জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা

সন্তানের গ্র্যাজুয়েশনে ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ১৫:৫৪ , অনলাইন ভার্সন

আমেরিকায় প্রত্যেক বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে তার সন্তান কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করবে। জীবনের নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। পেশাগত জীবন শুরু করবে এবং সফল মানুষ হবে। যারা সঠিক পথে ও লেখাপড়ার সঠিক ট্র্যাকে থাকতে পারে, তারা সফল হয়। যারা সঠিক পথে থাকতে পারে না কিংবা লেখাপড়ার ট্রাকে থাকতে পারে না, তারা হোঁচট খায়। অনেকেই ঝরে যায়। কঠিন এক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে, পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে যারা মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে ভালো ফলাফল করে, তারা সফলতার স্বাদ পায়। কেবল যিনি গ্র্যাজুয়েশন করছেন, এটা তার একার আনন্দ নয়, এই আনন্দ সবার। এই আনন্দে তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবও শরিক হন। সব মিলিয়ে একটি সাফল্যের পথের সূচনা হয়। গ্র্যাজুয়েশন করে কেউ কেউ আবার মাস্টার্স পড়া শুরু করেন। কেউ কেউ মাস্টার্স করার পর এমবিএ করেন অথবা পিইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আমেরিকানদের পাশাপাশি প্রবাসী আমেরিকানদের সন্তানেরাও সাফল্য পাচ্ছে। তাদের পরিবার ও পরিজন বাংলাদেশে থেকে সন্তানের সাফল্যে খুশি। আবার কেউ কেউ গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমেরিকায় আসছেন এবং অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি ও সাংবাদিক আশরাফুল আলম খোকন

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন চলছে গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনি মৌসুম। লাখ লাখ শিক্ষার্থী প্রতিবছর এখানে ব্যাচেলর, মাস্টার্স পাস করেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী পিএইচডি করেন। পড়ালেখা শেষ করে অনেকেই চাকরিতে যোগ দেন, কেউ লেখাপড়া অব্যাহত রাখেন, উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। আবার কেউ নিজের ব্যবসা শুরু করেন।
নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনি হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিডিউল থাকছে। অনেক প্রস্তুতি নিয়ে সফল গ্র্যাজুয়েশন শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরাও সেখানে যাচ্ছেন। যারা চলতি বছরে বিভিন্ন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন, তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। বাংলাদেশি আমেরিকান ও বাংলাদেশি প্রবাসী আমেরিকানদের অনেকের পরিবারই এই আনন্দের বন্যায় ভাসছে। তারা এতটাই আনন্দিত যে নিজেরা পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন পার্টি করছেন। আবার কেউ কেউ গ্র্যাজুয়েট করা সন্তানের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করছেন।
এদিকে এখন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান হলেও আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন স্টেট ও সিটিতে মিডল স্কুল, হাইস্কুলের গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনি। নিউইয়র্কে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ক্লাস শেষ হয় এবং গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনি অনুষ্ঠিত হয়। সব মিলিয়ে ওই সব সন্তানের পরিবারের বাবা-মায়েদেরও অপেক্ষা চলছে তার সন্তান হাইস্কুল পাস করে কলেজজীবন শুরু করবে। ইতিমধ্যে যারা হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করছে, তারা কলেজে ভর্তির জন্য অ্যাকসেপ্টেন্স লেটার পেয়ে গেছে। ১ মে ছিল এনরোলমেন্ট ডিপোজিট জমা দেওয়ার তারিখ। অনেকেই ইতিমধ্যে এনরোলমেন্ট ফি জমা দিয়েছেন। এখনো যারা জমা দেননি, তারা কোন কলেজ বাছাই করবেন সে জন্য সময় নিচ্ছেন। তারা আগামী ফল-২০২৩ এর ক্লাস শুরু করবেন।


বাবা টনি ডায়েস, মা প্রিয়া ডায়েস ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে অহনা ডায়েস।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি পরিবারের অনেক সন্তানও সাফল্যের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। চলতি বছর সেন্ট জন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যালেচর ডিগ্রি লাভ করেছেন ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এম শাহীনের ছোট মেয়ে মুশরাত শাহীন অনুভা। তার গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠিত হয় ২১ মে সকালে। গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুশরাত শাহীনের স্বামী রুহিন হোসেন, মা নাজনীন শাহীনসহ পরিবারের সদস্যরা। মুশরাত শাহীন গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করায় তিনিসহ পরিবারের সবাই দারুণ খুশি। নিউইয়র্ক ও দেশে থাকা স্বজনেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুশরাতকে অভিনন্দনের জোয়ারে সিক্ত করছেন। দেশে অবস্থানরত মুশরাতের বাবা এম এম শাহীন ফেসবুকে মেয়েকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ‘তোমার এই অসামান্য অর্জন নিবেদিত হোক মানুষের কল্যাণে-আজকের এই শুভলগ্নে এটাই আমার প্রত্যাশা।’


আশরাফুজামান ও মুর্শেদা জামানের সাথে কন্যা ডা. আইরিন জামান


ঠিকানা পরিবারের আরেক সদস্য নাহিদুর রব সাজুর ছোট ছেলে তাহমিদুর রব নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেছেন। ১৯ মে ব্রুকলিনে তার গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি লেখাপড়া শেষ করে এখন কর্মজীবন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাহমিদের সাফল্য প্রসঙ্গে তার বাবা নাহিদুর রব বলেন, আমার ছেলে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ভালো ফলাফল করে সফলভাবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করায় আমি ভীষণ খুশি। এবার তার পরিকল্পনা রয়েছে মাস্টার্স করার।
এদিকে ফাইকা ফারহাত কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে এখানে পিএইচডি করার জন্য আসেন এবং সফলতার সঙ্গে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি এবং তার স্বামী দুজনই পিএইচডি করছিলেন। তার স্বামী আগামী বছর পিএইচডি সম্পন্ন করবেন। এখন তিনি তার গবেষণার কাজ করছেন। ফাইকা ফারহাত বাংলাদেশে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন, টিচার্স অ্যাসিট্যান্টসহ নানা কাজ করেছেন। তিনি সফলভাবে পিএইচডি সম্পন্ন করায় ভীষণ খুশি।
অভিনেতা ও আবৃত্তিকার টনি ডায়েস এবং নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা প্রিয়া ডায়েসের মেয়ে অহনা ডায়েস গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। তাকে নিয়ে তার বাবা ও পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘জীবনের আরেকটা অধ্যায় পার করল মেয়েটা। অহনা ডায়েস কলেজ গ্র্যাজুয়েশন শেষ করল অভিনয় এবং থিয়েটারের ওপর। অনেক উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল নিউইয়র্কের পারচেস কলেজে। বেশ নামকরা একটি পাবলিক লিবারেল আর্ট কলেজ হচ্ছে পারচেজ কলেজ (চঁৎপযধংব ঈড়ষষবমব)। যেখানে ভিজ্যুয়াল এবং পারফর্মিং আর্টসের ওপর পড়াশোনা হয়।’ টনি ডায়েস তার মেয়ের উদ্দেশে আরও লিখেছেন, ‘তোমার জন্য দোয়া রইল মামণি। বিকশিত করো তোমার গুণকে। তোমার গ্র্যাজুয়েট ক্যাপের স্লোগান আমার খুব পছন্দ হয়েছে, ‘পুরো বিশ্ব এখন আমার মঞ্চ’ (হড়ি ঃযব ড়িৎষফ রং সু ংঃধমব)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি ও সাংবাদিক আশরাফুল আলম খোকন গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। নিজের সাফল্যের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি লিখেছেন, গাড়ি নিয়ে অনেক দূরের পথ যেতে চান? অবশ্যই, পথের মধ্যে তেল নিতে হবে। নয়তো গাড়ি থেমে যাবে। নিজের জীবনটাকে নিয়ে অনেক উঁচুতে যেতে চান? এখানেও বিকল্প নেই। আর এই তেল হচ্ছে শিক্ষা, যা আপনাকে অনেক দূর নেবে। শিক্ষাজীবন শেষ করার ১৯ বছর পর, আমার মনে হয়েছে, নিজেকে রিফুয়েলিং করা দরকার। তাই আবার শিক্ষাজীবনে ফিরে যাওয়ার কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। শুরুটা অনেক কঠিন এবং কষ্টের হলেও শেষটা ছিল সহজ ও আনন্দের। আলহামদুলিল্লাহ।
এখন ডাবল গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি। একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আরেকটি নিউইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটি থেকে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমাকে এই সুযোগটি দেওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাই, আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।
আরও দুজনের প্রতি আমার অনেক ঋণ, তাঁরা আমার পিতৃতুল্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আক্তারুজ্জামান স্যার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম হেলাল ভাই। যাদের রিকমেন্ডেশনে আমি স্কলারশিপটি পেয়েছিলাম।
বাফেলোতে বসবাস করা হারুনুর রশিদের মেয়ে আফরোজা ইসলাম মিলি বারুক কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন। ৩০ মে তার গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনি অনুষ্ঠিত হবে। বাবাকে নিয়ে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। গ্র্যাজুয়েশন করার আগেই তিনি চাকরির অফার পেয়েছেন। জয়েন করবেন খ্যাতনামা একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মে। মেয়ের এই সাফল্যে খুশি বাবা হারুনুর রশিদ বলেন, আমার মেয়ে বারুক কলেজ থেকে অত্যন্ত ভালোভাবে পাস করেছে। পাস করার পর চাকরিও পেয়েছে। আমি আগে নিউইয়র্কে ছিলাম। মেয়েটি তার বড় বোনের সঙ্গে নিউইয়র্কে থাকে। আমি তিন বছর আগে বাফেলোতে চলে আসি। আমি অত্যন্ত খুশি যে আমার মেয়ে সফলভাবে পাস করেছে।
রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীমের একমাত্র কন্যা ফারদিন রহমান গত ১৯ মে শুক্রবার নিউইয়র্ক ইউনির্ভাসিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন (মাস্টার অব পাবলিক হেলথ) সম্পন্ন করেছেন।
সোয়াদ ওশান করিম স্টোনিব্রুক ইউনিভার্সিটি থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং প্রিমেইডে ব্যাচেলর কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এখন তিনি মাস্টার্স করার পরিকল্পনা করছেন। তার বাবা শাহেদ করিম, মা অ্যানিস আলভীনা। তাদের বড় ছেলে সোয়াদ ওশান করিম। সোয়াদ ড্রর্মে থাকতেন। তার মা অ্যানিস আলভীনা বলেন, আমার ছেলে স্ট্রোনিব্রুক থেকে সাফল্যের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন করে ১৯ মে। তার এই সাফল্যে আমরা খুব খুশি। আমরা জ্যামাইকায় থাকি। আমার ছেলে ডর্মে থাকত। সে এখন মাস্টার্স করবে। সব মিলিয়ে আমরা তার এই সাফল্যে আনন্দিত।
তাদের মতো এমন আরও অনেকেই গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। যারা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন, ঠিকানা পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা।
আমাদের ভুকশিমইল ইউনিয়নের জাবদা গ্রামের মরহুম মো. জহির আলীর ছোট ছেলে, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান প্রবাসী ডাক্তার লুৎফর রহমানের ছোট ভাই ও ভুকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন আজিজুর রহমান মনিরের চাচাত ভাই মোস্তাফিজুর রহমান (শিবলু) ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ানা থেকে পিএইচডি (ফার্মাসি) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। গত ২১ মে রোববার তিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি তার সাফল্যের জন্য সকলের দোয়া চেয়েছেন।

M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078