যে কারণে আমি নতুন কারিকুলামের পক্ষে

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:১১ , চলতি সংখ্যা
লিটু আনাম


নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে আমি কিছু ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চাই। গত ১০ নভেম্বর ভারতে একটি সিনেমা মুক্তি পায়। ভারত বললে ভুল হবে, জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায় ভারতীয় হিন্দি সিনেমা পিপ্পা। সংগীত পরিচালক এ আর রহমান, কাজী নজরুল ইসলামের প্রজন্মের কারও থেকে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিতে সুর পরিবর্তন করার অনুমতি নিয়ে সিনেমাটিতে ব্যবহার করেন। তাই প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বাংলায় নিন্দার ঝড় ওঠে। কেউ কেউ প্রতিবাদও করেন। 

এমনই এক প্রতিবাদ হিসেবে বাংলাদেশের রুচির বিতর্কিত ব্যক্তি হিরো আলম তার কর্কশ কণ্ঠে এ আর রহমানের অস্কারজয়ী বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ‘জয় হো’ গানটি গাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন আমাদের কণ্ঠে অনেকটা সে রকম বেসুরই বাজে, যেমনটা বেজেছিল এ আর রহমানের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান শুনে।

আরও একটি ঘটনা বলি : গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পায়। কারও ফল ভালো হয় কারও খারাপ। এটাই পরীক্ষার নিয়ম। কিন্তু আমার নজর কাড়ে ময়মনসিংহের দুটি অখ্যাত কলেজের রেজাল্ট নিয়ে। যেখানে প্রায় ৪০০ ছাত্রছাত্রীর কেউ পাস করেনি। কারণ সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাশের নিশ্চয়তা দিয়ে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পাস করতে হলে পরীক্ষার মাধ্যমেই আসতে হবে সকল ছাত্রছাত্রীকে। পরে জানা যায়, ওই কলেজের রেজিস্ট্রেশন নেই, এমনকি কোনো ছাত্রছাত্রীও রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। অথচ তাদের পাসের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কোনো একটি দুষ্টচক্র এমন কাজ করবে-এটাই স্বাভাবিক। 

কিন্তু আমি ভাবছি ওই সকল ছেলেমেয়ের বাবা-মায়েদের কথা। তারা কীভাবে তাদের সন্তানকে পড়াশোনা ছাড়াই পাস করানোর জন্য ৪০ হাজার টাকার চুক্তি করেন! পড়াশোনা ছাড়া এই সনদ নিয়ে তাদের সন্তান বড় হয়ে কী করবে? এটা কি সন্তানের মঙ্গল চাওয়া নাকি সন্তানকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া? তাদের জন্য কাজটা ঠিকই হয়েছে বলে আমি মনে করি।

প্রতিবছর প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে পরে ডাক্তার হয়ে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি, প্রক্সি পরীক্ষা যেন নিয়মিত ঘটনা। গত ৮ ডিসেম্বর ডিবিসি নিউজের খবর-প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, গ্রেফতার ৯১। গত ১৫ ডিসেম্বরের চ্যানেল ২৪ এর নিউজ-প্রশ্ন জালিয়াতি করে টাকার জোরে চিকিৎসক, আটক ৪ চিকিৎসক। এখানে সবই সম্ভব।

ইলন মাস্ক; আমি প্রায়ই ইলন মাস্ক সম্পর্কে তথ্যভিত্তিক আলোচনা করে থাকি। তারই একটি গাড়ির কোম্পানি টেসলাকে (TESLA) নিয়ে কিছু তথ্য না দিলেই নয়। টেসলা বিশ্বের অন্যতম একটি ইলেকট্রিক গাড়ির নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান। টেসলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ ফাংশন হচ্ছে সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি কিংবা অটো পাইলট টেকনোলজি। ২০১৬ সাল থেকে টেসলা কোম্পানির সকল গাড়ি সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি-সমৃদ্ধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গাড়িগুলোর চারপাশে আটটি হাই কোয়ালিটির ক্যামেরা ফিট করা রয়েছে, রয়েছে ১২টি আপগ্রেডেড আল্ট্রাসনিক ডিটেক্টিভ মোশন সেন্সর। এ ছাড়া অন্ধকারে, বৃষ্টিতে, ধোঁয়া, বালু ও কুয়াশার মধ্যে দেখার জন্য গাড়িতে রয়েছে একটি ফ্রন্ট ফেসিং রাডার সিস্টেম। গাড়িটির সেলফ ড্রাইভিং টেকনোলজি মানুষের থেকে বেশি একুরেট ডিসিশন নিতে পারে।

কিন্তু টেসলা অটো পাইলট কার কি ঢাকা শহরে চলতে সক্ষম। টেসলা কি জানে, ‘ওস্তাদ, বায়ে প্লাস্টিক’ মানে কী? টেসলা কি জানে, ঢাকা শহরে কোনো নিয়মই চলে নাÑএটাই নিয়ম।
এবার আসল প্রসঙ্গে আসা যাক। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ঔপনিবেশিক ধাঁচে গড়া। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কালে ব্রিটিশরা উপমহাদেশে তাদের শাসন-শোষণ পাকাপোক্ত করার জন্য তাদের স্বার্থসিদ্ধির অনুকূল করে শিক্ষাব্যবস্থার বিন্যাস করে। পাকিস্তান আমলেও সে শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো লক্ষণীয় পরিবর্তন সাধিত হয়নি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে ১৯৭২ সালে ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। ওই শিক্ষা কমিশন ভারত সফর করে যে শিক্ষা নীতিমালা সুপারিশ করে, তার ভিত্তি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কুদরত-ই-খুদা কমিশনের শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হয়নি।

পরবর্তীকালে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য ১৯৭৮ সালে কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি এবং ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক মফিজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ সালে প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞার নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু এসব শিক্ষা কমিশনের কোনো সুপারিশ সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের দেশে শিক্ষা নিয়ে অভাব-অভিযোগ, ভাবনা-চিন্তা ও দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। তার মানে ব্রিটিশদের দেওয়া কারিকুলাম তখনো চলছে।

সম্প্রতি দেশের নাগরিক সমাজ, শিক্ষিত মহল এবং সচেতন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মহল দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন; নকল-দুর্নীতি এবং মানের অধঃগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর কারণ দীর্ঘদিন থেকেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো শিক্ষানীতি দ্বারা পরিচালিত হয়নি। ঐতিহাসিকভাবেই আমরা পেয়েছি একটি শিক্ষানীতিবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার মতো গর্হিত বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে ক্রমেই দানা বেঁধেছে, শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অসংখ্যবার পরিবর্তন এসেছে। প্রতিটি পরিবর্তনেই কিছু না কিছু বিষয় নতুন করে যোগ হয়েছে। বলা হয়েছে, যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতেই এসব পদক্ষেপ। 

কিন্তু এই প্রথম দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা একেবারেই বদলে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সনাতনী পাঠদানের মতো থাকছে না শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া। শিক্ষকেরা পড়ানোর পরিবর্তে শ্রেণিকক্ষে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। শিক্ষার্থীরা তোতা পাখির মতো প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করবে না। সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষার পরিবর্তে তাদের সারা বছর ধরে মূল্যায়ন করা হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে না কোনো পরীক্ষা। হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। এই মূল্যায়ন কেবল শিক্ষক নন; পাশাপাশি শিক্ষার্থীর সহপাঠী, তার বাবা-মা কিংবা অভিভাবক এবং সমাজের অংশীজনও মূল্যায়ন করবেন। ফলে শিক্ষার্থী পাঠ্যবই থেকে কতটুকু শিখল, তা নির্ধারণ কেবল শিক্ষকের হাতে থাকছে না। এসব কারণে নোট-গাইড আর কোচিংয়ের কবল থেকে মুক্তির পথ তৈরির সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। যে শিক্ষক ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের দোহাই দিয়ে ক্লাসে না পড়িয়ে একই ছাত্রদের কোচিংয়ে পড়িয়ে ব্যবসা করতেন, সেই সুযোগ আর থাকছে না।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিভিন্ন রকম প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে হাসাহাসি করা হচ্ছে। গঠনমূলক কোনো আলোচনা নয় বরং সমালোচনায় ব্যস্ত। বাংলাদেশে টিভি টক শো কেন এত জনপ্রিয়, এটা তার প্রমাণ। এখানে সবাই সমালোচক, কেউ পথপ্রদর্শক নয়। যারা সমালোচনা করছেন, তারা সমালোচনার কতটুকু যোগ্য? এক নারীর একটি ভাষণ শুনে আমি চুপ হয়ে রইলাম, বুঝতেই পারলাম না তিনি কী বলতে চাইছেন? আবার তিনি নাকি ভাইরাল।

নতুন কারিকুলাম নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, তাদের আমি আবেগীই বলব। কারণ তাদের আবেগ কাজ করছে, বিবেক নয়। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা চিন্তিত, কারণ তারা সন্তানের জন্য একটি সরকারি চাকরি ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেন না। আর অভিভাবকেরা কী চান, সেটা তো সবাই জানি। গ্রেফতার হওয়া ৪ চিকিৎসকের প্রশ্ন জালিয়াতি তার বাবা-মা করেছেন। ময়মনসিংহে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে অটো পাস করার সিদ্ধান্ত এবং টাকা দুটোই তাদের বাবা-মায়ের। আমরা যারা দেশের কোনো প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে এসেছি এবং ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, তারা সবাই জানি, প্রতিবছর কত বাবা-মা আমাদের কাছে টাকা নিয়ে আসেন, যদি ভর্তি করিয়ে দিতে পারি। তাদের সমালোচনার কোনো ভিত্তি নেই। আর যে প্রশিক্ষণ দেখে সমালোচনা করা হচ্ছে, সেখানে পরিবেশনগত সমস্যা রয়েছে, যেমন হিরো আলমের গান গাওয়া কিংবা এ আর রহমানের সুর পরিবর্তিত ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। একই প্রশিক্ষণের বিদেশি অনেক ভিডিও দেখি, যা যথেষ্ট সাবলীল এবং রুচিবোধসম্পন্ন।

গত ২৩ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসরীন সুলতানার ‘যে কারণে আমি এই নতুন কারিকুলামের বিপক্ষে’ শিরোনামে একটি যুক্তিযুক্ত লেখা। যদিও লেখাটির শিরোনামের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাইনি। তিনি নতুন কারিকুলামের পক্ষেই যুক্তি দেখিয়েছেন। কিন্তু শিরোনাম দেখে লেখাটির খুব চর্চা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছে যে বিপক্ষে কিছু লিখতে হবে, তাই লিখেছেন। তারই উদ্ধৃতি নিয়ে বলছি :

‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়েছে, প্রমত্ত পদ্মার ওপর সেতু নির্মিত হয়েছে, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল তৈরি হয়েছে, ঢাকা শহরে ব্যয়বহুল মেট্রোরেল চালু হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এতগুলো শিক্ষা কমিশন গঠিত হলেও এই দেশ নতুন প্রজন্মকে একটি সুন্দর, টেকসই ও পরিচ্ছন্ন শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দিতে পারেনি।’

তাই যে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে ফিনল্যান্ডের মতো উন্নত দেশ, সেটা আমাদের দেশের জন্যও ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ আমাদের দেশে চায়নিজ প্রযুক্তি, রাশিয়ান পারমাণবিক শক্তি, ফ্রান্সের এয়ারবাস, আমেরিকান বোয়িং এবং জাপানি বুলেট ট্রেন সবই যেহেতু সম্ভব, তাহলে এই নতুন কারিকুলাম নিয়ে কী সমস্যা? বিশ্বে A for Apple (আপেল) থেকে অ A for Apple (iPhone) আর এখন A for Ai (artificial intelligence) হয়ে গেছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো ‘অ-তে অজগর, আ-তে আম’-এ পড়ে আছে।

কর্ণফুলী টানেলে পাঁচটি ছেলে গাড়ি রেস করেছে বলে বাঙালি টানেলের যোগ্য নয় কিংবা পরিবেশ টানেলের উপযোগী নয়, সেটা বলতে পারি না। পদ্মা সেতুতে বাইক রেস কিংবা টিকটক করে বলে সেটা যুগোপযোগী নয়, সেটা বলতে পারি না। ঢাকায় টেসলা চলবে না, সেটাও ঠিক নয়। তবে তার জন্য আগে টেসলা ঢাকায় চলতে হবে।

তবে এ আর রহমানের ‘জয় হো’ গানটি তার কণ্ঠেই মানায়, হিরো আলম গাইলে তো পাবলিক হাসাহাসি করবেই। কিংবা তিনি যদি ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির কথা ও সুর পরিবর্তন না করে আয়োজনে সমৃদ্ধ করতেন, তাহলে সারা বিশ্বের ৩০ কোটি মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য হতে পারতেন।

বাঙালি উদ্যোক্তা হয়ে জন্মে, চাকরিজীবী হয়ে মরে। আর যারা উদ্যোক্তা হতে পারে, তারাই বেঁচে থাকে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিটি উদ্যোক্তার মস্তিষ্ক ভোঁতা করে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স কিংবা সাধারণ জ্ঞানের নামে বলেÑমুখস্থ কর সামনে বিসিএস। আমি বলতে চাচ্ছি, ব্রিটিশ আমলের সরকারি অফিসের কেরানি তৈরির কারিকুলাম পরিবর্তন সময়ের দাবি আর নতুন কারিকুলাম অবশ্যই ফল বয়ে আনবে, যদি আমরা এর সফল প্রয়োগ করতে পারি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি দীর্ঘ সময়ে ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা প্রশংসনীয়। ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একমুখী সমন্বিত শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সাল থেকে এই পদ্ধতি ২য়, ৩য়, ৮ম ও ৯ম এবং ২০২৫ সালে এটি ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণিতে চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পদ্ধতি চালু হবে উচ্চ মাধ্যমিকে।

নতুন কারিকুলামে কোনো পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। তার পরিবর্তে আছে ধারাবাহিক অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন, উপস্থাপন ও প্রজেক্টনির্ভর মূল্যায়ন-পদ্ধতি। শিক্ষাব্যবস্থায় প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের সংযোজন অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মুখস্থনির্ভর পরীক্ষা-পদ্ধতির জায়গায় এটি একটি বৈপ্লবিক চিন্তা। কিন্তু ময়মনসিংহের মতো অভিভাবক দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবে ঠিক কিন্তু তার ফল সামগ্রিক নয়।
তবে শিক্ষা তথা সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। জালিয়াতি করে শিক্ষক হলে তিনি পড়াবেন কীভাবে? যদি কোচিং আর মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা শুধু কেরানি তৈরি করতে পারবে, গবেষক নয়। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিটি ক্লাসে ৬০ জন ছাত্রছাত্রী থাকলে সর্বোচ্চ ১০ জন হয়তো মুখস্থবিদ্যা অর্জন করতে পারে। বাকিরা হারিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি, নতুন কারিকুলাম যদি ২০ শতাংশও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আশানুরূপ পরিবর্তন আসবে। তাই বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ধারণ করে কোনো নতুনত্বকে টেনে নিচে না নামিয়ে কিংবা স্বভাবসুলভ সমালোচনা করতেই হবে তাই সমালোচনা না করে কীভাবে সেটা বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত।

এটা সত্য, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ্য শিক্ষক, পর্যাপ্ত শিক্ষক এবং শিক্ষার পরিবেশের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষা সরঞ্জামের অভাব এবং সমালোচকদের প্রতিবন্ধকতা। এসবই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। 

আমি মনে করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো সকল মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের দফতরের পুরোনো নিয়মনীতি পরিবর্তন করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী করতে। একটা সময় ছিল, যখন ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে হয়েছে। এসব দেখার সুয়োগ হয়নি। এখন বাংলাদেশ পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে। সুতরাং সমগ্র সিস্টেম ঢেলে সাজানোর এখনই উপযুক্ত সময়।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078