দেশে প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষায় হাজারো অজুহাত

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:৪২ , অনলাইন ভার্সন
দেশ আপনাকে কী দিয়েছে, এটা বড় কথা নয়। আপনি দেশকে কী দিয়েছেন, কেতাবের ভাষার এমন প্রশ্ন হরহামেশা শোনা যায়। দেশপ্রেমের প্রশ্নে হয়তো এ ব্যাপারে কোনো আপোস নয়। সবার আগে দেশ। দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন হয়তো অবান্তর নয়। কিন্তু একজন প্রবাসী দেশকে শুধুই দিয়ে যাবেন? বিনিময়ে তারা কী দেশের কাছ থেকে কিছুই পাবেন না? 
প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখছেন। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। দেশে বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু সেই প্রবাসীদের জন্য দেশে ন্যুনতম কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই, বরং প্রবাসীরা যাতে কোনো সুযোগ-সুবিধা না পান, সেজন্য হাজারো অজুহাত প্রস্তুত আছে। 
প্রবাসীরা দেশে যে একপ্রকার একঘরে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে। দুই-একজন ছাড়া এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে গিয়ে আইনের বেড়াজালে বাধা পেয়েছেন প্রায় শতাধিক প্রবাসী। বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনির অর্থে গড়া সম্পদ বিকিয়ে দিয়ে হলেও তারা দেশের সেবা করতে চেয়েছিলেন। যতবারই তারা মাঠে নেমেছেন, বিমুখ হয়ে ফিরেছেন। অথচ রাজনৈতিক দলের বহু শীর্ষ নেতা বিভিন্ন সময়ে প্রবাসীদের নানান প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় সরকার প্রধানরা প্রবাসীদের রেমিট্যান্সযোদ্ধার খেতাব দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের কোনো মূল্যই নেই দেশের মাটিতে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা এ প্রতিবেদককে জানান, দলের হাইকমান্ড থেকে বিভিন্ন সময় আশ্বাস পেয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এলাকায় গিয়ে সময় দিয়েছি। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গী হয়েছি। মনোনয়ন না পেয়ে হতাশ হইনি। কিন্তু যেভাবে প্রবাসী হিসাবে তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছি, এটা মানা যায় না। 
তিনি বলেন, বিদেশের মাটিতে আমরা দেশের রাজনীতি করি। ওয়ান-ইলেভেনে ঢাকায় আন্দোলনের সময় যারা পুলিশের ব্যারিকেডে একবার হাত রেখেছেন, তারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও তুষারপাত উপেক্ষা করে যারা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ করে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টি করেছেন, তারা আজো উপেক্ষিত হয়েছেন। এখনো তারা উপেক্ষিত, শুধু প্রবাসী হওয়ার কারণে। 
একজন প্রবাসী নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেলে তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে- অতীতে যেসব প্রবাসী সংসদে গেছেন, তাদের কল্যাণে প্রবাসে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের শাখা অফিস রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় হয়েছে। এসবের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনীতি জোরদার হয়েছে। আজ দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স যাচ্ছে, সবই সহজ হয়েছে সংসদে প্রবাসী প্রতিনিধিত্বের কারণে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা খুব সহজে প্রবাসীদের অবদান ভুলে যান। 
সাধারণ প্রবাসীদের অভিযোগ- প্রবাস থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসীরা বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হন। গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বিনা বাধায় যাওয়ার নিয়ম থাকলেও তাদের ব্যাগ স্ক্যান করার নামে সময়ক্ষেপণ করা হয়। প্রবাসী পরিচয় পাওয়ার পর কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে চলে অযাচিত জিজ্ঞাসাবাদ। দেশ থেকে ফেরার সময়ও পড়তে হয় আরো হয়রানিতে। বিমানবন্দপা ইমিগ্রেশনে প্রবাসীদের জন্য পৃথক লাইন থাকলেও তা মানা হয় না। 
নিউইয়র্ক প্রবাসী আলাউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, দেশে বিমানবন্দরে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই, তা এককথায় খুবই তিক্ত, অসম্মানজনক, সর্বোপরি অমানবিক। তিনি জানান, বিদেশে থাকা শ্রমিকরা প্রতিবছর প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার পাঠান। প্রতিবছর এর পরিমাণ বাড়ছে। 
আরেক প্রবাসী শফিকুল ইসলাম জিসান অভিযোগ করেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। বিভিন্ন সময় অনেক প্রবাসী মিডিয়ার কাছেও এ সম্পর্কিত নানা কথা জানিয়েছেন। বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোতে যেভাবে বিপুল যাত্রীকে সেবা দেওয়া হয়, এখানেও সেরকম আধুনিক ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করা ছাড়া রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ, পর্যটন ও দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। তাই বিমানবন্দরগুলোতে হয়রানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য গতিশীল, ঝামেলামুক্ত ও সম্মানজনক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আধুনিক টারমিনাল-৩ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে তা এখন দেখার বিষয়। 
আলমগীর হোসেন সম্প্রতি দেশ থেকে নিউইয়র্কে ফিরেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে তাকে অসম্মান করা হয়েছে। কবে থেকে আমেরিকায়, দেশে কি করতাম, কি কাজ করি এসব জানতে চাওয়া হয়েছে। কেন এসব অযাচিত প্রশ্ন করা হচ্ছে জানতে চাইলে তাকে ভেতরে ইমিগ্রেশন অফিসে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওই ঘটনা খুব অপমানজনক ছিল। আমি প্রবাসী, এটা মনে হয় আমার অপরাধ ছিল। অথচ সরকারের তরফ থেকে বলা হয় যে প্রবাসীরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। বুঝতে পারছি না, এ কথাটার মর্মার্থ কী?
নিউইয়র্ক প্রবাসী ফারুক হোসেনের প্রবাসী জীবন প্রায় আড়াই দশকের। ইমিগ্রেশন জটিলতায় কেটে গেছে জীবনের স্বর্ণালী সময়গুলো। আড়াই দশক পর দেশে গিয়েছিলেন পরিবারের কাছে। নিজের সঞ্চিত অর্থ দেশের ব্যাংকে রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। রাষ্ট্রায়াত্ত একটি ব্যাংকেও গিয়েছিলেন টাকা জমা রাখতে। কিন্তু অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেননি। কারণ অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজন ন্যাশনাল আইডি কার্ডের। যেটি নেই ফারুক হোসেনের। কত জায়গায় গেছেন। কত মানুষের সাহায্য চেয়েছেন। উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়েছেন। কিন্তু প্রবাসী পরিচয় পাওয়ার পর নানান অজুহাত দেখানো হয়েছে। কথিত ফি-এর নামে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সফল হননি। ন্যাশনাল আইডি কার্ড ছাড়াই ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। 
এ প্রতিবেদকের কাছে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশে গিয়ে হতাশ হয়েছি। গত ২৫ বছরে দেশে কয়েক কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছি। কিন্তু এত বছর পর যখন দেশে গেলাম, ফিরে আসার পর মনে হয়েছে, নিজের দেশে আমি এক ভিনদেশি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছে। 
প্রবাসীদের এমন হাজারো অভিযোগ রয়েছে। দেশে কেউ বিপদে পড়ে আইনের আশ্রয় নিতে গেলেও প্রবাসী হওয়ার কারণে কোনো সহায়তা পান না। শুধুমাত্র প্রবাসী হওয়ার কারণে আইনের আশ্রয় নিতে গেলে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। জমি-জমার ওপর নজর পড়ে স্বজন ও দুর্বৃত্তদের। দখল হয়ে যায় সম্পত্তি। এ ব্যাপারে বহু প্রবাসী কোনো সহায়তা পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসীদের দেখভাল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সেল রয়েছে। কিন্তু কতজন প্রবাসী সেই সেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পেরেছেন? 
স্বল্প সময়ের জন্য দেশে গিয়ে বহু প্রবাসী এয়ার টিকেট কেনার সুযোগ পান না। ট্রেনের টিকেট পান না। এ ব্যাপারে প্রবাসীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ নেই। শুধু এয়ার ও ট্রেনের টিকেট নয়, দেশের কোথাও কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য প্রবাসী কোটা নেই। অথচ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জন্য দেশের সর্বত্র কোটা সিস্টেম রয়েছে। সেখানে শুধু বঞ্চিত প্রবাসীরা। কিন্তু কেন, রেমিট্যান্সযোদ্ধা বলে? - এ প্রশ্ন প্রবাসীদের। 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041