আমাকে ছাড়া সব চলে

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারী ২০২৪, ১১:৩৬ , অনলাইন ভার্সন
ওমর ফারুক : আমাকে ছাড়া সব চলে! সূর্য হারিয়ে অন্ধকার আসে। আঁধার অনুপস্থিত হয়ে পুনরায় আলো আসে। রাস্তায় গাড়িও ঠিকঠাক চলে। আমি যে রিকশায় যাইতাম, তারাও দেখি সামনের রাস্তা দিয়ে ক্রিং ক্রিং করে যায়। ঘড়িও চলমান থাকে। মুহূর্তের পর মুহূর্ত সময় বলে দিচ্ছে। আকাশে পাখি ওড়ে। পক্ষীর সুরে কথা বলছে। সাগরের ঢেউ আসে। মাঝি নৌকায় পাল তুলছে। মাছ ধরতে ব্যস্ত রয়। পাহাড় থেকে পানি সাগরে আসে নিজের পথে। সব গতিশীল। আমি স্থিতিশীল নিজের রুমে। সব চলে আমাকে ছাড়া!
এলাকার ষাটোর্ধ্ব জামিলা বুবু পাহাড়ে যায় লতাপাতা, লাকড়ি আনতে। তারপর এসে বিক্রি করে সংসারের জন্য। আহমেদ চাচা গাছ কাটতে দূরবনে গেছে। যেখানে হিংস্র প্রাণীর ভয়। বাবুদা ফসলের মাঠে কাজ করছে। লাল শাক ফেলবে। নজির কাকা খেজুরগাছে কাজ করছেন। রাখাল গরু নিয়ে সবুজ তৃণভূমিতে যায়। বেসুরা মিশ্রিত ভাষায় গান গায়। বিলের মাঝে খেলা করে। ঝিরির শীতল পানিতে ঝাঁপ মারে। আবার রোদে এসে শুকায়। গাছের মগডালে গিয়ে আম, জাম, পেয়ারা ও পেঁপে চুরি করে। গভীর বনের বনকাঁঠাল গাছে কোন কাঁঠাল পাকছে দেখে। ঠিক যেভাবে ডাক্তারে রোগী দেখে। সব চলে আমাকে ছাড়া!
স্কুলে যাওয়ার সময় হয়। স্কুলে ক্লাসও হয়। একের পর এক ঘণ্টা বাজে। স্যার পড়ায়, গল্প বলে, অঙ্ক করায়, ইংরেজি শেখায় এবং সূত্র ঘোরায়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা হচ্ছে। মজামাস্তি হচ্ছে। হচ্ছে গলাভাঙা স্লোগান। হচ্ছে শখের রাজনীতি। হচ্ছে থিয়েটারে বৈচিত্র্য নাটক। ইডিপাসে অভিনয় হয়। ধরছে গান সুরে সুরে। হচ্ছে বক্তৃতা ঘুচিয়ে মনে। হচ্ছে মারামারি বিরোধী ভেবে। হচ্ছে প্রেম-ভালোবাসা একই হৃদয়ে। হচ্ছে মানবের জন্য (সাহায্য) মানব এগিয়ে আসে। উড়ছে টঙের চিপায় সিগারেটের ধোঁয়া। হচ্ছে পুলিশ প্লাজা পঞ্চম ফ্লোরে রেস্টুরেন্টে খাওয়া। সব চলে আমাকে ছাড়া।
প্রতি স্টেশনে যোগাযোগ বহমান। কি বাস, লম্বা ট্রেন ওই যে ভাসমান শিপ অথবা উড়ন্ত প্লেন সব চলে। মইজ্জ্যার ট্যাগে ব্রিজ ব্রিজ করে গলা ফাটাচ্ছে হেলপার। ঘাটে নৌকা কিংবা ফেরি ভিড়ছে মানুষের আশায়। ওই তো মালবাহী জাহাজও চলে কর্ণফুলীতে। সন্ধ্যায় বিচিত্র আলো জ্বলে শাহ আমানত সেতুতে। র‌্যাডিসনে পার্টিও চলে। আরও চলে বহদ্দারহাট জ্যামে ফুচকা, চটপটি। সিগারেটের ধোঁয়াও আকাশে ওড়াচ্ছে। দূর করতে দিনের ক্লান্তি! কই, আমি তো চলছি না। আমিই রুমে অচল। সব চলমান আমাকে ছাড়া!
চকবাজারে দেখেন! দুনিয়া একদিকে, চকবাজার অন্যদিকে। এখানে ভাইয়া-আপুদের জীবন্ত মধুর লেকচার। বিখ্যাত স্যারদের মুখে কুখ্যাত অপরাধীদের ইতিহাস। বিভিন্ন টেকনিক টেকটিক থিওরি রিয়েলিটি। রিকশায় ছুটে চলা কাপল। দুজন দুদিকে দৌড়ে বাই বলে কোচিংয়ে ঢোকা। কত রংবেরং স্বপ্ন নিয়ে ছোটাছুটি যোদ্ধা তারা। আহ্! তারা জানে, আমিও একসময় ছিলাম এমন! জানে? আমার এক বন্ধু যে সুইসাইড করছে। যার একসময় চকবাজার মানে স্বর্গ ছিল। চকবাজারকে নিজের নীড় ভাবত। চকবাজারে না গেলে গলাকাটা মোরগের মতো ছটফট করত। জানে নবীন তরুণ নয়া নতুন নব্য সেনারা? সব চলে আমাকে ছাড়া।
আমার বন্ধুরা জমায়েত হচ্ছে আড্ডার মহলে। ধুমছে আড্ডা মারছে নিরালায়। চাকরিতে বেরোচ্ছে সকালে ব্যাগ হাতে। সন্ধ্যায় ফিরছে নিজ নীড়ে। খেলাপ্রেমী বন্ধু জয় খেলায় মগ্ন। যে প্রেমে বিভোর সাইফুল মিট করছে সমুদ্রসৈকত। ব্লকে বসে কী অনর্গল মিথ্যা বলছে। সামনে সাগরের ঢেউ আসছে। ভাসছে কত কিছু। কারও স্বপ্ন, কারও মালামাল, কারও ভালোবাসা, কারও রাজনীতির পদবি, কারও পদোন্নতি, কারও শত কিছুর নেশা আশা বাসা ভাষা রং-তামাশা ইত্যাদি। ওও! আমার সুদর্শন বন্ধু আরিফ চুল কাটছে সেলুনে। মিনহাজ জামা কিনছে মার্কেটে। সব তো চলে আমাকে ছাড়া!
লাল ফিতার ফাইল হাতে সকল অফিসে। সমস্ত কাজ চলন্ত নিজ গন্তব্যে। পানির নিচে ডুবন্ত মাছ ঘুরছে। লাল কাঁকড়া শিকার করছে। হাঙর সাগরে শব্দ করে দানবের গতিতে চলছে। পুলিশ আসামি ধরছে। লাল রশির পুরাতন ফাইলে মক্কেল খুঁজছে। অজ্ঞাত মামলা হচ্ছে। সেদিনও ফয়সাল গ্রেপ্তার হলো। হরেক রকমের জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে বাজারে। দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতা কথা কাটাকাটি চলছে। ছোট্ট বাচ্চা বৃষ্টিতে বায়ুহীন ফুটবলে লাথি দিচ্ছে। হুহু করে হাসছে। বৃষ্টি উপভোগ করছে। কী আশ্চর্য। সব চলছে আমাকে ছাড়া!
গলিতে কিশোরেরা কাপড়চোপড় মুড়িয়ে ক্রিকেট বল বানিয়েছে। বড় গাছের একাংশে স্টাম্প হিসেবে ধরে হাতে তৈরিকৃত ব্যাট দিয়ে ক্রিকেট খেলছে। ধপাস করে মেরে জেরিন আন্টির জানালা ভেঙে পালিয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে অন্য পাড়ায় চলে গেছে। সামনে আমগাছ। ঢিল ছুড়ে মারছে গাছে। আম পড়ছে। হাসতে হাসতে তুলে নিচ্ছে আম। বড় ঢিল মারতেই উড়ে গিয়ে পড়ল নাদিয়া খালার টিনের চালে। যেখানে সুমাইয়া, ইশরাত ও শ্রাবণী নামের উপযুক্ত তিনজন মেয়ে ওনার। তারপর বুঝতে পারছেন! আবারও দৌড় দিল রফিক, শফিক, সাকিব ও রাকিব কিশোরের দল। কই? তারাও চলে আমাকে ছাড়া!
চলছে স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বমঞ্চে। রাশিয়া আক্রমণ করছে ইউক্রেনে। আমেরিকা হুমকি দিচ্ছে ইরানকে। হিমালয়ের বরফ গলছে। নদীর পানি চলছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচও চলমান স্টেডিয়ামে। হলিউড বলিউড ডালিউড কলিউড স্যান্ডলউড পলিউড নলিউড সব ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমা প্রকাশ পাচ্ছে। হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শ্রোতা। ইন্টারনেটে সব হযবরল কাজ চলছে। উপরে স্যাটেলাইট ঘুরছে। তথ্য সংগ্রহ করছে। জগতের সকল পর্যটন এলাকা ভিড় আর ভিড়। মাকড়সা জাল বুনছে। জেলে জাল ফেলছে। সুন্দরী রমণী জাল বিলাচ্ছেন প্রেমে ফেলতে। সব চলছে আমাকে ছাড়া!
জাঁয়েরতলার মস্ত বড় হাতি কলাগাছ টানছে। ঝুমুরগোনায় শজারু কাঁটা ফেলে দৌড়াচ্ছে। প্রশান্তের তলদেশ নীল তিমি কাঁপাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকাতে পেঙ্গুইন ছুটছে। আমাজনে বিশাল সাপ ফুঁসছে। মঙ্গলে গবেষণা চলছে। নীলনদ টাইগ্রিস বুড়িগঙ্গায় পানি শাঁ শাঁ করছে। পৃথিবী ঘুরছে। সূর্য আলো দিচ্ছে। সবার ভিড়ে কোনো এক নীড়ে কেউ রশি ভিড়ছে তিন পায়ের ফ্যানে। নিজেকে মুক্তি দেবে বলে। আশ্চর্য! কী আজব! সবই ঠিকঠাক নিজের কাজ নিজে করে যাচ্ছে। সমস্ত কিছু বহমান, চলমান, দ্রুতময়, গতিময়, শ্রুতিময়, উড়ন্ত ছুটন্ত দৌড়ান্ত ঝুলন্ত ফুটন্ত! তবে আমিই কি একমাত্র ডুবন্ত? আমাকে ছাড়া এক ইঞ্চি পৃথিবীর ক্ষতি হচ্ছে না। সব তো চলে আমি ছাড়া!
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078