ত্যাগ ও ভোগের সম্মিলনে দূরীভূত ক্লেশ 

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৭ , চলতি সংখ্যা
সময়ের সঙ্গে উদ্ভিদের যে সম্পর্ক, প্রাণীর বোধ হয় তা থেকে অনেকটা ভিন্ন। আমেরিকায় প্রাকৃতিক বাস্তবতায় কমবেশি ছয় মাস শীতকাল ও বাকি ছয় মাস গ্রীষ্মকাল। সে হিসাবে ২১ মার্চ থেকে বসন্তকালের প্রভাব প্রাকৃতিক নিয়মে শুরু হলেও তাপমাত্রা কমবেশি ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি অবস্থান করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে তীব্র শীতের সময়ের মতোই। সেখানে শীত নিবারণের জন্য অনেক বেশি শীতবস্ত্র ব্যবহার করা হলেও এখানে হালকা কম্বল ব্যবহার করলেই চলে। যদিও দিনের কোনো কোনো সময় তাপমাত্রা কিছু সময়ের জন্য সামান্য বৃদ্ধি পায়। তবে তা শীতবস্ত্র পুরোপুরি পরিহার করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মতো ফ্যান বা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের মতো তত বেশি তাপ নয়, বরং অল্প আগে এ দেশে আসা লোকজনের জন্য শীতবস্ত্র এ সময়ও ব্যবহার করতে হয়। কাঠবিড়ালিসহ অন্যান্য কিছু প্রাণীও গ্রীষ্মকালের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে আবাস ছেড়ে বাইরে ঘোরাফেরার মতো আবহাওয়া অনুভব না করলেও ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায় উদ্ভিদের ক্ষেত্রে। বাস্তবে ঠান্ডা আবহাওয়া সত্ত্বেও প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী ঘোষিত বসন্তের শুরু হতেই উদ্ভিদ তা স্বীকার করে পত্রপল্লবে ও ফুলের সমারোহে নিজেদের ভরিয়ে তোলে। উদ্ভিদের এ অনুভূতি সত্যিই বিস্ময়কর। যদিও আমাদের দৃষ্টিতে প্রাণীমাত্রই বুদ্ধিমান এবং উদ্ভিদ অনেকটা জড় পদার্থের মতো। যদিও উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে, যা ইতিমধ্যে প্রমাণিত। কিন্তু তাই বলে তাদের অনুভূতি প্রাণীর চেয়েও প্রখরÑএখানকার পরিবেশে তা না দেখলে বিশ্বাস করার মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা থেকে যেত বৈকি! আমার টিউলিপ কবিতাটি এর বাস্তব উদাহরণ।

জগতে কোনো সম্পর্কই শর্তহীন নয়। সম্পর্কের সূচনা অনেক সময় আবেগ-অনুভূতির মাধ্যমে হলেও মূলত দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। একপক্ষীয় আবেগ বা আকর্ষণ স্থায়িত্ব লাভ করে না। মোহগ্রস্ত আকর্ষণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নৈরাশ্যজনক হলে মোহ ভঙ্গ হতে খুব বেশি সময় লাগে না। আত্মার সঙ্গে আত্মার সম্পর্ককে আত্মীয়তা বিবেচনা করা হলেও এ সম্পর্ক যে কেবল মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। বরং জীবজন্তু ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বহু হিংস্র পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন প্রাণীর মধ্যেও অবিশ্বাস্য রকম সুসম্পর্ক বা আত্মিক সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। প্রাণীর সঙ্গে উদ্ভিদের যে সম্পর্ক, তা-ও দেওয়া-নেওয়ার ভিত্তিক বৈকি! প্রাণী মূলত তার খাদ্যচাহিদার বেশির ভাগই পেয়ে থাকে উদ্ভিদ থেকে আর তাই উদ্ভিদের প্রতি যত্ন শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও উদ্ভিদের প্রতি মমতার বশে নয়, বরং প্রাণীর চাহিদা পূরণ যাতে সঠিকভাবে হয় উদ্ভিদের নিকট থেকে যাতে অধিক পরিমাণ ফলন পাওয়া যায়, সেই উদ্দেশ্যেই অধিক যত্ন নেওয়া। আর উদ্ভিদও প্রাণীদের অধিক যত্নের প্রতিদান দিয়ে থাকে বাড়তি ফলন প্রদানের মাধ্যমে। সুতরাং বলাই বাহুল্য, ত্যাগ ও ভোগের সম্পর্ক সবক্ষেত্রেই বিরাজমান।

মহাবিশ্বের বিবেচনায় পৃথিবী অবিভক্ত একটি একক সত্তা, যাকে আমরা গ্রহ নামে বিবেচনা করে থাকি। এ যাবৎ মহাবিশ্বে খোঁজ পাওয়া জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ অন্য কোনো গ্রহ-উপগ্রহের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। সে বিবেচনায় আপাতদৃষ্টিতে পৃথিবীই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও কোলাহলপূর্ণ গ্রহ হিসেবে বিবেচনার দাবি রাখে। পৃথিবী বৈচিত্র্যময় হওয়ার জন্য পৃথিবীতে অধিবাসী হিসেবে প্রাণী ও উদ্ভিদের যেমন বহু জাতি-প্রজাতি রয়েছে, তেমনি শৃঙ্খলার স্বার্থে এক প্রজাতিকে অন্য প্রজাতির অধীন করা হয়েছে। কোনো কোনো প্রজাতি আকারে ছোট হলেও তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ ও আত্মরক্ষার কৌশল এমনভাবে প্রদান করা হয়েছে যে তারা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরিপূর্ণতা অনুভব করে এবং সে অনুযায়ী তাদের জীবন নির্বাহ করে থাকে। এত সব উদ্ভিদ-প্রাণীর মধ্যে একমাত্র মানুষই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রাণী, যার দেহাবয়ব ছাড়াও মস্তিষ্কের রয়েছে অসীম সৃজনী শক্তি ও কর্মক্ষমতা, যার ফলে পৃথিবীর সবকিছুকে বশে রাখা তার পক্ষে খুব সহজ হয়েছে। মানুষের এই অসীম ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও নিজস্ব তৈরি কিছু নিয়মকানুন রয়েছে, যার প্রথমটি স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত এবং ঐশী বাণী হিসেবে স্বীকৃত। যাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঐশীবাণী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। পক্ষান্তরে মনুষ্য প্রবর্তিত নিয়মকানুন, যা ন্যায়বোধ থেকে উৎসারিত এবং সমষ্টিগত মানুষ দ্বারা স্বীকৃত ও বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিপালনযোগ্য। তবে পরিবর্তিত সময় ও চাহিদার প্রয়োজনে মনুষ্যসৃষ্ট নিয়মকানুন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন হয়।

জন্মগতভাবে মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে জন্ম নিলেও অজ্ঞাত কারণে মানুষ একসময় অন্যান্য জীবের মতোই ছন্নছাড়া জীব হিসেবে পৃথিবীতে বসবাস শুরু করে। সে অবস্থা থেকে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের প্রাক্কালে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সামাজিক চুক্তির অধীনে যে নিয়ম প্রবর্তন করে, তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষুদ্র সমাজব্যবস্থা থেকে আধুনিক রাষ্ট্রে উন্নীত হওয়ার ফলে নিয়মকানুনেরও উন্নয়ন ঘটে। বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন ও কল্যাণমূলক বিধিবিধানের ব্যবস্থা তারই ফল। সমাজ, রাষ্ট্র ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যেও যে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বোধ, তার অন্যতম কারণ সামগ্রিকভাবে পারস্পরিক কল্যাণ কামনা ও তদ্রƒপ আইনকানুনের প্রবর্তন। যদিও কখনো কখনো বিভিন্ন পর্যায়ে এর ব্যতিক্রমও লক্ষ করা যায়। তবে ইতিহাসের মূল্যায়নে স্খলিত ব্যক্তি বা জাতিগোষ্ঠী আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়, যার অগণিত প্রমাণ যুগে যুগে স্পষ্ট। তা সত্ত্বেও লোভ ও হিংসার বশবর্তী হয়ে কোথাও না কোথাও মানুষ তা করেই যাচ্ছে। আর তা প্রতিরোধের জন্য মানুষের মধ্য থেকেই বিবেকবুদ্ধিসম্পন্নরা নিজের মেধা, শ্রম ও অর্থের বিনিময়ে তা প্রতিরোধ করে মানবসভ্যতার বিকাশ ও কল্যাণ সাধনে অবদান রেখে চলছে, যা শিরোনামের সঙ্গে অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক। কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078