৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া দ্বৈরথ

বাংলাদেশে ফের আগুনখেলা

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২৬ , চলতি সংখ্যা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে আবার জমেছে আগুনখেলা। বাস-ট্রেনে আগুনের পাশাপাশি সহিংসতার দায় নিয়ে পাল্টাপাল্টিতে ২০১৩-১৪-১৫ সালের নমুনা। এর পরিণতি এখন পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। সেই সঙ্গে তলের খবর উঠে আসছে উপরে। এক রাতে সব নেতাকে মুক্তি দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার খবর ফাঁস করে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন সিনিয়র মন্ত্রী ও দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বিএনপিকে নির্বাচনে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারা এলে রাতারাতি ২০ হাজার নেতাকর্মীকে ছেড়ে দেওয়া হতো। তার হাটে হাঁড়ি ভাঙার মতো এমন তথ্যকে স্বীকার না করে একে কৃষিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত মতামত বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের পরও কৃষিমন্ত্রী তার বক্তব্যে অটল থেকে বলেন, ‘আমি যা বলেছি, কোনো ভুল বলিনি। বক্তব্য একদম ঠিক আছে।’ পরক্ষণে একে ব্যক্তিগত স্বীকার করে বলেছেন, ‘তার বক্তব্যে সামান্যতম ভুল নেই। খুনের আসামিও জামিন পায়। নির্বাচনের স্বার্থে আইনের মধ্যে থেকেই বিএনপি নেতাদের জেল থেকে বের করে আনা সম্ভব।’ এ নিয়ে দলে ও সরকারে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মাঝে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যোগ করেন, ‘সবাই অনুভব করছে বিএনপি নির্বাচনে এলে ভালো হতো।’ বিএনপি না আসায় নির্বাচনটির আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা নির্বাচনের পর দেখা যাবে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ ধরনের কথা বাতকে বাত বলেছেন, না পরিস্থিতি বুঝে বলেছেন, এ নিয়েও কথা চালাচালি হচ্ছে। এর মাঝেই আবার আগুনসহ নানা অ্যাকশন। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুনের ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজনের মৃত্যু। হরতালের দিন ভোর পাঁচটার দিকে চলন্ত ট্রেনটিতে আগুনের ঘটনা। পুলিশ বলছে, ট্রেনে আগুনের ঘটনা নাশকতা। বিএনপির দিক থেকে বলা হচ্ছে, সরকারই আগের মতো এসব ঘটিয়ে তাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। বিএনপির এদিনের হরতালের চিত্রটি ছিল আগের কয়েকটি হরতাল-অবরোধের চেয়ে ভিন্ন। এদিনের ট্রেনের আগুনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে তারা। তারা কোথা থেকে শক্তি সঞ্চয় করেছে কি না বা নতুন আশীর্বাদের সিদ্ধিলাভ করেছে কি না, তা ওয়াচে রাখছে সরকার।
এদিকে পুলিশের পর আগুনের ঘটনাকে নাশকতা বলেছেন রেলমন্ত্রীও। বিএনপিকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, এ ধরনের নাশকতার ঝুঁকি রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেনেও।
দৃশ্যত বিএনপির বিশেষ আশীর্বাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ নিয়ে নিশ্চুপ। দম ধরে তাদের শ্বাস নেওয়ার বিপরীতে প্রশ্বাসে নেমেছে রাশিয়া। যেখানে একসময় নিয়মিত পিটার হাস থেকেছেন খবরের শিরোনামে, সেখানে এখন একদম শূন্যতা। এই শূন্যতায় বাংলাদেশ নিয়ে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের চরম প্রতিপক্ষ রাশিয়া। বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততায় বাংলাদেশে আরব বসন্তের ঝুঁকি রয়েছে। এর আগে আগামী কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে চাপ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসনের টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশের প্রধান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার দায়ে অনেক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। অকাট্য প্রমাণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এসব অভিযোগ আনবে বলে মন্তব্য করেছেন জাখারোভা। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সড়কে যান চলাচল বন্ধ, বাস পোড়ানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি। আর এসব ঘটনার সঙ্গে ঢাকায় পশ্চিমা একটি কূটনৈতিক মিশনের সন্দেহজনক কার্যকলাপের সংযোগ দেখছেন তিনি। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়ার বিবৃতির জবাবে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়াÑআরব বসন্ত ঘটার কোনো উপাদান নেই, গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষণও নেই। একই কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনেরও।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে রাশিয়ান বিবৃতিটি একটু বেশি হয়ে গেল কি না এ প্রশ্ন ঘুরছে ঝানু কূটনীতিকদের মধ্যেও। তাদের কারও কারও মতে, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে রাশিয়া একটু বেশি বকছে। তাও যখন যুক্তরাষ্ট্র কদিন ধরে অনেকটা দম নেওয়ার মতো অবস্থায়। রাশিয়া তার প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে বাংলাদেশকে আরব বসন্তের ভয় দেখায়, নাকি পিঠ মোছা দিয়ে আরও কাছে নিতে চায়-এ প্রশ্নও ঘুরছে। যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি এবং চীন-ভারতের দরদি রসায়নে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার এমনিতেই আরও রাশিয়া-ঘেঁষা হয়ে পড়েছে। এর পরও রাশিয়া কেন বাংলাদেশে টোকার মাত্রা বাড়িয়েছেÑকূটনৈতিক মহলে এ জিজ্ঞাসার মাঝে আশপাশে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নানা ঘটনা।
ভুটানের মানচিত্রকে মুরগির মাথার মতো এবং বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি অংশকে মুরগির দেহের মতো ভাবলে ১২ মাইলের এই সরু এলাকাকে মুরগির গলার মতো লম্বা বলে মনে হবে এবং এ কারণেই একে চিকেন নেক (মুরগির গলা) বলা হয়ে থাকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি জেলার ১২ মাইল লম্বা ভূমি বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্তকে বিভক্ত করেছে। এটিই একমাত্র স্থলপথ, যা ভারতের উত্তর-পূর্বের সেভেন সিস্টার বেষ্টিত। আবার ডোকলাম চীন ও ভুটানের মধ্যে বিরোধপূর্ণ একটি এলাকা, যা ভারতের সঙ্গে ত্রি-জংশনের কাছে এবং চিকেন নেকে সংযুক্ত। চীন ও ভুটানের মতো ভারত ডোকলাম দাবি করে না কিন্তু ভুটানের দাবিকে সমর্থন করে। ডোকলাম ঘেঁষে চীন তার সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে। রাস্তাঘাটসহ সব অবকাঠামো তৈরি করে আধুনিক সেনাবাহিনীর জন্য দ্রুত চলাচলের ব্যবস্থা করেছে।
এ নিয়ে ভারত শত প্রতিবাদ করলেও চীন তা পাত্তা দিচ্ছে না। যেকোনো ধরনের যুদ্ধাবস্থায় চীন চিকেন নেক দখল করলে ভারতের পূর্ব দিগন্ত‌ চিরদিনের জন্য মেঘে ঢাকা পড়বে। চিকেন নেক নিয়ে ভারত-চীনের সম্ভাবনা-শঙ্কার মাঝে ৪৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কালাদান প্রকল্প কলকাতার সমুদ্রবন্দরকে মিয়ানমারের সিটওয়ে সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে যাচ্ছে। পালেতোয়া এবং কালাদান নদীর ধারে জোরিনপুই-পালেতোয়া প্রকল্প নিয়ে ঝামেলা পাকছে চীন-ভারত-মিয়ানমার, নেপাল-ভুটানসহ গোটা অঞ্চলে। চীন বিরোধ, রোহিঙ্গা বিরোধ এবং আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কারণে প্রকল্প পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন নতুন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই এলাকায় জড়ো হচ্ছে, যা চীন-ভারতের জন্য বেশি ঝুঁকির। এ নিয়ে উদ্বেগ ও বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের দিকে বিশেষ নজর ভারতের। শত সমালোচনা সহ্য করেও বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার ছাড়া উপায় নেই দেশটির। আবার চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রেরও ভারতকে ছাড়া গতি নেই। এর পরও যার যার স্বার্থ তার তার কাছে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078