একদিকে ভোগের বিলাস অন্যদিকে বঞ্চনার বিলাপ

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৫৬ , চলতি সংখ্যা
একসময় একটা স্লোগানের খুব প্রচলন ছিল : ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’। স্লোগানটা এখন আর তেমন শোনা যায় না। তাই বলে এখন আর মানুষ কেউ না খেয়ে থাকে নাÑসেটা কিন্তু নয়! এখনো মানুষ না খেয়ে থাকে। উচ্ছিষ্ট খেয়ে থাকে। এটা বাস্তবতা। চরম বাস্তবতা। সমাজে কেউ খেয়ে থাকে, কেউ অভুক্ত থাকে, উপোস থাকে। সমাজটা এমনই যে, সমাজে কেউ অঢেল বিত্তের মালিক। তারা কেবল খায় না তা নয়, তাদের মধ্যে খাবার নিয়ে রীতিমতো বিলাসিতা হয়, ভোগের বিলাসিতা! আবার কেউ খাবার নিয়ে বিলাসিতা স্বপ্নেও ভাবতেও পারে না। তারা পেট ভরানোর মতো যেনতেন খাবারই জোটাতে পারে না। বিলাসিতা তাদের স্বপ্নেও ধরা দেয় না।

যেটুকু-বা তাদের জীবনে একটু মধ্যবিত্তের স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তাও তাদের ছেড়ে চলে গেছে। অথচ এই কোভিড এবং যুদ্ধের কারণে নাকি বিত্তবানদের বিত্ত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিত্ত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিত্তের বিলাসিতাও তাদের বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই তো ঠিকানা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী সংবাদ প্রকাশ করে অন্ধকারে আলো ফেলেছে। সমাজে কারও খাবার জুটছে না। কেউ দেখাচ্ছে বিত্তের বিলাসিতা। কোভিড এবং যুদ্ধের আগে মধ্যবিত্তরা যা আয়-উপার্জন করতেন, তা দিয়ে সংসারের ব্যয় বেশ ভালোভাবেই নির্বাহ করতে পারতেন। এখন আর তারা ওই উপার্জন দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন না। এখন তাদের অবস্থা ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’। বর্তমান অবস্থায় তারা প্রয়োজনের অনেক ছাড় দিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।

প্রয়োজনীয় অনেক ছাঁটকাট করেও অনেকে এই সময়ে তরী পাড়ে ভেড়াতে পারছেন না। রাজধানী ঢাকার সবুজবাগের দক্ষিণ গোরানে বায়িং হাউসের একজন কর্মচারী স্ত্রী এবং দুই পুত্র নিয়ে ভাড়া বাসায় বাস করতেন। যে বেতন পেতেন, তা দিয়ে তার সংসার ভালোভাবেই চলে যেত। কিন্তু গত ছয় মাস আর তিনি কিছুতেই পেরে উঠছেন না! তিনি একসময় নিজের মোটরসাইকেলে করে অফিসে যাতায়াত করতেন। এখন সেই মোটরসাইকেলে শেয়ার রাইডিং করে কিছু বাড়তি উপার্জন করে সংসার চালাতে চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে বিত্তবানদের বিত্তের চাকচিক্য বিদেশের বড় বড় শপিংমলে তো দেখা যায়ই, কেননা বিদেশের বড় বড় শপিংমলে শপিং না করলে বিত্তবানদের বিত্তের প্রদর্শনী হয় না। এ ছাড়া দেশেও বড় বড় শপিংমল, পাঁচতারকা হোটেলে বিত্তবানদের বিত্তের প্রদর্শনী দেখা যায় অহরহ। বিত্তের প্রদর্শনী নানা পর্যায়ে হয়। ব্যক্তিগত, সরকারি এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। নানা পন্থায় কোনো ব্যক্তি বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হয়ে বসেন, যা সেই ব্যক্তি কল্পনা করতে পারতেন না এবং সমাজে যদি তার পরিচয়-সংকট থাকে, তখন তিনি প্রতিবেশী সমাজে নিজের বিত্তের প্রদর্শনীতে এমন উন্মত্ত হয়ে ওঠেন যে, সমাজের ভারসাম্যই নষ্ট হয়। মানুষের কল্যাণে সেই বিত্ত তারা কাজে লাগান না, নিজের ভোগ-বিলাস এবং সারা জীবনের অবদমিত আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে মেতে ওঠেন। সমাজের ভারসাম্যের দিকে আর পরোয়া করেন না। প্রতিবেশীর প্রতি যে দায়বদ্ধতা সামাজিক জীব হিসেবে, সে দায়বদ্ধতার কথা আর মনে রাখতে পারেন না।

সরকারি পর্যায়েও বিত্তের প্রদর্শনী লক্ষ করা যায়। যখন দেখা যায়, মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে মনোযোগ না দিয়ে এমন সব খরচে মেতে ওঠেন, যা সাধারণ মানুষের খুব বড় কিছু উপকারে আসে না। উপকারভোগী হয়ে ওঠেন সমাজের এমন এক শ্রেণি, যাদের বিত্তবৃদ্ধির উপায় হিসেবে কাজ করে। কোনো কোনো সরকার দেশের নাগরিকদের উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে বিত্তবানদের আরও বিত্ত অর্জনের পথ করে দেয়। আবার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেখা যায়, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে অভুক্ত রেখে, অন্য রাষ্ট্রকে দমিয়ে রেখে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে মানুষ মারার অস্ত্র নির্মাণ করে ভয়ংকর সব অস্ত্র-মারণাস্ত্র দিয়ে নিজেদের অস্ত্রভান্ডার স্ফীত করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে যে, বিশ্বশান্তি টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে যায়।

আসলে মুক্তবাজার অর্থনীতির এই যুগে সব সম্পর্কই মুনাফার সূতোয় বাঁধা। এই সম্পর্ক কখনোই মানবিক হয় না। তাই তো দেশে দেশে সমরাস্ত্রের প্রদর্শনী। যুদ্ধের বিভীষিকা। চারদিকে দুর্ভিক্ষ, হানাহানি। না খেয়ে, অপুষ্টিতে ভুগে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু। এর মধ্যেও একটি গোষ্ঠী মুনাফার স্রোতপ্রবাহে ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তাদের বিত্তবিলাসে গরিবের বঞ্চনার বিলাপ চাপা পড়ে যায়।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078