গত বছরে ব্যবসা ভালো গেছে মাত্র ৬ শতাংশের : সিপিডি

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারী ২০২৪, ২০:৫৭ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশে ব্যবসার আকার ভেদে প্রতিবন্ধকতার ধরনে পার্থক্য লক্ষণীয়। বড় ব্যবসায়ীরা যেখানে মুদ্রা বাজার, আমদানি, রফতানির জটিলতায় বেশি সমস্যায় পড়েন। সেখানে, লাইসেন্স, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার মতো ছোট বিষয়েই নাজেহাল হতে হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন আগের অর্থ বছরের তুলনায় উল্লেখ্যযোগ্য হারে উৎপাদন বেড়েছে তাদের। আর দুর্নীতি সবার জন্যই এক বড় প্রতিবন্ধকতার নাম।

নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশে ব্যবসা করা কতটা চ্যালেঞ্জের? এর একটা ধারণা পাওয়া গেল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি’র একটি গবেষণায়।

গবেষণায় দেখা যায়, ছোট ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোকে সরকারি প্রশাসনের অদক্ষতার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা একে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অর্থায়নের ক্ষেত্রেও স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক খাত বরাবরই অনুদার। 

মূলত বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ কেমন, তা জানতে সিপিডি ও ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের যৌথ উদ্যোগ একটি উদ্যোক্তা জরিপ করা হয়।

ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারের ৭১টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৩ সময়কালের ওপরে গবেষণাটি করা হয়েছে।

গত অর্থবছরে কেমন ছিল ব্যবসায় পরিস্থিতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ব্যবসায় পরিবেশ মিশ্র ছিল। কোনো ক্ষেত্রে ইতিবাচক, কোনো ক্ষেত্রে স্থবির কিংবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই মন্তব্য করেন।

জরিপে ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন ব্যবসা ভালো চলছে না তাদের। উৎপাদন ও বিপণন কমেছে। ১৩ শতাংশের ক্ষেত্রে আগের বছরের সাথে তুলনা করলে, অপরিবর্তিত ছিল ব্যবসা। অর্থাৎ, সামগ্রিক হিসাবে ৪০ শতাংশের বেশিই ভালো করেনি।

সিপিডি বলেছে, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশের উৎপাদন কমেছে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে। মাঝারি ও বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে ২৫ ও ২২ শতাংশ। ভৌত অবকাঠামোর উন্নতি হলেও ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়ে অসন্তোষ ফুটে ওঠে জরিপে।

মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন আগের অর্থ বছরের তুলনায় উল্লেখ্যযোগ্য হারে উৎপাদন বেড়েছে তাদের। বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ব্যবসায়ী দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো সহায়ক পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করবেন বলে মত সিপিডির গবেষণা পরিচালকের।

প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এশিয়া অঞ্চলে প্রতিযোগী দেশ ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ভিয়েতনামের চেয়ে উদ্ভাবনী, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও সহনশীল ব্যবসায়িক পরিবেশের বিচারে পিছিয়ে বাংলাদেশ। অবশ্য, টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ বিবেচনায় ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডের চেয়ে এগিয়েছে দেশটি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থাৎ ভারত নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর সর্বনিম্ন।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,‘প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসার ক্ষেত্রে আমাদের পারফরম্যান্স যে যথেষ্ট ভালো, এটি বলা যাবে না। দক্ষিণ এশিয়ার বিচারে এটি আমরা দেখতে পাচ্ছি।

‘নেপালের কথা খুব বেশি আলোচনায় নিই না। কিন্তু, অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের জায়গায়, জেন্ডার ইকুয়ালিটি, সোশ্যাল ইনক্লুশন, স্কুল লেভেল এডুকেশন ফর দ্য ডিজেবল-ভালনারেবল পিপল এসব ক্ষেত্রে তাদের কাজ প্রশংসনীয়। সেটা তাদের এগিয়ে দিচ্ছে।’

আমাদের ভিশন ২০৪১ বা ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী বাস্তবায়ন চোখে পড়ছে না। যে কারণে, পিছিয়ে যাচ্ছি’ বলছিলেন মোয়াজ্জেম।

ব্যবসায় পরিবেশের প্রতিবন্ধকতা কোনগুলো বিগত বছরগুলোর মতো এবারো দুর্নীতিকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। দুই তৃতীয়াংশই দুর্নীতিকে এক নম্বর সমস্যা মনে করেন।

প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতাকে রেখেছেন এর পরপরই। ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এর কথা বলেছেন। বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি অনেকের কপালেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নতুন করে। তৃতীয় বাধাদানকারী ফ্যাক্টর হিসেবে উঠে এসেছে এটি।

উপস্থাপনা করার সময় সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘পাঁচ বছর আগেও এই ইন্ডিকেটরটি সবচেয়ে পেছনে ছিল। অথচ, এখন তিন নম্বর গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে ব্যবসায়ীদের সামনে এসেছে। এগুলো তাদের নতুন ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

তবে, অবকাঠামো আগে কখনো কখনো এক নম্বর সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এবার সেখানে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সমস্যার তালিকায় চার নম্বরে নেমেছে অবকাঠামো।

এরপরে রয়েছে মূল্যস্ফীতি। ষষ্ঠ অবস্থানে অর্থায়নের সহজলভ্যতা।

আগের তুলনায় যেসব প্রতিবন্ধকতা হ্রাস পেয়েছে বেষণায় কোনো কোনো প্রতিবন্ধকতা ক্রমহ্রাসমান বলে প্রতীয়মান হয়েছে বলে জানাচ্ছেন গোলাম মোয়াজ্জেম।

অবকাঠামো ছাড়াও নীতিগত পর্যায়ে অস্থিরতা, অর্থায়ন, কর আইনের জটিলতা, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি ইত্যাদি সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলছেন তিনি। এই জায়গাগুলোতে সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের প্রভাব পড়েছে বলে ধারণা তার।

মোয়াজ্জেম আরো বলেন, গত ৬ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতির জায়গায় বড় পরিবর্তন নেই। তবে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক ভিশনকে ব্যবসায়ীরা অ্যাপ্রিশিয়েট করে থাকেন।

‘মানুষের মনের মধ্যে সরকার ২০৪১ সালের উন্নত দেশের স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু আর কোথাও উন্নতি নেই’।

আগামী দুই বছরের ঝুঁকি ব্যবসায়ীরা আগামী দুই বছরের জন্য ঝুঁকির তালিকায় সবার ওপরে রেখেছেন জ্বালানি সঙ্কটকে। ৬৬ শতাংশই এটিকে প্রধান ঝুঁকি মনে করছেন।

মূল্যস্ফীতির কথা বলেছেন ৫০ শতাংশ। তালিকায় এর অবস্থান দ্বিতীয়। এরপরই, অর্থনৈতিক মন্দা বা সংকোচনের শঙ্কাও রয়েছে অনেকের মধ্যে।

সম্পদ ও আয় বৈষম্যের কী প্রভাব ব্যবসার ওপর পড়বে তা ভাবাচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে যথাক্রমে বেকারত্ব ও মাথাপিছু ঋণকে আগামীর ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সরকারের জন্য সুপারিশ ব্যবসার পরিবেশকে আরো উন্নত করতে সরকারের জন্য ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয় সিপিডি'র পক্ষ থেকে

১. সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ১০০ দিন, এক বছর, পাঁচ বছর এমন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অ্যাকশন প্ল্যান করা উচিৎ।

২. কর্মসূচিগুলো সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিৎ। যাতে নির্দিষ্ট সময়ে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। এগুলোর ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. দেশে ব্যাপকভিত্তিক দুর্নীতির পরিস্থতিতে একটি স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

৪. উপরোক্ত ধারণার আলোকে পাবলিক অফিসগুলোতে খাতভিত্তিক ন্যায়পাল হতে পারে।

৫. আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম এমনকি টাকা পাচার হলেও অনেকক্ষেত্রে জানা যায় না। ইন্টিগ্রেটেড ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম বা সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাপানা চালু করা দরকার।

৬. ই-প্রকিউরমেন্ট যে প্রক্রিয়ায় হয়, তাতে স্বচ্ছতা থাকে না। একেকটা গোষ্ঠী একেকটা খাত দখল করে রাখে। তাই, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বা সরকারি ক্রয়ে আমূল সংস্কার দরকার।

৭. যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী জনগণের প্রতিনিধিকে পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা।

৮. সীমিত সময়ের জন্য হলেও ব্যাংকিং সেক্টরসহ বিভিন্ন খাতের সমস্যা সমাধানে কমিশন গঠন করা দরকার।

৯. প্রতিযোগিতা কমিশন, ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

১০. আইন ও বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে। প্রতিযোগিতা পরিবেশের পরিপন্থী আইন বাতিল করা উচিৎ।

সূত্র : বিবিসি

ঠিকানা/ছালিক
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078