরিত্যাগ করল।
পবিত্র বাইবেল থেকে দেখতে পাই :

‘সদা প্রভু ঈশ্বরের নির্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্প সর্বাপেক্ষা খল ছিল। সে ওই নারীকে কহিল, ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোনো বৃক্ষের ফল খাইও না? নারী সর্পকে কহিলেন, আমরা এই উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি; কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা তাহা ভোজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে। তখন সর্প নারীকে কহিল, কোনোক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সৎ-অসৎ জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। নারী যখন দেখিলেন, ঐ বৃক্ষ সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞানদায়ক বলিয়া বাঞ্ছনীয়, তখন তিনি তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন। পরে আপনার মতো নিজ স্বামীকে দিলেন, আর তিনিও ভোজন করিলেন।’ আদিপুস্তক ৩ : ১-৬।
আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হবা ঈশ্বরের অবাধ্য হন এবং ঈশ্বরের ভালোবাসা, উপস্থিতি ও সহভাগিতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন কিন্তু প্রেমময় ঈশ্বর এতে ব্যথিত হলেন ঠিকই কিন্তু তিনি তাঁর অন্তরে মানুষের জন্য ভালোবাসা অটুট রাখলেন।

হারিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসা ও পরিকল্পনা

মানুষের অবাধ্যতা ও ভুল সিদ্ধান্তে ঈশ্বর ব্যথিত হলেন এবং মানুষকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনার একটি মহাপরিকল্পনা করলেন। তিনি তাঁর মনোনীত লোকদের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করলেন, বিশেষভাবে আব্রাহামের কাছে তিনি তাঁর মহাপরিকল্পনা ও প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করলেন। পবিত্র বাইবেলের পুরোনো নিয়ম হচ্ছে ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি পর্ব, যা আমরা আদি থেকে মালাখি পুস্তকে দেখতে পাই। ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যক্তি, পরিবার ও জাতিকে ব্যবহার করেছেন।

পবিত্র বাইবেলে দেখতে পাই :

‘ঈশ্বর পূর্বকালে বহুভাগে ও বহুরূপে ভাববাদীগণে পিতৃলোকদিগকে কথা বলিয়া, এই শেষকালে পুত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন। তিনি ইঁহাকেই সর্বাধিকারী দায়াদ করিয়াছেন এবং ইঁহারই দ্বারা যুগকলাপের রচনাও করিয়াছেন।’ ইব্রীয় ১ : ১-২।
বড়দিনÑঈশ্বরের পরিকল্পনার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন এবং আমাদের মাঝে ঈশ্বর
পবিত্র বাইবেল বলেন :
‘অতএব প্রভু আপনি তোমাদিগকে এক চিহ্ন দিবেন; দেখো, এক কন্যা গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে ও তাঁহার নাম ইম্মানুয়েল [আমাদের সহিত ঈশ্বর]।’ যিশাইয় ৭ : ১৪
ইম্মানুয়েলÑআমাদের সঙ্গে ঈশ্বর। এটিই বড়দিনের বড় বার্তা বা সুসমাচার। অবাধ্যতার কারণে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ঈশ্বর তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য নিজেই পুত্রবেশে মানুষের মাঝে এলেন।

পবিত্র বাইবেল বলেন :
‘আদিতে বাক্য ছিলেন এবং বাক্য ঈশ্বরের সহিত ছিলেন এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন।’ যোহন ১ : ১
‘আর সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হইলেন এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত এক জাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ।’ যোহন ১ : ১৪

আমাদের সৃষ্ট বড়দিন
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, আমরা অনেকেই নিজেদের মতো করে ‘আমাদের বড়দিন’ সৃষ্টি করে নিয়েছি, যেখানে যিশুকে খুঁজে পাওয়া যায় না কিন্তু আমার ও আমাদের বিষয়টিই বড় করে প্রাধান্য পায়। বড়দিনকে ঘিরে আনুষ্ঠানিকতা ও গতানুগতিক ধর্মকর্মের মাঝে বড়দিনের যিশু, তাঁর বাক্য, আমাদের কাছে তাঁর আহ্বান অবহেলিত।
পবিত্র বাইবেলে বলেন :
‘কারণ ঈশ্বরকে জ্ঞাত হইয়াও তাহারা তাঁহাকে ঈশ্বর বলিয়া তাঁহার গৌরব করে নাই; ধন্যবাদও করে নাই; কিন্তু আপনাদের তর্কবিতর্কে অসাড় হইয়া পড়িয়াছে, এবং তাহাদের অবোধ হৃদয় অন্ধকার হইয়া গিয়াছে। আপনাদিগকে বিজ্ঞ বলিয়া তাহারা মূর্খ হইয়াছে এবং ক্ষয়ণীয় মনুষ্যের ও পক্ষীর ও চতুষ্পদের ও সরীসৃপের মূর্তিবিশিষ্ট প্রতিকৃতির সহিত অক্ষয় ঈশ্বরের গৌরব পরিবর্তন করিয়াছে।’ রোমীয় ১ : ২১-২৩।

ঈশ্বরের ভালোবাসা গ্রহণের আহ্বান
পবিত্র বাইবেল বলেন :

‘কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার এক জাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। কেননা ঈশ্বর জগতের বিচার করিতে পুত্রকে জগতে প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু জগৎ যেন তাঁহার দ্বারা পরিত্রাণ পায়। যে তাঁহাতে বিশ্বাস করে, তাহার বিচার করা যায় না; যে বিশ্বাস না করে, তাঁহার বিচার হইয়া গিয়াছে, যেহেতু সে ঈশ্বরের এক জাত পুত্রের নামে বিশ্বাস করে নাই।’
পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে :

‘ঈশ্বর প্রেম; আর প্রেমে যে থাকে, সে ঈশ্বরে থাকে এবং ঈশ্বর তাহাতে থাকেন।’ ১ম যোহন ৪ : ১৬

‘খ্রিষ্ট যিশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদের মধ্যেও হউক। ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন। এই সকল কারণ ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চ পদান্বিতও করিলেন এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যিশুর নামে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল নিবাসীদের সমুদয় জানু পাতিত হয় এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে যে, যিশুখ্রিষ্টই প্রভু।’ ফিলিপীয় ২ : ৫-১১

বড়দিন-ঈশ্বরের ভালোবাসায় সাড়া প্রদানের দিন। বড়দিন-যিশুতে বিশ্বাস ও ব্যক্তিজীবনে যিশুকে ত্রাণকর্তা ও প্রভুরূপে গ্রহণ ও যিশুতে জীবন যাপনের দিন।

ডযবহ ুড়ঁ শহড়ি যড়ি সঁপয এড়ফ রং রহ ষড়াব রিঃয ুড়ঁ ঃযবহ ুড়ঁ পধহ ড়হষু ষরাব ুড়ঁৎ ষরভব ৎধফরধঃরহম ঃযধঃ ষড়াব.

When you know how much God is in love with you then you can only live your life radiating that love.
ÑMother Teresa
Christmas is about receiving and giving. Give the gift of the true Christmas story-that God gave His Son so that mankind would receive Him. Let’s focus not on our own joys but making others joyful. The greatest gift we can give others is to tell them about the most wonderful Gift God has bestowed on the whole world.
-Rev. Dr. Billy Graham

যিশুখ্রিষ্টই হোক আমাদের প্রতিদিনের প্রভু। শুভ বড়দিন।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078