ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ও বিজয়

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:১২ , চলতি সংখ্যা
মিজান রহমান

১৬ ডিসেম্বর উৎসবমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদ্্যাপিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে থানা, ইউনিয়ন, গ্রামেগঞ্জে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দুনিয়ার যে দেশেই থাকুন না কেন, তারাও কোনো না কোনোভাবে এই দিনটিতে বিজয়ের উল্লাসকে স্মরণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙালিরা এই দিবসটিতে বিজয়ের প্রতিফলক হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সাপ্তাহিক ছুটির দুটি দিনেই তারা এই উৎসবে মাতেন। প্রবাসীদের প্রধান পরিতৃপ্তি হলো স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আজ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে তারা সম্মানের সঙ্গে স্বচ্ছন্দ জীবনযাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা জানেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে তাদের অধিকাংশেরই এই সুযোগ হতো না। সুতরাং মাতৃভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতিকে এই প্রবাসে এসেও তারা যতটা সম্ভব লালন-পালন করে যাচ্ছেন এবং তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরও তা শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিনিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। যাদের রক্ত এবং আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা, জাতি তা আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি...
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সালাম, বরকত, রফিক, শফিউরসহ অনেকে মাতৃভাষার জন্য বুকের তপ্ত রক্ত ঢেলে দিয়ে রাজপথকে রঞ্জিত করেছিলেন বলেই সেই ক্ষোভ থেকে ধীরে ধীরে বাঙালি জাতি পাকিস্তানিদের অবিচার-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। অবশেষে সত্তরের লোকদেখানো নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় জাতি তখন দ্রোহের আগুনে ফুঁসছিল। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি একত্রিত হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হয়।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ

ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখো জনতার উপস্থিতিতে গগনবিদীর্ণ জ্বালাময়ী এক ভাষণ দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য এক দিকনির্দেশনা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে প্রকম্পিত হচ্ছিল, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ এভাবে দীর্ঘক্ষণ তিনি ভাষণ দিলেন আর মানুষের হাততালিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠছিল রেসকোর্সের ময়দান। বঙ্গবন্ধু ভাষণের একপর্যায়ে বলে দিলেন, ‘আমি যদি গ্রেপ্তার হই বা নাও থাকি, তাহলে তোমরা ঘরে বসে থাকবে না... তোমাদের যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে।’

মূলত বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান ছিল। পরবর্তী দু-এক দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাক হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। পাকিস্তানিদের ধারণা ছিল, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করলেই বুঝি স্বাধীনতা আন্দোলন থেমে যাবে! কিন্তু না, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে জাতি বরং আরও শক্তভাবে একত্রিত হয় এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এর মধ্যে মুক্তিবাহিনীতে হাজার হাজার যুবক-তরুণসহ সব বয়সী লোক যোগ দেয় এবং ট্রেনিং করতে অনেকে ভারতে যায়। ট্রেনিং শেষে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাংলার মুক্তিসেনারা।

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে টুকটাক হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্টে দায়িত্বে ছিলেন। মেজর জিয়া, কর্নেল অলি আহমদসহ বেশ কিছু আর্মি অফিসার বিদ্রোহ করে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র দখলে নিয়ে মহান স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার পর পরই মুক্তিযোদ্ধারা তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এরপর দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রমে হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে একটির পর একটি স্থান মুক্ত করেন।

মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তা ছাড়া তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয় নির্ভীক যোদ্ধা। স্বাধীনতা চলাকালীন তিনি জেড ফোর্স গঠন করেছিলেন। বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এভাবেই দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩০ লাখ মানুষের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ এবং দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বাংলাদেশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। এভাবেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়।

বিজয়ের এই সময়ে শ্রদ্ধাভরে আমরা স্মরণ করছি জাতির দুর্দিনে যেসব মুক্তিসেনা দেশকে হানাদারমুক্ত করতে জীবন দিয়েছেন তাঁদের এবং যেসব মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মেজর জিয়াউর রহমানকে স্যালুট জানাচ্ছি। আসলে তাদের মতো এমন মহান নেতা না পেলে হয়তো বাংলাদেশ আজও স্বাধীনতা পেত কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

(আংশিক সংগৃহীত)
-নিউইয়র্ক, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078