যেখানে কষ্টদের বাস

আনন্দময় জীবনও কখনো কখনো করুণ বেদনায় নিমজ্জিত হয়। নিদারুণ কষ্টের করুণ জ্বালায় কাতর মন বেজে ওঠে বিষাদের সুরে। কষ্টের কারণ হতে পারে এক বা একাধিক। তবে সব কষ্টের মধ্যেই একটি গভীর মিল হলো, সব কষ্টই তীব্র ও অসহ্য। প্রত্যেক মানুষ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চায়। কষ্টকে একেক ব্যক্তি একেক রূপে প্রকাশ করেছেন। কষ্টের অনুভূতি কেউ কান্নায়, কেউ কবিতায়, কেউ গল্পে, কেউবা গানে প্রকাশ করেন, আবার কেউ নীরবতায় জীবন কাটিয়ে দেন। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ পর্যন্ত এই কষ্টের জ্বালা থেকে মুক্তি পাননি। কষ্ট নিয়ে কিছু মনোভাব প্রকাশ করা হলো মাত্র।
একটি কবিতা তখনই আসে, হয় বিশাল সুখ থেকে, না হয় অনেক কষ্ট থেকে। ভবিষ্যতে যার কাছ থেকে তুমি সবচেয়ে বড় কষ্টটি পাবে, আজ সে তোমার সবচেয়ে কাছের কোনো একজন। যখন কাছের কেউ চলে যায়, তখন পুরো পৃথিবীটাই শূন্য মনে হয়। এর চেয়ে আর কষ্টের কী হতে পারে? শুধু মনে রাখি, কষ্টের বোঝা একা বহন করলে কষ্টের বোঝা দ্বিগুণ হয়। আমি চেষ্টা করি এমনভাবে পা ফেলতে, যেন মাটির বুকেও আঘাত না লাগে। আমার তো কাউকে দুঃখ দেওয়ার কথা নয়। প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার পার্থক্য হলো দুঃখ। তাই নিজের প্রত্যাশাটা একটু কমিয়ে ফেলি আর দেখি, আমার দুঃখও কমে গেছে।
আমাদের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্তগুলো আসে পারিপার্শ্বিক সম্পর্কগুলো থেকে। আমাদের একটা বিষয় বোঝা উচিত, কষ্ট হচ্ছে সাগরের মতো; কখনো ডুবে যাই আবার কখনো সাঁতার কাটতে বাধ্য হই। দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করা সহজ কিন্তু বলা ততটাই কঠিন।
মানুষের কষ্ট দেখাও কষ্টের কাজ। প্রত্যেক মানুষেরই কিছু দুঃখ-কষ্ট থাকে, যা কেউ জানতে পারে না। সে যখন দুঃখ পোষণ করে শান্ত থাকে, তখন আমরা তাকে বুঝতে পারি না। নিজেকে বলি, কষ্ট পেয়ো না। তুমি যা হারিয়েছ, তা কোনো না কোনোভাবে তোমার কাছে উত্তম কিছু আনবেই। কিছু মানুষের কষ্ট চোখ দিয়ে ঝরে, কিছু মানুষের কষ্ট মেজাজ দিয়ে প্রকাশ করে, কিছু মানুষের কষ্ট হৃদয়ের মাঝে শুকিয়ে মরে। তবে কষ্টকে যারা প্রকাশ করতে না পারে, তারাই জীবনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে। পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় সে, যে নিজের রাগ, অভিমান, কষ্ট কাউকে দেখাতে পারে না, একটু চিৎকার করে কাঁদতে পারে না, শুধু চোখের জল লুকিয়ে হাসে।
জীবনে কিছু কিছু প্রশ্ন থাকে, যার উত্তর কখনো মেলে না। কিছু কিছু ভুল থাকে, যা শোধরানো যায় না, আর কিছু কিছু কষ্ট থাকে, যা কাউকে বলা যায় না। সুন্দরী মেয়েরা পারিবারিক জীবনে সবচেয়ে বেশি অসুখী হয়। কারণ, তাদের ওপর বহু পুরুষের অভিশাপ লেগে থাকে। ক্রোধ ও কষ্ট একজন মানুষকে সৃজনশীল বোধ করায়; যে সৃজনশীলতা ব্যক্তিকে কষ্ট দূরে ফেলে দিতে সাহায্য করে। যারা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা কখনো অন্যের দুঃখ-কষ্টকে উপলব্ধি করতে পারে না। কষ্ট তোমাকে পরিবর্তন করে না, বরং এটা তোমার ভেতরের তুমিটাকে বের করে আনে।
রাত যত গভীর হয়, তারাগুলো ততই উজ্জ্বল হয়। তেমনিভাবে দুঃখ যত বেশি হয়, স্রষ্টা ততই নিকটে চলে আসেন। একজন আহত ব্যক্তি তার যন্ত্রণা যত সহজে ভুলে যায়, একজন অপমানিত ব্যক্তি তত সহজে অপমান ভোলে না। যত দিন ভবে, না হবে না হবে, তোমার অবস্থা আমার সম। ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে, বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম। নীরবে কাঁদার চেয়ে বড় কষ্ট বোধ হয় পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আরা নেই। চিন্তা কখনো কষ্ট ছিনিয়ে নিতে পারে না; বরং আজকের আনন্দ ছিনিয়ে নেয়।
সবাই তোমাকে কষ্ট দেবে, তোমাকে শুধু এমন একজনকে খুঁজে নিতে হবে, যার দেওয়া কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে। সবকিছুকেই একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় কিন্তু কষ্টকে কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। কারণ কষ্ট এমন এক জিনিস, যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। অন্যের কষ্টে কষ্ট পাওয়া কোনো দুর্বলতা নয়, বরং তা হলো কোমল হৃদয়ের পরিচায়ক। কষ্ট খারাপ কাজের মতো কিছু নয়, তবে তা তোমার কাছ থেকে অনেক কিছুই নিয়ে যায়।
পৃথিবীতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, এমনকি আপনার কষ্টও। একদিন সব ঠিক হয়ে যায়। কাউকে যদি বেশি মায়া করো, তবে সে-ই তোমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিতে পারে। কষ্টের সবচেয়ে বড় ওষুধ ও চিকিৎসা হলো ধৈর্য ধারণ করা। কষ্ট হলো সমুদ্রের মতো। এটা সর্বদাই প্রবাহিত হতে থাকে, কখনো এটা আসে শান্ত পানির মতো আবার কখনো সাইক্লোনের মতো ঝড় নিয়ে। জীবন কখনো সহজ ছিল না বা হওয়ার নয়, শত কষ্টের মাঝে মুখ উজ্জ্বল থাকাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
অন্যের কষ্ট দেখতে গেলেও কেন যেন নিজের কষ্ট লাগে। প্রত্যেক মানুষেরই এমন কিছু কষ্ট থাকে, যা তাকে সর্বদা জাগ্রত রাখে। তার জন্য কাঁদো, যে তোমার চোখের জল দেখে সেও কেঁদে ফেলে কিন্তু এমন কারও জন্য কেঁদো না, যে তোমার চোখের জল দেখে উপহাস করে। আনন্দের সময় কষ্টের কথা স্মরণ করার মতো বড় দুঃখের কিছু হতে পারে না। অতিরিক্ত কষ্ট হাসায় আবার অতিরিক্ত সুখ কাদায়। কষ্ট আর কিছুই নয়, ভুল মানুষকে ভালোবাসার মূল্য। কষ্ট মূলত দুটো জিনিসেÑএক. কিছু হারাতে, দুই. জীবনকে সেখান থেকে নতুন করে শুরু করতে।
কষ্ট তো সবাই দেবে কিন্তু তারই মাঝে তোমাকে এমন কাউকে খুঁজে নিতে হবে, যার দেওয়া কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারো। কষ্ট হলো না চাওয়া সত্ত্বেও ভালোবাসার মানুষটাকে যেতে দেওয়া। কষ্ট হচ্ছে দুটি বাগানের মাঝখানের বড় প্রাচীরের মতো। কষ্ট মানুষের কাজের গতি বাড়ায় আর হতাশা গতি একেবারে শ্লথ করে দেয়। কষ্টের প্রতিকার হলো শিক্ষা নেওয়া। কষ্ট চিরস্থায়ীভাবে থাকার কোনো জায়গা নয় বরং এটা জীবনের একটি টানেলের মতো, যা আপনাকে অনেকবারই অতিক্রম করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে আশা আছে, ভালোবাসা আছে, কষ্ট আছে এবং অবশ্যই বিপদও আছে।
স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক ভালো। আমি কখনো রাগ করি না, কারণ আমি জানি, আমার রাগের মূল্য নেই কারও কাছে। দুনিয়ার প্রত্যেক মানুষের বুকে ব্যথা আছে, শুধু প্রকাশ করার ধরন আলাদা। ভালোবাসা বদলায় না, বদলে যায় মানুষগুলো। স্মৃতি হারিয়ে যায় না, হারিয়ে যায় সময়গুলো।
যেকোনো জিনিস ভাঙলে শব্দ হয়, কিন্তু মন ভাঙলে শব্দ হয় না। তাইতো যার মন ভাঙে, সে-ই একমাত্র বোঝে মন ভাঙার ব্যথা কত! কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হলো মন, আর সবচেয়ে দুর্বল অস্ত্র হলো ভালোবাসা। যদি তুমি ভালো থাকো অন্যের ভালোবাসায়, তবে আমিও থাকব ভালো তোমার ভালো থাকায়।
জীবনে চলার পথে নিজেকে হারিয়ে ফেলে চলতে চলতে আজ অজানা পথে। সম্পর্কের ঘাটতি ঘটতে শুরু হয় যখন থেকে, তখন থেকেই মনে হয় মানুষটি মিথ্যা বলছে। চোখের জল সবাই দেখে, কিন্তু হৃদয়ের কষ্ট কেউ দেখে না।
কোনো কিছু পাওয়ার আনন্দ হয়তো কিছুদিন থাকে কিন্তু কিছু না পাওয়ার বেদনা থাকে সারাটা জীবন। অশ্রু হলো এমন ভাষা, যা মুখে প্রকাশ করা যায় না।
জন্ম হলো আনন্দময় আর মৃত্যু হলো শান্তিময়। শুধু এই দুটির মাঝে বেদনায় ভরা থাকে। দুঃখকে সরিয়ে রাখার জন্য যদি প্রাচীর দিয়ে রাখা যেত, তাহলে সুখও যে এর মধ্যে আটকে যেত। দুঃখের সময় সুখের কথা মনে করার মতো কষ্ট আর কিছুতেই নেই। দুঃখ অনেকটা মূল্যবান সম্পদের মতো, যা কেবল প্রিয়জনদের কাছে প্রকাশ করে। অপেক্ষাটা তো সেসব মানুষই করে, যে কাউকে মন থেকে ভালোবাসে।
গাছের কষ্ট হয় পাতা ঝরে গেলে, নদীর কষ্ট হয় পানি শুকিয়ে গেলে, রাতের কষ্ট হয় চাঁদ ডুবে গেলে, আর মানুষের কষ্ট হয় তার আপনজন ভুল বুঝলে। কারও কারও আশাগুলোতে দেয়ালের জমে থাকা শেওলার মতো শেওলা পড়ে যায়। এত ভালোবেসেও তোমাদেরকে পাওয়া হলো না, ভালো থাকুক আমার ভালোবাসা। এক নদীর তীরে খুঁজে বেড়াই আমি তাদের, তারা দেয় না দেখা আমায় কভু, তাদের খেয়াল রেখো তুমি প্রভু।
মানুষ প্রেম করতে চায় না কষ্ট পাওয়ার ভয়ে, কিন্তু মানুষ আগে থেকেই কাউকে অনেক ভালোবাসে। কারও দেওয়া কষ্টগুলো, কারও ঘুমহীন রাতের সঙ্গী হয়ে যায়। মনের ভাষা বোঝে না মুখে বলে তাই, শত আঘাতের পরেও তারে ভালোবেসে যায়। কোনো মানুষকে ঠকিয়ে নিজেকে বড় ভাবা ঠিক নয়। 
সময়ের ব্যবধানে সেও একদিন ঠকে যাবে। ভালোবাসা এমন একটা সফটওয়্যার, যা সবার জীবনে ইনস্টল হয় না।