বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যা বলল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান 

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারী ২০২৪, ১৫:২৮ , অনলাইন ভার্সন
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়েছে, এমন এক নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে জয়ী হলেন, যে নির্বাচনে বিরোধীদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া দমনপীড়ন ও কম ভোটার উপস্থিতির ছায়া পড়েছে। 
 
সোমবার দিনের শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছে। মোট নির্বাচন হওয়া আসনের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ আসন পেয়েছেন তারা। এটা হবে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চম মেয়াদ। এর আগে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে টানা ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। 

গত রবিবার যে নির্বাচন হয়েছে তা বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বর্জন করায় কার্যত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হননি। বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছে। নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গণহারে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতিরিক্ত বন্দিতে ঠাসাঠাসি অবস্থায় ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে জেলে।

অন্যদিকে বিরোধী দলীয় প্রতিবাদ বিক্ষোভে ভয়াবহ পুলিশি আক্রমণ হয়েছে। বিরোধী দলের হিসাব মতে, গত তিন মাসে জেলে মারা গেছেন বিএনপির কমপক্ষে ৯ জন নেতা ও সমর্থক। 

রবিবার ভোট দেওয়ার সময় ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। বিএনপিকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তারা নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে একে নস্যাতের চেষ্টা করছে। তার বিজয় ঘোষণা হওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেছেন, এই ভোটে বিজয়ী হয়েছে জনগণ। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার আছে। একটি দলের অনুপস্থিতির অর্থ এই নয় যে, গণতন্ত্র অনুপস্থিত। বার বার জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে। তাই আমি আজ এখানে। 

এক সময় দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ১৭ কোটি মানুষের এই দেশটিকে চমৎকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবিকাশমান গার্মেন্ট রপ্তানি শিল্পে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের অভিযোগ আছে। 

বলা হয়, সরকার ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। দেশকে একটি একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে নিয়ে গেছে। তবে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি দাবি করেছেন, তার পলিসিগুলো দেশকে নিয়ে গেছে স্থিতিশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার যেকোনো অভিযোগ দীর্ঘ সময় ধরে প্রত্যাখ্যান করে আসছে তার সরকার। 

নির্বাচন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দাবি করেছে বিএনপি, যাতে নিশ্চিত হয় যে- নির্বাচনে জালিয়াতি হবে না। নির্বাচনের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে এই ফলের নিন্দা জানিয়েছেন। 

বিএনপির হাতে গোনা যে কয়েকজন নেতা বা সাবেক এমপি জেলে যাননি তার মধ্যে অন্যতম রুমিন ফারহানা। তিনি এই নির্বাচনকে ডামি নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার জন্য কোনো বিকল্প ছিল না ভোটারের সামনে। তাই এ নির্বাচনে কোনো অনিশ্চয়তা ছিল না। কোনো থ্রিল ছিল না। এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না ভোটারের। নির্বাচনের পর বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। 

নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে বিক্ষিপ্ত সহিংস ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় একটি ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। তাতে কমপক্ষে চারজন নিহত হন। দেশজুড়ে নির্বাচনের দিন মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা রক্ষায় কমপক্ষে ৮ লাখ পুলিশ ও সেনা সদস্য। নির্বাচনের দিনে চট্টগ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়। ঢাকায় একটি নির্বাচনি কেন্দ্রের কাছে একটি ক্রুড বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাতে আহত হয়েছেন তিনজন। 

জালিয়াতি, সংঘর্ষ এবং জোরপূর্বক ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করার অভিযোগে বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এটা সেই একই অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ, যা গত দুটি নির্বাচনে হয়েছিল এবং ওই নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছিলেন শেখ হাসিনা। বিরোধীদের ওপর চালানো দমনপীড়ন ও ভোটের কথিত ধরন দৃশ্যত ভোটার উপস্থিতির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। 

নির্বাচনের দিন বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটার উপস্থিতি ছিল ‘শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ’। কিন্তু ব্রিফিং চলাকালে অন্য কর্মকর্তারা দ্রুততার সঙ্গে এই হার রিভাইজ করেন এবং তাকে সংশোধন করে দেন যে, শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত আগের নির্বাচনের তুলনায় এই হার অর্ধেক।  

ভোটের দিন নির্বাচনি কেন্দ্রগুলো ছিল মরুভূমির মতো। ভোটাররা ছিলেন উদাসীন। নিজেকে শুধু একটি নামে পরিচয় দেন ৪৭ বছর বয়সী শামসুদ্দিন। যারা ভোট দেননি তিনি তাদের অন্যতম। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অর্থহীন। দৃশ্যত সব প্রার্থী একই দলের। তাই এটা অবশ্যই একটি প্রসহন। গণহারে মানুষ এই উপহাসের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শবযাত্রা। 

২৮ বছর বয়সী অর্পিতা দাম ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা ভোট দিয়েছেন তিনি হাতে গোনা সেইসব মানুষদের মধ্যে অন্যতম। অর্পিতা বলেন, সাধারণ জনগণের মধ্যে এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার প্রতি অনীহা দেখতে পেয়েছি। এমনকি আমার রিকশাচালক আমার দিকে হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন যখন তিনি দেখেছেন আমার আঙ্গুলে অমোচনীয় কালির দাগ। তিনি আমাকে নির্বাচন কেন্দ্র থেকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছেন। 

নির্বাচন সুষ্ঠু নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ চাপ দিয়েছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে বাংলাদেশে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে ১৯৭১ সালে। তখন থেকেই এখানে দুটি রাজনৈতিক দল আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তারা হলো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ। তাকে সামরিক অভ্যুত্থানে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭৫ সালে। 

অন্যদিকে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তার আগে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি ক্ষমতায় এলে তাকেও হত্যা করা হয়েছে। তার পর থেকে এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি অসুস্থ অবস্থায় গৃহবন্দি আছেন। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি রোববার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এটা বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর অনেকেই আতঙ্কে আছেন যে, আরও দমনপীড়ন করা হতে পারে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078